টিমের মধ্যে ভালো সংস্কৃতি তৈরি করবেন যেভাবে

photo: wrike

ভালো সংস্কৃতি গড়ে ওঠে না, তৈরি করতে হয়। সংস্কৃতি ততটাই বড় বিষয় যতটা বড় আপনার প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি ততটা সাধারণ যতটা সাধারণ আপনার টিম, এবং একই সাথে ততটাই জটিল যতটা জটিল আপনার দলের মধ্যে পরস্পরের সম্পর্ক। ভাল সংস্কৃতির সৃষ্টি হয় পরস্পরের প্রতি আচরণ, কর্ম এবং নানাবিধ অনুশীলনের দ্বারা।

photo: teamwork

যখন কোনো নতুন মানুষ ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত কোনো কর্মপরিবেশে প্রথম প্রবেশ করে, তখন সে কর্মচারী ম্যানুয়াল পড়ে দেখেন, টিম সম্বন্ধে জানার জন্য। কিন্তু কোনো কিছু পড়ে জানা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুতরাং সে বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারে যখন সহকর্মীদের সাথে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে যোগাযোগ করে।

বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিবেচনায়, কোনো একটি টিম বা কোনো একটি সংগঠনের মধ্যে ভালো সংস্কৃতি তৈরি করা একই রকম ব্যাপার। ভালো আচরণ এবং কর্ম দিয়েই কেবল কোন দলের মধ্যে একটি ভাল সংস্কৃতি সৃষ্টি করা যায়।

আমরা কোথায় যেতে চাই বা কী হতে চাই?

কোনো স্টার্টআপ কোম্পানির ক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা জানেন তারা কোথায় যেতে চান এবং কি হতে চান। আপনি যদি নতুন কোনো দল গঠন করতে চান অথবা ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত কোনো দলে প্রবেশ করতে চান তবে শুরুতেই আপনাকে এক কদম পিছিয়ে এসে ভাবতে হবে- আপনি এই দলের কে হতে চান? আপনি নিজেকে এবং আপনার দলকে কোথায় নিয়ে যেতে চান? বিভিন্ন পর্যায়ের নির্দেশ এবং পরামর্শ আপনি দলকে দিয়ে কীভাবে বাস্তবায়ন করাতে চান? এবং এসব কিছুর ভিত্তিতে কিভাবে সফলভাবে দল পরিচালনা করে আপনি লক্ষ্য অর্জন করতে চান?

photo: medium

একটি সহজ এবং সুন্দর সমাধান হতে পারে,  প্রত্যেক ডেস্কের কাজের উপর ভিত্তি করে একটি চমৎকার নীতিমালা প্রণয়ন করা অথবা এমন কিছু কিওয়ার্ড নির্বাচন করা, যা দলের কাজকে সহজ করতে এবং তাদের অনুপ্রাণিত করতে সহায়তা করবে। সাথে সাথে দলকে এমনভাবে মূল্যায়ন করা যেন দলের প্রতিটি সদস্য নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

তবে মনে রাখতে হবে দলের প্রতি সকল নির্দেশনা যেন স্পষ্ট হয়। আপনি যদি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে নিশ্চিত ভাবে বলতে না পারেন আপনি কি চান, তাহলে দল কিভাবে আপনার প্রত্যাশা পূরণ করবে অথবা কিভাবে তার আপনাকে অনুসরণ করবে? দলের সদস্যরা যদি তাদের দায়িত্ব বুঝতে বার বার আপনার শরণাপন্ন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার নির্দেশনা এবং নেতৃত্বে ভুল আছে। সবার আগে সেগুলো সংশোধন করতে হবে। দলের মধ্যে সুন্দর সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে নিচে আলোচিত এই তিনটি মৌলিক বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আস্থা

যেকোনো দলের মধ্যে সফলতা এবং ব্যর্থতা দুটোই থাকবে। হতেই পারে দলের কোনো সদস্য বা কোনো একটি পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। সব বড় দলেরই একটি চমৎকার সংস্কৃতি হলো, যখন দলের মধ্যে কোনো ব্যর্থতা আসে সবাই সেটাকে খুশি মনে মেনে নেয়। এমনকি সফল হওয়ার মতোই আচরণ করে। তারা খুঁজে বের করে: আমরা কী ভুল করেছি? এই ভুল থেকে আমরা কি শিক্ষা নিতে পারি? ভবিষ্যতে এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি? এই বোধ এবং কর্মপরিবেশ দলের মধ্যে আস্থা এবং দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে।

photo: redbooth

আপনি যদি ব্যর্থতাকে উদাহরণ হিসেবে ধরে নেন এবং সবকিছুকে এর ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেন, তাহলে কখনই আপনার দলের ক্ষমতা, সংকল্প এবং প্যাশনকে দেখতে পাবেন না। দলের মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতিতে বিশ্বাস দুই পক্ষ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দল কোনো কারণে ব্যর্থ হলে তাদের প্রতি যেমন আপনার বিশ্বাস এবং আস্থা থাকা জরুরি, একইভাবে আপনার কোনো ব্যর্থতা বা কোনো ভুল সিদ্ধান্তে আপনার দলের আস্থা এবং বিশ্বাস থাকাও জরুরি।

এ আস্থা অর্জন করা আসলে এতটা সহজ নয়। কিন্তু সবাই যখন উপলব্ধি করবে সবাই আসলে এক লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছে, একই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছে, তখন পরস্পরের প্রতি আস্থা, প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বাস আপনা থেকেই বৃদ্ধি পাবে। আপনাকে শুধু ধৈর্য্য ধরে দলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে এবং দলকে বিশ্বস্ত রাখতে হবে।

সহমর্মিতা

আমরা যখন দলের মধ্যে একে অপরকে বিশ্বাস এবং ভরসা করি, তখন এমন একটি সহানুভূতিশীল এবং সহমর্মী পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে দলের কোনো সাফল্য কারো ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে দেখা হয় না অথচ সবাই এই সাফল্যে ব্যক্তিগতভাবে খুশি হয়। যখন একটি দল হিসেবে আমরা এটি অনুধাবন করতে পারি, তখন আমরা কম কথা বলে বেশি কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। সাথে সাথে পরস্পরের দুর্বলতা বোঝা, তাকে সাহায্য করা এবং টিমের সবাইকে সম্মান করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি।

photo: ir-tech

দলের নতুন সদস্যরা কখনো কখনো সহানুভূতির অভাব বোধ করেন। তারা বলেন, আমি ইতিমধ্যে যথেষ্ট কাজ করেছি, এটা বুঝতে এত সময় লাগে? এমন নতুন কর্মীদের সামাল দেওয়া এবং তাদের দলের উপযুক্ত হয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। সার্বিক ভাবে একটি দলের মধ্যে চমৎকার কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে সহমর্মিতা অনেক বড় একটি উপাদান। সহমর্মিতা থাকলে দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতিক্রিয়া জানানো এবং ইতিবাচক সমালোচনা করার পথ উন্মুক্ত হয়। তাতে দলের গতিপ্রকৃতি এবং কর্মতৎপরতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

ধারণক্ষমতা

দলের মধ্যে চমৎকার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে ধারাবাহিকতা এবং উন্নতি সাধনের জন্য সকল প্রকার কর্মতৎপরতা ও ধারণক্ষমতা থাকা আবশ্যক। ভালো দল সবসময়ই ভবিষ্যৎমুখী হয়। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? আমাদের কী নিয়ে ভাবতে হবে? কী কী কাজ করতে হবে? কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে? এবং বর্তমানের কাজ ভবিষ্যতে কী প্রভাব ফেলবে – এসব নিয়ে ভাবেন। যখন একটি দল ভবিষ্যৎমুখী হয়, তখন তারা তাৎক্ষণিক এবং দ্রুত সাফল্য খোঁজেন না, বরং দীর্ঘমেয়াদী এবং উৎপাদনমুখী পরিকল্পনা করেন। কাজ করতে গিয়ে ভুল পদ্ধতিতে কোনো প্রকল্প এগিয়ে নিলেও দলের সদস্যরা পরস্পরকে দোষারোপ করে না, বরং ভুল বুঝতে পারা মাত্রই তা সংশোধনে নেমে পড়েন।

photo: wrike

একটি দলের মধ্যে যখন এই তিনটি মৌলিক বিষয় উপস্থিত থাকে তখন ধরে নেওয়া যায় সেই দলটির যেকোনো প্রচেষ্টা সফল হবে। একটি ভালো দলের পরস্পরের মধ্যে আস্থা, সহমর্মিতা এবং ভবিষ্যৎমুখীতা যেকোনো দলকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *