আমাদের জীবনকে বহুমাত্রায় গতিশীল করে দেওয়া একটি প্রযুক্তির নাম যদি আপনার কাছে জানতে চাওয়া তবে উত্তর হিসেবে উঠে আসবে কম্পিউটারের নাম। এই কম্পিউটারের ব্যবহার অনেক শিল্পেই মানুষের পরিশ্রম উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে কম্পিউটার প্রোগামিংয়ে দক্ষ ব্যক্তিদের মুল্য বেড়ে গেছে বহুগুণ। কারণ বড় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো যত বেশি কম্পিউটার দিয়ে অটোমেটেড হচ্ছে ততই বাড়ছে প্রোগামিংয়ে দক্ষ ব্যক্তির চাহিদা। নতুন নতুন সফটওয়্যার কিংবা মোবাইল এপ্লিকেশনের চাহিদা বেড়ে যাবার সাথে সাথে দ্রুতগতিতে আয় বাড়ছে প্রোগ্রামারদের। লক্ষ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সেবা দেওয়ার জন্যে গুগল প্লে স্টোর কিংবা আইফোনের এপস্টোরে থাকা এপ্লিকেশনগুলো থেকে নির্মাতাদের লাভের অংকটা মোটেও কম নয়। সাথে তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মক্ষেত্রের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের দেওয়া এক তথ্য অনুসারে আগামী দিনগুলোতে আমাদের কাজের সিংহভাগ করতে হবে প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্য নিয়ে। তবে প্রোগ্রামিং শিখতে হলেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও সেরকম নয়। কিংবা কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ জটিল সব হার্ডওয়্যারের বিন্দুমাত্র না জেনেও শিখে ফেলে যায় যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষা। মাতৃভাষা ছাড়াও আমরা প্রয়োজনের তাগিদে ইংরেজির মতো আরেকটি দ্বিতীয় ভাষা শিখে ফেলি। ঠিক তেমনি করে নিজের উদ্যম আর ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে নিজেকে একধাপ এগিয়ে রাখার কথা চিন্তা করে শিখে ফেলতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোগ্রামিং ভাষাটি।
‘পাইথন’
কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের জগতে পাইথন কোনো সাপের নাম নয়। বরং এটি একটি সহজ সরল প্রোগ্রামিং ভাষার নাম। আশির দশকে নির্মিত এই প্রোগ্রামিং ভাষাটি সকল মানুষের ব্যবহার করার জন্য উন্মুক্ত।
এই ভাষা ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কম্পিউটার সফটওয়্যার আর এপ্লিকেশন নির্মিত হয়েছে। গুগল, ইউটিউব, ড্রপবক্স, ইন্সটাগ্রাম, স্পটিফাই, ইয়াহু ম্যাপের মতো জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলোর নির্মাণের পেছনের হাতিয়ার এই প্রোগ্রামিং ভাষাটি। জীববিজ্ঞানের একটি শাখা বায়োইনফরমেটিকসেও আছে এই ভাষার ব্যাপক ব্যবহার। ভাষাটির সহজবোধ্যতার কারণে অনেক বাঘা বাঘা প্রোগ্রামারের হাতেখড়ি এই পাইথন ভাষা দিয়ে। পাইথনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাইথন প্রোগ্রামিংয়ের যে ভার্সনটি আপনার কম্পিউটারের সাথে খাপ খায় সেটি বিনামুল্যেই যে কেউ নামিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি এই ওয়েবসাইটে এই ভাষা শেখার প্রয়োজনীয় অনেক উপকরণও বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারা যায়। আর যদি কোথাও আটকে যান তবে পাইথন ভাষায় নির্মিত দুই অসাধারণ শিক্ষক গুগল আর ইউটিউব আছে আপনার পাশে।
‘রুবি’
সহজবোধ্য এই প্রোগামিং ভাষায় দক্ষ লোকেরাই এখন আমেরিকার সর্বোচ্চ বেতনধারী প্রোগ্রামদের তালিকার শীর্ষে। মূলত পাইথন এবং রুবি প্রায় একই ধরনের ভাষা।
১৯৯০ এর মাঝামাঝি সময়ে পথচলা শুরু এই ভাষার। বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট নির্মাণে এই ভাষার ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার সহ ব্লুমবার্গ, শপিফাই, স্লাইডশেয়ারের মতো জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোর নির্মাণ হয়েছে এই রুবি ভাষা ব্যবহার করেই।
‘জাভা’
আপনি যদি এই লেখাটা কোনো এন্ড্রয়েডচালিত স্মার্টফোন থেকে পড়ে থাকেন তবে ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে আপনি জাভা প্রোগ্রামিং ভাষায় নির্মিত কোনো এপ্লিকেশন ব্যবহার করে এই লেখাটি পড়ছেন।
প্রোগ্রামিংয়ের জগতে ‘জাভা’ শব্দটি ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপকে ছাড়িয়ে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে প্রথম শ্রেণীর প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে। ১৯৯৫ সালে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষার পথচলা শুরু। ডেস্কটপ, এন্ড্রয়েডের জন্যে নির্মিত এপ্লিকেশন তেহেকে শুরু করে ভিডিও গেমস নির্মাণে বহুল ব্যবহারের কারণে এই প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষ লোকের চাহিদা প্রচুর। একদম নতুন হিসাবে এই ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা একটু কষ্টসাধ্য কাজ। তবে এই ভাষার চাহিদার যেমন বেশি ঠিক তেমনই ইউটিউব আর বিভিন্ন সাইটে এই ভাষা শেখার জন্যে আছে অসংখ্য টিউটোরিয়াল। তবে এই ভাষায় যদি কারো দক্ষতা থাকে তাহলে তিনি সহজেই ‘সি’ বা ‘সি++’ এরমত অন্যান্য কয়েকটি ভাষা শিখে ফেলতে পারবেন।
‘সি’
সময়টা ১৯৭২, পৃথিবী বদলে দেওয়া ‘সি’ প্রোগ্রামিং ভাষার জন্ম তখন। এই ‘সি’ ভাষায় লেখা হয়েছে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সিংহভাগ। এছাড়াও লিনাক্স, ম্যাক, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলোর বেশিরভাগ ‘সি’ ভাষায় নির্মিত।
বিশ্বের কোটি কোটি কম্পিউটারের জন্যে নির্মিত অপারেটিং সিস্টেমের বিশ্বব্যাপী যে বাজার সৃষ্টি হয়েছে সেখানে এই ভাষায় দক্ষ লোকের চাহিদা প্রচুর। বিশ্বের এক নাম্বার ধনী বিল গেটসের আজকের অবস্থানে উঠার পেছনে আছে এই ‘সি’ প্রোগ্রামিং ভাষার অবদান। সহজবোধ্য এই ভাষা দিয়ে প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি করা যেতেই পারে। এই ভাষার শেখার জন্য অনলাইনে আছে প্রচুর ফ্রি কোর্স। ইউটিউবে থাকা এই ভাষার অসংখ্য ভিডিও টিউটোরিয়ালগুলোর সঠিক ব্যবহার আপনাকে করে তুলতে পারে এই ভাষায় দক্ষ একজন প্রোগ্রামার।
‘পিএইপি’
পৃথিবীতে যত ওয়েবসাইট আছে ৮২.৬ ভাগ নির্মিত হয়েছে এই পিএইপি ভাষায়। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের জন্যে পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ভাষার যাত্রা শুরু ১৯৯৪ সালে।
২০০০ সালের পরে ওয়েবসাইটের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে এই ভাষার জনপ্রিয়তাও বাড়তে শুরু করে। পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগিং আর ওয়েব কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘ওয়ার্ডপ্রেস’ লেখা হয়েছে এই পিএইপি ভাষায়। এছাড়া জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। তাই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে একদিকে যেমন ওয়েবসাইট আর ওয়েব কন্টেন্ট বাড়ছে অন্যদিকে এই ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিদের চাহিদা বাড়ছে। তাই ওয়েব ডেভেলপার হতে চাইলে এই ভাষার বিকল্প নেই। তাই অনলাইনে থাকা অসংখ্য ফ্রি কোর্স বিদ্যমান। এই কোর্সগুলো দিয়ে পিএইচপি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের পথে এগিয়ে থাকতে পারেন একধাপ।
তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই। আপনি কি সফটওয়্যার বানাতে নাকি কোনো এপ্লিকেশন কিংবা গেম? নাকি ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গড়তে চান ওয়েব ডেভেলপমেন্টে? যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ সে বিষয়ের প্রোগ্রামিং ভাষাটি শিখতে শুরু করুন আর ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকুন শত সহস্র ধাপ।