বিদেশে উচ্চশিক্ষা কেবল জ্ঞানার্জন নয়, ব্যক্তিজীবনের জন্য বিশাল এক অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের অনেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নত মান ও ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রের চাহিদার জন্য হল্যান্ড, বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য একটি ভালো গন্তব্য হতে পারে।
হল্যান্ড, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ, যার আরেক নাম নেদারল্যান্ডস। এর রাজধানী আর্মস্টারডাম। “নেদারল্যান্ডস” কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল “নিম্নভূমি”। এর নামকরণটি যথার্থ, কারণ দেশটির মাত্র ৫০% ভূখণ্ড সমুদ্র সমতলের ১ মিটারের বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। তাদের প্রধান জাতীয় ভাষা ডাচ। তবে বেশিরভাগ নাগরিকই ইংরেজি ভাষা জানেন। এছাড়া ফ্রিশিয়ান এবং পাপিয়ামেন্টু ভাষারও প্রচলন আছে। ইংরেজি ভাষার প্রতি তাদের প্রধান আগ্রহের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরতাকে।
২০০৯ সালের সরকারি হিসেবে নেদারল্যান্ডসের জনসংখ্যা ১৬,৪৯১,৮৫২ জন। নেদারল্যান্ডস ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪১৫ জনের বাস। নেদারল্যান্ডস ইউরোপের ১১তম বৃহৎ জনসংখ্যা সমৃদ্ধ ও পৃথিবীর ৬১তম দেশ। ২০০৮ সালে নেদারল্যান্ডসে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৪৩৬%। জিডিপি (পিপিপি) ৫৩,১৪৯ ইউএস ডলার যা বিশ্বে ১৩তম সর্বোচ্চ। দেশটির মুদ্রা ইউরো। হল্যান্ড ইউরোপের সেঞ্জেনভূক্ত একটি দেশ।
নেদারল্যান্ডস একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র যেখানে সব নাগরিককে বিনামূল্যে বা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা, পরিবহণ অবকাঠামোগত ব্যবহারের সুবিধাসহ আরো অনেক ধরনের সামাজিক সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে।
হল্যান্ডকে জীবনধারণ এবং অধ্যয়ন করার জন্য বিশ্বের তৃতীয় সেরা দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। দেশটি উদ্ভাবনী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিশ্বে ব্যাপক ভাবে পরিচিত। তাই আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য দেশটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আপনি স্নাতক, ডিপ্লোমা, মাস্টার্স, পিএইচডি যে বিষয়েই পড়তে চান না কেন, হল্যান্ডে সব ধরনের প্রোগ্রামই রয়েছে। সাধারণত ব্যাচেলর কোর্স (৩-৪ বছর মেয়াদী), মাস্টার্স কোর্স (১-২ বছর মেয়াদী), পিএইচডি কোর্সগুলো ৩-৫ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে।
হল্যান্ডের শীর্ষ কয়েকটি ইউনিভার্সিটি হচ্ছে- ডেলফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি, ইউনিভার্সিটি অব আর্মস্টারডাম, এইন্ডোভেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, লাইডেন ইউনিভার্সিটি, ইউট্রেট ইউনিভার্সিটি, গ্রোনিনগেন ইউনিভার্সিটি।
হল্যান্ডে প্রতি ৮জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী বিদেশী। এদেশে প্রায় ১,২২,০০০ বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন এবং প্রতিবছর এই সংখ্যাটি বাড়ছে। চাইলে আপনিও উচ্চশিক্ষার জন্য হল্যান্ডকে বেছে নিতে পারেন।
এবার চলুন জেনে নিই, হল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য কী কী সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
১. ২১০০ এরও বেশি ইংরেজি কোর্স রয়েছে
ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইংরেজি বিষয়ক কোর্স অফার করে থাকে। ৭৭টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২১০০+ বেশি ইংরেজি শিক্ষা প্রোগ্রাম রয়েছে। হল্যান্ডের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলো বিশ্ব রেঙ্কিং অনেক এগিয়ে।
এখানে পড়াশোনা করার জন্য অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের বিষয়। ৯৫% ডাচ নাগরিক ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। তাই, সহজেই আপনি ডাচ নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।
২. উচ্চ মানের শিক্ষা ব্যবস্থা
ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান খুব উন্নত এবং ডিগ্রি সার্বজনীন স্বীকৃত। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় পড়াশুনা এবং জীবন যাত্রার খরচ অনেক কম। এছাড়াও রয়েছে স্কলারশীপের প্রচুর সুযোগ।
৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ
হল্যান্ডে প্রতিবছর ১৯০টি দেশ হতে প্রচুর বিদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন। ডাচ সমাজ দৃঢ়ভাবে অন্যান্য সংস্কৃতি, ব্যাসায়িক সম্প্রদায় এবং বিশ্বের সাথে সংযুক্ত। যেহেতু পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে অনেকেই পড়তে আসেন, সেক্ষেত্রে নানা রকম মানুষের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ থাকে। যার ফলে অন্যান্য দেশের সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক এবং নিয়ম নীতি সম্পর্কে জানা যায়।
এছাড়াও ডাচরা খোলা মনের অধিকারী এবং বন্ধুপরায়ণ। তাই তাদের সাথে মেলামেশা এবং ধরনা বিনিময় করা সহজ।
৪. মূল্যবান দক্ষতা অর্জন
ডাচ শিক্ষা ব্যবস্থা গবেষণা কেন্দ্রিক। এখানে সবকিছুই আপনি হাতে কলমে শিখতে পারবেন। জীবনে সফল হতে হলে যেসব দক্ষতা দরকার, হল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে এসে সবকিছুই শিখতে পারবেন। হল্যান্ডে পড়াশুনার করার মানে হলো আপনার নিজস্ব মতামতের উন্নয়ন, খোলা মনের অধিকারী হওয়া, আন্তর্জাতিক অভিযোজন বৃদ্ধি করা।
এছাড়াও বিভিন্ন মূল্যবান দক্ষতা যেমন: বিশ্লেষণ, বাস্তব সমস্যার সমাধান এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটাতে পারবেন।
৫. বিশ্বের সবথেকে নিরাপদ এবং সুখী দেশগুলোর মধ্যে একটি
গ্লোবাল পেস ইনডেক্স ২০১৬ (Global Paece Index) অনুসারে, হল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং বিশ্বের সুখী ১০টি দেশের মধ্যে একটি।
দেশটি সর্বনিম্ন অপরাধ হারের জন্য জনপ্রিয়। সম্প্রতি তাদের তিনটি কারাগার বন্ধ করা হয়েছে কারণ কারাগারে কোন বন্দি কয়েদী ছিল না।
৬. হল্যান্ড ইউরোপের গেটওয়ে
হল্যান্ড এমন একটি দেশ, যেখান থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশ একদম কাছাকাছি। মাত্র তিন ঘণ্টায় আপনি প্যারিস যেতে পারেন। মাত্র পাঁচ বা ছয় ঘণ্টায় আপনি পৌঁছে যাবেন লন্ডন এবং বার্লিন।
তাই হল্যান্ডকে ইউরোপের গেটওয়ে বলা হয়।
৭. আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রচুর সুযোগ
হল্যান্ড বিশ্বের ১৮তম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ। বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি যেমন: ফিলিপস, হেইনেকেন, কিএলএম, শেল, আইএনজি এবং ইউনিলিভার এসব হচ্ছে ডাচ কোম্পানি। হল্যান্ড কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা, শিল্প এবং নকশা, সরবরাহ এবং টেকসই শক্তিসহ অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে।
হল্যান্ডে ক্যারিয়ার নির্বাচন করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। অনেকগুলো ক্যারিয়ারের মধ্যে আপনি পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
৮. পড়াশুনা শেষে হল্যান্ডে ক্যারিয়ার গড়া
ডাচ সরকার ভালো গ্রাজুয়েট এবং প্রতিভাশীল শিক্ষার্থীদের তাদের দেশে ধরে রাখতে চায়। বিদেশি গ্রাজুয়েটরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছর থাকার অনুমতি চেয়ে (রেসিডেন্স পারমিট) আবেদন করতে পারবেন।
অথবা আপনি চাইলে, হল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা শেষে তিন বছরের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
Featured Image: worldpopulationreview.com