ইন্টারনেট ছাড়া বর্তমানে চাকরি খোজা বিষয়টি অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। প্রায় সব বড় প্রতিষ্ঠান এবং অধিকাংশ ছোট প্রতিষ্ঠানে চাকরীর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় অনলাইনে।
অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় আবেদনকারীকে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য দিতে হয়। কিন্তু এভাবে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিতে পারে আপনার অনেক গোপন ও মূল্যবান তথ্য। আর ব্যবহার করতে পারে বেআইনি কাজে। এজন্য অনলাইনে চাকরীর আবেদনের সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন সহজেই আপনাকে বাঁচাতে পারে প্রতারক চক্রের হাত থেকে।
অনলাইনে গোপনীয়তা রক্ষা
১. জীবনবৃত্তান্ত জমা দেবার আগে ওয়েবসাইট সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন
এরকম অনেক ভুয়া সাইট আছে যারা আপনাকে নিবন্ধন করিয়ে হাতিয়ে নিতে পারে আপনার সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য। এজন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার আগে সাইটটি সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। সম্ভব হলে চেষ্টা করুন জীবনবৃত্তান্ত সরাসরি নিয়োগকর্তার কাছে পাঠাতে।
২. পাবলিক জব সাইট এড়িয়ে চলুন
জীবনবৃত্তান্ত কোনো পাবলিক জব-সাইটে দিতে চাইলে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। যেহেতু বাড়ির ঠিকানা কিংবা ফোন নাম্বার অধিকাংশ জব সাইটগুলোর জন্যই বাধ্যতামূলক নয়, তাই ঐ অংশ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
৩. তথ্যে অস্থায়ী অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন
চাকরির আবেদনের জন্য অস্থায়ী ইমেইল, ফোন নাম্বার এবং পোস্ট অফিস বক্স ব্যবহার করুন। অস্থায়ী অ্যাকাউন্ট আপনার নিরাপত্তা রক্ষাকারী ঢাল হিসেবে কাজ করবে।
৪. চোখ কান খোলা রাখুন সব সময়
খোঁজ নেবার সময় আপনার সিকিউরিটি নম্বর চাওয়া হলে নিশ্চিত হয়ে তথ্য দিন। সন্দেহ হলেই সত্যতা যাচাই করে নিন, যিনি তথ্য চাইছেন সত্যিই তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কিনা।
৫. ক্রেডিট স্কোর জানুন
প্রতিবছর অ্যাকাউন্টের ক্রেডিট স্কোর চেক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ভাওতাবাজ ও চোর থেকে তথ্য রক্ষা করার জন্য ক্রেডিট স্কোর মনিটরিং খুব সহজ ও কাজের। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা এই সুবিধা দিয়ে থাকে কোনো রকম ফি ছাড়াই।
৬. যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর জন্য বিল্টইন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করুন
মোবাইল ফোন কিংবা ক্রেডিট কার্ড প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার নিরাপত্তা সম্পর্কে কথা বলুন এবং বিল্টইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় করার জন্য বলুন। এই পদ্ধতিতে যাচাই করার উপায় আরও শক্তপোক্ত হবে। তৃতীয় কোনো ব্যক্তি যখন আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে চাইবে, তখন পরিচয় নিশ্চিত করার এই পদ্ধতির মাধ্যমে বুঝতে পারবেন কেউ চাইছে আপনার তথ্য চুরি করতে এবং আপনি সতর্ক হয়ে যাবেন।
৭. নিরাপদ ওয়েব ব্যবহার করুন
ওয়েব ব্রাউজারে ফায়ার ওয়াল কিংবা অ্যান্টি ভাইরাস সক্রিয় করতে ভুলবেন না। এ ক্ষেত্রে অনিরাপদ কোনো সাইটে প্রবেশ করা থেকে ব্রাউজার আপনাকে রক্ষা করবে।
৮. জীবনবৃত্তান্ত মুছে ফেলা যাবে এমন সাইট ব্যবহার করুন
কোনো ওয়েব সাইটে জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহার করার আগে জেনে নিন প্রয়োজনে মুছে ফেলতে পারবেন কিনা। যদি মুছে ফেলার উপায় থাকে নিশ্চিন্তে আপলোড কিংবা সংশোধন করুন যখন যেভাবে প্রয়োজন।
৯. রেফারেন্স উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকুন
সাইট গুলোতে চাকরি খোজার সময় জীবনবৃত্তান্তে কোনো ধরণের রেফারেন্স উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকুন। তার চেয়ে ইন্টারভিউ এর সময় যে জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে যাবেন সেখানে রেফারেন্স উল্লেখ করুন।
১০. গোপনীয় তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
সব ধরণের ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। যেমন- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার, সামাজিক সিকিউরিটি নাম্বার, ব্যক্তিগত ডাটা, ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার, চোখের রং, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি। এই সব তথ্য চাকরীর আবেদনের জন্য মোটেই জরুরী নয়।
১১. গুছিয়ে কাজ করার চেষ্টা করুন
কিভাবে গুছিয়ে কাজ করতে হয় শিখুন এবং মনে রাখুন কোথায় কোথায় আপনি আবেদন করেছেন। তাহলে সহজেই বুঝতে পারবেন কোন মেইলগুলোর উত্তর করতে হবে আর কোনগুলো এড়িয়ে যেতে হবে।
১২. চেষ্টা করুন ভ্যারিফাইড ওয়েব সাইট গুলোতে চাকরীর খোঁজ করতে
বর্তমানে জব সাইটের সংখ্যা অনেক। যেখানে সেখানে চেষ্টা করার চেয়ে ভ্যারিফাইড জব সাইট গুলোতে সময় দিন। এতে আপনার সময়ও বাঁচবে আবার সফলতার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে বহুগুণ।
১৩. অটোমেটিক সাইট গুলো থেকে দূরে থাকুন
স্বয়ংক্রিয় সাড়া দেওয়া মাধ্যম গুলো কাজের হলেও চাকরীর ক্ষেত্রে সরাসরি যোগাযোগ বেশি কার্যকর। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে আপনার জীবনবৃত্তান্ত হাজারটা মেইলে চলে যেতে পারে। যেটা আপনি কখনোই চাইবেন না।
১৪. স্ক্যাম নির্দেশিত সাইন
স্ক্যাম সাইন গুলো সম্পর্কে পরিচিত থাকুন এবং ক্ষতিকর সাইট গুলোকে কীভাবে চিহ্নিত করা যায় সে সম্পর্কে ধারণা রাখুন। অনেক সময় বৈধ ও স্ক্যাম সাইট গুলো আলাদা করা বেশ কঠিন হয়ে পরে, সে ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
১৫. সোসিয়াল মিডিয়া লগ ইন সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
একজন মানুষের বৈশিষ্ট্য, আচরণ, এমনকি তার যোগ্যতা সম্পর্কেও সহজেই ধারণা করা যায় সোসিয়াল মিডিয়ার মাধ্যমে। চাকরীর আবেদনের সময় কিংবা ইন্টারভিউ বোর্ডে সোসিয়াল মিডিয়া লগইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোসিয়াল মিডিয়া লগ ইন বিস্তারিত শেয়ার করা থাক কিংবা না থাক, এ তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন সোসিয়াল মিডিয়া লগ ইন সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে।
১৬. জন্ম তারিখ উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকুন
কারো পরিচয় চুরি করার জন্য নাম, যোগাযোগের ঠিকানা এবং জন্ম তারিখ হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে জন্ম তারিখ উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
স্ক্যামাররা আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে আপনার আর্থিক কিংবা অন্য যে কোন ধরণের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সাইবার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য এই পদক্ষেপগুলো আপনাকে রাখতে পারে দুশ্চিন্তা মুক্ত এবং নিরাপদ করতে পারে অনলাইন চাকরীর খোঁজ।
Feature Image: cio.com.