“তুমি বড় হয়ে কি হবে?” এই প্রশ্ন শুনেনি এমন মানুষ পাওয়া কষ্টসাধ্য নয় বরং অসম্ভব। কেউ যদি এই প্রশ্ন নাও শুনে থাকেন তাহলে শিক্ষাজীবনের কোনো না কোনো সময় ‘Aim In Life’ কিংবা ‘জীবনলক্ষ্য’ শীর্ষক রচনা লিখে থাকবেন। কারো স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া, কারো স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, কেউ বা আর্টিস্ট। মানুষ ভেদে তাদের লক্ষ্য আলাদা, কিন্তু সবগুলো লক্ষ্যের একটাই উদ্দেশ্য তা হলো একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যাতে জীবনে অভাব না থাকে, সকল প্রকার চাহিদা মেটানোর সামর্থ্য অর্জন করতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনে নানা রকমের খরচ থাকে। কারো ইচ্ছা পুরো দুনিয়া দেখা, কারো ইচ্ছা পরিবারকে নিয়ে খুব সুন্দরভাবে জীবন টা অতিবাহিত করা। সব ইচ্ছা পূরণের জন্যই প্রয়োজন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা, কিন্তু অনেকেই সেই লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য দেখেন না। প্রথম মিলিয়ন অর্জন করা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়, এর জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়।
মিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে আসবে অনেক বাধা বিপত্তি, সেগুলোকে অতিক্রম করেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। নিম্নলিখিত ৯টি বাধা অতিক্রম করলে আপনিও হতে পারেন আগামী দিনের মিলিয়নিয়ার।
১. কাজের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়তা
“এই কাজ করবো,কাজটা তো খুব সহজ।” এই কথাটা বলা খুব সহজ কিন্তু কাজটা শেষ করা আসলেই কঠিন। কোনো কাজই সহজ নয়। কোনো কাজ শুরু করার পর সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হলো আশেপাশের মানুষদের কথা। কোনো নতুন কাজ শুরু করলেই মানুষ সেই কাজ নিয়ে সমালোচনা করবে। সেসব কে উপেক্ষা করেই কাজে আগাতে হবে তা না হলে লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব।
কাজ করবো করবো বলে রেখে দিলে কাজ কখনোই শেষ হবে না। কাজের প্রতি তাই দায়িত্বশীল হওয়া অতীব প্রয়োজনীয়।
২. লোকে কি বলবে?
যেকোনো কাজই করতে যান না কেন সমালোচনা হবেই! লোকজন সমালোচনা করবেই। আশেপাশের মানুষজন যদি আপনার কাজের সমালোচনা না করে তবে বুঝে নিবেন কাজটা আপনি সঠিক ভাবে করছেন না। মানুষ জনের কথা অনেক সময় গলার কাঁটার মতো লাগে। অনেকেই এই পর্যায়ে এসে পিছপা হয়ে যান। কিন্তু না, এটাই সঠিক সময় কাজে এগিয়ে যাওয়ার। আপনাকে কাজের মাধ্যমেই মানুষকে দেখিয়ে দিতে হবে যে আপনি ভুল কিছু করছেন না।
জীবনটা খুবই ছোট, এই ছোট জীবন নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে নিয়ে কাটানোটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। মানুষ তো কথা বলবে। মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো করে জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যান, সাফল্য আসবেই।
৩. বন্ধু নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত
বন্ধু নির্বাচন জীবনের জন্য খুব বড় একটি সিদ্ধান্ত। কথায় আছে,”সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস,অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।” আপনি যদি ভুল মানুষের সাথে দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটান তাহলে আপনিও তার দ্বারা প্রভাবিত হবেন। নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের সাথে থাকতে হবে যার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আপনি আপনার অনেক দিনের বন্ধুত্ব নষ্ট করবেন। সব কিছু ভেবে কাজ করাই একজন সফল মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৪. অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়া
জীবন কখনও সহজ রাস্তা নয়। জীবনে এমন অনেক সময় আসবে যখন মনে হবে কোনো কিছুই ঠিক নেই। অনেকের একজনের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবার স্বভাব রয়েছে। মানুষ মাত্রই ভুল। বড় লক্ষ্য অর্জনের আগের সময়টিতে অনেক ভুল হতে পারে। এরকম অনেক পরিস্থিতি আসবে যেখানে নিজের লক্ষ্য অস্পষ্ট মনে হতে পারে। এছাড়াও অনেক মুহূর্ত থাকতে পারে যা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তগুলোতে আমরা বুঝে উঠতে পারি না যে কি করতে হবে। এবং তখনই আমরা ভুল কাজ করে বসি। অন্যকে সেই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করতে থাকি। এ ধরণের কাজ করা মোটেও উচিত নয়। তাই অন্যের উপর দোষ না দিয়ে নিজের নিজে ঠিকমতো কাজ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. কাজের মাঝে সৃজনশীলতার অনুপস্থিতি
আমরা যদি আর দশটা মানুষের মতো চিন্তা ভাবনা করি তবে আমাদের জীবনটাও ঐ আট-দশটা মানুষের মতো হবে। সাধারণ জীবনযাপন থেকে একটু আলাদা হতে হলে আমাদের চিন্তা ভাবনাও আলাদা হতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সৃজনশীলতা। কাজের মাঝে সৃজনশীলতা, নতুনত্ব না থাকলে আমাদের লক্ষ্য অর্জন অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
ধরুন আপনি একটি খাবার দোকান দিবেন, সেখানে আপনি যদি নিয়মিত যেসব খাবার খাওয়া হয় সেগুলো না রেখে একটু ভিন্ন ধাঁচের খাবার রাখেন তবেই তা হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়। সব কাজের মাঝে সৃজনশীলতা থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
৬. আত্মতুষ্টি
সবার জীবন যাপনের একটি ধারা থাকে, সেই ধারা পরিবর্তন করা কিছুটা কষ্টসাধ্য। আর সেটি আরো কঠিন হয়ে পড়ে যদি আপনার পরিবার বা এরকম কোনো বড় দায়িত্ব থেকে থাকে। কোনো কাজের জন্য ইচ্ছা শক্তি সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। ঝুঁকি নিতে হবে, এসব ঝুঁকি নেয়ার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল। আর এভাবেই আপনি এগিয়ে যাবেন নিজের লক্ষ্যে।
৭. স্বভাবে পরিবর্তন না আনা
সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার জন্য আপনাকে নিজের স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে এমন মনোভাব থাকা লাগবে। নিজের মাঝে থেকে সেরাটা সবার সামনে আনার জন্য প্রয়োজন নিজেকে পরিবর্তন করা, নিজেকে সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেয়া।
নিজের মাঝে এই পরিবর্তনশীল মনোভাবটা থাকলে আপনি খুব সহজে বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন এবং আপনার লক্ষ্য অর্জন হয়ে যাবে আরো সহজ।
৮. আত্মবিশ্বাসের অভাব
আত্মবিশ্বাস,এটি সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। আপনি যদি প্রথম দিন থেকেই বলেন, আপনি কাজটি শেষ করতে পারবেন না। তাহলে আপনি কখনোই ঐ কাজটি শেষ করতে পারবেন না। আপনার মাঝে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে, আপনি পারবেন, আপনাকে দিয়েই কাজটি সম্ভব। তাহলেই দেখবেন কাজটি কত সহজ হয়ে গিয়েছে!
৯. নতুন কিছু শেখায় অনিচ্ছা
জীবনে শেখার কোনো সময় নেই। প্রতিদিন আশেপাশের বিভিন্ন ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু সেই ইচ্ছা আমাদের থাকা প্রয়োজন। সময় বদলাতে থাকে, সময়ের সাথে সাথে নতুন জিনিষ শেখা বাধ্যতামূলক। আপনাকে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে হবে। প্রতিদিন নানা ঘটনা ঘটছে এই বিশ্বে,তার খবরাখবর আপনাকে জানতে হবে।
সব কিছুই সম্ভব যদি আপনার থাকে সেই ইচ্ছা। নিজের ইচ্ছার জোরেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।