সফল মানুষদের জীবনে এমন কী আছে যা আপনার মাঝে নেই!

পৃথিবী বিখ্যাত কিছু সফল মানুষ; নেলসন ম্যান্ডেলা, মুহম্মদ ইউনুস, কফি আনান, রিচার্ড ব্রানসন, ডেসমন্ড টুটু সহ আরও অনেকে।

সাফল্য কি ঐশ্বরিক? সফল মানুষদের কি ঈশ্বর প্রদত্ত কোন বিশেষ ক্ষমতা আছে? না, সাফল্য ঐশ্বরিক না, আবার সফল মানুষের বিশেষ কোন ক্ষমতা নেই যা অন্য মানুষের মধ্যে অনুপস্থিত। সাফল্য আসে চর্চার হাত ধরে, সাফল্য আস সাধনার মাধ্যমে। সাফল্যের সুত্রপাত হয় মানুষের কর্মের মধ্য দিয়ে। হয়তো একই কর্ম একই সমসাময়িক সময়ে অনেক মানুষ করে কিন্তু সফল হয় গুটিকতক। তাহলে রহস্যটা কী? একই পরিমাণ সময়, অর্থ, শ্রম ব্যয় করা সত্ত্বেও কেউ কেউ সফল হয়, কেউ কেউ হয় না! তাহলে কি ঐ ব্যর্থ মানুষগুলোর ভাগ্য খারাপ? না, মোটেও তা নয়। আসল রহস্য হল, সফল মানুষদের কাজের ধরণ/পদ্ধতিতে। ব্যর্থ মানুষেরা একটা কাজ যেভাবে করে, সফল মানুষেরা ঐ কাজটা অন্যভাবে করে, যা তাকে সাফল্য এনে দেয়। পেশা যাই হোক, সব সফল মানুষের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। আমি এই নিবন্ধে আপনাদের জানাব, সফল মানুষদের সেইসব সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো যার চর্চা করে হয়তো আপনিও হয়ে উঠতে পারেন তাদের একজন।

পৃথিবী বিখ্যাত কিছু সফল মানুষ; নেলসন ম্যান্ডেলা, মুহম্মদ ইউনুস, কফি আনান, রিচার্ড ব্রানসন, ডেসমন্ড টুটু সহ আরও অনেকে।   photo : TENGRI NEWS

নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রক

প্রত্যেক সফল মানুষ নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রক। যারা কখনো অন্যের কথায় চলেন না, নিজের জ্ঞান আর বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নেন কখন কী কাজ করবেন। তারা জানেন কখন নতুন কোন কাজ শুরু করতে হবে আর কখন বন্ধ করে দিতে হবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা জানেন কখন নতুন কর্মী নিবেন আর কখন এ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখবেন। সবচেয়ে বড় কথা তারা অনন্য পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অধিকারী, যার কারণে তারা চমৎকারভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

সফল মানুষেলা ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের সহজ কিন্তু গভীর সুত্রটা জানে। তাই ভাগ্যও সবসময় তাদের জন্য সুপ্রসন্ন হয়।  photo : i politics

ভাগ্য নিয়ন্ত্রক

ভাগ্য নিয়ে আমাদের মধ্যে বড় ধরনের একটা ভুল ধারণা আছে। আর এটা তৈরি হয়েছে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা থেকে। কোন কাজ না করেই কখনো ভাগ্যের উপর ভরসা করতে বলা হয়নি। কোন কাজে সাফল্য পেতে যা যা করা দরকার তার সবকিছু সুচারুভাবে করার পর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। পৃথিবীর সবকিছু গাণিতিক সুত্র মেনে চলে। সুতরাং, যথাযথ কাজ করলে সাফল্য আসবেই। এটাই আসলে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ। সফল মানুষেরা এই সহজ কিন্তু গভীর সুত্রটা জানে। তাই ভাগ্যও সবসময় তাদের জন্য সুপ্রসন্ন হয়।

নিবেদিত প্রাণ কর্মী

সফল মানুষেরা সবসময় নিবেদিত প্রাণ কর্মী হয়ে থাকেন। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের চেয়েও তারা বেশি কাজ করেন । কেননা, তারা কাজকে ভালবাসেন। আর অফিসের বস বা ব্যবসার অংশীদার যত কৃপনই হোক না কেন, এমন নিবেদিত প্রাণ কর্মীকে প্রমোশন দিতে, বাহবা দিতে, উপরে তুলে ধরতে নিশ্চয় কখনো কুন্ঠবোধ করে না। ব্যাপারটা এমন যে, তুমি কত খারাপ হতে পারো, আমি তার চেয়েও একটু বেশি ভাল।

সফল মানুষেরা সবসময় নিবেদিত প্রাণ কর্মী হয়ে থাকেন।   photo: Linkedin

পরিকল্পিত স্বপ্নদ্রষ্টা

সফলরা কখনো পরিকল্পনাহীন সময কাটান না। এর মানে আবার এমন নয় যে, তারা সবসময রোবটিক জীবন যাপন করেন। অবকাশ, আড্ডা, মাস্তি সবকিছুই তারা করেন, কিন্তু পরিকল্পনাহীন ভাবে নয়। তাঁরা অবকাশ যাপন করতে গিয়ে কাজ নষ্ট করেন না। আড্ডা দিতে গিয়ে সময়জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন না। রোজ ঘুম থেকে উঠার পর সারাদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মেনে পড়েন, যেখানে ব্যর্থরা কখন ঘুম থেকে উঠবেন তারই কোন পরিকল্পনা থাকে না, আর সারা দিনের পরিকল্পান তো বাদই দিলাম।

ব্যর্থতার প্রস্তুতি

সফল মানুষেরা সবসময় অনাকাঙ্খিত ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকেন। তারা জানেন, সাফল্য আসে ব্যর্থতার উপর ভিত্তি করে। সাধারণ মানুষ যেখাকে ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে দেয়, সফলরা সেখানে ব্যর্থ হলে আরও শক্ত করে হাল ধরেন। আর পূর্বের ব্যর্থতাকে একটা অভিজ্ঞতা আ শিক্ষা হিসেবে কাজে লাগিয়ে নতুন করে সাফল্যের সোপান খোঁজেন। অপার ধৈর্য্য আর নতুন উদ্যোমে আবার পথ চলতে শুরু করেন।

সফল ব্যাক্তিরা সদা জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত।

জবাবদিহিতা

সফল ব্যাক্তিরা সদা জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত। তারা অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করেন। সে কারণে অন্য সাধারণের চেয়ে তাদের সবসময় জবাবদিহিতার সম্মুখিন হতে হয় বেশি। তবে এই মানুষগুলো জবাবদিহিতায় মোটেও ভয় পায় না বরং এটাও নিজের কাজ অন্যের কাছে বোঝানোর একটা মক্ষম উপায় বলে মনে করেন। তবে ভুল করলে তা বোঝা মাত্রই অকপটে নিজের ভুল স্বিকার করেন আর কখনই ওই ভুল দ্বিতীয়বার করেন না।

আজীবন শিক্ষার্থী

আমরা শিক্ষাকে সার্টিফিকেট দিয়ে বিচার করি। সে কারণে আমাদের চোখে বড় ডিগ্রিধারীদেরও জীবনভর ব্যর্থ থাকতে দেখি। অথচ এমন অনেক মানুষ আছে যারা স্কুল কলেজে পড়েনি অথবা মাঝপথে গিয়ে ড্রপআইট, কিন্তু খুবই সফল। এখানে রহস্যটা কী? আসলে কোন জ্ঞানহীন মানুষ কখনো সফল হয় না। সফল হতে হলে আপনাকে জ্ঞানী হতেই হবে, সে আপনার সার্টিফিকেট থাকুক আর না থাকুক। মোদ্দাকথা সফল মানুষেরা জ্ঞান অর্জন করেন সার্টিফিকেটের জন্য নয়, জীবনের জন্য। তাই তাঁরা আজীবন ধরে কেবল শিখতেই থাকনে।

সফল মানুষেরা জ্ঞান অর্জন করেন সার্টিফিকেটের জন্য নয়, জীবনের জন্য। তাই তাঁরা আজীবন ধরে কেবল শিখতেই থাকনে।  photo : rajdhonota

অসাধারণ গল্প কথক

সফল মানুষেরা ভাল গল্প বলতে পারেন অর্থাৎ খুব প্রঞ্জলভাবে সাবলীল কথা বলার ক্ষমতা থাকে তাদের। খুব সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিতে জানেন, যাতে তার জ্ঞান, দর্শন, প্রজ্ঞা, বিনয় আর সত্যিকারর পরিচয় ফুটে ওঠে। তারা নিজের পরিচয়, কর্ম, দর্শন, সমন্ধে সম্পূর্ণ সচেতন এবং তা দিয়ে অন্যকে প্রভাবিত করতে পারেন। কোন অনুষ্ঠান, সভা বা সেমিনারে নিজর বক্তব্য আত্মবিশ্বাসের সাথে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, যা তাদের অণ্যদের চেয়ে আলাদা করে তোলে।

সফল ব্যাক্তিরা কাজের প্রাপ্তি নিয়ে আগে চিন্তিত হন না বরং কাজটা উপভোগ করেন।   photo : rajdhonota

প্রাপ্তি নয় কাজে বেশি মনোযোগী

সফল ব্যাক্তিরা কাজের প্রাপ্তি নিয়ে আগে চিন্তিত হন না বরং কাজটা উপভোগ করেন। ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন, সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে চান সব কাজে। দ্রুত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পরিবর্তে অধিকতর টেকসই এবং দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য পেতে চান। তারা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অধিকারী।

সফল মানুষের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য তো জানা হল। এবার মিলিয়ে দেখুন এর কোনটা কোনটা আপনার জীবনে অনুপস্থিত। সেগুলো চর্চা করতে শুরু করুন। আপনি সাফল্য নয়, সাফল্য আপনার পিছে ছুটবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *