সব ইন্ডাস্ট্রিতেই সেরা কিছু মানুষ থাকে। যারা কর্মক্ষেত্রে আপনার আমার সবার থেকে এগিয়ে থাকে, কিন্তু আপনি যদি একজন সমস্যা সৃষ্টিকারী কর্মী হন তাহলে?
সমস্যা সৃষ্টিকারী কর্মী মানে এই নয় যে, আপনি মানুষ হিসাবে ভালো নন, বোকা কিংবা অলস। আবার আপনি ভালো মানের কর্মী নন মানে এই না যে, আপনি ক্যারিয়ারে সফল হবেন না। অফিসে আপনার কাজ – ব্যবহার শুধু আপনার কারণেই তৈরি হয় না, কর্মক্ষেত্রের উপরেও নির্ভর করে। হতে পারে আপনার বস যেভাবে চায় আপনি সেভাবে কাজ করেন না কিংবা আপনি অফিসের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেন না অথবা আপনি ভুল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। তবে চাকরিতে ভালো মেন্টর না থাকলে আপনার নিজের পক্ষে নিজের কাজের মূল্যায়ন করা কঠিন। আর সত্য বলতে আপনি হয়তো আসলেই ভালো মানের কাজ করছেন না এবং হয়তো নিজেও বুঝতে পারছেন না- কেউ আপনাকে সেই ভুল ধরিয়েও দিচ্ছে না।
আপনি যদি নিচের লক্ষণগুলোর বেশ কিছু আপনার মাঝে খুঁজে পান তাহলে আপনার কাজ এবং কর্মস্থল নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবা উচিত!
১. আপনি সময়ানুবর্তী নন
আপনি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্ল্যান ভুলে গেছেন, ডেডলাইন দরজায় কড়া নাড়ছে, আপনি মিটিং এ ঢুকলেন দেরি করে কিংবা নিজের ইচ্ছা খুশি মতো অফিস করতে ঢুকলেন। এই সব ছোট খাট আচরণ প্রথমে বস এড়িয়ে গেলেও একসময় চোখে লাগার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তখন আপনি হয়ে যাবেন আপনার বস বা সহকর্মীদের চোখের বিষ। একজন যখন আরেকজনের সময় এবং কাজের সঠিক মূল্যায়ন না করে তবে দূরত্ব তৈরি হবেই।
২. ছুতো দেখানো আপনার অবলম্বন
ল্যাটিন ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, “যারা নিজেকে ছুতা দেয় তারা নিজের ক্ষতি করে।” তাই নিজের ভুল ঢাকতে ছুতো টানবেন না বা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। আমাদের দেশে ছুতো দেওয়া তো আরো সহজ। ট্রাফিক জ্যাম, ধর্মঘট, মিছিল চাইলেই ছুতো দেওয়া যায় আমাদের দেশে। তবে ছুতো দেখিয়ে বেশি দূর যেতে পারবেন না। আপনি যখন ছুতো দিচ্ছেন তখন আপনি নিজের ক্ষতি নিজেই করছেন। তাই সৎ এবং বুদ্ধিমান মানুষের মতো কাজে ছুতো না দেখিয়ে নিজের চেষ্টায় এবং পরিশ্রম দিয়ে জীবনে সফল হোন।
৩. আপনি কাজ করার জন্য শুধু কাজ করেন
আমাদের অনেকের কাজে অবহেলা থাকে। আবার অনেকে শুধু কাজ করার জন্য কাজ করি। আমরা আবার অনেকে শুধু কাজ করি যেটুকু বলা হয়েছে সেটুকুই যাতে চাকরি থাকে। এভাবে হয়তো আপনার চাকরি টিকে থাকবে অনেক দিন কিন্তু আপনি এগোতে পারবেন না খুব বেশি। একসময় বস এবং সহকর্মীদের মাঝে আপনার সম্পর্কে বাজে ধারণা তৈরি করে শুধু।
৪. আপনি আড্ডাবাজ
আমরা সবাই আড্ডাবাজি করি তবে সেটা যখন শুধু আড্ডাতে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং অন্যদিকে মোড় নেয় তাহলে পস্তাবেন আপনি। আমরা অনেকেই কাজের ফাঁকে কিংবা কফির অবসরে আড্ডায় মাতি। আড্ডা আমাদের যেমন দেয় কাজ এবং কাজের বাইরের জগতের খবর তেমনি দূর করে মাথা থেকে কাজের চাপ। তবে এই আড্ডার ফাঁকে যদি কারো সম্পর্কে গীবত করা কিংবা কথা চালাচালি শুরু হয় এবং আপনি যদি এসব আলোচনায় জুড়ে থাকেন তবে আপনি শীঘ্রই চক্ষুশূল হচ্ছেন।
৫. নিজেকে অন্যদের থেকে স্মার্ট ভাবেন
সত্য হয়তো আপনি আপনার কাজে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ একজন মানুষ। তবে আপনি যতই অভিজ্ঞ বা সেরা হন না কেন কেউই চায় না একজন উদ্ধত সহকর্মী। তাই আপনি যদি নিজের উপর প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী এবং উদ্ধত হন তাহলে ক্যারিয়ার হিসাবে চাকরিটা ভুলে যাওয়াই ভালো।
৬. কোম্পানির মূলমন্ত্র আর আপনার ভাবনায় রয়েছে বিশাল ফারাক
একটা কোম্পানি, একটি টিম, একটি ভালো ফলাফল সব কিছু নির্ভর করে চাওয়া, পাওয়া আর সদিচ্ছা এবং লক্ষ্যের উপর। কোনো কোম্পানি বা টিম তখনই ভালো করবে যখন এই সবগুলো একসাথে আসবে এবং কাজের স্পৃহা থাকবে সবার মাঝে। আর আপনি ভাবছেন কোম্পানির চেতনায় ভুল রয়েছে– কর্ণধারের ভাবনায় রয়েছে ভুল? হয়তো বা রয়েছে। তবে এই ভাবনাকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবতে চেষ্টা করুন। একটা কিছু ভালো কিছু আসবেই। বলে না- সুখ হচ্ছে আপেক্ষিক তেমনি চিন্তা চেতনা ভাবনাও আপেক্ষিক? আপনি অন্যভাবে ভাবুন, খুঁজে পেতে পারেন কোম্পানির ধারা। এরপরও যদি কোনোভাবে ব্যাটে বলে না হয় তাহলে বরং বাস থেকে নেমে পড়ুন, শুরু করুন নতুন এক যাত্রা!
৭. আপনি তুলনামূলক কম প্রোডাক্টিভ নন তো ?
নতুন অফিসে যোগ দেয়ার পর আপনার মনে হচ্ছে কোথায় এসে জুড়লাম। কয়েকমাস পার হয়ে যাবার পরেও মনে হচ্ছে নতুন অফিসের কর্মীরা সবাই দেখছি সুপার ট্যালেন্টেড! আসলেই কি তাই? না! আসল ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি বরং কাজ করতে সদিচ্ছুক নন, আপনি বরং কম প্রোডাক্টিভ অন্যদের থেকে। আপনি অন্যদের থেকে কাজে ভালো নাও হতে পারেন তবে আপনি যদি ভালো হবার চেষ্টা করেন তবে সাফল্য আপনার আসবেই।
৮. আপনি শুধু ৮-৫টার মানুষ নন তো?
দুপুরের পর থেকে আপনার মন পরে থাকে অফিসের দেয়াল ঘড়িতে? বস যে কাজ দিয়েছে তা শেষ করে সবসময় গান শুনছেন কিংবা মুখ গুঁজে আছে ফোনে? আপনার কিন্তু নিজস্ব কিছু সমস্যা আছে! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন আপনি কিন্তু ভালো মানের কর্মী নন।
কারণ? আপনি শুধু কাজ করার জন্যই কাজ করছেন। কর্মক্ষেত্রে কিংবা কোম্পানির জন্য আপনার বিশেষ কোনো অবদান নেই। আপনি সব সময় চেষ্টা করেন দ্রুত অফিস থেকে বের হতে, তার মানে আপনার আরেকটু ভালো করবার চেষ্টা নেই কিংবা আরো ভালো কাজ করার সদিচ্ছা নেই। এরকম হলে নিভৃতে বসে ভাবুন আপনি সঠিক পথ ধরে হাঁটছেন তো নাকি ক্যারিয়ার বদলানো দরকার?
৯. অফিসের কারো সাথেই আপনার বনিবনা হচ্ছে না।
অফিস হচ্ছে আমাদের কর্মক্ষেত্র। সেখানে আমরা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে একত্রে কাজ করি শুধুমাত্র আয়ের জন্য নয় এবং শেখার জন্য। কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মানুষ থাকবে এটাই নিয়ম। অফিসে যদি আপনার কারো সাথে বনিবনা হচ্ছে না তবে সেই ভাবনা আপনার। সমস্যা মূলত আপনি। তাই তো অফিসের কারো সাথে আপনার বনিবনা হচ্ছে না।
কাজ করার সময় আপনি নিজেই যদি অনুভব করতে পারেন যে, আপনার কাজের মান অনুন্নত তাহলে শুরুতেই সমস্যা খুঁজে বের করুন এবং সমাধানের চেষ্টা করুন। তবে শুরু করার আগে নিজেকে আগে যাচাই করে নিন, আসলেই কি আপনি সমস্যার হেতু নাকি আপনার কর্ম বা কর্মস্থল। এখন কথা হচ্ছে, নিজেকে যাচাই করবেন কী করে? বহু পরীক্ষিত এবং ব্যবহৃত এই ৯টি লক্ষণ মিলিয়ে দেখুন আপনি কোন দলের এবং তারপর লেগে পড়ুন নিজেকে গোছাতে।