বাংলাদেশ সেনাবাহিনী – বহু তরুণের কাছে স্বপ্নের এক নাম। সেনা অফিসার হিসেবে যোগদান করাটা যেন বিশেষ কিছু। অনেক দ্রুত ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে বলেই সেনা বা আর্মি অফিসার ক্যারিয়ার হিসেবে অনেক আকর্ষণীয়! চলুন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে সেনাবাহিনীতে সরাসরি অফিসার হিসেবে যোগদান করা যায় –
এইচ.এস.সি সম্পন্ন করার পর অথবা কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর সরাসরি অফিসার পদে আবেদন করা যায়।
এইচ.এস.সি সম্পন্নের পর যে কোর্সের মাধ্যমে আপনি অফিসার হিসেবে কমিশন পাবেন, সেটি হচ্ছে BMA LONG COURSE। আর স্নাতকের পর যে কোর্সটি করতে হবে তা হল BMA SPECIAL/SHORT COURSE। নাম শুনেই ধারণা করা যায়, প্রথম কোর্সটি দীর্ঘমেয়াদী এবং দ্বিতীয় কোর্সটি স্বল্পমেয়াদী। আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু (যেমনঃ বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রভৃতি) ভিন্নতা ছাড়া দুই কোর্সে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় একই।
আবেদনের নিয়মাবলী
অনলাইনেই আবেদন করতে হয়। সাধারণত B.M.A. LONG COURSE এর জন্য বছরে দুবার সার্কুলার দেয়া হয়। একটা বছরের শুরুতে, অন্যটা মাঝামাঝি সময়ে। ২১ বছর বয়স পর্যন্ত (LONG COURSE) আবেদন করা যায়। তাই একবার না পারলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন (টেলিটক প্রিপেইড, বিকাশ, ট্রাস্ট ব্যাংক ইত্যাদি)। সুতরাং আপনার সুবিধামত যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিতে পারেন। আর অনলাইনের আবেদনপত্রে নাম, পরিচয় ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণী, উচ্চতা, ওজন, বুকের মাপ ও নির্দিষ্ট মাপের ছবি (সফটকপি) চাওয়া হয়। টাকা জমা দেয়া নিশ্চিত হওয়ার পর আপনি জানতে পারবেন কোন কোন তারিখে এবং কোথায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকার দেয়ার সুযোগ রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দমত যেকোনো অপশন বেছে নিতে পারেন। সাথে সাথে অনলাইনে আপনি একটি কল-আপ লেটার পাবেন। এর ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনাকে এই কল-আপ লেটারটি প্রিন্ট করতে হবে। আর হ্যাঁ, সার্কুলারগুলো সম্পর্কে আপডেট পেতে এবং ফলাফল জানতে নিয়মিত চোখ রাখুন https://joinbangladesharmy.army.mil.bd/ ওয়েবসাইটে।
আবেদনের পর বি.এম.এ কোর্সে সুযোগ পেতে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হবে। দেখুন ধাপগুলো বিস্তারিত।
১। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকার
প্রাথমিক কল-আপ লেটারে একটি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানের কথা উল্লেখ থাকবে। আপনাকে সেই রিপোর্টিং টাইমে উপস্থিত থাকতে হবে। একই দিনে এই দুটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উচ্চতা, ওজনসহ প্রাথমিক কিছু বিষয় দেখা হয়।
আর সাক্ষাৎকারে নাম, ঠিকানা, বাবা-মা’র নাম ও পেশা, ভাই-বোনদের নাম ও পেশা, পরিবারের কেউ সামরিক বাহিনীতে আছেন কিনা, কেন সেনাবাহিনীতে আসতে চান ইত্যাদি প্রশ্ন সাধারণত করা হয়। ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দেয়াটা ভালো। তাই ফ্লুয়েন্টলি ইংরেজি বলার অভ্যাস থাকাটা জরুরী। আর হ্যাঁ, অবশ্যই ফর্মাল পোশাকে যাবেন। অফিসার পদে যোগ দিতে যাচ্ছেন, অফিসারের মতো গেট-আপে যাওয়াই তো উচিত।
২। লিখিত পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি সার্কুলার ও প্রাথমিক কল-আপ লেটারেই দেওয়া থাকে। অর্থাৎ সবার একইসাথে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন করা হয়। বাংলা-ইংরেজির বেসিক ভালো জানা থাকলে আপনার বেশিরভাগ প্রশ্নই পারার কথা। গণিতের জন্য প্র্যাক্টিসই বেশি জরুরী। সাধারণ জ্ঞানের জন্য সামরিক বাহিনী বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান ও সাম্প্রতিক ঘটনার উপর জোর দিতে পারেন।
