একজন ভালো ডিজাইনার হতে হলে যে ৭টি গুণ আপনার রপ্ত করতে হবে

একজন ভালো ডিজাইনার যে শুধু তার নিজের কাজে ভালো জানেন তা নয়, তারা প্রখর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে থাকেন। তারা সবকিছু খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন এবং তার চারপাশে ঘিরে থাকা সবকিছু সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান রাখেন। ভালো ডিজাইনারের কাজের ছাপ আপনি সর্বত্র দেখতে পাবেন; আপনি যে কফি কাপে চুমুক দিচ্ছেন সেই কাপ, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যে বিলবোর্ড দেখেন সেখানে, এমনকি আপনি যে চেয়ারে বসে পরিবারের সাথে রাতের খাবার সারেন সেখানেও।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: library.gv.com

ভালো শিল্পীরা এত অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এবং বিশিষ্টতার অধিকারী হন কেন? এমন মহান হতে হলে আপনার কী করণীয়? আপনি যখন কোনো বড় পরিকল্পনাবিদ, নকশাকার বা চিত্রশিল্পী সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করবেন তখন দেখবেন সব বিশিষ্ট ডিজাইনারের মধ্যে কিছু মৌলিক বিষয়ে গভীর মিল আছে। তাদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা সব বড় শিল্পীর মধ্যে পাওয়া যায়।

একজন ডিজাইনার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে অবশ্যই বড় ডিজাইনারদের মধ্যে থাকা এই ৭টি বৈশিষ্ট্য আপনাকে রপ্ত করতে হবে।

১. স্বতন্ত্রতা

স্বতন্ত্রতা সব শিল্পীর একটি বড় গুণ। যাদের স্বতন্ত্রতা থাকে না তারা কখনোই বড় শিল্পী হতে পারে না। আপনি চারদিকে অসংখ্য শিল্পী দেখবেন যারা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন পাবেন যারা সত্যিকার অর্থে মহান শিল্পী হতে পেরেছে। ভালো শিল্পীর কাজ খুব সূক্ষ্ম, এমনকি যেসব বিষয় চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তোলা আপনার কাছে অসম্ভব বলে মনে হয় সেসব বিষয়ও একজন ভালো চিত্রকর যথার্থভাবে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে পারেন।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }
Mona Lisa photo: wikipedia

আগেই বলেছি, ভালো চিত্রকররা বিশেষ প্রকৃতির হয়ে থাকেন। যদিও তারা অন্যদের থেকে শিখে বা অন্যদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেন। কিন্তু তবুও তাদের নিজেদের কাজ অন্য সবার চেয়ে স্বতন্ত্র থাকে, যা স্বমহিমায় উজ্জল।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসার কথাই চিন্তা করুন। আপনি অনুরূপ অনেক নারীর চিত্রকর্ম দেখবেন। কেননা অসংখ্য শিল্পী নারীরূপ আঁকার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মোনালিসার দিকে তাকালেই আপনি বুঝতে পারবেন এটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, আপনার মনে হবে মোনালিসার চোখে কোনো ভ্রু নেই! নিঃসন্দেহে এই বিষয়টি মোনালিসাকে আর সব নারী চিত্রকর্ম থেকে আলাদা এবং বিশিষ্ট করেছে।

২. দৃশ্যমান সৌন্দর্য

প্রতিসম নকশা সবসময় আকর্ষণীয় হয়। কেননা এমন শিল্পকর্ম সব সময় দর্শককে আকর্ষণ করে। কোনো চিত্রকর্ম বা নকশা যদি সবদিক দিয়ে সার্বিকভাবে সমান হয়, তাহলে তা এতটাই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে যে তা দেখলে আপনা থেকেই মন ভালো হয়ে যায়।

Eiffel Tower photo: tour eiffel

আইফেল টাওয়ারের কথা চিন্তা করুন। আইফেল টাওয়ার এই প্রতিসাম্যতার সবচেয়ে চমৎকার এবং ঐতিহ্যবাহী উদাহরণ। প্যারিসে অবস্থিত আইফেল টাওয়ার কেন আপনাকে আকর্ষণ করে তা আপনি জানেন না কিন্তু এর জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল সৌন্দর্যে আপনি প্রতিমুহূর্তেই মুগ্ধ হন। সুতরাং দৃশ্যমান মনমুগ্ধকর গঠন যেকোনো নকশাকে আইফেল টাওয়ারের মতো এমন বিশিষ্টতা, জাঁকজমকপূর্ণ সৌন্দর্য প্রদান করে।

৩. দৃঢ়তা এবং ধারাবাহিকতা

মহান কোনো শৈল্পিক স্থাপনা সবসময়ই সফলভাবে কোনো একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। কিন্তু কেউ যদি এই শৈল্পিক স্থাপনার ভেতর দিয়ে নিজের ভাবনা প্রবাহিত করার চেষ্টা না করে তবে কেউই এর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারে না।

photo: gear patrol

সুতরাং আপনার শৈল্পিক স্থাপনা বা চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তার প্রকাশ ঘটান, অথবা যদি বিষয়টি বড় কোনো প্রচারপত্র বা বিলবোর্ডের মতো কিছু হয়, তাহলে সেখানে আপনার বক্তব্য এমন যথাযথ ও সহজভাবে উপস্থাপন করুন যেন তা দর্শক দেখা মাত্রই অনুধাবন করতে পারে। কেননা এমন বড় প্রচার মাধ্যমগুলোতে মানুষ খুব অল্প সময়ের জন্যই তার দৃষ্টি রাখেন।

সুতরাং বড় কোনো স্থাপনা অথবা কোনো বিলবোর্ড যাই হোক না কেন সব জায়গাতেই একটি যথাযথ ও শক্তিশালী বার্তা ফুটিয়ে তুলতে হবে, তবেই সেই শিল্পীকর্ম বিশিষ্টতা পাবে।

৪. আজীবন শিক্ষার্থী

একজন যথার্থ শিল্পী হিসেবে আপনাকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পরও অনেক কিছু শিখতে হবে, এমনকি সারা জীবন শিখে যেতে হবে। আমরা কিছু দিন কাজ করার পর একটু প্রশিক্ষিত হয়ে গেলেই নিজেকে অনেক অভিজ্ঞ জ্ঞান করি এবং নতুন করে কোনো কিছু শেখার ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাকে যথাসম্ভব শান্ত থাকতে হবে এবং মনোযোগী হয়ে ক্রমাগত নতুন নতুন কলা কৌশল রপ্ত করতে হবে, যা আপনার কাজে সময় বাঁচাতে সাহায্য করবে।

মহান শিল্পীরা তাদের কাজ সবসময়ই নম্রভাবে শুরু করেন এবং নীরবে সচেতনভাবে কাজ করে যান। গভীর প্রচেষ্টায় খুব জটিল বিষয়কেও তারা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন। কেননা তারা চারপাশকে খুব মনোযোগ দিয়ে অবলোকন করেন। তারা মানুষের মন, দর্শন, চারপাশের জগত – সবকিছুকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: hartlepool.ccad

তারা যত বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন ততটাই হিংসা, ক্রোধ, গর্ব এবং অহংকার থেকে দূরে সরে যান। তারা এমন একটা জীবন বেছে নেন যা তাকে ক্রমাগত শেখার কাজে ব্যস্ত রাখে।

এখন ডিজিটাল মিডিয়ার যুগ। কেউ কেউ বিনা পরিশ্রমে অল্প প্রচেষ্টায় খুব ভালো কিছু সৃষ্টি করতে চায় এবং সব সময় নিজেকে একটা প্রতিযোগিতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। এই প্রবণতা থেকে বের হতে হবে। ভালো ডিজাইনাররা সবসময়ই বিভিন্ন দিক থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেন আর ক্রমাগত তার ডিজাইনের কৌশল উন্নতি করে চলেন, যা তাদের চিত্রকর্ম বা শিল্পকর্মকে বাজারের সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

৫. সমালোচনা গ্রহণের মানসিক প্রস্তুতি

সমালোচনা একটা কঠিন জিনিস। আপনি যত ভাল কাজই করেন একটা শ্রেণীর মানুষ আপনাকে সমালোচনা করবেই। সুতরাং একজন ভালো ডিজাইনার হিসেবে আপনাকে সব সময় মনে রাখতে হবে, আপনার কাজের বিপরীতে যত সমালোচনা আসুক না কেন, তার কোনোটাই ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া যাবে না। এমনকি এই সমালোচনার জবাব দেওয়া বা আপনার কাজের যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। সব সময় বড় মনের হতে হবে এবং প্রশংসা এবং তিরস্কার সবকিছু গ্রহণ করার মানসিক শক্তি থাকতে হবে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

৬. ক্রমাগত কাজের অনুপ্রেরণা খোঁজা

একজন শক্তিশালী শিল্পী হিসেবে আপনাকে সবকিছুতে নজর রাখতে হবে। পৃথিবীতে কী ঘটছে তার খোঁজ রাখতে হবে। চারপাশকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই দর্শন নিজের কাজের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা কাজের প্রতি আপনার অধিক নির্ভরশীলতা এবং পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে।

photo: buysellad

সুতরাং চারদিকে নজর রাখুন। বর্তমান সময়ের চিত্রকলার ট্রেন্ড তথা প্রবণতা ধরার চেষ্টা করুন। অনুধাবন করার চেষ্টা করুন অন্যান্য বড় শিল্পীরা কী করছেন, কেন করছেন, তারা কোথায় যেতে চান! এমনকি আপনি একটি নতুন প্রকল্প শুরু করার পরও প্রয়োজনে থামুন। আবার পেছনে ফিরে এসে ভালোভাবে বুঝে নিন আপনি প্রকল্পটি কেন করবেন, কিভাবে করবেন বা এই প্রকল্প দিয়ে কোথায় যেতে চান? এই অনুসন্ধান এবং অন্তদৃষ্টি আপনার সৃজনশীল কাজকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

৭. আরাম আয়েশ ত্যাগ করুন

আপনি কোনো সফল শিল্পীকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন তারা নিজের আরাম আয়েশ তথা আটপৌরে ধ্যানধারণা ত্যাগ করে শেখার চেষ্টা করেছে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশল খুঁজেছেন। যদিও এই কাজটা সহজ না, আর এর কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিও নেই।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

ভাবুন তো, একজন সৃজনশীল কিছু করতে চায় অথচ সে কোনোভাবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন না। তাহলে তার দ্বারা কি সৃজনশীল কোনো কিছু করা সম্ভব? আপনি ভালো ডিজাইনারদের সাথে সাক্ষাত করুন, তাদের পরামর্শ নিন। দেখবেন নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং আটপৌরে ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে আপনি নতুন কিছু শেখার জন্য উদ্যোগী হবেন, যা আপনাকে একজন শক্তিশালী শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *