পেটের মেদ দেহের সার্বিক সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। পেটে মেদ জমার কারণে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমন পোশাক পরিধান করলে সম্পূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশ পায় না, চলাফেরায়, হাঁটায় এবং কাজ করতে অস্বস্তিবোধ হয় ইত্যাদি। এমন অনেকেই আছেন যিনি মোটা না হওয়া সত্বেও পেটের মেদ অধিক। এমন বাড়তি মেদ নিয়ে তাদেরকে ঝামেলায় পড়তে হয় পড়তে হয় শঙ্কায়ও। তাই আজ আলোচনা করবো পেটের বাড়তি মেদ থেকে মুক্তিলাভ করার কিছু সহজ উপায়।
প্রচুর পানি পান
পানিকে প্রাকৃতিক ক্লিনজার বলা হয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পানের মাধ্যমে বাড়তি মেদ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। প্রচুর পানি পানে শরীরের বিপাকের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি বিষাক্ত উপাদানগুলো দূর হয়ে যাবে এবং মাংশপেশী গঠনেও সাহায্য করবে। বিপাকের হার বৃদ্ধি পায় বলে শরীরে মেদ জমতে পারে না এমনকি বাড়তি চর্বি ঝরে যায়।
লেবুর সরবত
প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস লেবুর সরবত পানে আপনার শরীর থেকে বাড়তি মেদ দূর হবে। হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে তার সাথে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে খুব সহজেই তৈরি করতে পারেন এটি। প্রয়োজন হলে মধু মিশিয়ে নিন। তবে মনে রাখতে হবে সরবতে চিনি যোগ করা যাবে না। লেবুর সরবত শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
সাদা ভাতকে ‘না’ বলুন
পেটের মেদ কমানোর জন্য সাদা ভাত থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। সাদা ভাতের বদলে আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন গম জাতীয় শস্য। এছাড়াও খেতে পারেন লাল চালের ভাত, গমের রুটি, ওটস, অন্যান্য শস্য জাতীয় খাদ্য।
বর্জন করুন চিনি ও মিষ্টি
চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে মেদ বাড়ায়। তাই মেদ কমানোর জন্য চিনিযুক্ত খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন চকোলেট, মিষ্টি, আইস্ক্রিম, ফিরনি ইত্যাদিকে বর্জন করতে হবে।
কোল্ড ড্রিংস এবং উচ্চতৈলযুক্ত খাবার
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, পেটের বাড়তি মেদ কমানোর জন্য কোল্ড ড্রিংস ও উচ্চ তৈলযুক্ত খাবারকে ‘না’ বলতে হবে। কোল্ড ড্রিংস এবং তৈলাক্ত খাবারগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে মেদ জমা করে রাখে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এই খাবারগুলোকে বিদায় জানাতে হবে।
রসুনের কোয়া
প্রতিদিন সকালে তিনকোয়া রসুন আপনার বাড়তি মেদকে দ্রুতগতিতে কমিয়ে দিতে পারে। রসুন চুষে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চুষে খেতে সমস্যা হলে পানি দিয়ে গিলেও খেতে পারেন। রসুন রক্ত চলাচলেও ভূমিকা রাখে। তাই আজ থেকেই শুরু করতে পারেন প্রতিদিন সকালে রসুন খাওয়া।
উপকারী মশলা
আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত মশলা শরীরের জন্য উপকারী নয়। তবে কিছু কিছু মশলা আছে যা শরীরের জন্য উপকারী। এলাচ, দারুচিনি, আদা, গোলমরিচ ম্যাজিকের মতো কাজ করে। তাই রান্নায় এই মশলাগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই মশলাগুলো শরীরের ইনসুলিন সরবরাহ বাড়ায় এবং রক্তে সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
ফল ও সবজি
প্রতিদিন ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে আপনার শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফল বাছাইকরণের ক্ষেত্রে পানি জাতীয় ফলকে প্রাধান্য দিন। প্রতিদিন ফল ও সবজি আপনার দেহে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণ করবে। এছাড়াও এগুলো রক্তের মেটাবলিজম বাড়িয়ে পেটের চর্বি কমিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
টক জাতীয় ফলের প্রাধান্য
টক জাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। টক জাতীয় ফল শরীর ও পেটের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। তাই খাদ্য তালিকায় টক জাতীয় ফলকে প্রাধান্য দিতে হবে।
গরুর মাংস পরিহার
গরুর মাংসে অতিরিক্ত চর্বি থাকে যা আপনার জন্য ক্ষতিকর। তাই উচ্চ চর্বি যুক্ত খাবার ও গরুর মাংস পরিহার করা শ্রেয়। প্রয়োজনে মুরগীর মাংস কম তেলে রান্না করে খেতে পারেন।
প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম
বলা হয়ে থাকে ঘুম ভালো হলে শরীরে মেদ কম জমে এবং পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
বের হয়ে আসুন মানসিক বোঝা থেকে
মানসিক চাপ শরীরের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিসাধন করে। তাই মানসিক চাপ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন। চিকিৎসকগণ বলে থাকেন মানসিক চাপের কারণে শরীরের পাচন ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীরের মেদ বাড়ে।
ধূমপান ত্যাগ
পেটের মেদ কমাতে ধূমপান পরিহার করতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান শরীরের চর্বি পোড়াতে বাধা দিয়ে পেটের মেদ বা চর্বি জমতে সাহায্য করে। তাই এটি বর্জন করতে হবে।
খেতে হবে যথেষ্ট খাদ্য
পেটের মেদ কমাতে গিয়ে একেবারেই খাবার বন্ধ করে দেয়া যাবে না। চর্বি ও তেলজাতীয় খাবারগুলো ধীরে ধীরে বাদ দিয়ে শরীরের জন্য উপকারী খাবারগুলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। একদমই খাবার না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে এবং আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
কাজে সক্রিয় হোন
পেটের মেদ কমানোর জন্য কাজে সক্রিয় হওয়ার বিকল্প নেই। অফিসে কাজ করতে করতে আমরা হাঁটার কথা ভুলে যাই, ভুলে যাই শারীরিক ব্যায়ামের কথা। যার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে বাড়তি মেদ জমা হয়। অফিসে ও বাসায় যথাসম্ভব নিজের কাজগুলো নিজে করুন, লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। তাহলে আপনার শরীরের বাড়তি মেদ জমতে পারবে না।
শারীরিক ব্যায়াম
সর্বোপরি, পেটের মেদ কমানোর জন্য আপনাকে শারীরিক ব্যায়ামের প্রতি সচেতন হতে হবে। মেদ কমানোর জন্য অবসর সময়ে সাইকেল চালাতে পারেন, হাঁটতে পারেন কিংবা দৌড়াতে পারেন।