আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই আছে গল্প। সবার ক্ষেত্রেই সেটা সংগ্রামের গল্প, উঠে দাঁড়ানোর গল্প। ধনী গরীব সবার জীবনে থাকে গল্প-ভিন্ন ভিন্ন গল্প। মধ্যবিত্তদের গল্প হয় ভালোভাবে বাঁচার কিংবা উপরে ওঠার গল্প- গরীবের গল্প হয় তিন বেলা খেতে পাওয়ার গল্প আর বিত্তবানদের? তাদের গল্পে থাকে প্রাচুর্য এবং সম্পত্তির মাঝে শান্তি খোঁজার চেষ্টার গল্প। জীবনের গল্প নিয়ে এত কথা কেন? আজ জীবনের গল্প নিয়ে আমাদের গল্প। কিভাবে সেই গল্প আমরা আমাদের মতো করে লিখতে পারি তার গল্প শিখবো আমরা। সমস্যায় পড়লে আমাদের করণীয় কী কিংবা সংগ্রামের সময় কী করণীয় আমাদের এরকম ৮টি টিপস নিয়ে এলাম আপনাদের জন্য।
১. প্রথমে আপনার সমস্যা এবং সংগ্রামের অংশটুকু খুঁজে বের করুন
আমরা সবাই জীবনে সংগ্রামে সময় পার করছি এবং সামনেও করবো। সংগ্রামের সময় যদি আমরা আমাদের সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারি তবে আমাদের সামনে থাকে অপার সুখের সময়। তাই এখন যদি আপনার উঠে দাঁড়ানোর সময় হয় তাহলে লেগে থাকুন কিন্তু বুঝবেন কি করে আপনার করণীয় কি এই সংগ্রামের সময়ে! প্রথমেই আপনার সমস্যা কিংবা সংগ্রামের কারণ খুঁজে বের করুন। সেই কারণের উৎস খুঁজে পেলে সমস্যা সমাধান যেমন সহজ হবে তেমনি জীবন সম্পর্কে সহজ ধারণা তৈরি হবে।
২. আপনার অতীতের সংগ্রামের গল্প মনে করুন
আমরা জীবনে সবাই বিপদে পড়েছি, সংগ্রাম করেছি। কেননা আমরা মানুষ শুধু মাত্র খাওয়া ঘুম আর বেঁচে থাকায় বিশ্বাসী নই। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। আর চ্যালেঞ্জ মানেই সংগ্রামের কথা। সেই শিশুকাল থেকেই শুরু হয় মানুষের সংগ্রাম। তাই আপনি যদি এখন সংগ্রামের সময় পার করছেন তবে আপনার সংগ্রামের কারণ খুঁজে পাওয়ার পর মনে করুন অতীতকে। সেখানে আপনি কিভাবে সংগ্রাম করেছেন, কিভাবে বিপদ কাটিয়েছেন মনে করার চেষ্টা করুন। তার মাঝেই আছে সামনে এগিয়ে যাবার সূত্র।
৩. সমস্যা কখনোই একা একা সমাধান হয় না
প্রবাদে আছে না,’যে নিজের ভালো বোঝে না স্রষ্টা তার ভালো করেন না।’ সংগ্রামী বা লেগে টাইপের মানুষগুলো খুব কর্মঠ হয়। সংগ্রামী মানুষেরা সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকেন না বরং তারা চেষ্টা করে কিভাবে সমাস্যার সমাধান করা যায়। সংগ্রামী মানুষেরা বিপদে পড়লে কখনোই বলেন না যে আমি কেন এই বিপদে পড়লাম বরং তারা বলেন, আমি কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে পারি, আমার করণীয় কী! সমস্যা কখনোই একদিনে সমাধান হয় না। তাই আপনি যত লেগে থাকবেন তত দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে এবং আপনি ফিরে পাবেন আপনার আত্মবিশ্বাস।
৪. নিজের ভালো দিক গুলো খুঁজে বের করুন এবং সেগুলোকে ব্যবহার করুন
সাধারণত যেসব মানুষ লেগে থাকে তারা তাদের অতীত থেকে শিক্ষা নেয় এবং নিজের ভালো গুণগুলো আলাদা করে সনাক্ত সেই বিপদের সময়েই। এই পৃথিবী এত সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় কেন জানেন? কারণ আমরা প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা। আমাদের সবার গল্প আলাদা আলাদা। কেউ বুদ্ধিমান, কেউ কর্মঠ কিংবা কেউ কাজপাগল। এরকম নিজের ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করুন, দরকার হলে কাগজে নোট করে দেয়ালে ঝুলিয়ে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন। নিজের এই ভালো গুণগুলোকে কাজে লাগিয়েই এগিয়ে যান সামনে।
৫. পরামর্শ নিন
আমাদের অনেকের ব্যক্তিত্বের কারণে সংগ্রামের সময়টা আরও কঠিন হয়ে যায়। আপনি যদি বিপদের সময় কারো পরামর্শ নেন তাহলে অন্যভাবে সেই সমস্যা সামাধান করা যেতে পারে। আমরা অনেকেই প্রবল আত্মবিশ্বাস এবিং গরিমার কারণে কাজটি করি না। তাই প্রিয় মানুষের কাছে সাহায্য চান কিংবা পরামর্শ নিন। বুদ্ধিমান এবং সংগ্রামী মানুষেরা অন্যের পরামর্শ নেয়। এর মানে এই নয় যে, আপনাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। কাছের মানুষ কিংবা পরিবারের অন্যদের সাথে সমস্যাটা নিয়ে বসুন। বাংলায় একটা কথা আছে ‘যত মত, তত পথ’। আপনি যখন অন্যের পরামর্শ চাইবেন আপনার সামনে সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন পথ খুলে যাবে। পরামর্শের ক্ষেত্রে বন্ধু কিংবা বায়োজ্যোষ্ঠদের শরণাপন্ন হন, কেননা তারাই আপনাকে দেবে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সমাধান।
৬. নিজের ঢোল না পেটানোই ভালো
সংগ্রামের সময়টা সবার জন্যই কঠিন। সেই সময় আপনি মানুষ চিনবেন, এ সময় আপনি পাবেন আপনার সারা জীবনের মানুষদের। আবার এ সময় আপনি চিনতে পারবেন দুধের মাছিদের। তবে এই বিপদের সময় কথা বলবেন সাবধানে। বিপদের সময় আপনি যখন আপনার কথা শেয়ার করবেন অন্যদের সাথে তখন অনেকে বিষয়টা নিয়ে মজা করবে, আপনাকে নিয়ে মজা করবে। বিশেষ করে দুধের মাছিরা। দুধের মাছিরা শুধু আপনাদের ছেড়ে যাবে না আপনাকে বিপদেও ফেলবে। তাই বিপদের সময় পরিবারের কাছে যান এরপর বিশ্বাসযোগ্য মানুষদের কাছে, তারা আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে। আমরা প্রিয় মানুষদের সাথে সাধারণত সব কিছু শেয়ার করি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সাবধান থাকা উচিৎ কেননা বিপদের সময় মস্তিষ্ক ভালোবাসা কি তা বোঝে না। মস্তিষ্ক বোঝে কার সান্নিধ্যে আপনি খুশি হন। মস্তিষ্কের এই ঘোরপ্যাঁচে পড়ে নিজের মান সম্মান না হারানোই ভালো।
৭. মানসিক বিরতি নিন
বিপদের সময় বুদ্ধিমান এবং সংগ্রামী মানুষদের চেষ্টা থাকে কিভাবে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়। বিপদ যেমন হুট করে আসে ঠিক তেমনি হুট করে চলে যায় না। বিপদের সময় বুদ্ধিমান এবং সংগ্রামী মানুষেরা নিজেকে শান্ত রেখে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। কেউ বই পড়ে, কেউ তার নেশাকে খুঁজে সেই শখে মেতে থাকে আর কেউ বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে মানসিক এইসব চাপ থেকে দূরে থাকে। একদিনে হয়তো কখনই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না তবে মনকে বিরতি দিলে আপনি নতুনভাবে শুরু করতে পারবেন এবং নতুন নতুন সমাধান খুঁজে পাবেন। তাই সংগ্রামী মানুষ হতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিজেকে শান্ত করতে হবে এবং ঠাণ্ডা মাথায় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। একটি কথা এভাবে চিন্তা করে দেখুন, সারা পৃথিবীতে কত অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে, কত কিছু বদলে যাচ্ছে কিন্তু আমরা এতে মনোযোগ কম দেই। তাই আমরা সুন্দর জীবন নিয়ে থাকতে পারি। ধরুন, আপনি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে চাকরি করেন। ভালো বেতন কিন্তু আপনার মনে সব সময় ভয় এই বুঝি চেরনোবিলের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে তাহলে কখনই শান্তিতে কাজ করতে পারবেন না। তাই বিরতি নিন, এরপর আবার শুরু করুন
৮. নিজের উপর আস্থা রাখুন এবং নিজের অতীতের থেকে শিক্ষাগুলো মনে রাখুন
যারা জীবনে সংগ্রাম করেছে তারাই বড় হয়েছে-এই কথা আমি আপনি সবাই শুনে এসেছি। কারণ যারা সংগ্রাম করেছেন জীবন নিয়ে তারা জীবনের এপিঠ এবং ওপিঠ দুটোই দেখেছেন। তবে এখানে কিছু বিষয় বা ‘কিন্তু’ থেকেই যায়। সমস্যার পরিমাণ, গভীরতা, তার হাতে কি সুযোগ সুবিধা ছিল বা ছিল না এগুলোকেও ফ্যাক্টর হিসাবে ধরা হয়। বিপদের সময় নিজের অবস্থান থেকে কিভাবে উঠে এসেছেন এই সবই আমাদের অভিজ্ঞতা। বলা হয় অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা ছাড়া কিছুই নেবার নেই। তাই বিপদে আমরা কি শিখেছি সেটাই বড় বিষয়। আমরা বিপদে পড়লে বলি আমাদের সাথেই কেন এমন হয়, আমরা কিন্তু চিন্তা করি না নতুন একটি সমস্যা মানে নতুন একটি চ্যালেঞ্জ। আর নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা মানে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন। আর সেই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই আমরা সামনের বিপদ থেকে রক্ষা পাই এবং আরও সামনে এগিয়ে যাই।
উদাহারণ দিয়ে বুঝিয়ে বলি, ধরুন আপনার পরিবারের কেউ একজন প্রথমবার স্ট্রোক করলো আপনি তখন দিশেহারা হয়ে যাবেন, বুঝতে পারবেন না কি করতে হবে। আগে ডাক্তার ডাকবেন না হাসপাতালে নিবেন। এইবারের মতো সমস্যা কোনো রকম উতরে গেলো। আপনি যদি বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন তাহলে পরের বার আগের ভুলটি আর করবেন না। আগে যে সমস্যা হয়েছিল সেগুলো মনে রেখে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবেন তাহলে যেমন আত্মবিশ্বাস পাবেন তেমনি বিপদ এড়াতে পারবেন দ্রুত। তাই নিজের দৃঢ়তার উপর মনোযোগী হন দেখবেন সাধারণ একজন মানুষ হয়েও কিভাবে আপনি সাফল্যের শিখরে উঠছেন।
আমরা আমাদের চারপাশে অনেক জেগে ওঠার গল্প শুনি এবং দেখি। পৃথিবীর সেরা মানুষ-ধনী ব্যক্তিদের জীবনী পড়লে একটি ব্যাপার সবার মাঝে খুঁজে পাবেন তা হচ্ছে চেষ্টা, চেষ্টা এবং চেষ্টা। তাই নিজেকে গড়তে চান সুন্দর করে কিংবা নিজেকে আরও ভালোভাবে দেখতে চান তাহলে লেগে থাকুন।