যারা বিদেশী ভাষা সম্পর্কে আগ্রহী তারা আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সম্পর্কেও আগ্রহী। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সম্পর্কে যাদের জানাশোনা আছে, তাদের কাছে জাতিসংঘ পাহাড়ের চূড়ায় দূর থেকে চকচক করা কোনো রূপকথার রাজপ্রাসাদের চেয়ে কম কিছু নয়।
শুধুমাত্র কূটনৈতিক দিক থেকে নয়, ভাষাগত দক্ষতার জন্যও জাতিসংঘ আপনার ক্যারিয়ারে স্বর্গ স্বরূপ। একজন মানুষ যদি জাতিসংঘে নিজের জায়গা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, তিনি সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই যোগ্য বলে প্রমাণিত হন। আর জাতিসংঘে কাজ করার টিকিট হাতে পাওয়া মানে রাজ সিংহাসনে আসীন হবার মতো। সারা বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। যোগাযোগের সুবিধার জন্য সাধারণত ৬টি দাপ্তরিক ভাষায় সব ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা
জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা হলো আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ এবং স্প্যানিশ ভাষা। জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘের সচিবালয়ে যে দুটি ভাষা ব্যবহৃত হয় তা হলো ইংরেজি ও ফরাসি।
জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ৫২টি সদস্য দেশের সরকারি ভাষা। ফরাসি হলো ২৯টি দেশের, আরবি ২৪টি দেশের, স্প্যানিশ ২০টি দেশের, রুশ ৪টি দেশের এবং চীনা ২টি দেশের সরকারি ভাষা।
১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা কালে আরবি ছাড়া অন্য ভাষাগুলো অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গৃহীত হয় এবং ইংরেজি ও ফরাসি কাজ চালানোর জন্য ব্যবহার করা হতো।
অন্য ভাষাগুলোও পরে ক্রমান্বয়ে কাজ চালানোর জন্য ব্যবহার করা শুরু হয়। রাশিয়ান ১৯৬৮ এবং ১৯৬৯ সালে অ্যাসেম্বলি ও কাউন্সিলের ভাষা হিসেবে গৃহীত হয় পর্যায়ক্রমে।
কয়েক বছর পর চীনা ভাষা এই সম্মান অর্জন করে। পরবর্তীতে আরবি ভাষাও অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়।
অন্যান্য ভাষা
জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা ৬টি এবং ভূতাত্ত্বিক ভাবে ভাষাগুলো এতোটাই বৈচিত্র্যময় যে ধরে নেয়া যায় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এ ভাষা গুলোর যে কোনো একটি ভাষা জানবে। কিন্তু বাস্তবতা এমনটি নয়।
যদি ভাষাভাষীদের সংখ্যার দিকে নজর দেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে পৃথিবীর মাত্র অর্ধেক লোক এই ৬টি ভাষায় কথা বলতে এবং বুঝতে পারে। যার অর্থ এখনো পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যাকে জাতিসংঘে পৌঁছানোর জন্য ২য় ভাষার সাহায্য নিতে হবে।
নিকট ভবিষ্যতে হিন্দি ভাষাকে সবচেয়ে সম্ভাব্য ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়। যেটা হয়তো জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা অর্জন করে নিতে পারে। তালিকার নিচের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে ২৫০ মিলিয়ন মানুষ বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। সংখ্যার দিক বিবেচনা করে বাংলা ভাষারও সম্ভাবনা আছে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে মর্যাদা অর্জন করার।
কী ধরণের সুযোগ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য?
হতে পারেন জাতিসংঘের ভাষাতত্ত্ববিদ
জাতিসংঘে ভাষা বিষয়ক অনেক তথ্য জানলাম। কিন্তু এরমাঝেও যে আছে ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সুযোগ, তা কি জানা আছে?
চাইলে জাতিসংঘের অনুবাদক কিংবা দোভাষী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন আপনি। আর তার জন্য প্রথমে যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে জাতিসংঘের একটি “ল্যাঙ্গুয়েজ কম্পিটিটিভ ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সামিনেশন (language competitive language examinations)” এ উত্তীর্ণ হওয়া। ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কিত যে কোনো অবস্থানে ক্যারিয়ার করতে চাইলে এই সার্টিফিকেটটি অর্জন করতে হবে সবার আগে।
যদি আপনি ফরাসি, ইংরেজি, স্প্যানিশ অথবা রাশিয়ান ভাষার দোভাষী হতে চান তবে আপনাকে শুধু একটি ভাষা জানলেই হবে না। আপনাকে অন্তত আরও দুটি ভাষা জানতে হবে। এছাড়াও আরো জটিল কিছু দক্ষতাও থাকতে হবে। যেমন- আপনাকে অনুবাদ করতে হবে অর্থনৈতিক, মানবাধিকার ইত্যাদি নানা পরিসরে।
আপনার মনে হতে পারে অনুবাদ করা এমন আর কী? কিন্তু জাতিসংঘে কাজ করলে বুঝবেন, এটা আসলে বেশ জটিল একটা কাজ বটে। কারণ শুধু আক্ষরিক অনুবাদ করলেই চলবে না, আরো অনেক বড় পরিসরে ভাবানুবাদ নিয়ে কাজ করতে হবে আপনাকে।
অথবা হতে পারেন ইন্সট্রাকটর
হয়তো আপনি ভিনদেশি ভাষায় তেমন পারদর্শী নন। বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা আমেরিকানদের জন্য অন্য ভাষা শেখা বেশ দুঃসাধ্য। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হলেও, এটি অনেক ক্ষেত্রে তেমন সাহায্য নাও করতে পারে তাদের জন্য। এই ক্যাটাগরির মানুষদের জন্য সুযোগ অপেক্ষা করছে আপনার সামনে।
যদি আঞ্চলিক ইংরেজিভাষী কেউ পৃথিবী ঘুরে দেখতে চায় দুই কিংবা তিন বছরের জন্য, তাদের ইংরেজি শেখা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক ভাষা হবার কারণে ইংরেজি বিশ্বব্যাপী দরকার। যখন অধিকাংশ লোক একে ক্যারিয়ার হিসেবে গণ্যই করছে না, তখন আপনি আপনার গরমের ছুটিটা কাটিয়ে দিতে পারেন ইতালি, থাইল্যান্ড কিংবা ব্রাজিলে। নতুন একটি দেশে ভ্রমণ করার মাধ্যমে ইংরেজি শিখিয়ে উপার্জন করতে পারেন।
তবে জাতিসংঘের ভাষা শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে হলে আপনাকে এই বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। সাথে থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট ভাষা শিক্ষা কিংবা ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক প্রথম শ্রেণির ডিগ্রি।
অতঃপর উপভোগ করুন অর্জিত সাফল্য
জাতিসংঘের সাথে কাজ করার সুযোগ পাওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতোই। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতার দূরত্ব সবসময়ই অনেক বেশি। জাতিসংঘে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আপনার কাজকে মন থেকে উপভোগ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। নবিস হিসেবে ভাষাতাত্ত্বিকের কাজ খুব কমই সময়ই উপভোগ্য হয়। অন্যদিকে কাজ করতে অনেক ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটবে।
এ ক্ষেত্রে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াবার সুযোগও আছে। যদিও অধিকাংশ মানুষ জাতিসংঘে কাজ করা বলতেই চিন্তা করে, জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউ ইয়র্ক সিটি কিংবা জাতিসংঘের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অফিস যেগুলো অস্ট্রিয়া, জেনেভা, নাইরোবিতে অবস্থিত কিংবা আঞ্চলিক কমিশন গুলোতে কাজ করার। আদতে কেবল তা নয়। বিভিন্ন দেশে কাজ করতে হতে পারে।
Feature Image: www.wrdw.com