সবুজের ছোঁয়া
পানির অপর নাম জীবন তেমনি গাছের অপর নাম জীবন।এই গাছ না থাকলে পানি আমরা পানি পেতাম না। পৃথিবীতে মানুষসহ ও সমস্ত প্রাণিকুলকে অক্সিজেন দিয়ে থাকে গাছ। আর এই অক্সিজেন বুকে ধারণ করে আমরা বেঁচে থাকি প্রতিটি গাছ অক্সিজেনের খনি । গাছ আমাদের পরম বন্ধু, এটা শুধু আমাদের অক্সিজেনই দেয় না আমাদের পরিবেশ সুরক্ষায় এর অবদান অপরিসীম।গাছ আছে বলে আমরা আজ ঢাকা সিটির মতো জায়গা বসবাস করতে পারছি। যেহেতু গাছ আমাদের এত কাছের বন্ধু যে কিনা আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। সেহেতু আমরা যেখানে থাকবো সেখানে তার আশেপাশে গাছ রাখা অবশ্যই বিবেকবান এর কাজ হবে।
যেহেতু গাছ আমাদের এত কাছের বন্ধু যে কিনা আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। সেহেতু আমরা যেখানে থাকবো সেখানে তার আশেপাশে গাছ রাখা অবশ্যই বিবেকবান এর কাজ হবে।হা ,আমি গাছ লাগানোর কথা বলছি। আর আমরা যারা ঢাকায় জীবনযাপন করি তারা অবশ্যই আমাদের ডেইলি লাইফ সম্পর্কে অকিবহাল– ঘরে ও বাইরে জ্যাম ,ধুলাবালি ও গাছহীন পরিবেশ।
এই পরিবেশ থেকে একটু হলেও মুক্তি পেতে পারি নিজের অফিস , ফ্লাট ,ঘরকে সবুজ দিয়ে সাজিয়ে অর্থাৎ গাছ লাগিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা কিভাবে ,কোথায় গাছ লাগাবো ?এই ঢাকা শহরে তো সেরকম কোনো ফাঁকা জায়গা নাই ?হুম ,এসব উত্তর ও উপায় নিয়েই আজকের আর্টিকেলটি সাজানো।
আমরা যেহেতু জায়গা কম আবার গাছ লাগাতে হবে এমন কিছু যা আকারে ছোট কিন্তু প্রচুর পরিমান অক্সিজেন সরবরাহ করে। আমাদের গাছ লাগানোর জায়গা হবে ঘরের দেয়াল ,ফাঁকা জায়গা ,খাবার টেবিল , ফাঁকা বেলকনি, পড়ার টেবিল ,বেডসাইড টেবিল ,রুমের দরজার পাশে।
আর অবশ্যই আমাদের টব ব্যবহার করতে হবে সবুজ ঘর বানানোর জন্য। নিম্নের গাছ গুলো আমরা লাগাতে পারি –
১.পিস্ লিলি :সাপের ফনার মত দেখতে এই ফুলটির নাম পিস লিলি । দেখতে খুব সুন্দর এই ফুলটি পালন করতে খুব বেশী পরিচর্যা করতে হয় না ।যে কোনো বাড়িকে উজ্জল করে তুলতে পারে এর দারুণ ফুল। কম তাপমাত্রা এমন কি পুরো ছায়াময় স্থানেও এ গাছ বাঁচতে পারে বলে ঘরের ভিতরেও রাখা যায় । ঘরের ভিতর বাতাসের বিষাক্ত পদার্থ কমিয়ে দিতে পারে এই গাছ । চমৎকার একটি বায়ু পরিশোধক গাছ। অল্প আলোতেই এই গাছ বেড়ে ওঠে। সরাসরি সূর্যের আলোতে না রাখাই ভালো। এছাড়াও হলুদ পাতা বুঝিয়ে দেবে সে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রোদ পাচ্ছে|
স্বাভাবিক পরিমানে পানি দিলেই যথেষ্ট | ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড , জাইলিন শোষণ করে | ফলে ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে এর যথেষ্ঠ কদর রয়েছে ।এ গাছ আপনি বাড়ির ছাদে , কিচেনের ফাঁকা জায়গা , ঘরের ফাঁকা , ঘরের এক কোণে, ছায়া আছে এমন জায়গায় রাখতে পারেন পিস লিলি।জায়গায় লাগাতে পারেন। গ্রীষ্মকাল জুড়ে ফুল ফোটে লিলি গাছে। এর সুগন্ধ ছড়িয়ে পরে বাতাসে। এই গাছটিরঘরের দুর্গন্ধ দূর করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে । তাই এই ফুল গাছটি বাড়িতে রাখলে আপনি সর্বদা সুগন্ধে আচ্ছন্ন থাকতে পারবেন।
২.ক্যাকটাস:
ক্যাকটাসের বাবার বাড়ি হলো আমেরিকা অর্থাৎএর জন্ম আমেরিকায়। এটি মরুভূমির গাছ। ঘরের ভেতরেই ক্যাকটাস রাখা যায়। নিয়মিত একটু পানি দিয়া ছাড়া তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না।
ক্যাকটাস আপনার ঘর বা অফিসকে সাজিয়ে রাখার মতো গাছ। কাঁটাযুক্ত শরীর নিয়েও তার অসামান্য সৌন্দর্য দিয়ে আপনার ঘরের শোভা বাড়িয়ে দিবে । ক্যাকটাস আলো পছন্দ করে বেশ, তাই বেশি আলো আছে তেমন জানালার কাছেই রাখা যায়।
৩.মানি প্ল্যান্ট:
এই মানি প্ল্যান্ট গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত কালের আবহাওয়া সহ প্রায় সবধরণের পরিবেশ এর সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম । ভিতরে –বাইরে, ছায়া– রোদে এ গাছ বেড়ে ওঠে। ঘর –বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই গাছ ;লাগানো যেতে পারে ।বাড়ির গেট বা ছাদে ,ঘরের ফ্রিজ এর উপর এ গাছ রাখা যায়।
ঘরের ফ্রিজ কিংবা অন্যান্য যন্ত্র যেমন অফিসের ফটোকপি ও প্রিন্টার হতে যে ওজোন ও ক্ষতিকারক সিএফসি গ্যাস নির্গত হয় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর । গবেষকদের মতে, বাসাবাড়ি এবং অফিস রুমে মানি প্ল্যান্ট রাখলে এটি ক্ষতিকারক সিএফসি এবং ওজোন গ্যাস শুষে নেয় এবংঐসব ক্ষতিকারক গ্যাস থেকে আমাদের রক্ষা করে।
৪.বাটারফ্লাই পাম গাছ
আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য খুবই উপযোগী একটি গাছ হচ্ছে বাটারফ্লাই পাম গাছ। আপনার ড্রয়িং রুম ,পড়ার রুম ,কিচেন রুম সহ আপনার মনের মতো করে এ গাছটা লাগাতে পারেন।
বাসা বা অফিসের দরজা জানালা খোলা থাকার কারণে অনেক সময় আশেপাশের ক্ষতিকর দূষিত বাতাস ঘরে ঢুকে পড়ে।এই গাছটি সেই ক্ষতিকর বাতাস শোধন করে এবং সেইসাথে অক্সিজেনের সরবরাহ করে।
৫.ফার্ন:
আমাদের ঘরের মধ্যে অনেক সময় একধরণের অস্বস্থিকর গন্ধ হয়। আবার মাঝে মাঝে গুমট একটা পরিবেশ বিরাজ করে। এসব কিছু দূর করতে পারে এই গাছটা।
এই গাছটি পর্দা, আসবাবপত্র, রং এ থাকা ফর্মালডিহাইডকে দূর করে দিয়ে বাতাস বিশুদ্ধ করে দেয়।
৬.ছোট পাম ট্রি :
নাসার গবেষকরা সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখেছেন যে, ইনডোর প্লান্টগুলো ঘরের ভেতরের বিষাক্ত বায়ুকে শোষণ করে। এই ধরনের গাছগুলো ঘরের ভেতরের বায়ুকে পরিষ্কার রাখতে অধিক কার্যকর।
ঘরের ভেতরের দূষিত বায়ু আমাদের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ঘরের ভেতরের দূষিত বায়ুতে সাধারণত ফরমালডিহাইড, উদ্বায়ী জৈব উপাদান, কার্বন মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি থাকে । এসব উপাদানের কারণে আমাদের শরীরে sick building syndrome দেখা দেয়। এর ফলে মাথা ব্যাথা, এলার্জি, নার্ভাস সিস্টেম ডিসঅর্ডার দেখা দেয়।এসব থেকে লেডি পাম ,এরেকা পাম,খেজুর পাম, ব্যাম্বো পাম ইত্যাদি প্লান্টগুলো আমাদের মুক্ত রাখতে পারে।
৭.রোজমেরি:
রোজমেরি সুগন্ধিযুক্ত উদ্ভিদ। খাবারের সুগন্ধ বৃদ্ধির জন্য মূলত এটি ব্যবহার করা হয়। খাবারের সুগন্ধ বৃদ্ধি করা ছাড়াও এটি মশা–মাছি ও কীট পতঙ্গ তাড়া করে।
রোজমেরির দ্বারা স্প্রেও তৈরি করা যায়। রোজমেরির পাতা ও পানি একসাথে সিদ্ধ করে তা শীতল করে বোতলে ভরে ,মুখ বন্ধ করে ফ্রীজে রেখে দিলেই স্প্রে তৈরী হয়ে যাবে । পরবর্তীতে ঘরে স্প্রে করলে এটা আরেওসোলের মতো কাজ করবে।
৮.লেমন বাম ,ইংলিশ আইভি ও পুদিনা :
মানসিক চাপ কমাতে পুদিনা ও লেমন বাম সাহায্য করে। এগাছে রয়েছে একপ্রকার সুগন্ধ যা মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক ভালোলাগার হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়।
এই হরমোন মানুষের মানসিক চাপ কমায় এবং মন কে প্রফুল্ল করতে রাখে সেইসাথে পুদিনাও লেমন বাম গাছগুলো মানসিক চাপ ,স্মৃতি শক্তি বাড়ায়।
৯.নিম গাছ ও তুলসী গাছ :
নিম ও তুলসী গাছ হচ্ছে একটা ঔষধি গাছ।এসব গাছ বাড়ির ও ঘরের বাতাস কে রোগ –জীবাণু মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
উপরের গাছ গুলো লাগিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আমরা একটা মনোরম পরিবেশ পেতে পারি। আমরা বেশি করে গাছ লাগবো। ঘরের ও বাইরের সুস্থ পরিবেশ এ চলাফেরা করবো।
গাছ ছাড়া যেহেতু আমরা অচল ,তাই আমরা গাছের সাথে সখ্যতা গড়ে ঘর বাড়ির সাথে নিজেদেরও সবুজ করে তুলবো,সুস্থ সুন্দর জীবনযাপন করবো এই প্রত্যাশায় আজ এখানেই।
Written By
Dept of AIS
Jagannath University