আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে পারি –আমরা নিজেকে সময় দিয়ে ,কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিয়ে ,জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আনন্দের মাঝে থেকে , বিকল্প ভাবনার মাধ্যমে ,টিম ওয়ার্ক করে , পরিবার ও বন্ধুর সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে। যা আমরা বিস্তারিতভাবে আগের ধাপগুলোতে আলোচনা করছি আজকে আমরা বাকি ধাপগুলা জানবো।
আগের পর্ব: মানসিকভাবে সুস্থ থাকার কৌশল-১
৭. ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়া : আমাদের ভালো থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে –ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়া। অর্থাৎ ব্যর্থতাও যে আমাদের জীবনের একটা অনুষঙ্গ ,এটা আমাদের ভুলে যাওয়া চলবে না। তাই আমরা যদি ব্যর্থতাকে মেনে নিতে না পারি তাহলে সফলতা কখনো আমাদের দরজায় কড়া নাড়বে না। পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে ব্যর্থতাকে আবার আঁকড়ে ধরা যাবে না। কারণ ,ব্যর্থতাকে যদি আঁকড়ে ধরে থাকি তাহলে ও সফলতা আমাদের জীবনে প্রবেশ করতে পারবে না। জীবনের চলার পথে যেমন সফলতা একটা দিক ,ঠিক তেমনি বিফলতাও একটা দিক। বিফলতা আমাদের হতেই পারে। সকালে আমাদের কাজ এ বিফলতা আসছে বলে গালে হাত দিয়ে সারাদিন বসে থাকার কোনো মানে হয় না। কেননা একটা ওই কাজের সফলতা বিকালেও আসতে পারে। সুতরাং একটা কিছুতে সফলও হতে পারে আবার বিফলও হতে পারি। মনে করতে হবে এটাই তো স্বাভাবিক,তাহলে আমাদের মন ও ভালো থাকবে।
৮. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন : কোনো বস্তু বা পার্সন এর প্রতি আমার কি মনোভাব তাই হচ্ছে আমার দৃষ্টিভঙ্গি।যদি আমাদের .দৃষ্টিভঙ্গিকে সবসময় নেতিবাচক করে রাখি তাহলে আমরা মনের উপর চাপ কমাতে পারবো না। কেউ যদি একটি সুন্দর জলপ্রপাত দেখে এসে বলে “জলপ্রপাতটা দেখতে সুন্দর ,কিন্তু খুব জোরে পানি পড়ে। “তাহলে কিন্তু ওই জলপ্রপাত সম্পর্কে নেতিবাচক ওই পার্সনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেল। তিনি সমস্ত ভালো জিনিস এর ভিতর নেগেটিভ জিনিস দেখতে পেলেন। এই নেতিবাচক ভাবনা আপনার মনে একটা খুঁতখুঁতে ভাব চলে আসবে। যার ফলে মনের ভিতর অশান্তি চলে আসে। তাই আমাদেরমন রাখার জন্য ওইসব নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির দিকে আসতে হবে।
৯. নৈতিকতার চর্চা : মন ভালো রাখতে হলে আমাদের নৈতিকতার চর্চা করতে হবে। পরিবারে ,সমাজে ,পেশাগত এবং সব ক্ষেত্রে নৈতিকতার চর্চা করতে হবে। আমরা যখন নৈতিকতার চর্চা করতে ব্যর্থ হই ,তখন আমরা মিথ্যা বলি। আমরা নানা কারণে মিথ্যা কথা বলি। এরকম ভাবে মিথ্যা কথা বলতে থাকলে আমরা নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যাব। অপরদিকে আমাদের মনের ভিতর ওই যে না বলা সত্যগুলে চাপা থাকে ,তখন মনের ভিতর এক ধরণের অপরাধ বোধ সৃষ্টি হয়। যার ফলে আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মের উপর প্রভাব ফেলা সহ মনকে অস্থির করে তুলবে। তাই নৈতিকতার চর্চার প্রথম সূত্র হচ্ছে –মিথ্যা বলা ছেড়ে দিতে হবে।সত্য বলতে হবে তাহলে আমাদের কারো কাজে কিছু লুকাতে হবে না। মন এ অস্থির ভাব থাকবে না। ইংরেজি তে একটা প্রবাদ বাক্য আছে –
A lie may take care of the present, but it has no future.
এবং সব শেষের ধাপটা হচ্ছে –
১০.আনন্দে থাকা : সবসময় আমাদের আনন্দে থাকতে হবে। হাসিখুশি থাকা যাই এমনসব ভালো কাজগুলো বেশি বেশি করতে হবে। আপনার কাজকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করতে হবে। আপনার পড়াশুনাকে শুধু পড়াশুনা বা কাজকে শুধু কাজ মনে করবেন না। অর্থাৎ কোনো কাজকে আপনি ভালো না লাগার জিনিস এ পরিণত করবেন না। যদি করেন তাহলে আপনার কাজ ভালো হবে না,দিন শেষ এ দেখা যাবে কাজ ভালো না হওয়ার ফলে মন খারাপ হয়ে গেছে। তাই মন ভালো রাখতে এবং কাজ এ ভালো করতে অবশ্যই আমাদের আনন্দে থাকতে হবে।
আমরা আর্টিকেলের প্রথম দিকে বিষণ্ণতার কথা বলছি। মন খারাপ হচ্ছে সাধারণত আবেগ, আবার মন খারাপের অতিরিক্ত মাত্রাই হচ্ছে বিষণ্ণতা।আপনারদের সবিধার্থে বিষণ্ণতার উপসর্গ গুলো তুলে ধরছি :
১.নিজেকে কোনো কাজের জন্য দোষী ভাবা।
২.মনে রাখতে না পারা।
৩.কান্নাকাটি করা।
৪.আত্মহত্যা করার প্রবণতা।
৫.ঘুম কমে যাওয়া।
৬.ক্ষুধা কমে যাওয়া অথবা একবারে বেড়ে যাওয়া।
৭.ওজন কমে যাওয়া।
এসব চিহ্ন গুলো সাধারণতো বিষণ্ণতাকে ইঙ্গিত করে। টানা ১৪ দিন মন খারাপ থাকলে সেটা আর শুধূ মন খারাপ থাকে না ,বিষণ্ণতার মতো রোগে পরিণত হয়। তাই উপরের ইঙ্গিতগুলো আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত অথবা কোনো মনোবিজ্ঞানীর সাথে পরামর্শ করা উচিত । কেননা বিষণ্ণতা এমন একটি রোগ, যা ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে একনম্বর রোগ হিসেবে স্থান লাভ করবে (source -world health )। বর্তমানে বাংলাদেশে এর হার প্রতি ১০০ জনে ৫ জন এবং গবেষণায় দেখা যাচ্ছে দিন দিন এটা আরো বেড়েই চলেছে । সুতরাং আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময় ।
পরিশেষে বলব , আমাদের মনকে ভালো রাখতে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করা উচিত। তাহলে আমরা মানসিক ভাবে প্রশান্তি লাভ করবো , জীবন হবে আনন্দ ময়। সবাই ভালো থাকেন এবং হাসি –খুশি থাকেন এই প্রত্যাশায় আজকে এখানেই শেষ করছি ।
Written By,
Ariful Islam Reza
Department of AIS
Jagannath University