কোম্পানির সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ডেভেলপ করার আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন

photo: gatelog systems

স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টের জন্য আউটসোর্সিংয়ের উপর নির্ভর করে। যদিও এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই যে, প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কিছু অংশ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করতেই হবে। তবুও প্রতিষ্ঠানগুলো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য আউটসোর্সিংয়ের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

photo: kreditkarta

কিন্তু কেন? এর কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের খরচ কমানো, কাজে বৈচিত্র্যতা আনা ,সময় বাঁচানো এবং ঝামেলা মুক্ত থাকতে চাওয়া এর মূল কারণ। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান মনে করে তাদের একার পক্ষে কোনো ভালো মানের সফটওয়্যার ডেভেলপ করা সম্ভব না। আবার অভিজ্ঞ হাতের কাজ সব প্রতিষ্ঠানই প্রত্যাশা করে। এইসব কারণেই মূলত স্টার্টআপ কোম্পানীগুলো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য আউটসোর্সিংয়ের উপর নির্ভর করে।

তবে কারণ যাই হোক, প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ডেভেলপ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচ্য। এই নিবন্ধে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যা যে কোনো সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ডে্ভেলপ করার পূর্বে বিবেচনা করতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

সফটওয়্যারের প্রকৃতি

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির সফটওয়্যার ডেভেলপ করার পূর্বে ভাবতে হবে যে সফটওয়্যারটি আপনি তৃতীয় একটি কোম্পানির কাছ থেকে তৈরি করতে চাইছেন সেই সফটওয়্যারটি আপনার প্রতিষ্ঠান প্রধান দক্ষতার পরিচায়ক কিনা। যদি এই সফটওয়্যারটি আপনার কোম্পানীর প্রধান চাবিকাঠি বা উন্নতির সোপান হয়ে থাকে, তাহলে কখনই এমন সফটওয়্যার বাইরের কোনো কোম্পানির কাছ থেকে ডেভেলপ করা উচিত না। আপনার কোম্পানির আর্থিক অবস্থা যাই হোক না কেন কখনোই নিজের প্রতিষ্ঠান প্রধান পণ্য বা সেবার সফটওয়্যার তৃতীয় কারো কাছ থেকে তৈরি করা উচিত না।

কোম্পানির গোপন রহস্য দ্বিতীয় বা তৃতীয় কারোর কাছে উন্মুক্ত করে দেয়ার অর্থ কোম্পানির ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা। তবে এই সফটওয়্যার যদি আপনার কোম্পানির প্রধানতম কোনো বিষয়বস্তু না হয়ে থাকে তবে আপনি যে কারো কাছ থেকে সফটওয়্যার ডেভেলপ করাতে পারেন।

photo: itscurrie

একইভাবে সফটওয়্যারটি সৃজনশীল নাকি শুধু কর্মক্ষেত্রের বিশেষ পদ্ধতি পরিচালনার জন্য সেটিও বিবেচ্য। যদি অপারেশনাল প্রোডাক্ট অর্থাৎ কোনো পরিচালনা প্রক্রিয়া তথা রিজার্ভেশন সিস্টেম বা প্রসেস অটোমেশনের মতো বিষয় হয়ে থাকে তবে সেই সফটওয়্যার নির্দ্বিধায় যে কাউকে দিয়ে ডেভেলপ করানো যায়। কিন্তু যদি সফটওয়ারটি সৃজনশীল কোনো বিষয় হয়ে থাকে, যেমন চিপ ডিজাইনিং প্রোগ্রাম, কনজিউমার গেমস বা এই জাতীয় সৃজনশীল পণ্যের জন্য সফটওয়্যার অবশ্যই নিজের হাউজের ডেভলপারকে দিয়ে তৈরি করা উচিত।

তাছাড়া সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কোনো সফটওয়্যার সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আউটসোর্সিং করে তৈরি করা সফটওয়্যার সবসময়ই ঠিকঠাক কাজ করবে তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। এমন হলে আপনার ক্রেতা এবং গ্রাহকের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ পণ্য বা সেবার সফটওয়্যার আউটসোর্সিং করে তৈরি না করাই ভালো।

প্রযুক্তিগত মানদন্ড

আউটসোর্সিং করে হোক আর যেভাবেই হোক সফটওয়্যারের মান বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আপনাকে প্রতিনিয়ত সেবা বা পণ্যের হালনাগাদ করা তথ্যগুলো সংযোজন করতে হবে এবং একইসাথে সফটওয়্যারটি মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যবহারকারীর কাছে সহজ এবং দ্রুত ব্যবহারযোগ্য রাখতে হবে। সফটওয়্যারে নতুন নতুন মাল্টিসিস্টেম সংযোজনের প্রয়োজন হবে। তাছাড়া যেকোন সমস্যায় সকল তথ্য সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

photo: tobii dynavox

এসব দিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সফটওয়্যার নিজের হাউজে তৈরি করাই উত্তম। কেননা সামান্য কিছু খরচ বাঁচাতে আউটসোর্সিং করে তৈরি করা সফটওয়্যার উপরিউক্ত সকল সুবিধা নিশ্চিত নাও করতে পারে। তাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের সফটওয়্যার আউটসোর্সিং না করাই ভালো।

খরচ

কোনো সেবা বা পণ্য সৃষ্টি করতে খরচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যে সফটওয়্যার তৈরি করতে চান তার জন্য আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান আপনার কাছ থেকে কি পরিমাণ মূল্য দাবি করে তা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া খুব দরকারী।

photo: sociable

আউটসোর্সিং করলে খরচ বাঁচানো যায় এটা সর্বজনবিদিত। তবে সফটওয়্যার নির্মাণের সময় স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী দুটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। সাধারণত স্বল্পমেয়াদী কাজের সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করা সুবিধাজনক, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নির্মাণ না করাই উত্তম। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী কাজের গুরুত্ব, বিনিয়োগ ফলাফল এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আপনাকে বিচক্ষণতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মেধাসত্ব সংরক্ষণ

মেধাস্বত্ব বা বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্বের সংরক্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সফটওয়্যার হাতে ধরা যায় না। এটি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম এবং যে ডেভলপার একটি সফটওয়্যার তৈরি করে সে একই রকম আরও একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে সক্ষম। যদিও এ বিষয়ে সব দেশেই আইন আছে। কিন্তু কিছু সূক্ষ্ম ব্যবধান এই আইনকে কখনো কখনো টেক্কা দিতে সক্ষম।

photo: wur

সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করার আগে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা আপনার সফটওয়্যার নির্মাণের অল্পদিনের মধ্যেই চুরি হয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ভিয়েতনাম এবং চীনের মধ্যে ব্যবহৃত প্রায় ৯০ শতাংশ সফটওয়্যার পাইরেটেড!

স্টার্টআপ কোম্পানি হিসেবে চুরি যাওয়া সফটওয়্যার উদ্ধার করা বা এ সম্পর্কিত আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ অর্থ খরচ হতে পারে। তাতে আপনার ব্যবসা ভেঙে পড়তে পারে। সুতরাং আউটসোর্সিং করে সফটওয়্যার নির্মাণের পূর্বে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারে ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে নিন। তাদের সাথে যথাযথভাবে চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করুন।

নির্মাণ পরবর্তী সেবা

আউটসোর্সিং করে কোনো সফটওয়্যার নির্মাণের পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানটি সফটওয়্যার নির্মাণের পর কতদিন আপনাকে সেবা দিয়ে যাবে। কেননা একটা সফটওয়্যার নির্মাণের পর নতুন নতুন হালনাগাদকৃত তথ্য তাতে সংযুক্ত করার প্রয়োজন হতে পারে।

photo: gatelog systems

আপনি যেহেতু সার্বক্ষণিক সফটওয়্যার ডেভলপার নিয়োগ করতে সক্ষম না, তাই আউটসোর্সিং করছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় পড়লে এই প্রতিষ্ঠানটি আপনার প্রয়োজন মত এগিয়ে আসবে এ ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়া দরকার।

সুতরাং আউটসোর্সিং করে সফটওয়্যার নির্মাণের পূর্বে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে নির্মাণ পরবর্তী সেবা দিয়ে যাবে এই ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়ে নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *