সুখী ও সফল হওয়া যেন জীবনের মূলমন্ত্র। সফলতার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই তা আমরা সবাই জানি। সফলতার সংক্ষিপ্ত কোনো পথও নেই। সুখ ও সফলতা বলে কয়ে আসে না। সুখ মানসিক ব্যাপার আর সফলতা অদম্য প্রচেষ্টার ফসল। এক গবেষণায় বলা হয়েছে যারা চাকরি করে সন্তুষ্ট থাকেন তাদের অনেকের বড় অফিস নেই, তবুও কাজকে সর্বাধিক গুরুত্বে সাথে নিয়েছেন। কাজ করার মাধ্যমে সন্তুষ্ট থাকা যায়, পাওয়া যায় আত্মতৃপ্তিও। অনেকে ব্যক্তিগত জীবনে নানান বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, বিষণ্ণ থাকেন।
হতাশায় ছেয়ে যায় অনেকের জীবন। মানুষ সফলতার পেছনে ছুটতে থাকে অবিরত অথচ নিজের কিছু অভ্যাস যা পরিবর্তন করা জরুরী তার দিকে খেয়াল নেই। প্রতিদিন আমরা যেভাবে দিনাতিপাত করি তার মধ্যে অজান্তেই হয়ত অনেক ভুল কাজও করে ফেলি। তাই আমাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে খুব যত্নশীল হওয়া উচিত কারণ এগুলো অভ্যাসে পরিণত হবে। সেসব অভ্যাস অনুসরণ করুন যেগুলো আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিবে, সফলতার দিকে নিয়ে যাবে। এগুলো আপনাকে অর্থপূর্ণ এবং পরিশীলিত জীবন পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।
নেতিবাচক বন্ধুদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন
নেতিবাচক বন্ধু বা আত্মীয় যাদের আমরা কাছের মানুষ বলে থাকি তারা মানুষ হয়েও বিষাক্ত সাপের মতো অন্যের জীবনে বিষ ছড়ায়। তারা নেতিবাচক কথা বলে, কাজ করে অন্যের জীবনকে অস্থিরতায় ভাসিয়ে দেয়। তাই আজ থেকেই নেতিবাচক বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। যদি তারা মন খারাপ করে তবে করুক। কথায় আছে, ‘দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো’। নেতিবাচক বন্ধু, সুসময়ের বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকা শ্রেয়। কারণ এই ধরণের মানুষেরা আপনার সাথে মিশে স্বার্থ উদ্ধার করে চলে যাবে। এককথায়, বলা চলে ওরা স্বার্থপর। নেতিবাচক বন্ধুদের পরিত্যাগ করে ইতিবাচক মানসিকতা যাদের রয়েছে তাদের সাথে মিশুন।
ঘুমানোর আগে মোবাইল, কম্পিউটার ও ট্যাবলেট নয়
মোবাইল ও কম্পিউটারে অধিক মনোযোগ দিলে কাজের দিকে মনোযোগ কমে যায়। ঘুমের আগে মোবাইল, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকা ক্ষতিকর। তবে অনেকেই তা বুঝতে পারে না। আমাদের প্রিয় ডিভাইসগুলো হালকা নীল তরঙ্গের আলো আমাদের দিকে নির্গত করে যা চোখের জন্য ক্ষতিকর। এই ডিভাইসগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আপনি ঘুমাতে পারবেন না, ইনসমনিয়া দেখা দিবে। রাতে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সকালে ঘুম থেকে জাগতে দেরি হবে, আপনার অফিসের কাজের ক্ষতি হবে। তাই রাতের খাবার শেষে মোবাইল, ট্যাবলেট কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
অবশ্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সুখী হওয়ার একটি মৌলিক ধাপ। আপনার বন্ধুদের মতো অঢেল ধনসম্পদ না থাকলে কষ্ট পাবেন না। অনেক সম্পদ, টাকা-পয়সা সুখ বয়ে আনতে না পারলেও আপনি যেমন আছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে জীবনে সুখী হতে পারবেন। তাই যা আছে তা নিয়েই কৃতজ্ঞ থাকুন, সন্তুষ্ট থাকুন।
বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে ভেতরের কষ্ট বোঝা যায় না
হতে পারে আপনার বন্ধু নৌবাহিনী অথবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। ভালো টাকা বেতন পায়। তার মানে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই সে সবদিক থেকে সুখী। মানুষের বাহ্যিক দিক দেখে তার সম্পর্কে সব জানা যায় না। কারো জীবন নিখুঁত নয়। জীবনে ঘাত প্রতিঘাত থাকবেই। তাই বলে নিজের কাজ নিয়ে বিষণ্ণ ও হতাশ থাকলে চলবে না। নিজেকে নিজে বোঝান আপনার কাজটা আপনার জন্য সর্বোচ্চ তৃপ্তির, আপনি আপনার কাজে সন্তুষ্ট।
ব্যর্থ হলে পুনরায় শুরু করুন
লেখক যখন গল্প লেখেন অনেক সাধনা করে লেখেন। গল্প লিখতে হলে পড়তে হয় প্রচুর, ভাবতে হয় প্রচুর। একজন লেখকের সব লেখা কী ভালো হয়? হতে পারে আবার নাও হতে পারে। তারা জানে সাধনা অব্যাহত রাখলে একসময় সফলতা আসবেই। কোনো গল্প ভালো না হলে হতাশ না হয়ে পুনরায় সাধনা করতে থাকে, পুনরায় গল্প লেখে সফলতার মুখ দেখার আশায়। এমন একজন সফল ব্যক্তিও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি ব্যর্থ হন নি। আজ যারা সফল প্রত্যেকেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সফল হয়েছেন। তাই ব্যর্থ হলে কাজ বন্ধ করে নিজেকে গুটিয়ে ফেলবেন না বরং নব উদ্যমে কাজ শুরু করুন।
এমন কিছু করুন যা স্মরণ করিয়ে দিবে আপনি কে
অনেকে আছেন যারা নিজেকে সময় দেন না। নিজেকে সময় দেওয়ার ব্যাপারে খানিকটা ভাবেনও না। এটা ঠিক নয়। এমন কিছু করুন যা আপনাকে তৃপ্তি দেবে। এমন কাজ করুন যার মাধ্যমে ব্যক্তি আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। যেখানে কোনো মুখোশ থাকবে না, ভয় থাকবে না। কারণ কখনো কখনো রসিকতা, আনন্দ, উল্লাসের প্রয়োজন আছে। একঘেয়েমী বড্ড খারাপ। তাই জীবনে বৈচিত্র্যতা আনা দরকার।
না বলুন
সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ বলেছেন, ‘না’ বলা যত কঠিন ঠিক তার চেয়ে কঠিন অধিক কাজের চাপ, বিষণ্ণতা, হতাশা ইত্যাদি। তাই প্রয়োজনে ‘না’ বলা শিখুন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘না’ বলা দরকার। ‘না’ একটি শক্তিশালী শব্দ যা আপনাকে বীরত্বের সাথে বলতে হবে। যখন ‘না’ বলা প্রয়োজন তখন বুদ্ধিমানেরা বলেন ‘আমার মনে হয় না এটা আমি পারবো’ ‘আমি নিশ্চিত নই’ ইত্যাদি। আপনিও এ ধরনের বাক্যের ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন ‘না’ বলা বর্তমানে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ভবিষ্যতেও নিয়ন্ত্রণ করবে।
বাস্তবসম্মত লক্ষ্য অর্জনে নাছোড়বান্দা হন
সফলতার অন্যতম উপায় হল নাছোড়বান্দা হওয়া। নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের ছক পূর্ব থেকে তৈরি করুন, সে অনুযায়ী কাজ করে যান। প্রয়োজনে কত দিন বা মাসের মধ্যে কোন লক্ষ্য অর্জন করবেন তা লিখে রাখুন। নিয়মিত কাজ করে যান। সফলতা আসবেই।