অস্টেলিয়ার ক্রিকেটের এক মহানায়কের গল্প

0

“অস্টেলিয়ার ক্রিকেটের এক মহানায়কের গল্প”

তাসমানিয়া প্রদেশের লসেসটনে জম্মগ্রহণকারী রিকি পন্টিং অস্টেলীয় বিখ্যাত ক্রিকেটার। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ওয়ানডেতে অজিদের নেতৃত্ব দেন এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান এবং সতীর্থদের কাছে তিনি পান্টার নামে পরিচিত ছিলেন। অস্টেলিয়ার অন্যতম প্রধান ব্যাটিং স্তম্ভ হিসাবে স্বীকৃত ছিলেন পন্টিং। ফিল্ডিংয়ে তিনি স্লিপ ও ক্যাচিং পজিশনে দাড়াতেন। দলের প্রয়োজনে তিনি মাঝেমধ্যে বোলিং করতেন। অস্টেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের চারটি আসরে ফাইনাল খেলেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে ২০০৩ ও ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ জেতে অস্টেলিয়া। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর কোচ হিসাবে নাম লেখান সাবেক এই অজি অধিনায়ক। ২০১৫ সালে তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কোচ হিসাবে অভিষিক্ত হন পান্টার।

বাবা গ্নেইম ও কাকা গ্নেগ ক্যাম্পাবেলের উদ্দীপনায় ক্রিকেটের হাতেখড়ি পন্টিংয়ের। ১১ বছর বয়সে ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে অণূর্ধ্ব ১২ দলের হয়ে খেলতে নামেন তিনি। জানুয়ারি ১৯৮৬ সালে পাঁচদিন ব্যাপী নর্দান তাসমানিয়া জুনিয়র ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। 7 দিনের এই প্রতিযোগিতায় চারটি সেঞ্চুরী করায় ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কুকাবুরা পন্টিংয়ের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তখন পন্টিং ৮ম গ্রেডে পড়াশুনা করতেন।

ঠিক তার একমাস পর অণূর্ধ্ব 16 দলের একই রকম প্রতিযোগিতায় একই ধারা অব্যহত রাখেন। চুড়ান্ত দিনে জোড়া সেঞ্চুরী করে তার ক্রিকেট দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সকলের মনযোগ আকর্ষণ করেন। নর্দান তাসমানিয়া স্কুল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রধান টেড রিচার্ডসন তার সাফল্যে বলেন রিকি নিশ্চিতভাবে খেলোয়াড় হিসাবে ডেভিড বুনের সমমান।

নভেম্বর ১৯৯২ সালে ১৭ বছর ৩৩৭ দিন বয়সে তাসমানিয়ার পক্ষে পার্থে অণূর্ধ্ব ১৭ উৎসবে পন্টিং প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন ও পাঁচ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। এর ফলে তিনি শেফিল্ড লীগের সর্বকনিষ্ঠ তাসমানিয়ান ক্রিকেটার এর মর্যাদা পান। ম্যাচগুলোতে তিনি সর্বমোট ৩৫০ রান সংগ্রহ করেন যা তাকে অস্ট্রেলিয়া অণূর্ধ্ব ১৯ দলের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য মনোনীত করা হয়। ১৯৭০ সালে বিল লরির দলের পর এ সফরটি ছিল প্রথম অস্টেলিয়া ক্রিকেট দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর।

১৯৯৫ সাল পর্যন্ত একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় পন্টিংকে। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চারদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক ঘঠে তার। এর কিছু দিন পর বিশ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে অভিজাত খেলা টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়। অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অনুষ্ঠিত সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা প্রথম টেস্টেই চমক দেখান রিকি পন্টিং। সে ম্যাচে তিনি ৯৬ রান সংগ্রহ করেন। এরপর থেকে নিয়মিত পারফরমেন্স এর ধারাবাহিকতায় তাকে নতুন ডন ব্র্যাডম্যান নামে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৯৭ সালে লিডসে অনুষ্ঠিত টেস্টে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান রিকি পন্টিং।

১৯৯৯ সালের শুরুর সময়ে পূর্বে বেশ কয়েকবার জাতীয় দলের বাহিরে থাকতে হয় তাকে। ব্যাক্তিগত সমস্যার কারনে মাঠের ক্রিকেট ভালো খেলতে পারেন নি। কিন্তু ক্রিকেটে আবার মনযোগ দিয়ে পরবর্তী দশ বছর অস্টেলিয়া দলের একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তারে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।

২০০২ সালে অস্টেলিয়ার একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অধিনায়ক এর দায়িত্ব পান পান্টার। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অস্টেলিয়াকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেন। ২০০৪ সালে স্টিভ ওয়াহ অবসর গ্রহণ করলে টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে পন্টিংকে মনোনীত করা হয়। ২০০৪ সালে পান্টারের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অ্যাশেজ সিরিজ জয় লাভ করে। ২০০৫-০৬ মৌসুমে পন্টিং তার ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখেন। সাত সেঞ্চুরি সহ প্রায় ৭৮ রান গড়ে ১৪৮৩ রান সংগ্রহ করেন। জানুয়ারি ২০০৬ সালে সিডনিতে অনুষ্ঠিত তার শততম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উভয় ইনিংসে ১২০ ও ১৪৩* রান এর অপরাজিত ইনিংস খেলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চার শীর্ষস্হানীয় ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার, জ্যাক ক্যালিস, রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে ১৩০০০ রান নিয়ে ও সম্পৃক্ত আছেন।

রিকি পন্টিং ১৬০ এর অধিক টেস্ট ও ৩৭০ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। পাশাপাশি তিনি টেস্ট ও ওয়ানডেতে অস্টেলিয়ার পক্ষে সর্ব্বোচ রান সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পরিসংখ্যানগতভাবে তিনি সর্বকালের সফলতম অধিনায়ক রুপে চিহ্নিত। ২০০৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ পর্যন্ত ৭৭ টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৪৮ টি বিজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন। একমাত্র খেলোয়াড় হিসাবে তিনি ক্রিকেট ইতিহাসে শতাধিক টেস্টে বিজয়ীর সাক্ষীরুপে আছেন। এছাড়া পান্টার 262 টি ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের স্বাদ লাভ করেন যা রেকর্ড বিশেষ।

২৯ নভেম্বর ২০১২ তারিখে পন্টিং টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর এর ঘোষণা দেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচের পূর্বদিন এই সিদ্ধান্ত নেন।। এটি ছিল তার ১৬৮ তম টেস্ট ও শেষ টেস্টে অংশগ্রহণ। এরফলে তিনি সাবেক অস্টেলিয় ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর রেকর্ডের সমকক্ষ হন। ৩ ডিসেম্বর ২০১২ সালে ৫১.৮৫ রান গড় নিয়ে টেস্ট থেকে অবসর নেন। ব্যাগি গ্নিন মাথায় চাপিয়ে পন্টিং এর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন একমাত্র স্টিভ ওয়াহ। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে অস্টেলিয়ার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর রিকি পন্টিং ১৬৭টি টেস্ট খেলেছেন। ১৬৭ ম্যাচে তিনি ৫২.২১ গড়ে ১৩৩৬৬ রান। এর মধ্যে রয়েছে ৪১ টি টেস্ট জয়। আর সেঞ্চুরি করেছেন 41টি। অধিনায়ক হিসাবে দুইবার বিশ্বকাপ জয়েও নেতৃত্ব দিয়েছেন রিকি পন্টিং।

ক্রিকেট বোদ্বাদের মতে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারার সাথে তিনিও আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিণত হয়েছেন। আরো একটি কারণ যা শচীন ও লারার থেকে এগিয়ে রাখে তা হলো অধিনায়কত্ব। একজন অধিনায়ক হিসাবে রিকি সবচেয়ে সফলতম। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ রিকির অধিনায়কত্বের কারণে অজিরা জিতেছে। প্রথমদিকে ৭৭টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৪৮টি বিজয় এনে দেন পান্টার।

টেস্টে ৫১ গড়ে রিকি ছিলেন সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন। ১ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে প্রকাশিত টেস্ট রেটিংয়ে গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্ব্বোচ র্যাঙ্কিং ধারী টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন রিকি পন্টিং। তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া 2টি বিশ্বকাপ শিরোপা লাভ করে। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন রিকি পন্টিং।

Written By:

Mohammad Ali

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *