ভাইরাল কন্টেন্ট তৈরী করার ৬ টি উপায় (On going)

0

বর্তমান বিশ্বে ই-কমার্স একটি জনপ্রিয় আয়ের ক্ষেত্র হিসেবে সকলের আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে। কেননা এর মাধ্যমে খুব সহজেই ঘরে বসে আয় করা সম্ভব। তবে আপনার যে ধরণের অনলাইন বিজনেসই হোক না কেন, ‘কন্টেন্ট মার্কেটিং’ এর গুরুত্ব অনেক। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৮৭% ক্রেতাই কন্টেন্ট দেখে দ্রব্যটি কেনার ইচ্ছা বা আগ্রহ প্রকাশ করে। তার মানে একমাত্র ভালো মানের লিখা অর্থাৎ কন্টেন্টই পারে ক্রেতাদের আকর্ষণ আপনার সাইটের দিকে নিয়ে আসতে।
এই আর্টিকেল থেকে জানা যাবে কিভাবে খুব সহজেই ভাইরাল কন্টেন্ট তৈরী করতে হয় এবং তা কিভাবে বেশ বড় অঙ্কের ক্রেতা ও ট্রাফিক আপনাকে এনে দেয়।

ই-কমার্স ; ছবিসূত্র : Mediaindiagroup.com

অনলাইন কন্টেন্টের সুবিধা

অনলাইন বিজনেসগুলোর ক্ষেত্রে ভাইরাল কন্টেন্ট হলো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেন গুরুত্বপূর্ণ? তা জানতে হলে এর সুবিধাগুলো জানতে হবে। এর সুবিধাগুলো হলো-

  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করার ফলে সাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।
  • ব্যাকলাইন ভলিউম বাড়ায়।
  • ‘Brand’ সম্পর্কে জানান দেয়।
  • ‘Site Ranking’ উপরের দিকে নিয়ে যায়।
  • কন্টেন্ট বেশি শেয়ার হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এটি হলো সাইট প্রমোট করার সবচাইতে ভালো এবং সাশ্রয়ী উপায়।

পোস্ট ভাইরাল করার গোপন সূত্র

আপনি এই আর্টিকেল পড়ে হয়তো বুঝতে পারছেন যে ভাইরাল কন্টেন্ট তৈরী করা এতটাও সহজ নয় যতটা সহজ দেখায়। তাই আমি আপনাদের সাথে এমন ৬টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো আপনার পোস্টে থাকলে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সরা তো উপকৃত হবেই, সেই সাথে নতুন ক্লায়েন্টও পাবেন।

১. বিষয়বস্তু নির্ধারণ

লেখা শুরু করার আগেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যে, কেন আপনি লিখতে যাচ্ছেন মানে এই লিখাটি লিখলে আপনার সুবিধা কী এবং এটি ভাইরাল হয়ে গেলে আপনি কী কী অর্জন করতে পারবেন। যদি আপনি আপনার লেখার লক্ষ্য খুঁজে পান তাহলে লেখা শুরু করে দিন। এটা একটি সুন্দর কন্টেন্ট বানানোর প্রথম ধাপ।

২. ক্রেতাদের জানুন

Google Analytic এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই জানতে পারবেন যে আপনার ক্রেতারা কোথায় থাকেন, কী পড়েন, কী কী জিনিস কেনেন এবং আরো অনেক কিছু। Google Analytic আপনাকে এ সম্পর্কে অসংখ্য তথ্য দিবে। এছাড়াও এখান থেকে আপনি Traffic Statistics, Conversation Statistics, Ad Performance, Behavioral Factors, Online Site Analytics সহ আরো অনেক বিষয় লক্ষ্য রাখতে পারবেন।

Google Analytic এর কাজ ; ছবিসূত্র : woocommerce.com

৩. সঠিক মাধ্যম বেছে নিন

সবকিছু ঠিকঠাক করে আপনি আপনার ক্রেতাদের কাছ থেকে কিভাবে খুব সহজে পৌঁছাতে পারবেন, এমন একটি মাধ্যম খুঁজে নিন। তবে আমার মনে হয় নিজের ব্লগিং সাইটই হলো লেখা প্রকাশের জন্য সঠিক মাধ্যম। ব্লগিং সাইটে লেখা প্রকাশের পর তা আপনি যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইটে প্রকাশ করতে পারবেন।
তবে লেখার সময় ক্রেতাদের পছন্দের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর এটা করার জন্য আপনি কন্টেন্ট ইন্টিলিজেন্স টুল ‘Hawkeye’ এর সাহায্য নিতে পারেন। এটি ব্যবহার করা খুবই সোজা। Search Box এ গিয়ে ইউজারদের পছন্দের টপিকটি লিখুন। তাহলেই আপনি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার শেয়ার করা আর্টিকেলগুলো খুঁজে পাবেন। যেই মাধ্যমে আপনার লিখাগুলো বেশি শেয়ার হয়েছে সেই মাধ্যমে আপনার নতুন লেখাগুলো শেয়ার করুন।

ভাইরাল কন্টেন্ট খোঁজা; ছবিসূত্র: hawkey.com

৪. পোস্টের শোভাবর্ধন

এই পয়েন্টটিই হলো ভাইরাল কন্টেন্ট তৈরী করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধুমাত্র একটি বিষয় নিয়ে হাবিজাবি লিখে রাখলেই হবে না, লেখার মধ্যে দেওয়া তথ্যগুলোর বিশুদ্ধতা, লেখার নির্ভুলতা ও সৃজনশীলতাও দেখাতে হবে। বেদরকারি তথ্যগুলো একবারে বর্জন করতে হবে যদি আপনি চান যে, আপনার লেখাগুলো সবাই শেয়ার করে।

Sarpstat এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ ; ছবিসূত্র : Serpstat.com

Serpstat Search Box এ গিয়ে Visitor’s favourite topic (যেটা আপনি আগেই Google Analytic এ খুঁজে পেয়েছেন) লিখুন। এরপর Keyword Research > Content Marketing > Search Questions পাবেন। সেখানে আপনি যে ক্ষেত্রে কাজ করেন সে সম্পর্কিত অসংখ্য প্রশ্ন পাবেন যা গুগলে জানতে চাওয়া হয়। যেকোনো একটি প্রশ্ন নির্বাচন করে এর উত্তর সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল লিখে ফেলুন, তবে কিওয়ার্ড যুক্ত করতে ভুলবেন না! আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে লিখলে আপনি অবশ্যই আপনার সাইটের জন্য হাই ট্রাফিক পাবেন।

এরপর লিখা সম্পাদন করে আপলোড করার পালা। তবে আপনার পোস্টটিকে একঘেয়ে করে রাখবেন না। তাহলে এটি ক্রেতাদের চোখের আড়ালে পড়ে যাবে। ক্রেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বেশ কয়েক ধরণের পোস্টে আকর্ষিত হয়। সেগুলো হলো :

প্রয়োজনীয় সঠিক তথ্য

কিভাবে কোনো কাজ শুরু করতে হয়, সেই কাজটি করার সহজ উপায়, কাজের ফলাফল অর্জনের উপায়গুলো সহজ ভাষায় পড়তে চায়। মূল বিষয় হলো এমন জিনিস নিয়ে লিখুন যা আপনার পাঠকের জানতে চায়। প্রত্যেকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে লিখুন যাতে বুঝতে সুবিধা হয় এবং স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

ছবি, গ্রাফ, চার্ট যুক্ত করা

শুধু লিখা থাকলে পোস্টটি পানশে হয়ে যায়, সেটা যতই তথ্যবহুল হোক না কেন। তাই পোস্টের মধ্যে লেখা সম্পর্কিত ছবি, ভিডিও, চার্ট যুক্ত করুন। এটি পোস্টের আকর্ষণ বৃদ্ধি করে এবং দেখতেও ভাল লাগে। অনেক সময় কোনো বিষয় লেখনীর মাধ্যমে না বোঝানো গেলেও ছবির মাধ্যমে খুব সহজেই বোঝানো সম্ভব।

বোনাস

ক্রেতাদের আকর্ষণ আপনার সাইটে আনতে বোনাসের জুড়ি নেই। মানুষ চায় উপহার পেতে, জিততে এবং বিনামূল্যে কিছু পেতে। তাই ক্রেতাদের জন্য এসবের ব্যবস্থা করে রাখলে তারা বেশি বেশি আপনার কাছে জিনিসের অর্ডার দিবে।

তালিকা তৈরী

জীবনে অন্তত একবার হলেও মানুষ তার কাজ সম্পর্কিত দরকারি জিনিসের একটি পরিপূর্ণ তালিকা খোঁজে, যার তার কাজে সাহায্য করবে। তাই আপনি আপনার সাইট সম্পর্কিত বই, আর্টিকেল, যন্ত্রপাতির একটি তালিকা তৈরী করে রাখুন।

ব্রেকিং নিউজ

সবাই চায় তাৎক্ষণিক বের হওয়া খবর জানতে। তাই আপনার ক্ষেত্র সম্পর্কিত লেটেস্ট খবরগুলো সহজ ভাষায় লিখে আপ্লোড করুন। সেটা হতে পারে বই, রিসার্চ পেপার, তথ্য ইত্যাদি।

সাক্ষাৎকার বা উপদেশ

নিজের সাইটটি যে বিষয়ে তৈরি সেই বিষয়ের কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিন। এগুলা মানুষের জ্ঞান পিপাসা মেটায়।

জীবনের গল্প

গল্প বলা তথ্য শেয়ার করার একটি জনপ্রিয় উপায়। নিজের বা সহকর্মীর জীবনে ঘটে যাওয়া এমন কোনো ঘটনা সম্পর্কে বলুন যা পাঠকদের উপকারে আসবে। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে পোস্ট দিলে আপনি অবশ্যই পাঠকদের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক পাবেন।

৫. আরো প্রমোট করুন

নিজের লিখা প্রমোট করতে সংকোচবোধ করবেন না। যত বেশি লিখা শেয়ার করবেন, তত বেশি লাভ আপনারই হবে। ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করুন এবং অন্যান্য বন্ধু ও ব্লগারদেরকেও তা শেয়ার করতে অনুরোধ করুন।

৬. বিশ্লেষণ

লেখা হয়ে গেলে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। আর সাথে সাথেই ভাইরাল হওয়ার আশাও করবেন না। উপরের পদ্ধতিগুলো মেনে চললে ধীরে ধীরে কম সময়ের মধ্যেই পোস্ট ভাইরাল হতে শুরু করবে। ব্লগিং সাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইক এবং শেয়ারের পরিমাণ দেখবেন এটা বোঝার জন্য যে অডিয়েন্সের কাছে আপনার পোস্ট কেমন সাড়া জাগিয়েছে।

সময় বাঁচানোর জন্য Buzzsumo বা Serpstat ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো আপনাকে শুধু শেয়ারের সংখ্যাই দেখাবে না, সেই সাথে পরবর্তীতে কী নিয়ে লিখবেন সেই সম্পর্কেও ধারণা দিবে। এজন্য Serpstat Search Box এ আপনার ডোমেইনটি লিখে Domain Analysis > SEO Research > Top Pages এ চলে যাবেন। এখানে টেবিলে দেওয়া শেষের কলামে কোন কোন কন্টেন্ট নিয়ে লিখলে তা ভাইরাল হতে পারে তা দেওয়া আছে। Potential Traffic আপনাকে দেখাবে ভবিষ্যতে যেই আর্টিকেলটি লিখবেন তা গুগল এবং আপনার Rank অনুসারে কেমন জনপ্রিয়তা পাবে।

Top Pages ; ছবিসূত্র : serpstat.com

সবশেষে, অনলাইন বিজনেসের জন্য ভাইরাল কন্টেন্ট বেশ উপকারী, তবে তা তৈরী করা সহজ কথা নয়। সবকিছু ঠিকঠাক করতে হলে আপনার লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে এবং কোন ধরণের ক্রেতাদের জন্য তা উপযুক্ত হবে সেটিও দেখতে হবে। এতটুকুতেই শেষ নয়, আপনাকে লেখায় দক্ষ হতে হবে এবং ভাল কোনো মাধ্যমে লেখা আপলোড দিতে হবে যাতে সবাই লেখাটি পড়ে। আর কাজে সহযোগীতার জন্য Google Analytic, Serpstat, Buzzsumo নামিয়ে নিতে পারেন। আর আর্টিকেল প্রমোট এবং বিশ্লেষণ করার কথাও ভুলবেন না কিন্তু!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *