বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি যে কাজই করুন না কেনো, বই পড়লে তা আপনার কোনো না কোনোভাবে আপনার কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর আপনি যদি উদ্যোক্তা হন বা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কাজে সফলতা লাভ করতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। পৃথিবীতে যত সফল উদ্যোক্তা বা সিইও রয়েছে। তাদের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা প্রত্যেকেই প্রচুর বই পড়েছেন।
পৃথিবীতে তো অসংখ্য বই রয়েছে, এক জীবনে তো সব বই পড়তে পারবেন না। তাহলে কোন বইগুলো পড়বেন? এমন প্রশ্ন মনে উদয় হতেই পারে। আপনাকে আপনার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বইগুলো আগে পড়ে ফেলতে হবে। তারপর সময় পেলে পছন্দমত অন্যান্য বই পড়বেন। ধরুন, আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের সিইও বা উদ্যোক্তা হতে চান। তাহলে আপনার পড়ার তালিকায় অবশ্যই যে ৬টি বই রাখবেন, চলুন সেগুলো জেনে নেই এ আর্টিকেলটি থেকে।
১. দ্য হার্ড থিং অ্যাবাউট হার্ড থিংস (The Hard Thing About Hard Things)
২০১৪ সালের ৪ই, মার্চ বেন হোরোউইটজ কর্তৃক দ্য হার্ড থিং অ্যাবাউট হার্ড থিংস: বিল্ডিং এ বিজনেস হোয়েন দিয়ার আর নো ইজি অ্যানসারস বইটি প্রকাশিত হয়। বেন হোরোউইটজকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তিনি এ্যানড্রিসেন হোরোউইটজের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিলিকন ভ্যালির অন্যতম সেরা ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তা। তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের নানা অভিজ্ঞতার আলোকে এ বইটি লিখেছেন।
সিইও এবং উদ্যোক্তারা কী ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে এবং এসব চ্যালেঞ্জ ও সমস্যাগুলোকে কীভাবে মোকাবেলা করা দরকা,র সে সম্পর্কীয় বিভিন্ন টিপস তিনি তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের দ্বারা এ বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। কোনো সিইও বা উদ্যোক্তা যদি ভালো ব্যবস্থাপনা পরামর্শ চান, তবে অবশ্যই তার এ বইটি পড়া উচিত।
২. রিমোট: অফিস নট রিকোয়ার্ড (Remote: Office Not Required)
জ্যাসোন ফ্রিড ও ডেভিড হ্যানসন হলেন ৩৭ সিগন্যাল নামক ওয়েব ডিজাইন ও সফটওয়্যার কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা। এ কোম্পানিটি ১৯৯৯ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩৭ সিগন্যালের প্রথম ও সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রোডাক্ট হলো বেজক্যাম্প। ২০১৪ সালে ৩৭ সিগন্যালের নাম পরিবর্তন করে বেজক্যাম্প নামে নামকরণ করা হয়। বিশ্বের সেরা বুটস্ট্রাপিং ও স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর একটি হলো বেজক্যাম্প।
এ কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনেকেই প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে অফিস করতে আসেন। জ্যাসোন ও ডেভিড তাদের কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে রিমোট: অফিস নট রিকোয়ার্ড বইটি লিখেন।
৩. দ্য ফাউন্ডার’স ডিলিমমাস (The Founder’s Dilemmas)
আমি নিজেই কোনো কোম্পানি শুরু করবো নাকি আমার উচিত সহপ্রতিষ্ঠাতা খোঁজ করা? সহপ্রতিষ্ঠাতা কি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয়দের থেকে নির্বাচন করবো, নাকি অপরিচিত কাউকে? মূলধনের যোগান কীভাবে দেবো? কীভাবে সফল উদ্যোক্তা হবো? এমন বিভিন্ন দ্বিধাদ্বন্দ্বপূর্ণ প্রশ্ন উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতাদের মনে উদিত হয়। এসব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন নোম টি উসেরম্যান তার দ্য ফাউন্ডার’স ডিলিমমাস: এন্টিসিপিটিং এ্যান্ড অ্যাভোইডিং দ্যা পিটফলস দ্যাট ক্যান সিনক ফর স্টার্টআপ নামক বইটিতে।
তিনি তার নিজের ও সহকর্মী ইভান উইলিয়ামস ও টিম ওয়েস্টারগ্রিনের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে উদ্যোক্তাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বগুলো দূর করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তাই আপনি যদি নতুন উদ্যোক্তা ও সিইও হয়ে থাকেন, তবে এ বইটি অবশ্যই পড়া উচিত।
৪. দ্য ইয়ার উইদাউট প্যান্টস (The Year Without Pants)
স্কট বার্কুনের লেখা অসাধারণ একটি বই হলো দ্য ইয়ার উইদাউট প্যান্টস: ওয়ার্ডপ্রেস.কম এ্যান্ড দ্যা ফিউচার ব্যাংক । স্কট একটি কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। আর তার এ কোম্পানি অনলাইন প্রকাশনায় বিপ্লব ঘটায়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
আপনি কি জানতে চান,একটি কোম্পানি ইমেইল ব্যবহার করা ছাড়াই কীভাবে উন্নতি লাভ করতে পারে? তাহলে স্কটের দ্য ইয়ার উইদাউট প্যান্টস বইটি পড়ে ফেলুন।
৫. হ্যাচিং টুইটার (Hatching Twitter)
টুইটারের ইতিহাসকে ভিত্তি করে নিক বিলটন কর্তৃক রচিত উপন্যাস হলো হ্যাচিং টুইটার , যা ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়। বর্তমানের টুইটার হঠাৎ করে আজকের এ জনপ্রিয় অবস্থানে উপনীত হয়নি, বরং এক কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টুইটারকে বর্তমানের এ অবস্থানে আসতে হয়েছে।
টুইটারের প্রতিষ্ঠালগ্নে ও বিভিন্ন সময়ে কীভাবে সংগ্রাম করতে হয়েছে তারই বিশ্লেষণমূলক আলোচনা নিক বিলটন তার এ বইটিতে তুলে ধরেছেন। যারা সফল উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতা হতে চান, তাদের প্রত্যেকেরই হ্যাটচিং টুইটার বইটি পড়া উচিত।
৬. দ্য ইভরিথিং স্টোর (The Everything Store)
স্কটের হ্যাটচিং টুইটারের ন্যায় আরেকটি বই হলো ব্রাড স্টোন কর্তৃক রচিত দ্য ইভরিথিং স্টোর: জেফ বিজোস এ্যান্ড দ্যাএজ অব আমাজন । বর্তমানে আমাজনের সংগ্রামকে ভিত্তি করে এ বইটি লেখা হয়েছে। সিয়াটেল ভিত্তিক কোম্পানিটি বর্তমানে ইন্টারনেট অর্থনীতিতে এক সূদৃঢ় অবস্থান সৃষ্টি করেছে। গত কয়েক বছরে ইকমার্স থেকে শুরু করে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে বিশ্বব্যাপী মার্কেট তৈরি করেছে।
জেফ বিজোস যখন ওয়াল স্ট্রিটে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তখন থেকে শুরু করে বর্তমানে শিল্পের জগতে শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসা আমাজনের দীর্ঘ সংগ্রামময় ইতিহাস ব্রাড স্টোন তার ‘দ্য ইভরিথিং স্টোর’ বইটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন।
Featured Image:Medium.com