মাসের প্রত্যেকটা দিন অমানুষিক পরিশ্রম এবং অর্থ খরচের পর যখন মাস শেষে কিছুটা অর্থ থেকে যায়। সেগুলো যত্রতত্র না উড়িয়ে ভালো ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন। আপনার সেই অল্প কিছু অর্থ এমন জায়গায় খরচ করুন যা আপনাকে খুশি রাখে।
আপনারা অনেক সময়ই অযথা অর্থ খরচ করে থাকেন। যেমন, রাস্তায় চলার সময় আপনার একটা ফুলদানির দিকে চোখ পড়ে গেল। জিনিসটা এতই সুন্দর যে সেখান থেকে আর নিজের দৃষ্টি সরাতে পারলেন না। যার ফলে সাত-পাঁচ না ভেবে আপনি ফুলদানিটা কিনেই ফেললেন। অথচ কেনার আগে ভাবলেন না যে, এটা কিনে আপনার আদৌ কোনো লাভ আছে কিনা। অথবা বাসায় একটা ফুলদানির পাশাপাশি আরো একটি ফুলদানি লাগবে কিনা।
বদঅভ্যাসগুলো মুছে ফেলুন
কের্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. থমাস গ্লিওভিচ প্রায় ২০ বছর গবেষণার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, জিনিস কেনার পেছনে বেশি ব্যয় করা উচিত নয়। কেননা এসব জিনিসের প্রতি আকর্ষণ খুব দ্রুতই চলে যায়। এগুলোর প্রতি কখনোই স্থায়ী ভালোবাসা তৈরী হয় না। এর জন্য মূলত ৩টি জটিল সমস্যা দায়ী।
- অতি দ্রুত আকর্ষণ হারিয়ে ফেলা। আজ যে জিনিসটি আপনার নতুন এবং অভিনব মনে হচ্ছে, কাল সেটা ততটাই সাধারণ ও সাদামাটা লাগতে পারে।
- প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচুতে নিয়ে যাওয়া। নতুন জিনিস নতুন প্রত্যাশা নিয়ে আসে। আর সেই প্রত্যাশাটা এতই বেশি যে আগের জিনিসের কথা আমরা ভুলে যাই।
- অন্যের জিনিস দেখে ঈর্ষাবোধ করা। আপনার নতুন কেনা গাড়ি ঠিক ততদিনই ভাল লাগবে যতদিন না আপনার বন্ধু আপনার চেয়েও একটি ভাল গাড়ি কিনবেন।
গ্লিওভিচ বলেছেন,
“আমাদের সুখে থাকার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো বারবার পরিবর্তন করার বা পরিবর্তিত হওয়ার ইচ্ছা। আমরা নিজেদের খুশির জন্য কোনো জিনিস কিনে থাকি। কিন্তু সেই খুশি থাকে কিছুক্ষণের জন্যই। যখনই আবার কোনো নতুন জিনিস আবার আমাদের কাছে আসে, তখনই আগের জিনিসটাকে ভুলে গিয়ে নতুনটি নিয়ে মেতে উঠি।”
অপব্যয় করার অভ্যাস আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূর করা উচিত। আর তা হোক ছাত্রজীবনেই। অর্থ দিয়ে কোনো বস্তু ক্রয় করলে আমরা খুশি থাকবো ঠিকই কিন্তু জিনিসটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেটার কথা আর মনেও থাকবে না। আমরা অনেক সময় ভাবি যে, যে জিনিসটাকে আমরা ছুঁয়ে দেখতে পারি, অনুভব করতে পারি; সেটারই স্থায়ী মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল।
অভিজ্ঞতার শক্তি
গ্লিওভিচসহ অন্যান্য গবেষকদের মতে, কোনো বস্তুর কার্যক্ষমতা থেকে কোনো অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষমতা বেশি দীর্ঘস্থায়ী। কেননা-
- অভিজ্ঞতা আমাদের পরিচয়ের অংশ হয়ে ওঠে। আমরা সবসময় কী কী কিনে থাকি সেটা মুখ্য বিষয় নয়। বরং আমরা কী কী করি, কোথায় যাই এগুলোই সকলের কাছে আলোচ্য বিষয়। সদ্য কেনা অ্যাপল ওয়াচ আমাদের ব্যক্তিত্বে কোনো প্রভাব ফেলবে না কিন্তু ট্র্যাকিং এ যাওয়া, আইটি কোর্স করা। এগুলো আপনার ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলবে কয়েক গুণ!
গ্লিওভিচ আরো বলেন,
“বাহ্যিক সম্পদ থেকে আমাদের জীবনে বেশি প্রভাব ফেলে আমাদের অভিজ্ঞতা। আপনার প্রিয় জিনিসটি আপনার অনেক পছন্দের হতে পারে। ভাবতে পারেন যে এটিই আপনার পরিচয়ের একটি অংশ, কিন্তু তা সত্ত্বেও একসময় আপনার এই মোহ কেটে যাবে। বিপরীতভাবে আপনার অভিজ্ঞতাই হলো আপনার পরিচয়।
- হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক জনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তারা তাদের বন্ধুর থেকে কম নাকি বেশি বেতনের চাকরি করতে চায়? বেশিরভাগই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নি। কিন্তু যখনই প্রশ্নটা কম বা বেশি ছুটি নিয়ে করা হলো, তখন সবাই এক বাক্যে বেশি ছুটির কথা বলে দিলো। কেননা এই ছুটির সময়ই হচ্ছে আপনার মর্জি মতো অভিজ্ঞতা অর্জনের সঠিক সময়।
গ্লিওভিচের মতে, কোনো জিনিস কেনার প্রত্যাশা করার চেয়ে কোনো অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রত্যাশা করা অধিক উত্তেজনা তৈরী করে। আর কোনো জিনিস কেনার প্রত্যাশা শুধু মনের অস্থিরতা বাড়ায়। কিন্তু অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত আমাদের আনন্দে ডুবিয়ে রাখে আর আরো ভাল করার স্পৃহা জোগায়।
ক্ষণস্থায়ী অভিজ্ঞতা
কখনো এমন হয়েছে যে, একটা জিনিস অনেক শখ করে কিনেছেন কিন্তু কেনার পর আপনার আর ভাল লাগেনি? যতবারই জিনিসটা দেখছেন ততইবারই আফসোস হচ্ছে? বা মনে হচ্ছে টাকাটা শুধু শুধু জলে ফেললেন? আমরা প্রায়ই এমন নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। কিন্তু এগুলো হলো ক্ষণস্থায়ী অভিজ্ঞতা। তাই এগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোনোই শ্রেয়!
গ্লিওভিচ এবং তার সহকর্মীরাই একমাত্র ব্যক্তি নন যারা বিশ্বাস করেন যে, সম্পদের চেয়ে অভিজ্ঞতার কার্যকারিতা বেশি। একই বিষয়ে অধ্যয়নরত ব্রিটিশ কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ড. এলিজাবেথ ড্যানও গ্লিওভিচের সাথে একমত হয়ে এসব ক্ষণস্থায়ী মোহগুলোকে ‘খুশির ফোঁটা’ বলেছেন। কেননা এক ফোঁটা পানির বিন্দু থেকে খুব দ্রুতই পানি শুকিয়ে যায়। তেমনি এইসব মোহও দ্রুতই নিঃশেষ হয়ে যাবে। কখনো কখনো অভিজ্ঞতার চেয়ে জিনিসের অস্তিত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু অভিজ্ঞতার স্মৃতিগুলো কোনোদিনই পুরনো হয় না।