জর্জ ওয়াশিংটনের জীবনের গল্প

জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি শতভাগ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান ভুলবার নয়। যুদ্ধে কন্টিনেন্টাল অার্মি কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনের তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয় তার দক্ষ নেতৃত্বের জন্য সারা বিশ্বে তিনি ছিলেন প্রশংসিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট এর মধ্যে তিনি অন্যতম।তাকে বলা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক। তিনি ছিলেন নিজ কর্মে উজ্জ্বল। আমাদের আজকের আয়োজন সংগ্রামী নেতা জর্জ ওয়াশিংটনকে নিয়ে।

সূত্র: feelgrafix.com

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৩২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ভার্জিনিয়ায় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন অাগাস্টিন ওয়াশিংটন। মা ম্যারি বল। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান ছিলেন তিনি। তার বাবা তামাক এবং দাস ব্যবসা করতেন। ১৭৪৩ সালে তার বাবা অাগাস্টিন ওয়াশিংটন অসুস্থ হয়ে মারা যান। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ব্যবসার হাল ধরেন। জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৫৯ সালের ১৬ জানুয়ারি মার্থা ড্যান্ড্রিজকে বিয়ে করেন। মার্থা ড্যান্ড্রিজ বেশী পরিচিত ছিলেন লেডী ওয়াশিংটন নামে। গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তেমন সুযোগ পাননি জর্জ ওয়াশিংটন।

সেনাবাহিনীতে যোগদান

ছোটবেলা থেকেই জর্জ ওয়াশিংটন স্বপ্ন দেখতেন সৈনিক হওয়ার। তার সেই স্বপ্নের কথাই ভার্জি্নিয়ার গর্ভনরকে জানান। ভার্জিনিয়ার গর্ভনর এক সময় জর্জ ওয়াশিংটনকে ডেকে পাঠান। সেসময় ভার্জিনিয়ার একটি বিরাট অঞ্চল ফরাসিদের দখলে ছিল। অঞ্চলটি ফরাসিদের থেকে দখল মুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় জর্জ ওয়াশিংটনকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর জর্জ ওয়াশিংটন সৈন্যদেরকে নিয়ে ফরাসিদের দূর্গে অাক্রমণ চালান। দখল মুক্ত করেন ভার্জিনিয়ার ঔপনিবেশিক অঞ্চল।

জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী সেনাপতি। রণাঙ্গনে তিনি বার সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তার দক্ষ রণ কৌশলের জন্যই বিজয় এসেছে একের পর এক। ভার্জিনিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশিক মিলিশিয়ার মেজর হিসেবে সেনাবাহিনীতে তার কর্ম জীবন শুরু হয় তার। ভার্জিনিয়ার গর্ভনরের মৃত্যুর পর জর্জ ওয়াশিংটন গর্ভনরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভার্জিনিয়ার সেনাবাহিনীরও প্রধান হন তিনি।

সূত্র: feelgrafix.com

অামেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক

জর্জ ওয়াশিংটনকে বলা হয় অামেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক। মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধ মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধ নামেও পরিচিত। এটি ছিল গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের ১৩টি উপনিবেশের বিদ্রোহ। এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কর অারোপ। ১৭৭৬ সালের ৭ জুন ১৩টি প্রদেশের প্রতিনিধিগণ মিলে অামেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে অামেরিকানদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এ যুদ্ধে জর্জ ওয়াশিংটন কন্টিনেন্টাল অার্মির সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯ এপ্রিল ১৭৭৫ থেকে ১১ এপ্রিল ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলতে থাকে। জর্জ ওয়াশিংটন তার সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন। তার দক্ষ নেতৃত্বের ফলে এ যুদ্ধে জয়ী হয় যুক্তরাষ্ট্র। এ যুদ্ধে জয় লাভের পেছনে জর্জ ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সৈনিকদের প্রতি ভালোবাসা, শৃঙ্খলাবোধ  আর প্রবল ইচ্ছা শক্তি তাকে সাফল্যের সবোর্চ্চ চূড়ান্ত নিয়ে যায়। অামেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়াও ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ, ফোর্ট নেসেসিটির যুদ্ধ, বোস্টন অভিযান, নিউইয়র্ক এবং নিউ জার্সি অভিযান, ফোর্বস অভিযান, ফিলাডেলফিয়া অভিযান, ব্রাডক অভিযান, ইয়র্কটাউন অভিযান, জুমনভিলে গ্লেনের যুদ্ধ সহ জর্জ ওয়াশিংটন বেশ কয়েকটি যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন।

সূত্র: feelgrafix.com

অামেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট

জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। বৃটিশ উপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে দেশ মুক্ত হবার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৭৮৯ সালে। নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিবার্চিত হন জর্জ ওয়াশিংটন। ১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি তিনি শপথ গ্রহণ করেন। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান নিউইয়র্কে চ্যান্সেলর রবার্ট লিভিংস্টন। তিনি পর পর দুবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জর্জ ওয়াশিংটন ১০০ ভাগ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

সেসময়ে তার বেতন ছিল ২৫ হাজার ডলার। সারা বিশ্বে জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক। ৩০ এপ্রিল ১৭৮৯ থেকে ৪ মার্চ ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। আদর্শ এবং সততার জন্য তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। জর্জ ওয়াশিংটনের পর জন এ্যাডামস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, ৪৫তম রাষ্ট্রপতি।

জর্জ ওয়াশিংটনের অবিস্মরণীয় উক্তি

জর্জ ওয়াশিংটনের অনুপ্রেরণামূলক কিছু উক্তি দেয়া হলো এখানে।

Gettyimagey.com
  • To be prepared for war is one of the most effective means of preserving peace.
    “শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্যতম কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া।”
  • It is far better to be alone, than to be is bad company.
    “খারাপ সঙ্গী থাকার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো।”
  • Happiness and moral duty are connected.
    ” সুখ এবং নৈতিক দায়িত্ব ওৎপ্রতোভাবে জড়িত।”
  • Liberty, when it begins to take root is plant of rapid growth.
    “মুক্তি এমন বৃক্ষ, যখন এর শেকড় গজাতে শুরু করে তখন খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে।”

মৃত্যুবরণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার অগ্রনায়ক জর্জ ওয়াশিংটন সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ১৪ ডিসেম্বর ১৭৯৯ সালে পরলোকগমণ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *