শৈশব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় বাবা মায়ের আদরে গড়ে ওঠা আমাদের মানসিকতা জীবনে যেকোনো পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে সফলতা অর্জনের জন্য একজন যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলে। কিন্তু শৈশবে বেড়ে উঠার সময়টুকু যতটা,না গুরুত্ব বহন তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করছে বর্তমানে আপনি নিজের প্রতি কতটুকু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জেনে অবাক হবেন, বিজ্ঞান ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে শুধু শৈশবের সুন্দর বেড়ে ওঠা নয়, যাদের শৈশব স্বাভাবিক ছিলো না তারা চাইলেও সফলতা অর্জন করতে পারেন।
আর শুধু শৈশবই নয় বর্তমানে আপনি কেমন, কি ভাবছেন, কিভাবে নিজে গড়ে তুলছেন তা সরাসরিভাবে প্রভাব ফেলবে আপনার ভবিষ্যতের সফলতার উপর। PANS এর নতুন প্রকাশিত অফিসিয়াল জার্নাল ন্যাশনাল একাডেমী অফ সাইন্স অফ ড্যা ইউনাইটেড স্টেট, যেখানে গবেষকবৃন্দ ছিলেন University College London এর। এই গবেষণাটি হয়েছিলো ৮,১১৯ জন নারী এবং পুরুষের উপর, কোন দক্ষতাগুলো সফলতা অর্জনের জন্য সহায়ক তা নির্ধারণের জন্য। গবেষণটিতে জানা গিয়েছে যারা সফল, ধণাড্য এবং হাসিখুশিতে শৈশব কাটিয়েছে তাদের সকলেই ভবিষ্যতে সফল এবং সুখী হয়েছে তা নয় বরং মানুষের নির্দিষ্ট ব্যক্তি বৈশিষ্ট্যই ভবিষ্যতের সফল এবং সুখী জীবনের মূলমন্ত্র। জেনে নিন গবেষণায় প্রমাণিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য যা আপনার জীবনকে করবে সফল এবং সুখী।
১. আবেগের স্থিতিশীলতা
সফল হতে হলে অবশ্যই শৈশব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এমন কোন সিদ্ধান্ত বা কাজ যা আপনার জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেসব আবেগের জায়গায় নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং University of Alabama at Birmingham এর পাবলিক হেলথ এর এসোসিয়েট প্রফেসর Joshua Klapow, PhD বলেছেন, আবেগের জায়গাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের জীবনের অন্যতম একটি দক্ষতা। বলা যায় আবেগকে স্থিতিশীল রাখার দক্ষতা আপনার জীবনের দক্ষ নিয়ন্ত্রক হিসেবে অবদান রাখবে। আবেগের নিয়ন্ত্রণ আপনাকে শেখাবে ধৈর্য্য ধারণ করা, অহেতুক অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে আশাবাদী না হওয়া, অতিরিক্ত কোন কিছুতে ঝুঁকে না পড়া, কোন বিষয়ে অতিরিক্ত ছাড় না দেওয়া। অর্থাৎ জীবনের সেইসব বিষয়ে যেখানে যৌক্তিকতাকে প্রাধান্য দিতে হবে, আবেগের নিয়ন্ত্রণ আপনাকে শেখাবে সেইসব বিষয়ে যুক্তিকেই গুরুত্ব দিতে।
Indiana University-Purdue University Columbus গবেষকবৃন্দ আবেগের নিয়ন্ত্রণের সাথে ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে সফলতার সরাসরি পারস্পারিক সম্পর্ক প্রমাণ পেয়েছেন। যারা আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তারা সাধারণত কর্মক্ষেত্রে অনেক বেশি উদ্যমী হয়, মানসিক শক্তি থাকে প্রবল এবং যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অবস্থান পরিপ্রেক্ষিতে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর এই জন্য কর্মক্ষেত্রে তারা অনেক বেশি সফল হয়ে থাকে।
২. সংকল্পবদ্ধ থাকা
যেকোন কাজের ক্ষেত্রে সংকল্পবদ্ধ থাকা, সেই কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সময় দেওয়া যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য সহায়ক। এমন অনেক সময়ই থাকে যখন আমরা কোনো কাজ শুরু করবো করবো ভেবে শুরুই করি না বা শুরু করলে শেষ অবধি একই রকম উদ্যমশীল মনোভাব রাখি না, আর এই জন্য যারা কোন কাজ শুরু এবং শেষে অবধি কাজটি করার জন্য সংকল্পবদ্ধ থাকে সফলতা তাদের জন্য অনিবার্য।
সংকল্পবদ্ধ মানুষেরা অতীতের বাধাগুলো দূরে সরিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যাওয়ার সহজ মনোভাব রাখে। আর তাই যেকোন কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন তাদের জন্য সহজ হয়ে দাঁড়ায়। PNSA এর গবেষণা মোতাবেক ২৬.৪ শতাংশ মানুষ যাদের তিন বা চারটি জীবন দক্ষতা আছে সাথে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করার দক্ষতা সহ তাদের তাদের জীবনে সফল হবার অনেক উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। Dr. Klapow এর মতে সংকল্পবদ্ধ থাকা বিষয়টি স্বাস্থ্যের সাথেও জড়িত। শারীরিক সুস্থতা মানসিক সুস্থতার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আর তাই সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাবার জন্য স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। আর এই সংকল্পবদ্ধ থাকার মতো জীবন দক্ষতা জীবনে সফলতা আনবেই।
৩. নিয়ন্ত্রণ
এটি সত্য পৃথিবীর কোন কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই কিন্তু আমাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ কিন্তু আমাদের হাতেই। আপনি নিজেকে কিভাবে পরিচালনা করতে চান, আর কী কী কাজ করতে চান এই সব কিছুই কিন্তু আপনার ইচ্ছের নিয়ন্ত্রণে। ইতিবাচক নিয়ন্ত্রণ নিজস্ব ভাবনার প্রতি যেকোন সফলতাকে হাতের মুঠোয় এনে দিবে। Dr. Klapow বলেছেন, এটি মিথ্যা বিশ্বাসের কিছু নয় যে, আমরা পৃথিবীর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো, বরং পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে নিজের মধ্যে এই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, আমাদের নিজস্ব কর্মের কিন্তু প্রভাব রয়েছে। এই গবেষণা চলাকালীন সময়ে ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নিজেদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টির উন্নয়ন করেছেন। গবেষণাটি প্রমাণ করেছে মানুষ চাইলে তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে পারে। অর্থাৎ আপনার যে দিকগুলো আপনার সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে আপনি চাইলেই সেগুলোকে পরিহার করে সফলতার জন্য এগুতে পারবেন।
৪. আশাবাদী হওয়া
যেকোন বিষয়ে আশাবাদী মনোভাব আপনাকে অবশ্যই একজন ইতিবাচক মনোভাবের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আশাবাদী মানুষ সবসময় বিশ্বাস রাখে ভালো কিছু হবে, আর তার বিশ্বাসটি মোটেও তাকে একজন অবাস্তবাদী মানসিকতার পরিচায়ক নয়।বরং যেকোন পরিস্থিতিতে ভালো কিছু খোঁজারু মন তাকে সফলতা এনে দিবেই।
University College London এর সাইকোলজির প্রফেসর Andrew Steptoe এবং তার কলিগ Jane Wardle গবেষণায় প্রমাণিত করেছেন যে, আশাবাদী হওয়ার মতো একটি জীবন দক্ষতা যখন আর একটি অন্তত আরেকটি জীবন দক্ষতার সাথে সংযুক্ত হয় তখন তা গভীরভাবে প্রভাব ফেলে স্বাস্থ্য এবং পরবর্তী সফলতার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ আশাবাদী মনোভাব আপনাকে যখন সবসময় ইতিবাচক বিষয়ের জন্য, ইতিবাচক ভাবনার জন্য তখন যেকোন খারাপ পরিস্থিতিতেও আপনার সুস্থ চিন্তা আপনাকে সফলতা এনে দিবেই।
৫. বুদ্ধিমত্তা
সুবুদ্ধি সম্পন্ন ভাবনাগুলো যেকোন পরিস্থির জন্য সহায়ক এবং সাহায্যকারী ভাবনা হয়ে থাকে। যা কিনা যেকোন ক্ষেত্রে প্রশংসার দাবী রাখে। আর তাই আপনার সুবুদ্ধিগুলোকে কাজে লাগান। সুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা সাধারণত অনেক বেশি গোছানো স্বভাবের হয়ে থাকে। তারা প্রতিটি বিষয়ে অনেকবেশি মনোযোগী হয়ে থাকে। যেকোন পরিস্থিতিকে মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করে বুদ্ধিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মতো তাদের ক্ষমতা থাকে আর তাই সফল হবার প্রবণতাও তাদের বেশি থাকে।
Frontiers of Psychology র এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, উচ্চ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানুষেরা জীবনের সবকিছুর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে আর যেকোন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধন্ত তাদের জীবনকে সহজ করে তোলে। আর তাই আপনার বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার করুন। অকাজে সময় অপচয় না করে যা করলে আপনার বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পাবে সে সমস্ত কাজে সময় ব্যয় করুন। আপনার সুচিন্তিত ভাবনাগুলো আপনার সফলতার জন্য অনেক বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।