কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি কে না চায়? কে না চায় আলাদাভাবে নজর কাড়তে। কে চায় না সম্মানির অংকটা বাড়াতে। কিন্তু এসকলের জন্য প্রয়োজন বিশেষ কিছু কৌশল। কর্মক্ষেত্রের রাজনীতিতে জড়িয়ে অনেকে হারিয়ে ফেলে পদোন্নতির লিপ্সা। কিন্তু পদোন্নতি বা প্রমোশনের দিকে পা বাড়ানোটা, তেমন একটা কঠিন কিছু না। শুধুমাত্র কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই কাঙ্ক্ষিত পদ লাভ করা সম্ভব। আজ আলোচনা করছি এমন কিছু বিষয় নিয়ে যা আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনার পদোন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
১. উদ্যোগের অভাব
কাজে যদি আপনি একেবারেই নতুন যোগদানকারী না হয়ে থাকেন কিংবা নতুন কর্মী হলেও, আপনার বস কিংবা আপনার কোম্পানি আপনার কাছে নতুন কিছু আশা করবে সবসময়। নিয়মমাফিক কাজের বাইরে যদি আপনি কিছু না করেন তাহলে অতিরিক্ত কোনো মূল্য বা মান থাকছে না আপনার। যদি আপনি অপেক্ষায় থাকেন কখন নির্দেশ আসবে এবং আপনি কাজে লেগে পড়বেন তবে আপনার পদোন্নতি হতে বেশ দেরী আছে।
“একজন নিয়োগদানকারী হিসেবে আমি এমন কর্মচারী বা সহকর্মীর খোঁজ করবো যারা নিজের গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসে কোম্পানির জন্য নতুন কোনো মান এনে দিতে পারে যা আমার সময় এবং অর্থ দুইটিই সঞ্চয় করবে।”- বলেছেন সোশ্যাল ব্র্যান্ডিং বিশেষজ্ঞ, ক্যারিয়ার এক্সপার্ট এবং Great Resume First এর সভাপতি Jessica Hernandez। তিনি আরো বলেছেন, “যদি আমাকে ক্রমাগত কারো কাজের গতিবিধি সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হয় কিংবা তাকে প্রতিনিয়ত তার কাজ সম্পর্কে অবগত করতে হয় তা সময় অপচয়কারী এবং আমি মনে করে এই সময়টুকু নতুন কোনো কাজে ব্যয় করলে লাভ হবে বেশী।”
২. কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকা
শুধুমাত্র ৯-৫টা অফিসে বসে থেকে নিজের উপস্থিতি জানান দিলেই পদোন্নতি সম্ভব না। নিজের উপস্থিতিটা বেশ ভালভাবে জানান দিতে হবে কাজের মাধ্যমে। এটার জন্য নিজেকে জড়িয়ে নিতে হবে কাজের সাথে। কাজের সাথে জড়িত যেকোনো কথোপকথন, মিটিং ইত্যাদিতে নিজেকে জড়িত করতে হবে। অলসভাবে সময় কাটানোর অর্থ বোঝানো কাজের প্রতি আপনার একাগ্রতা কম যেখানে অন্যান্য কর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় লিপ্ত। Thrive By Design এর লেখক, E3 Solution এর সিইও Don Rheem বলেছেন, “যদি খুব দ্রুত পদোন্নতি চান তবে উঠে দাঁড়াতে হবে ভিড়ের মধ্যেই, নিজের কাজের প্রতি উৎসাহকে সামনে এনে তুলে ধরতে হবে। যাতে আপনার উপস্থাপনায় টনক নড়ে উঠে উপরের কর্মকর্তাদের, যা তাদেরকে বাধ্য করবে আপনার প্রতি আলাদা নজর দিতে।”
৩. কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আপনার অফিস-রোম্যান্স
সহকর্মীর সাথে ভালো লাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠাটা অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। কিন্তু অনেকেই এই ধরণের ঘটনা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন কেননা এর পরিণতি হতে পারে একটু গোলমেলে। সম্পর্ক কোনোভাবে ভেঙ্গে গেলে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ একটু অস্বস্তির সৃষ্টি করবে। হারিয়ে ফেলতে পারেন আপনার পুরোনো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ যা বাধা হয়ে দাঁড়াবে কাজে।
ক্যারিয়ার কোচ Kim Jones এই ব্যাপারে বলেন, “এই ধরণের সম্পর্ক পদোন্নতি, বিভিন্ন প্রোজেক্ট এবং আপনার সহকর্মীদের ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে।” তিনি আরো বলেছেন, “আপনার অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে এটির প্রভাব পড়তে পারে যে বিভাগে কর্মরত আছেন সেই বিভাগে এবং সর্বশেষ আপনার কোম্পানির ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।” তাই পরিশেষে বলা যায়, কর্মক্ষেত্রে এ ধরণের সম্পর্কে না জড়ানোই উচিত।
৪. দেরিতে আসা এবং দ্রুত যাওয়া
আপনার উপরস্থ কর্মকর্তার কোনো সমস্যা বা কোনো আপত্তি না থাকলেও আপনার প্রতিনিয়ত দেরি করে আসা এবং কাজ শেষ করে দ্রুত কর্মক্ষেত্র ত্যাগের তাড়া আপনার সহকর্মীদের নজড় এড়িয়ে যাবে না। যদি এই কাজটি নিয়মিতভাবে করে থাকেন তবে আপনার ছদ্মনামও হয়তো সহকর্মীরা দিয়ে ফেলেছেন এতদিনে। কিম জোন্সের মতে, “কাজে দেরি করে আসা প্রমাণ করে আপনি আপনার কাজের প্রতি একনিষ্ঠ নন। আপনার কাজ আপনার কাছে অগ্রাধীকার পায় না। পদোন্নতির জন্য এই বদভ্যাসটি আজই দূর করুন তাতেই সাফল্য আসবে দ্রুত।”
৫. অভিযোগ করা
সবসময় অভিযোগ করা সকলে অপছন্দ করেন। যদিও অনেক সময় কর্মক্ষেত্র এবং কর্মজীবন স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বিষন্নতা ও বিরক্তি এনে দেয়, তারপরও একজন ব্যক্তি যদি সর্বদা তার কর্মক্ষেত্র নিয়ে অভিযোগ করতে থাকে তাহলে অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করবে। নিজের এই অভিযোগগুলোকে ঠিক না করে যদি অবসর সময়ে কাজ না করে আরাম করে অভিযোগ করতে থাকেন তবে প্রমোশন হাত ফসকে যাবে অচিরেই। একজন মানুষের মধ্যে যদি এতটাই নেতিবাচক ভাবনা থাকে তবে তাকে নিজের দলে নিতে চাইবে না কেউই। কেননা মানুষ সেসকল মানুষের সান্নিধ্য পেতে পছন্দ করে যারা অনুপ্রাণিত করে কাজের দিকে, অভিযোগকারীকে নয়।
৬. অতিরিক্ত কাজকে ‘না’ বলা
বাড়ি ফিরতে চান দ্রুত, তাই সহকর্মীর করা অনুরোধকে সাফ ‘না’ করে দিলেন। কারণ দর্শালেন, তা আপনার কাজ বা কাজের সাথে জড়িত নয়, তাই আপনি ইচ্ছুক নন। এধরণের ব্যবহার আপনাকে, আপনার সহকর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে খুব দ্রুত। হারনান্দেজ বলেন, “যদি আপনার সহকর্মী বুঝে নেয় আপনার অতিরিক্ত কাজের প্রতি তিনি অনুৎসাহী তবে তা আপনার পদোন্নতিতে প্রভাব ফেলবে।” নিজের কাজ বাদ দিয়ে বা সবসময় অন্যের কাজ করা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু সবসময় “না” বলে চলে আসাটাও সম্পর্ক নষ্ট করবে। তাই মাঝে মাঝে সহকর্মীদের সাহায্য করা উচিত। এ ধরণের কাজ আপনার সহকর্মীদের সাথে আপনার যোগাযোগ বাড়াবে যা আপনাকে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে সাহায্য করবে।
৭. নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা
নিজের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। কিন্তু কখনো না কখনো ব্যাপারটা বেরিয়ে আসতেই পারে কাজের মাধ্যমে। নিজের কাজের দায়ভার নিজে নেওয়ার মধ্যে কোনো লজ্জা নেই। কাজের লভ্যাংশে যেমন একজন কর্মীর হাত থাকে, কাজের লোকসানেও সেই কর্মীরই হাত থাকবে নিশ্চিত। কাপুরুষের মত নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে না তুলে দিয়ে সততার পরিচয় দিলে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়বে বৈ কমবে না। নিজের দোষ মাথা পেতে নেওয়ার সাহস খুব কম মানুষেরই থাকে।
একজন সহকর্মী বা একজন মালিক এমন কর্মচারী চায় যিনি নিজের দোষ স্বীকার করে লোকসানের ভার মাথার ওপর নিবে এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। একজন কর্মীর উচিত সবসময় সামনে এগিয়ে যাওয়া, পেছনের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ না তুলে তা থেকে উঠে আসার উপায় বের করা। সকলেই ভুল করতে পারে। কিন্তু সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারলেই কোম্পানির লাভ এবং সহকর্মীদেরও।
৮. পোশাক নির্বাচন
অনেক কর্মক্ষেত্রে পোশাক নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশ থাকে না। কিন্তু তাই বলে ঘুরতে যাওয়ার কিংবা ছুটি কাটানোর পোশাক পরে, কাজে আসাটা চক্ষুশূল। পোশাক যেন জানান দেয় আপনি নিজেকে কোন পদে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আপনার পোশাকে ফুটে উঠবে আপনার ব্যক্তিত্ব ও কাজের প্রতি লালসা।
৯. নেতিবাচক দিক তুলে ধরা
আপনার সহকর্মী কোনো পরিকল্পনা তৈরী করলো আপনি উঠে পরে লাগলেন তার লোকসানসহ ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে। ক্রমাগত আপনার করে যাওয়া এই কাজটা আপনার চরিত্রের সাথে মিশে যাবে। যদি কেবল কোনো কৌশল কিংবা কোনো পরিকল্পনা কেন কাজ করবে না তা নিয়ে থাকে আপনার উপস্থাপনা আপনি সামনে এগোতে পারবেন না। গঠনমূলক সমালোচনা করতে গিয়ে একটা সমতা রাখা অত্যন্ত জরুরী। সহকর্মীর সৃজনশীল ধারণা, কৌশল ও সমাধানের বিরোধিতা আপনার উন্নতিকে রোধ করতে পারে। মনোযোগটা নেতিবাচক নয় ইতিবাচক দিকগুলোতে রেখে সেটিকে বাড়ানোর চেষ্টায় নতুন কৌশল উদ্ভাবন করা উচিত।