শরীর যেন এক পাগলা ঘোড়া। কখন যে সে কোনদিকে যাবে তার ঠিক নেই। এই ধরুন আপনার হাতে প্রচুর কাজ, কিন্তু আপনার লাগছে অলসতা। আবার খুব গম্ভীর কোনো অবস্থায় হঠাৎ এত হেসে ফেললেন যে ব্যাপারটা খুব লজ্জার হয়ে দাড়ালো। এমনই কিছু বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এই ৮টি কৌশল জানা থাকলে।
১. মাথা ঘোরা কমাতে
মাথা ঘোরার ভাব হঠাৎ হলে সাধারণত মানুষ নিজের শরীরের ব্যালান্স রাখতে না পেরে পড়ে যায়। যখনই বুঝবেন আপনার মাথা ঘুরাচ্ছে, খাটাতে পারেন এই ট্রিকসটি। দুই কানের ভেতর দিয়ে নিজের দুই হাতের তর্জনী দিয়ে যথাক্রমে উপর নিচে ঘোরাবেন। কানের ভেতরে না দিতে চাইলে কপালের দুইপাশে হাতের আঙুল রেখে বৃত্তাকারে ঘোরালেও কাজ হবে। এতে মাথার ভেতরের চাপের ভারসাম্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে, মাথা ঘোরাও কমে যাবে।
২. ব্যথা কমাতে
ঘর থেকে বেরোতে চৌকাঠে লেগে পায়ে ব্যথা পেলেন, খাবার রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেললেন অথবা সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হঠাৎ পা মচকে ফেললেন। যেভাবেই হোক ব্যাথা পেলে আমরা আপনা আপনিই রাগবশত বলে ফেলি ‘ধুত্তোরি ছাই’ অথবা আর অশ্রাব্য শব্দ।
আবার একটু পরই বিব্রতবোধ করি এমনটা করার জন্য। লজ্জার কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যথা পেলে চিৎকার বা যাচ্ছেতাই চেঁচামেচিতে ব্যথা অনেকটা উপশম হয় কারণ ঐসময় ব্যথা অনুভবের চেয়ে মস্তিষ্ক চিৎকার করতে ব্যস্ত থাকে।
৩. চোখের পানি পড়া থামাতে
মনের কষ্টে বা চোখ কিছু গেলে চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে যায়। যে কারণেই হোক চোখের পানি ঝরুক এটা আমাদের প্রিয়জন তো বটেই, নিজেরাও চাই না।
তাই চোখ দিয়ে পানি পড়া কমাতে ঘাড় উপরের দিকে তুলে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যতক্ষণ সম্ভব ততক্ষণ চোখের পাতা না ফেলার। এতে আপনা হতেই চোখের পানি পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
৪. নাক ডাকা বন্ধ করতে
সারাদিন ক্লাস ও পড়াশোনা শেষে হোস্টেলে এসে ঘুমালেন, কিছুক্ষণ পরেই শুনলেন নাক ডাকার গর্জন। অথবা প্রিয়তম সঙ্গীর সাথে একই বিছানায় ঘুমাতে চেষ্টা তো করলেন, কিন্তু তার নাক ডাকার চোটে আপনার ঘুম হারাম হয়ে গেলো। কী মারাত্মক সমস্যা, তাই না?
নাক ডাকার সমস্যা কাটাতে প্রয়োগ করুন একটি ট্রিকস, চিৎ হয়ে না শুয়ে ডান বা বামে কাত হয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে ঘুমান। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে, নাক ডাকাও কমে যাবে।
৫. ক্লান্তি দূর করতে
ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে পরীক্ষার পড়া পড়তে যেয়ে মাথা ধরে গেছে? বা অফিসে সারাদিন খাটতে গিয়ে বিরক্ত! বিক্ষিপ্ত মন আর ক্লান্ত শরীরকে উদ্দীপ্ত করুন এই ছোট্ট কৌশলের মাধ্যমে।
দাঁত দিয়ে পেন্সিল বা কলম চেপে ধরুন। এতে আপনাকে অনেকটা হাসিমুখে যেমন দেখাবে তেমনি মুখের পেশিগুলোর সঞ্চালনের ফলে মস্তিষ্কের চাপ কমবে। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ফিরে পাবেন পুরনো উদ্যম।
৬. হেঁচকি থামাতে
হেঁচকি ওঠা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা কুসংস্কার আছে যে, পানি কম খেলে এটা হয়। কিন্তু আসলে তা নয়। হেঁচকি ওঠার সমস্যাটা মূলত হয় শ্বাস-প্রশ্বাসের যেকোনো রকম অসামঞ্জস্যের জন্য ডায়াফ্রামের অবস্থানচ্যুতির ফলে। বুঝলেন না? আমাদের বুক আর পেটের মাঝে একটা পর্দা থাকে যার নাম ডায়াফ্রাম। শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের সময় এর সংকোচন-প্রসারণ হয়।
হেঁচকি কমাতে যেটা করা যেতে পারে সেটা হলো আপনার শ্বাস ধরে রাখুন বেশ কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এতে করে ডায়াফ্রামের অবস্থান স্বাভাবিক হয়ে আসবে, সাথে কমে আসবে হেঁচকিও।
৭. হাসি থামাতে
কমেডি শো’র অভাব নেই টিভিতে, চারদিকে অভাব নেই বিনোদনের। বন্ধুর হাসির জোকস শুনে বা ইউটিউবে কোনো ভিডিও দেখে হাসছেন তো হাসছেনই। হাসি অবশ্যই ভাল, তবে স্থান, কাল, পাত্রভেদে সবক্ষেত্রে হাসি মানায় না। এই ধরুন ক্লাসে টিচারের কোনো প্রশ্নের উত্তরে সহপাঠীর বোকা উত্তরে এমন হাসির রোল ফেলে দিলেন, টিচার তাকে রেখে আপনার দিকেই তাকাল কড়া চোখে।
তো এমন হাসি থামাতে ছোট্ট একতি কৌশল জেনে রাখুন। প্রচন্ড হাসির দমক নিমেশেই কমে যাবে যদি আপনি আলতো করে জিহ্ববায় কামড় দেন বা হাতে চিমটি কাটেন। অর্থাৎ আকস্মিকভাবে অল্প ব্যথা পেলে আপনার হাসি কমে আসবে।
৮. ঘুম ঘুম ভাব কাটাতে
আলস্যভাবই যেন যেতে চায় না সারাদিন। ঘুম থেকে ওঠা হয় না এলার্ম শুনেও। কারণ ঐ প্রচন্ড ঘুম ঘুম ভাব আর আড়ষ্টতা। সারাদিনের কাজেও লেগে থাকে এই আলস্য ভাব। বাসে ভ্রমণ করছেন, ক্লাসের লেকচার শুনছেন কিংবা অফিস ডেস্কে একটু ফুরসত পেয়েছেন তো ঘুমে বিভোর! এই ভাব কাটাতে জেনে রাখুন একটি কৌশল।
যদিও কৌশলটি অনেক প্রচলিত তবু জেনে রাখুন ভালভাবে। ঘুম থেকে উঠে কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিন, আর আস্তে আস্তে ছাড়ুন। সাথে দুই হাত দুইদিকে প্রসারিত করুন। এতে ঘুম ভাব অনেকটা কেটে যাবে। সারাদিন যখনই আলস্য ভর করবে, কয়েকবার এই কৌশল প্রয়োগ করুন, দেখবেন ঘুম কোন জানলা দিয়ে গায়েব।