ভালো বক্তা হওয়া এক ধরণের শিল্প এবং নিঃসন্দেহে অনেক বড় গুণ। ভালো বক্তা কেবল তারা হতে পারে যারা আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী। সাহসী ও আত্মবিশ্বাসীরা সকল ভয়কে জয় করে সফল হয়। তবে শুরুতেই আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায় না। আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী হতে হলে অনুশীলন করতে হবে। ভালো বক্তা একদিনে হওয়া যায় না। প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন ও পরিশ্রম। বিশেষজ্ঞ বক্তারা মনে করেন ভালো বক্তা হতে হলে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হয়, কিছু কাজ সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হয়। আজ আপনাদের জানাবো ভালো বক্তা হওয়ার কার্যকরী কিছু উপায় সম্পর্কে।
কথোপকথন ভিত্তিক বক্তব্য রাখুন
অনেকে মনে করেন বক্তৃতা দেয়া মানে হলো একটা স্ক্রিপ্ট দেখে দেখে কাঠখোট্টা ভাবে অনবরত বিরতিহীন ভাবে কথা বলা। অনেকে এমন ভাবনা অনুযায়ী কাজও করে থাকেন। তবে এই ধরণের বক্তব্য অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। বক্তাও অন্যের হৃদয় হরণ করতে পারেন না। আধুনিক বক্তাগণ মনে করেন বক্তব্য হওয়া উচিত আলোচনা ভিত্তিক। অর্থাৎ বক্তা বক্তব্য দেয়ার সাথে সাথে শ্রোতা ও দর্শকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিবেন। শ্রোতারা সেই প্রশ্নের উত্তর দিবে। এবং শ্রোতাদের মতামতকে বক্তা গুরুত্ব দিবে। এভাবে বক্তৃতা দিলে আলোচনা কিংবা সেশনটি সুন্দর ও গোছালো হয়। সেই সাথে সেশনে অংশগ্রহণকারী সকলে সেশনটা উপভোগ করে। এই ধরনের আলোচনা ভিত্তিক সেশনে বক্তা ভয় পায় না, নার্ভাস হয় না। বরং সুন্দর ও প্রাণবন্ত ভাবে সেশন সম্পন্ন করতে পারেন।
মূল ধারণা টুকু মাথায় রাখুন; হুবহু কোন আলোচনা নয়
আপনি যখন কোন বিষয়ের উপর বক্তৃতা দিবেন তখন মূল ধারণা টুকু মাথায় রাখুন ভালো করে। মনে রাখবেন হুবহু মুখস্থ করা কোন কিছু আলোচনা করতে যাবেন না। মুখস্ত করা কোন কিছু স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ব্যাখা করা যায় না। তাই মুখস্থ বিদ্যাকে ছুটি দিয়ে, মূল ধারণাকে প্রাধান্য দিতে হবে। মূল বিষয় সমূহ যদি আত্মস্থ থাকে তাহলে বক্তৃতা হবে প্রাণবন্ত ও সুন্দর। আর বক্তা হিসেবে আপনি অন্যের কাছে প্রিয় হতে পারবেন।
অনুশীলনের বিকল্প নেই
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে তা হলো “practice makes a man perfect” অর্থাৎ অনুশীলন বা চর্চা মানুষকে নিখুঁত করে তোলে। ভালো বক্তা হতে হলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হবে। ভয়, লজ্জা, হতাশাকে পায়ে ঠেলে নিজেকে বক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অন্যেরা কি বলছে, মন্দ বলছে কিনা, মানুষ কি বলবে এই ধরণের মনোভাব আজই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। যতদিন এই ধরণের মনোভাব আপনার মাথায় কাজ করবে, ততদিন আপনি সফল হতে পারবেন না।
ভালো বক্তা হওয়ার জন্য রোজ চর্চা করলে আপনি সফল হবেন নিশ্চিত। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে চর্চা করবেন? বাসার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চর্চা করতে পারেন, একা একা বক্তৃতা দিয়ে তা ভিডিও করার মাধ্যমে চর্চা করতে পারেন। ভিডিও করলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শারীরিক অঙ্গভঙ্গী ঠিক আছে কিনা, কোথাও পরিবর্তন আনতে হবে কিনা।
দর্শক সারিতে বসে থাকা অতিথিদের সাথে বাচনিক যোগাযোগ রক্ষা করুন
একজন বক্তার জন্য দর্শক সারিতে বসে থাকা অতিথিদের সাথে বাচনিক যোগাযোগ রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। বাচনিক যোগাযোগ বক্তাকে অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। কথা বলার সময় দর্শকদের চোখে চোখ রাখুন, প্রয়োজনে মিষ্টি করে মুচকি হাসুন। কথা বলার সময় বুঝতে চেষ্টা করুন শ্রোতাদের আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে। আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। বক্তব্য শুনতে শুনতে শ্রোতারা যদি বিরক্ত হয়ে যায়, তাদের জন্য অন্যরকম চমক রাখুন যেন তারা পুনরায় মনোযোগী হয়ে ওঠে। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে শ্রোতাদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিন।
সেশন শুরু করার আগে দর্শক ও শ্রোতাদের সাথে পরিচিত হোন
মূল সেশন শুরু করার আগে, উপস্থাপনা করার আগে হলরুমে উপস্থিত থাকা দর্শক ও শ্রোতাদের সাথে আলাপ করে নিতে পারেন। এর অনেক সুবিধা আছে। পূর্বে থেকে আলাপ, পরিচয় থাকলে বক্তৃতা দিতে সুবিধা হয়। মনে ভয় কাজ করে না। সহজে তারা আপনাকে গ্রহণ করতে পারবে। আপনি দর্শকদের মানসিকতা, পছন্দ, অপছন্দ সম্পর্কে জানতে পারবেন। মোট কথা সকলের সামনে বক্তব্য রাখার ব্যাপারটি খুব সহজ হয়ে যাবে।
আগ্রহ ভরা কণ্ঠে বক্তব্য পেশ করুন
হাজার মানুষের সামনে বক্তৃতা দিতে হলে প্রথমত সাহসী হতে হয়। ভালো বক্তারা সাহসী হয়ে থাকেন সেই সাথে তারা গুছিয়ে কথা বলেন। আপনি যখন বক্তব্য দিবেন তখন এমন ভাবে কথা বলুন যেন দর্শক বুঝতে পারে আপনি এই ব্যাপারে খুব যত্নশীল। আপনি আপনার কাজকে ভালবাসুন। নিজের কাজকে মূল্যায়ন করুন। তাহলে অন্যেরাও আপনার কাজকে মূল্যায়ন করবে।
ভালো বক্তারা মনে করেন যে কথাগুলো হৃদয়ের গভীর থেকে আসে সে কথাগুলো সারাজীবন মুখস্থ করেও শেখা যায় না। তাই বক্তব্য দেয়ার সময় চেষ্টা করুন মনের গভীর থেকে কথা বলতে। আপনার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পাবে আপনি কতটুকু জ্ঞানী এবং জ্ঞানের চর্চা করেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে যেন কোন ধর্ম, জাতি, দেশ, গোষ্ঠীকে আঘাত করা হয়, খাটো করা হয় এমন কিছুর প্রকাশ না ঘটে।
সময় নিন
বক্তৃতা দেয়ার এক পর্যায়ে একটু বিরতি নিন। বিরতির ফাঁকে পানি কিংবা চা খেয়ে নিন। মনে রাখবেন বক্তৃতা শুরু করা মানে ঘোড়ার দৌড়ের মতো দ্রুত শেষ করতে হবে তা নয়। আলোচনাকে সুন্দর, প্রাণবন্ত, গোছালো করে তুলতে সময় নিন। পুরো বিষয়টির জন্য মানসিক চাপ না নিয়ে সহজভাবে ভাবুন।