বর্তমান বিশ্বে সকল ধরনের ব্যবসার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে বৃহৎ উপাত্ত ও বিশ্লেষণ ব্যবসা। দ্রুত বেড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহৎ উপাত্ত ও বিশ্লেষণ সেবা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রযুক্তি বাজারে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা কোনো অসম তথ্যকে বিশ্লেষণ করে তার অন্তর্নিহিত অর্থ বের করতে সক্ষম। বৃহৎ উপাত্ত ব্যবসার ক্রমবর্ধমান প্রসার দৃষ্টি আকর্ষন করছে পৃথিবী ব্যাপী যুগ্ম-বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এবং উৎসাহিত করছে বৃহৎ উপাত্ত ব্যবসায় বিনিয়োগে।
বৃহৎ উপাত্ত ও বিশ্লেষণ এমন একটি সেবা যা কোন প্রতিষ্ঠানের সকল ধরনের জটিল থেকে জটিলতর উপাত্ত যার আয়তন প্রচলিত সকল পদ্ধতির কার্যক্ষমতার ঊর্ধে, এমন তথ্যের বিশ্লেষণ ও তত্ত্বাবধায়ন করে। বৃহৎ উপাত্ত সাধারনত কাঠামোবিহীন এবং অসম তথ্যের বিশ্লেষণ করে যার আকার কয়েক ডজন টেরাবাইট (১০১২) থেকে ২.৫ এক্সাবাইট (১০১৮ )পর্যন্ত হতে পারে। বৃহৎ তথ্যের এ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় কিছু নতুন প্রযুক্তি, যা এ বৃহদাকার অসম তথ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ বের করে।
বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী উদীয়মান ১০টি প্রতিষ্ঠান আছে যারা তাদের উদ্ভাবনী ভাবনার মধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দিকে।
১. কোহেসিটি (Cohesity)
কোহেসিটি নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। সফটওয়্যার দ্বারা পরিচালিত, মাধ্যমিক সংরক্ষন পদ্ধতির ক্ষেত্রে কোহেসিটি অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে। এটি এমন এক সংরক্ষন পদ্ধতি যা সকল উপাত্ত সেবা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠার পরে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কোহেসিটি সুনাম অর্জন করে এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে বিনিয়োগে। হিউলেট-প্যাকারড, কোয়ালকম ভেনচারস এর মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো এ পর্যন্ত কোহেসিটিতে বিনিয়োগ করেছে প্রায় ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সিইও: (মহিত অ্যারন)
২. প্যানোপলি.আইও (Panoply.io)
প্যানোপলি.আইও প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে তেল আভিভ, ইসরাইলে। প্যানোপলি.আইও এর সেবাগুলোর মধ্যে ক্লাউডে উপাত্ত বিশ্লেষনে ক্রমানুসারে তথ্যের ব্যাবস্থাপনা, বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কাঠামোবিহীন ও অসম তথ্যের ব্যবস্থাপনা পরিহার করে যা অনেক কম সময়ে এবং ৮০ শতাংশ বেশি দক্ষতার সাথে বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে প্যানোপলি.আইও যে বিনিয়োগ হয় তার পরিমান ৮.৩মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও আরো দুটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্যানোপলি.আইও এর সফটওয়্যার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যান্ত্রিক ভাষা এবং সাধারন ভাষার প্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে। এ প্রতিষ্ঠানটি একই সাথে অ্যামাজন এস থ্রি, এবং হ্যাডপ নামক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপাত্ত সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ সুবিধা দিচ্ছে।
সিইও (CEO) : রয় আভিনোয়াম, ইয়ানিভ লেভেন।
৩. এইচটুও.এআই (H2O.ai)
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত এইচটুও.এআই বিনিয়োগ পেয়েছে ৩৩.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রযুক্তি বাজারে ছেড়েছে বেশ কিছু সফটওয়্যার। এ সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করে অনেক প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের কার্যপ্রণালী হয়েছে সফটওয়্যার ভিত্তিক। প্রায় ৯০০০ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত এইচটুও.এআই এর সেবা গ্রহন করে। এইচটুও.এআই এর সেবাগুলোর মধ্যে আছে ভবিষ্যতে যে ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে তা নিরূপণ করে রক্ষনাবেক্ষণ করা, কার্যত বুদ্ধিমত্তা এবং আইসিইউ পর্যবেক্ষন। এইচটুও.এআই যে সব ক্ষেত্রে সেবা প্রদান করে তা হলো- টেলিযোগাযোগ, বিনিয়োগ, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য ও বীমা।
এইচটুও সফটওয়্যার প্রোগ্রামিংয়ের যে ভাষা অনুসরণ করে কাজ করে তা হলো আর ও পাইথন। এইচটুও.এআই এর গ্রাহকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিসকো, পে পাল, ই-বে ইত্যাদি।
সিইও (CEO): শ্রীসতিশ আমবাতী
৪. ওয়েভফ্রন্ট ( Wavefront)
ওয়েভফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে পালো আলতো, ক্যালিফোর্নিয়া, আমেরিকায়। ওয়েভফ্রন্ট মূলত একটি ক্লাউড বিষয়ক সেবা প্রদান করে। ওয়েভফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিনিয়োগ পেয়েছে ৬৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা পেয়েছে ভিএমওয়্যার নামক একটি প্রতিষ্ঠান। ওয়েভফ্রন্ট ক্লাউডে উপাত্ত বিশ্লেষনের এমন একটি কাঠামো গঠন করেছে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লাউডের উপাত্ত থেকে সবধরনের অসংগতি দূর করে এবং উপাত্ত পরিবর্তন ও পর্যবেক্ষণকে সহজ করে।
ওয়েভফ্রন্টের গ্রাহকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্রুপন, সিট্রিক্স, ফার্ষ্ট ডাটা এবং আরো অনেকে।
সিইও (CEO): পিট কিতাদিনি।
৫. বিগটার্মিনাল (Bigterminal)
বিগটার্মিনাল একটি বৃহৎ উপাত্ত ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম যা গ্রাহকদের উৎসাহ ও পছন্দ পর্যালোচনা করে তার অন্তর্নিহিত অর্থ বের করে। যার মধ্যে প্রধান হলো তরঙ্গ থেকে অবাঞ্ছিত উপাত্ত আলাদা করা। ওয়েবে অজস্র জিনিসের মধ্য থেকে প্রকৃত উপাত্ত বের করার লক্ষেই ওয়েভফ্রন্ট এ অভিনব ধারনাটি নিয়ে আসে। ওয়েভফ্রন্ট ব্যাংক, সামষ্টিক অর্থনিতী, বিনিয়োগ, শক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা কাজ করছে।
এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীব্যাপী উৎপাদিত উপাত্ত ও সংবাদ বিশ্লেষণ করে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য সনাক্ত করছে এবং গ্রাহকদের পছন্দমতো প্রাসঙ্গিক উপাত্ত প্রেরন করছে।
সিইও (CEO) : অ্যাডাম র্যাবি
৬.আরজেমেট্রিক্স (RJ Metrics)
আরজেমেট্রিক্স প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে ফিলাডেলফিয়াতে। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইন ব্যবসায় বুদ্ধিভিত্তিক পরামর্শ ও সমাধান প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ছোট ও মাঝারি ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন উৎস থেকে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার প্রসারে সাহায্য করছে।
আরজেমেট্রিক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২২.৫মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। সম্প্রতি আরজেমেট্রিক্স এর মালিকানা পেয়েছে ম্যাগনিটো কমার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান।
সিইও (CEO): বব ম্যুর
৭.স্ন্যাপলজিক ( Snaplogic)
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত স্ন্যাপলজিক মোট বিনিয়োগ পেয়েছে ১৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন, ক্যাপিটাল ওয়ান সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি মূলত সব ধরনের হাইব্রিড, ক্লাউড এবং উপাত্তের দ্রুত, সহজ ও মাপযোগ্য এককীকরণ করে।
স্ন্যাপলজিক পৃথিবীব্যাপী দুই হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদান করছে এবং উপাত্ত এককীকরণ সেবায় আধিপত্য বিস্তার করেছে।
সিইও ( CEO ): গৌরাভ ঢিলন
৮.ফেমি হেলথ সিস্টেম ( Phemi Health System)
ফেমি হেলথ সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে ভ্যানকুভার, কানাডায়। প্রতিষ্ঠানটি মূলত হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগীদের সব ধরনের তথ্য ও উপাত্ত সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও গবেষনা আরো তরান্বিত করে। ফেমি হেলথ সিস্টেম বিশেষ করে হাসপাতাল ইএমআর, উপাত্ত ও তথ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে।
প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত বিনিয়োগ পেয়েছে ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানটির তৈরিকৃত সফটওয়্যার ‘ফেমি সেন্ট্রাল’ এমন একটি উপাত্ত সংরক্ষণ সেবা প্রদান করছে যা উপাত্তের নিরপত্তা, গোপনীয়তা, ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে। বৃহৎ উপাত্ত সংরক্ষণ সেবায় শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেমি হেলথ সিস্টেম অন্যতম।
সিইও ( CEO ): ডঃ পল টেরি
৯. ডাটা ভাইজর (Data Visor)
একটি সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান যা স্থাপিত হয় ২০১৩ সালে। অর্থ প্রতারণা, অপরাধ সনাক্তকরণ এবং তত্ত্বাবধায়ন ব্যতীত যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করে নকল বিবরন সনাক্ত করনে যা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে তার মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। প্রতিষ্ঠানটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, বিন্যাস ও ঝুঁকি সনাক্তকরণে পূর্বের কোনো উপাত্তের উপর নির্ভর না করে বরং পূর্ব সতর্কতা, উপাত্ত ব্যাখ্যায় যথাযথতা অবলম্বন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
২০১৬ সালে এসআইনেট ( SINET) সাইবার নিরাপত্তা সমাধানে ডাটা ভাইজর অন্যতম উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানের খেতাব পায়। পিন্ট্রেস্ট, ইয়েল্প, আলিবাবা গ্রুপ প্রতিষ্ঠানটির সাইবার নিরাপত্তা সেবা গ্রহন করছে।
সিইও (CEO): ইংলিন জাই
১০. অ্যালট্রিক্স ( Alteryx)
অ্যাল্ট্রিক্স প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে এবং স্বত্ব উন্মুক্ত করে ২০১৭ সালে। অ্যালট্রিক্স এ পর্যন্ত বিনিয়োগ পেয়েছে ১৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে থমাস রিওটারস, স্যাপ ভেনচার, ইনসাইট ভেনচার পার্টনারস সহ আর অনেক প্রতিষ্ঠান।
অ্যালট্রিক্স সহজে বিশ্লেষকদের সব ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষনে সাহায্য করে কার্যপ্রবাহের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অন্তর্নিহিত অর্থ বের করে। বিশ্লেষকরা ক্লাউড, স্পীডসিট, এবং অন্যান্য উৎস থেকে উপাত্ত একীভূত করতে পারে এবং মুছে ফেলতে পারে এবং কোন ধরনের প্রোগ্রাম করা ছাড়াই আনুমানিক ও পরিসংখ্যাত বিশ্লেষণ করতে পারে অ্যালট্রিক্স এর সেবার মাধ্যমে।
সিইও ( CEO ): ডীন স্টোয়কার