প্রতিদিন অসংখ্য কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। আবার দিনে দিনে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে! কিন্তু কেন? আসলে কর্মক্ষেত্র আর বেকার পরস্পরের যোগ্যতা ও প্রত্যাশার সম্মিলন ঘটাতে পারছে না। তরুণদের কথা বাদই দিলাম, অভিজ্ঞরাও চাকরি ছাড়ার পর নতুন চাকরি পায় না। কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিল না!
অভিজ্ঞ ব্যক্তি নিশ্চয়ই যোগ্যতাসম্পন্ন। না হলে পূর্বের চাকরিটা সে পেত না। নিশ্চয়ই, আমিও তাই মনে করি। কিন্তু তিনি তো ইতিপূর্বে কখনই দ্বিতীয় চাকরি করেননি!
সুতরাং প্রথমবার চাকরি পেতে যেমন যোগ্যতার প্রয়োজন, তেমনি দ্বিতীয়বার চাকরি পেতে আরো কিছু বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন। দ্বিতীয়বার চাকরি শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা না থাকার কারণে অনেক মানুষ শত চেষ্টা করেও চাকরি পায় না।
আজকের নিবন্ধে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, যা অভিজ্ঞ কর্মীদের মধ্যে বর্তমান। এই ছোট ছোট ভুলের কারণে অভিজ্ঞ কর্মীরা পূর্বের চাকরি ছাড়ার পর দ্বিতীয় চাকরি পায় না। আমার বিশ্বাস এই নিবন্ধটি আপনাদের ক্যারিয়ার নতুন করে শুরু করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
১. দুই চাকরির মধ্যে দীর্ঘ বিরতি
চাকরি না পাওয়া একটি বিরাট সংখ্যক মানুষের প্রধান সমস্যা হলো পূর্বের চাকরি ছাড়া এবং নতুন চাকরির চেষ্টা করার মাঝে দীর্ঘ বিরতি। আপনিও কি তাদের একজন? আপনার যদি এই সমস্যা থেকে থাকে তবে নিশ্চয়ই আপনি বারংবার নতুন চাকরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন!
এমন সমস্যা থাকলে বিচলিত হবার কিছু নেই। যদিও নিদারুণভাবে এই বিষয়টি আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাব্যতা কমিয়ে দেয়। তবুও আপনি যদি স্মার্ট হোন তবে দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। দুই চাকরির মধ্যে দীর্ঘ বিরতি সৎভাবে আপনার বায়োডাটায় উল্লেখ করুন, এবং এই দীর্ঘ বিরতির যথাযথ ও যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যাখ্যা করুন। এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করুন যে, বাধ্য হয়ে আপনাকে এই বিরতি দিতে হয়েছে।
আপনার এই সততা নতুন চাকরির ব্যাপারে আপনার আগ্রহ এবং আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলবে এবং নিয়োগকর্তা এই বিষয়টি খুব সহজভাবে গ্রহণ করবেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে বায়োডাটায় দুই চাকরির মাঝে দীর্ঘ বিরতির কোনো ব্যাখ্যা থাকে না, যা নিয়োগকর্তার মনে নানান প্রশ্ন সৃষ্টি করে। যার ফলে স্বভাবতই এমন আবেদনকারীর ব্যাপারে নিয়োগকর্তার মনোভাব নেতিবাচক হয়ে থাকে।
২. চাকরি পরিবর্তনের বিশ্বাসযোগ্য কারণ
শুধু যে মানুষ চাকরি পায় না এমন নয়, কেউ কেউ আছেন এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরি খুঁজে পান না, অর্থাৎ চাকরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েও নতুন চাকরি জোটাতে পারেন না। এর একটি বড় কারণ হলেঅ পূর্বের চাকরি ছাড়ার যথাযথ এবং বিশ্বাসযোগ্য কারণ বলতে না পারা। এমন কর্মীদের ব্যাপারে নিয়োগকর্তারা সবসময় দ্বিধান্বিত থাকেন। যেহেতু তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে এসেছেন, তাই অচিরেই এই প্রতিষ্ঠানও ছেড়ে যেতে পারেন, এমন দ্বিধা কাজ করে নিয়োগকর্তার মনে।
আপনি কি নতুন চাকরি খোঁজার সময় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে পূর্বের চাকরি ছাড়ার যথাযথ কারণ নিয়োগকর্তাকে বলেছেন? নিশ্চিতভাবেই চাকরির সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নটিই আপনাকে করা হবে। এই প্রশ্ন ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে ভুল উত্তর দেওয়া নির্বুদ্ধিতা। চাকরি ছাড়ার ব্যক্তিগত কারণ আপনার থাকতেই পারে। কিন্তু একান্ত ব্যক্তিগত কারণ কখনোই নিয়োগকর্তাকে বলতে যাবেন না।
অনেক সময় পূর্বের চাকরি ছাড়ার কারণ দর্শাতে গিয়ে অনেক আবেদনকারী পূর্বের প্রতিষ্ঠাণের তিরস্কার করে থাকেন, যা কখনই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপনি বরং চাকরি ছাড়ার কারণ হিসেবে নিজের পেশাগত উন্নতির প্রতিবন্ধকতা, স্বাচ্ছন্দ কর্মপরিবেশ বা অনুরূপ কারণ বলতে পারেন, যা আপনার উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতার প্রকাশ ঘটাবে। তাতে স্বভাবতই নতুন নিয়োগকর্তা আপনাকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী হবেন।
৩. সঠিক চাকরির আবেদন
কখনো কখনো চাকরি পাওয়ার সব যোগ্যতা থাকা সত্বেও শুধুমাত্র বেশি অভিজ্ঞতার কারণে কোনো কোনো চাকরি থেকে আপনি বাদ পড়তে পারেন। যেমন কোনো চাকরির বিজ্ঞাপনে কোনো কোম্পানি যদি কিছু নবীন স্নাতকে নিয়োগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে, তাহলে কখনই আপনি নবীর না হলে সেখানে আবেদন করবেন না।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, যেহেতু তারা নবীন শিক্ষার্থীদের চেয়েছে আপনি যেহেতু পাঁচ বছরের অভিজ্ঞ, সুতরাং আপনার জন্য এই চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা একশ ভাগ বেশি। এই ধারণা একেবারেই অমূলক! কেননা কোম্পানি শুধুমাত্র নবীনদের চায় বলেই আলাদাভাবে তা উল্লেখ করেছে।
সুতরাং আপনি অভিজ্ঞ হলে এমন চাকরিতে আবেদন করে সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। এতে বরং নিয়োগকর্তা আপনার উপর বিরক্ত হবেন এবং ওই প্রতিষ্ঠানে পরবর্তীতে আপনার উপযুক্ত চাকরির যোগ্যতাও আপনি হারাবেন। সুতরাং নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী যথাযথ চাকরির জন্য আবেদন করুন। কোনভাবেই তার বেশি বা কম কিছুর জন্য নয়।
৪. পূর্বের চাকরি থেকে বহিষ্কার হলে
পূর্বের চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হলে মানুষ নতুন চাকরিতে নিয়োগের সময় ভুল তথ্য দিয়ে নিয়োগকর্তাদের বিভ্রান্ত করেন। বিচক্ষণ নিয়োগকর্তারা আবেদনকারীর মিথ্যা তথ্য খুব সহজেই বুঝতে পারেন। স্বভাবতই তার চাকরি হয় না।
সুতরাং আপনি যদি পূর্বের চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে থাকেন তার জন্য মোটেও লজ্জিত হবেন না। আপনার কভার লেটার এবং সাক্ষাৎকারের সময় সুন্দরভাবে তা উল্লেখ করুন। মনে রাখবেন, নিয়োগকর্তা তার প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন যোগ্য মানুষ খুঁজে পেতে চান, সুতরাং সাক্ষাৎকারের সময় সঠিকভাবে পূর্বের চাকরি থেকে বহিস্কৃত হবার কারন ব্যাখ্যা করুন। নতুন চাকরিটা আপনি পেয়েও যেতে পারেন।