চিন্তাই মানুষকে আলাদা করে তার নিজস্বতা বোঝাতে সাহায্য করে। মানুষ এর চিন্তাই পদ্ধতিই বলে দিবে সে কেমন ও তার সামগ্রিক ভালো দিকগুলো। এই জন্য সদা আশাবাদী হওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়। আপনি যে অবস্থায় থাকুন না কেন, ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে সুখী রাখবে। আপনি যদি নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করেন তাহলে অস্বস্তি বোধ করবেন এবং এটা আপনাকে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেবে। শারিরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক চিন্তার বেশ প্রভাব আছে। আপনি জিতবেন নাকি হারবেন তার পিছনে যেমন ইতিবাচক/নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব আছে, তেমনি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে শারিরিক সুস্থতার উপরও ইতিবাচক বা নেতিবাচক চিন্তার প্রভাব বের করেছেন। এজন্যই ভালো জীবনযাপন করার জন্য, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ইতিবাচক চিন্তার চর্চা করা উচিৎ। তাই আজ আলোচনা করবো ইতিবাচক চিন্তার কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারী দিকগুলো সম্পর্কে।
মেজাজ ঠিক রাখা
মানুষ এর সফলতার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক তার মেজাজ। ভাল মেজাজ হলে আপনি অন্য লোকদের সাথে কাজ করতে পারবেন এবং সব কাজে ভাল ফল পাবেন। ইতিবাচক চিন্তা আপনার মেজাজ এবং অন্যান্য চিন্তার পদ্ধতি কে উন্নত করবে,যেগুলি সুখ ও ভালো সম্পর্ক কে প্রভাবিত করে। এটাকে আপনার মনকে সবসময় যথাযথ অবস্থায় রাখবে,যা মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমাবে। অনেক সময়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিংবা সম্পর্ককে আমরা খারাপ মেজাজের জন্য নষ্ট করে ফেলি। তাই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ।
জীবনে প্রত্যাশা বাড়বে
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা আশাবাদী তারা এই সকল লোকদের থেকে বেশি বাঁচে যারা নেতিবাচক চিন্তা করে। কারণ, আপনি যদি ইতিবাচক হয়,তাহলে অন্যদের চেয়ে উচ্চরক্তচাপ,ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগে কম ভুগবেন। আরো বলা যায় সে সেই অবস্থায় কম যাবেন, যা আপনাকে রোগের দিকে ঠেলে দিবে। এই অবস্থাগুলোর ঝুঁকি কমে যাওয়ায়, আপনি দীর্ঘ জীবন লাভ করবে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ইতিবাচক চিন্তা আর স্বাস্থ্য সম্পর্কযুক্ত, আশাবাদ দেহকে সাহায্য করে সাধারণ ঠাণ্ডার মতো রোগের সাথে লড়াই করতে। আপনি যদি সদা ইতিবাচক থাকেন,তাহলে আপনার ব্রেন শক্তিশালী হবে, যা আপনার দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে। ইতিবাচক আবেগ আপনার ব্রেনকে কম যান্ত্রিক করে, যা আপনার রোগ প্রতিরোধ এ সাড়া দেয়। জীবনে ইতিবাচক আচরণ এর দ্বারা,আপনি দ্রুত সার্জারি বা রোগ হতে আরোগ্য লাভ করবে।
বিপদ মোকাবেলার শক্তি পাবেন
জীবন কষ্ট ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ এ ভরপুর। ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে কষ্ট সামলানোর ভাল পথ দেখাবে। কারণ, যখন আপনার দেহ একটা সময় বলবে আপনার পক্ষে এটা মোকাবেলা সম্ভব নয়,তখন মন বলবে আপনি এটা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারবে অন্য কোন উপায়ে। ইতিবাচক মানসিকতা সেই উপায়টিও দেখিয়ে দেবে। ফলে অনেক সহজেই ঝামেলা এড়িয়ে যেতে পারবেন।
কোলেস্টেরল কমাবে
উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এটি নিয়ে সবাই চিন্তিত থাকে। ডায়েট এবং ব্যায়াম করা কোলেস্টেরল কমানোর খুব ভালো উপায়। কিন্তু আপনি কি জানেন শুধুমাত্র আশাবাদী হয়েই আপনি কোলেস্টেরল কমাতে পারেন?
Harvard School of Public Health ২০১৩ সালে একটি গবেষণা করে, যার ফলাফল পরে The American Journal of Cardiology তে এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাদের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, মধ্য বয়সী যারা এতে অংশ নিয়েছিল তাদের যারা আশাবাদী হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের উচ্চমাত্রার ‘ ভালো ‘ কোলেস্টেরল আছে। খুবই ভালো খবর নিশ্চয়ই!
নিয়মিত বই পড়া, হাটা কিংবা যোগব্যায়াম করলে – অনেক ভালো লাগবে। আপনি এবং আপনার মন সবসময় নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনা, কিন্তু এই কাজগুলো করলে আপনার মন ফ্রেশ থাকবে, একইসাথে ইতিবাচক, আশাবাদী করবে। এবং এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করবে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়
উচ্চ রক্তচাপ এর প্রধান কারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। ইতিবাচক চিন্তা উচ্চ রক্তচাপ কমাবে, কারণ ইহা ঐ চাপ কমায় যা এই সমস্যা প্রধান কারণ। যতো কঠিন সমস্যায় হোক না কেন, আপনি তা মোকাবেলার শক্তি পাবেন। আপনি যদি অকৃতকার্য কিন্তু আশাবাদী হন যে পরে সফল হবেন,এটা আপনার চাপ ও অন্য মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমাবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হঠাৎ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পরতে পারেন।
দৈহিক যন্ত্রণার সহ্যশক্তি বৃদ্ধি
ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে অনেক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়। জীবনে যখন কোন খারাপ কিছু ঘটে, তখন আপনি কম ব্যথিত হবেন। আপনি আশাবাদী হলে, শারীরিক ব্যথাও ভালভাবে নিতে পারবেন। ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে লড়াই করার আরো শক্তি দিবে সেই সব ব্যথার বিরুদ্ধে যা হাড়ভাঙ্গার, গলার ক্ষত ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথার কারণে হয়।
তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে
Canadian Medical Association Journal এর গবেষণা থেকে জানা যায়, ৬০ কিংবা তাঁর বেশি বয়সের মানুষ যারা হতাশাবাদী তাদের চলৎশক্তি খুব দ্রুত কমতে থাকে। এই গবেষণা যাদের নিয়ে করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা মাঝারি এবং অল্প হারে জীবনটাকে উপভোগ করছে, তাদের মধ্যে চলাফেরা ও শারিরিক দিকে বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেয়। কিন্তু যারা তাদের চেয়ে অনেক সুখি তারা এই সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারছে।
আমরা বৃদ্ধ হতে থাকি চলৎশক্তি ততই কমতে থাকে। তাই যত দেরিতে বার্ধক্যে যাওয়া যায় সেই চেষ্টাই করা উচিৎ। আশাবাদী মনোভাব, ইতিবাচক চিন্তা আমদের সেই ইচ্ছার সহায়ক হতে পারে। একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে আমরা শুধুই বেশি দিন বাঁচতে পারবো, তা নয়, একই সাথে বার্ধক্যের লক্ষণগুলোও দেরিতে আসবে।