বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের নাম শুনেননি এমন মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় বলতে পারি। পদার্থবিজ্ঞানে এই বিজ্ঞানীর অসামান্য অবদান আজ থেকে অনেক আগের কিন্তু তার আবিষ্কারের ছাপ এখনো বেশ স্পষ্ট আধুনিক পর্দার্থবিজ্ঞানে। ছোটবেলা থেকেই তার হাবভাব কিন্তু তার এই মেধা সম্পর্কে জানান দিত না একেবারেই। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাধাসিধে, এমনকি পড়াশুনায়ও তার ফলাফল তেমন নজরকাড়ার মতো কিছু ছিল না। কিন্তু আজ তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়, অন্তত বলা যায় বিজ্ঞানের ইতিহাসে তিনি অমর। এই বিজ্ঞানীর আইকিউ বা Intelligence Quotient এর মান কত হতে পারে? নিশ্চিত সংখ্যাটা বেশ ওপরের দিকেই হবে। আইনস্টাইনের সময়কালে আইকিউ নির্ধারণের তেমন কোনো উপায় ছিল না। ধারণা করা হয়, তার আইকিউ স্কোর ১৬০ এর কাছাকাছি হতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আইকিউ স্কোর জানা সম্ভব।
পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসেই, এমনকি ঘরে বসেও কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের আইকিউ টেস্ট বা বুদ্ধিসংখ্যা যাচাই করা যায় সহজেই। এইসকল পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় এবং কে কত কম সময়ে উত্তর দিয়ে পরবর্তী প্রশ্নে যেতে পারছে তার উপরেও নির্ভর করে আইকিউ পরীক্ষার ফলাফল। বিজ্ঞানীদের আইকিউ যাচাইয়ের কথা মাথায় এলে সকলে মোটামুটি ধরেই নেই আইনস্টাইনের বুদ্ধিসংখ্যা টপকানো কোনো মানুষের কর্ম হতে পারে না। তবে কথায় আছে না? অসম্ভব বলে কিছু নেই। আসলেই এই অসম্ভবকেও সম্ভব করেছে মানুষ। হারিয়ে দিয়েছে আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীকেও। আইনস্টাইনের চেয়েও বেশী আইকিউ সম্পন্ন মানুষ পৃথিবীতে এখনো আছে, তা কি জানি? চলুন জেনে নেই এমন ৮ জন ব্যক্তির কথা যাদের আইকিউ পার করে গেছে আইনস্টাইনকেও।
১. জ্যাকব বারনেট; আইকিউ ১৭০
মাত্র ২ বছর বয়সে জ্যাকবের অটিজম ধরা পড়ে। ডাক্তারের মতামত অনুযায়ী, কখনো নিজের জুতার ফিতা বাঁধতে পারবে না জ্যাকব। জুতোর ফিতে বাঁধা আয়ত্ত্বের সাথে সাথে বলা বাহুল্য যে, নিজেকে উপস্থাপনে বেশ পটু হয়েই বড় হয়েছে জ্যাকব। এক বছরেরও কম সময়ে জ্যাকব গ্রেড সিক্স থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত শেষ করে ১০ বছর বয়সেই কলেজে ভর্তি হয় এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী। বয়স যখন ১৩ নিজেকে পদার্থবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলো জ্যাকব। বর্তমানে ১৯ বছর বয়সে নিজের পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করছে সে।
২. জুডিত পুলগ্যার; আইকিউ ১৭০
বুদ্ধিসংখ্যার এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই নারীরাও। অনেকক্ষেত্রে বলা হয় পুরুষের মেধার তুলনায় নারীর মেধা বা বুদ্ধি কম হয়। এই সকল গল্পকে ভুল প্রমাণ করেছে জুডিত পুলগ্যার। আইকিউ স্কোর ১৭০ এই নারীর যা অনেক পুরুষের চেয়ে অনেক ওপরে।
হাঙ্গেরির অধিবাসী জুডিতকে বলা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা দাবারু। সালটা ১৯৯১, বয়স তখন ১৫ বছর ৪ মাস, সর্বকনিষ্ঠ ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে জুডিত।
৩. রিক রসনার; আইকিউ ১৯২-১৯৮
রিক নামের এই ব্যক্তিকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি একজন লেখক, একজন নগ্ন মডেল এবং একজন বাউন্সার হিসেবেও কাজ করেছেন। এবিসি নেটওয়ার্কের বিখ্যাত শো “Who Wants to Be a Millionaire” এর ১৬ হাজার ডলারের প্রশ্ন ভুল দাবী করে কেইস করেছিলেন রিক। যা পরবর্তীতে বেশ বিখ্যাত সংবাদে পরিণত হলেও কেইস হেরে যান রিক।
৪. ইভাঞ্জেলোস ক্যাতসুলিস; আইকিউ ১৯৮
World Genius Directory অনুযায়ী ক্যাতসুলিস হলেন সর্বোচ্চ বুদ্ধিসংখ্যার অধিকারী। তার নামের সাথে পদবি হিসেবে রয়েছে MD, MSc, MA, PhD ইত্যাদি ডিগ্রী। এই গ্রীক মনোবিজ্ঞানীর, মনোবিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রেও রয়েছে বেশ কিছু অর্জন।
৫. শো ইয়ানো; আইকিউ ২০০
আমেরিকান চিকিৎসক শো ইয়ানো তার কলেজ জীবন সম্পন্ন করে ৯ বছর বয়সে এবং MD ও Ph.D ডিগ্রী অর্জন করে একুশ বছর বয়সেই। ক্যারাতে তে তিনি ব্ল্যাক বেল্টের অধিকারী। চার বছর বয়সে প্রথম সংগীত রচনা করলেও মনোযোগ স্থাপন করে শিশুদের স্ন্যায়ুবিদ্যার প্রতি।
৬. ন্যাথান লিপোল্ড; আইকিউ ২০০
কুখ্যাত ন্যাথান লিপোল্ড ১৮ বছর বয়সেই ৯টি ভাষায় কথা বলা আয়ত্ত করেছিল। অতীব বুদ্ধির অধিকারী ন্যাথান তার বুদ্ধি ব্যবহার করেছেন অনৈতিক কর্মকান্ডে। ১৯২৪ সালে, উনিশ বছর বয়সে তিনি এবং তার সহকর্মীকে আটক করে পুলিশ। তাদের মাথায় ঝুলছিল ছিল খুনের অভিযোগ। তেত্রিশ বছর জেলের সাজা ভোগ করে ন্যাথান।
৭. ম্যারিলিন ভস সিভোন্ট; আইকিউ ২২৮
দশ বছর বয়সেই ম্যারিলিন এর আইকিউ স্কোর ২২৮ বলে জানা যায় adult-level Stanford-Binet টেস্টের মাধ্যমে। যা পরবর্তীতে গিনেস বুকে গেলেও ১৯৯০ সালে, সংখ্যা অশুদ্ধ হওয়ায় গিনিস বুক হতে এই বিভাগটি সরিয়ে ফেলা হয়। ১৯৮৬ সাল হতে, ম্যারিলিন গাণিতিক ও দর্শন বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসছেন তার “Ask Marilyn” কলামে যা ছাপানো হয় “Parade” নামের এক ম্যাগাজিনে।
৮. আইনান কলে; আইকিউ ২৬৩
এই আইরিশ বালকের আইকিউ ২৬৩ বলে জানা যায়। ৮ বছর বয়সেই সিঙ্গাপুর পলিটেকনিকে তৃতীয় বর্ষের রসায়নের পাঠ শেষ করেছে এই বালক। নয় বছর বয়সে “পাই” এর দশমিকের পরের পাঁচশত আঠারটি সংখ্যা মুখস্থ করে আইনান। বারো বছর বয়সে এসে আইনান এখন একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের গল্প ও সংগীত পরিচালনা করে যার নাম Reflection ।