নিজের এয়ারলাইন্স খুলে নেওয়া মুখের কথা নয়। কারন বিভিন্ন অনুমোদনের চক্করে পড়ে আপনার এই ইচ্ছে দূর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তো রয়েছেই সাথে সাথে বিশাল অঙ্কের একটা বাজেটও থাকতে হবে। তবে এয়ারলাইন্স ছাড়াও এভিয়েশন সেক্টরে গড়ে নেওয়ার মতো আরো বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তেমন কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের এই আর্টিকেল।
১. এভিয়েশন ফুয়েল সার্ভিস : এইজি ফুয়েলস
হোক প্রাইভেট জেট, বেসরকারি যাত্রীবাহী এয়ারলাইন্স অথবা হোক এয়ারফোর্সের বিমান, এভিয়েশনের সব উড়োজাহাজের ফুয়েলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই সেক্টর বর্তমানে এভিয়েশন মধ্যে সব থেকে লাভজনক ব্যবসা ধরা হয়। কারন ফুয়েল সার্ভিসকে কখনো বিভিন্ন ধরনের রিস্ক, যেমন যাত্রী পাওয়া, কোম্পানির প্রচারণা এসব করার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে এদের চাহিদার কথা তো না বললেও নয়।
সাধারণত পেট্রোলিয়াম সেক্টরে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা আর প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ হলেই আপনি খুলে নিতে পারেন নিজের এভিয়েশন ফুয়েল সার্ভিস।
২. এফবিও সেলস্ এন্ড এডভাইসরি সার্ভিস
যদি এভিয়েশন ইন্ড্রাস্টির উপর আপনার মোটামুটি ভালো জ্ঞান থাকে তাহলে অভিজ্ঞ আগ্রহী লোক নিয়ে খুলে ফেলতে পারেন এফবিও এডভাইসরি সার্ভিস। এফবিও এডভাইসরি সার্ভিস মূলত এভিয়েশন বিভিন্ন সেক্টরে স্পেশালাইজ্ড সার্ভিস দিয়ে থাকে।
যেমন, কোম্পানি চালনা, এয়ারপোর্টের কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ, পেশাদারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর স্থায়ী বেস অপারেশনে সহায়তামূলক কাজ। এছাড়া বিভিন্ন বানিজ্যিক কাজ যেমন মার্কেটিং, বিজ্ঞাপনের বিষয়ে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে এফবিও সেলস এন্ড এডভাইসরি সার্ভিস।
৩. এভিয়েশন কনসোলটেন্ট সার্ভিস : আইএটিএ
এভিয়েশনের অভিজ্ঞতার মূল্য সব ক্ষেত্রে। ধরুন আপনি কোন এয়ারলাইন্স থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে এখনো নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করছেন। তবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কী করবেন। তাহলে এভিয়েশন কনসোলটেন্ট সার্ভিসের কথা একবার ভেবে দেখতে পারেন।
এভিয়েশন কনসোলটেন্ট সার্ভিস সাধারণত বিভিন্ন নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান অথবা এয়ারলাইন্সের পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করে থাকতে। সেসব কোম্পানির উন্নয়ন এবং লাভবান হওয়ার বিষয়গুলো তারা লক্ষ্য রাখে।
৪. এয়ারক্র্যাফ ওয়াশ সার্ভিস
নামেই বোঝা যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের কাজ কী। উড়োজাহাজ পরিষ্কার রাখাই এর কাজ। যাত্রীরা সাধারণত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন উড়োজাহাজ ভ্রমণ করতে পছন্দ করে, কারন সেটা তাদের নিরাপদবোধ করতে সহায়তা করে। তবে উড়োজাহাজ পরিষ্কার করা সহজ বিষয় নয়। কারন বিমানের নিরাপত্তা এই কাজের উপর নির্ভর করে। ক্লিনারদের ভুল কাজে ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা। অনেক বেসরকারি যাত্রীবাহী এয়ারলাইন্স নিজেদের ওয়াশ সার্ভিস রাখেন। তবে কমার্শিয়াল ছাড়াও বিভিন্ন প্রাইভেট এয়ারলাইন্স নির্ভর করে বাহিরের অন্যান্য এভিয়েশন ওয়াশ সার্ভিসের উপর। যেখানে থেকে তৈরি হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের চাহিদা।
৫. এয়ারক্র্যাফট মেন্টেনেন্স সার্ভিস
উড়োজাহাজকে ভালো কন্ডিশনে রাখার জন্য মেন্টেনেন্সের বিকল্প নেই। যাত্রীদের আর পাইলটের নিরাপত্তা বিষয়টি দেখে থাকেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। যারা কিনা মেন্টেনেন্স সার্ভিসের অন্তভুর্ক্ত। সাধারণত বিশেষ কিছু ট্রেনিং আর লাইসেন্স অর্জনের মাধ্যমে এই কাজের অনুমোদন হয়ে থাকে।
সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স নিজস্ব মেন্টেনেন্স সার্ভিস নিয়োজিত রাখেন তাদের বিমানের মেন্টেনেন্স কাজের জন্য। কিন্তু অসংখ্য ছোট ছোট বিভিন্ন ধরনের কোম্পানির থাকে না তেমন কোনো ব্যবস্থা। আর সেই প্রয়োজন থেকে বেড়েছে এয়ারক্র্যাফট মেন্টেনেন্স সার্ভিসের চাহিদা।
৬. এয়ারক্র্যাফট ক্যাটারিং সার্ভিস
খাবারের প্রয়োজন রয়েছে সবখানে। যখন দীর্ঘযাত্রা হবে তখন যাত্রীদের প্রয়োজনীয় খাবার পরিবেশন করা এয়ারলাইন্সের দায়িত্বের মধ্যে থাকে। আর এখানে থেকেই উদ্ভব ঘটেছে এয়ারক্র্যাফট ক্যাটারিং সার্ভিসের। বেসরকারি এবং সরকারি উভর এয়ারলাইন্সে নিজেদের ক্যাটারিং সার্ভিস থাকলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এক কাজটি অন্য কারো উপর দিতে পারলেই আনন্দিত হয়। ফলে ক্যাটারিং সার্ভিসের চাহিদা লক্ষ্যনীয়। তুলনামূলক কম বাজেটে এই ব্যবসায় নূন্যতম জ্ঞান নিয়ে যে কেউ নামতে পারবেন।
৭. এয়ারক্র্যাফট পার্টস সেল
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের বিমানে বিভিন্ন ধরনের মেন্টেনেন্স কাজ করে থাকেন। আর কাজের উপর নির্ভর করে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ। যেসব ব্যক্তির এভিয়েশন সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা ভালো করেই জানেন এইসব যন্ত্রাংশ যেমন মূল্যবান তেমনি বাহিরের বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা সময় সাপেক্ষ কাজ। তাই বিভিন্ন এয়ারলাইন্স নির্ভর করে উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রয় করা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর।
এই ধরনের প্রতিষ্ঠান খুলতে হলে এভিয়েশনের উপর আপনার যথেষ্ট জ্ঞান ছাড়াও বিভিন্ন বিমানের মডেলের উপর দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া বেশ ভালো পরিমাণ মূলধন নিয়ে নামতে হবে। তবে নিশ্চিত থাকুন, আপনার অর্থ এখানে আটকে থাকবে না।
৮. ফ্লাইট স্কুল
আপনার যদি পাইলট লাইসেন্স থেকে থাকে তাহলে পাইলটিং স্কুল খোলার কথা ভেবে দেখতে পারেন। বর্তমানে এভিয়েশন সেক্টর প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বেশি চাহিদা হচ্ছে পাইলটদের। ফলে অসংখ্য এভিয়েশন ফ্লাইট ট্রেনিং স্কুলের উদ্ভব ঘটেছে।
পাইলটিংয়ে বেশ অনেক বছরের অভিজ্ঞতা আর লাইসেন্স ছাড়াও এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন রয়েছে বিশেষ ধরনের লাইসেন্স। যেটা সংগ্রহ করা সহজ না হলেও শেষ পর্যন্ত আপনার প্রয়োজন হবে। তবে আপনি অন্যান্য পাইলটদের আপনার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নিতে পারবেন।
৯. প্রাইভেট জেট চার্টার
বিভিন্ন বিজনেসম্যান সাধারণ কমার্শিয়াল যাত্রীবাহী এয়ারলাইন্সে যাতায়াতের পরিবর্তে চার্টার বিমানই প্রথমে পছন্দ করেন। কারন সাধারণত বিমানের হতে এটা তেমন ব্যয়বহুল তো নয়ই বরঞ্চ দ্রুত ও চাহিদা অনুসারে পরিবহনের কাজটি হচ্ছে। আর এই চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে বিভিন্ন প্রাইভেট এয়ারলাইন্স কোম্পানি। সাধারণত পাইলট লাইসেন্স নিয়ে আপনি এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন। আর নিজে না করতে চাইলে পাইলট ভাড়া করার সুযোগ তো রয়েছেই।