তারপরও যদি মনে হয় আরো প্রস্তুতির প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে বাজারে অনেক বই প্রচলিত, যেখান থেকে আপনি লিখিত পরীক্ষা থেকে আরো ধারণা পেতে পারেন। প্রয়োজনে নেটে ঘাটাঘাটি করতেও পারেন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয় এই ওয়েবসাইটটিতে https://joinbangladesharmy.army.mil.bd।
আর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার এবং লিখিতা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বাংলায় এই টিউটোরিয়ালটি চাইলে দেখে নিতে পারেন।
৩। ISSB
ISSB ধাপটি হলো সেনা অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার সবচেয়ে কঠিন ধাপ। মনস্তাত্ত্বিক, বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব, বিচারবোধ, উপস্থিত বুদ্ধি, পরিকল্পনা ক্ষমতা, নেতৃত্বের দক্ষতা, শারীরিক দক্ষতা ইত্যাদি দেখা হয় এ পরীক্ষায়। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থী এখানেই বাদ পড়ে। ISSB সাধারণত চারদিন হয়ে থাকে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক-এই চারদিন কী কী হয়ে থাকে –
প্রথম দিন
সাধারণভাবে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে প্রার্থীকে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হয়। প্রথমেই বুদ্ধিমত্তা (I.Q) পরীক্ষা হয়। এ পরীক্ষার দুটি অংশ থাকে-ভাষাগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। ভাষাগত (VERBAL) পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য (NON-VERBAL) পরীক্ষায় ৩৮টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়।
বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার পর প্রার্থীকে পিকচার পারসেপশন অ্যান্ড ডেসক্রিপশন টেস্টে (পিপিডিটি) অংশ নিতে হয়। ছবি দেখে ইংরেজিতে একটি গল্প লিখতে হয় এবং এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয় এ পরীক্ষায়। এ দুই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে ফল ঘোষণা করা হয়। যারা উত্তীর্ণ হতে পারে না, তাদের বিদায় নিতে হয়।
টিকে যাওয়া প্রার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এখানে থাকে বাংলা ও ইংরেজি বাক্য রচনা, বাক্য সম্পূর্ণকরণ, ছবি দেখে গল্প লিখন, অসম্পূর্ণ গল্প সম্পূর্ণকরণ ও আত্মসমালোচনা। এরপর প্রার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে রচনা লিখতে হয়। এর মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের পরীক্ষা।
দ্বিতীয় দিন
এ দিন কোনো লিখিত পরীক্ষা নেই। প্রার্থীকে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে দলগত আলোচনা, বক্তৃতা, শারীরিক সামর্থ্যের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এরপর একজন ডেপুটি প্রেসিডেন্টের কাছে দিতে হয় মৌখিক পরীক্ষা। এই মৌখিক পরীক্ষা প্রার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেপুটি প্রেসিডেন্ট এই মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর সাহস, আত্মবিশ্বাস, তাৎক্ষণিক বুদ্ধি ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।
তৃতীয় দিন
এ দিন প্রার্থীকে প্ল্যানিং ও কমান্ড টেস্টে অংশ নিতে হয়। এ দুটি পরীক্ষায় প্রার্থীর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার দক্ষতা সম্পর্কে যাচাই করা হয়।
চতুর্থ দিন
চতুর্থ দিন ফল ঘোষণা করা হয়। সাধারণত দুপুর ১২টার পর নিজ নিজ গ্রুপের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ফল ঘোষণা করেন। যারা উত্তীর্ণ হয় তাদের গ্রিনকার্ড দেওয়া হয়। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারে না, তাদের দেওয়া হয় রেড কার্ড।
আই.এস.এস.বি’র চার দিন কী কী হয় তার বিস্তারিত ধারণা পেতে পারেন এখানে।
আজ এ পর্যন্তই। শুভকামনা রইলো।
তথ্যসূত্রঃ
১। infopedia.com.bd/career
২। https://joinbangladesharmy.army.mil.bd
৩। www.issb-bd.org