সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির সবথেকে বেশি চাহিদাপূর্ণ পেশা হচ্ছে এন্ড্রয়েড ও আইওএস ডেভেলপার। আপনি যদি কোডিং করতে ভালোবাসেন আর এই বিষয়ে পড়াশোনা শেষে আইওএস ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে যোগদান করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। তবে ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে যোগদান করা সহজ কাজ নয়।
এর মূল কারণ হচ্ছে, অধিকাংশ ডেভেলপার ঠিকমতো জানেনই না, ইন্টারভিউতে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ঠিক কী কী কাজের দক্ষতা সম্পর্কে জানতে চাইবে। আর সে অনুসারে কোন কোন বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তাই আপনি যদি নিজের পথ নিয়ে দিশেহারা হয়ে থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
আপনার কর্মদক্ষতা কোন স্তরের ?
আপনার কর্মদক্ষতা কতটুকু, সেটা অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করেনা। তবে ডেভেলপার ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মী নিয়োগের সময় আপনার অভিজ্ঞতার বিষয়টি প্রথম লক্ষ্য করা হয়।
তাই আবেদনের পূর্বে আপনি কোন স্তরের ডেভেলপার, সে বিষয়টি আপনাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। তাই আবেদনের পূর্বে নিজের অভিজ্ঞতা যাচাই করুন। বাৎসরিক অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে চার ভাগে ডেভেলপারদের ভাগ করা যায়। যেমন,
- প্রাথমিক স্তর : আইওএস ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের অভিজ্ঞতা যদি এক বছরের কম সময় হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে একেবারে প্রাথমিক স্তরের ডেভেলপার পদে আপনি আবেদন করতে পারবেন।
- জুনিয়র ডেভেলপার : সাধারণত এই পদে আবেদন করার জন্য আপনাকে কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- মধ্যবর্তী / ইন্টারমিডিয়েট ডেভেলপার : যদি আপনার অভিজ্ঞতা তিন থেকে পাঁচ বছরের মতো হয়ে থাকে ,সেক্ষেত্রে আপনি ইন্টারমিডিয়েট ডেভেলপার পদে আবেদন করতে পারবেন।
- সিনিয়র ডেভেলপার : এই পদে আবেদনের জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে পাঁচ বছরের অধিক সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
আপনি যদি ইতিমধ্যে ইন্টারমিডিয়েট অথবা সিনিয়র ডেভেলপার হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে চাকরির আবেদন অথবা চাকরি খুঁজে নিতে তেমন বাধাবিপত্তি হবেনা।
১. প্রাথমিক স্তরের ডেভেলপার
যেকোনো কর্মক্ষেত্রে পদার্পণের শুরুটি হচ্ছে সবথেকে কঠিন কাজ। কারণ শুরুতে আপনার যেমন কোন কাজের অভিজ্ঞতা থাকবে না, তেমনি আপনার কর্মদক্ষতা নিয়ে নিয়োগকর্তার পাশাপাশি নিজেরও সন্দেহ থাকবে। যে কারণে প্রথমদিকে চাকরি পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। এমন যদি হয়ে থাকে যে, কয়েক মাস প্রচেষ্টার পরও আপনার চাকরি হচ্ছেনা, সেক্ষেত্রে আশাহত হবেন না। কারণ এই ঘটনাটি আপনার মতো অসংখ্য ডেভেলপারের সাথে ঘটছে। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিয়ে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
এক্ষেত্রে এই টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
০১. পোর্টফলিও তৈরি করা
কোথাও কাজ না করলে আপনার অভিজ্ঞতা হবেনা। আর অভিজ্ঞতা না থাকলে পোর্টফলিও তৈরি করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে পোর্টফলিও ছাড়া চাকরি হবেনা। এই চক্র থেকে আপনাকে বের হয়ে আসতে হবে। আর সেজন্য অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের এপ্লিকেশন তৈরিতে সময় দিতে পারেন। আপনার তৈরি কোড আর অ্যাপস জিটহাবে প্রকাশিত করুন। কারণ যখন ইন্টারভিউতে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এই বেকারত্বের মাসগুলোতে আপনি কি করেছেন, তখন যেন সেই প্রজেক্টগুলো আপনি দেখাতে পারেন।
০২. পরীক্ষামূলক ইন্টারভিউ দেয়া
পরিচিত কোন সিনিয়র ডেভেলপার থাকলে তাদের মাধ্যমে আপনার দক্ষতা যাচাই করুন। এক্ষেত্রে তাদেরকে আপনার পরীক্ষামূলক ইন্টারভিউ নিতে বলতে পারেন।
০৩. বিভিন্ন কনফারেন্সে যোগ দেয়া
আপনি যখন কনফারেন্সে যোগ দিবেন, তখন বর্তমান সময়ে ডেভেলপার ইন্ডাস্ট্রির কর্মীদের চাহিদা আর কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। পাশাপাশি কী কী বিষয়ে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করা সহজ হয়ে উঠবে।
০৪. কোডিং করা
আপনার অবসর সময়ে ব্যক্তিগত প্রজেক্ট হাতে নিন। আর সেই সকল কাজে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন। আপনি যখন নিয়মিত কোডিং করবেন, তখন আপনার দক্ষতা যেমন বাড়বে, তেমনি সেই প্রজেক্টগুলো জিটহাবে প্রকাশ করে নিজের পোর্টফলিও ভারি করতে পারবেন।
০৪. চাকরির পদের জন্য নমনীয়তা
হতে পারে সরাসরি অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট পদে আপনি যোগদান করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে একই সেক্টরের অন্যান্য পদের জন্য চেষ্টা করুন। যেমন, কোডার হিসাবে না হলে কোয়ালিটি এস্যুরেন্স পদে আবেদন করতে পারেন। আর আপনি যখন কোন ইন্ডাস্ট্রিতে যোগদান করবেন, তখন সেখানকার অন্যান্য পদে যোগদান করা সহজ হয়ে উঠবে।
২. জুনিয়র ডেভেলপার
ডেভেলপার ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি যখন নিজেকে পুরোপুরি খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন, তখনই জুনিয়র ডেভেলপার পদে আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে অবজেক্টিভ সি, সুইফ আর জাভার উপর যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি জিটের মাধ্যমে অন্যদের সাথে মিলিত প্রজেক্টে কাজ করা এবং একাই একটি প্রজেক্ট ডেভেলপ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। আপনি যখন জুনিয়র ডেভেলপার হিসাবে কোথাও আবেদন করবেন, তখন এই বিষয়গুলো গুরুত্ব প্রদান করতে হবে ,
০১. আপনার সকল চাহিদা কোম্পানি কি পূরণ করবে ?
জুনিয়র ডেভেলপার হিসাবে আপনি যখন কোথাও যোগ দেবেন, তখন আপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজেকে একজন ইন্টারমিডিয়েট ডেভেলপার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
তাই যে কোম্পানিতে আপনি চাকরি করতে ইচ্ছুক, সেই কোম্পানি আপনার চাহিদা পূরণ করে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে কিনা, বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
০২. টেকনিক্যাল এবং নন টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে তারা কতটুকু গুরুত্ব প্রদান করে ?
সাধারণত জুনিয়র ডেভেলপারদের কাজ প্রজেক্টের কোড লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয় যেমন কোডিং, কোয়ালিটি এস্যুরেন্সের মত বিষয়গুলোতে তারা কতটুকু গুরুত্ব দেয়, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। পাশাপাশি কোডের উন্নয়ন আর পরীক্ষার বিষয়টি তারা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, সে দিকটি আপনাকে গুরুত্বের সাথে যাচাই করতে হবে। কারণ আপনি যখন এইসব কাজের সাথে যুক্ত থাকবেন, তখন তাদের পরিকল্পনা এবং কর্মদক্ষতার উপর ভিত্তি করে আপনার দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটবে।
০৩. আপনার ট্রেনিংয়ের জন্য তারা কি অর্থ প্রদান করবেন ?
ডেভেলপিংয়ের কাজে শেখার শেষ নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন কনফারেন্সে যোগদান এবং ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন হবে। আর এই ট্রেনিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট তারা প্রদান করবেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
০৪. নিজের ব্যক্তিগত প্রজেক্ট নিয়ে তাদের কি কোন আপত্তি রয়েছে ?
প্রতিদিন সকাল নয়টা হতে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবেন। তবে শুধু কোম্পানির কাজে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়।
তাই জেনে নিন, নিজের ব্যক্তিগত প্রজেক্ট তৈরি এবং সেগুলো জিটহাবের মতো স্থানে প্রকাশ করা অথবা ফ্রিল্যান্সিং কাজে তাদের আপত্তি রয়েছে কিনা। কোম্পানির কপিরাইটের বাইরে নিজের ব্যক্তিগত প্রজেক্ট প্রকাশে যে তারা কোন ধরনের বাধা দেবেননা, সে বিষয়ে নিশ্চিত করুন।