আপনি যদি ভূবিদ্যা বিষয়ক যেমন, ভূমি, পরিবেশ, আবহাওয়া, জলবায়ু, মানচিত্র, ভ্রমণ, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা, কাজ ও চিন্তাভাবনা করতে পছন্দ করেন; তবে ভূবিদ্যা বিষয়ক ক্ষেত্রে আপনি আপনার ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন। এতে একদিকে আপনার পছন্দের ফিল্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ পাবেন, আবার অপরদিকে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না, বরং ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বলভাবে গঠন করতে পারবেন।
এজন্য আপনাকে ভূবিদ্যা বিষয়ক চাকরি সম্পর্কে জানতে হবে। জিওগ্রাফি প্রেমীদের জন্য সেরা ৬ টি চাকরি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে এ আর্টিকেলটি পড়ুন।
১.মানচিত্রকার
একজন মানচিত্রকার সরেজমিনে জরিপ করে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে মানচিত্র ও বিভিন্ন নকশা তৈরি করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মানচিত্রকারদের কাজের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। এখন এ পেশায় জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) ও ডিজিটাল ম্যাপিং টেকনিকের ব্যবহার বেশি লক্ষ্য করা যায়, পূর্বে যেখানে কম্পাস, সেক্সট্যান্ট, খাতা ও কলমের ব্যবহার অধিক পরিলক্ষিত হতো। সরকারি বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান, ভূমি ও জরিপ, পরিসংখ্যান, আবহাওয়া, পরিবহন ও যোগাযোগ, বন ও পরিবেশ বিভাগ এবং ম্যাপ পাবলিশিং কোম্পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানচিত্রকার হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আপনার যদি ভূগোল, ভূতত্ত্ব ও পরিবেশ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং জিগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম(GIS) ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার দক্ষতা থাকে, তবে মানচিত্রকার হওয়াকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
মানচিত্রকার হওয়ার জন্য কোনো বিশেষ বিষয়ে স্নাতক করার প্রয়োজন হবে না, যেকেনো বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম(GIS), সার্ভেয়িং, রিমোট সেন্সিং কিংবা কার্টোগ্রাফি এন্ড ম্যাপিং ইত্যাদি কোনো বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ থাকলে, সহজেই কোনো প্রতিষ্ঠানে মানচিত্রকার পদের চাকরি পেয়ে যাবেন।
২. ভূগোল শিক্ষক
আপনি যদি ভূবিদ্যা প্রেমী হওয়ার পাশাপাশি মানুষকে শেখাতে অধিক পছন্দ করেন, তবে ভূগোল শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। ভূগোল শিক্ষক হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভূবিদ্যা বিষয়ক কোনো বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার প্রয়োজন হবে।
এছাড়াও আপনার ভূবিদ্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে বিশ্লেষণ করে, অন্যকে বুঝানোর মতো দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার যদি এমন দক্ষতা ও যোগ্যতা থেকে থাকে, তবে ভূবিদ্যা বা ভূগোল বিষয়ক শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
৩. আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মী
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মানুষ দারিদ্রতা, গৃহহীনতা, শরণার্থী, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দুর্যোগ ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যাকে সঙ্গে নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। আর এসব মানুষদের সমস্যা দূরীকরণ ও সমাধান করার লক্ষ্য নিয়ে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। এসব কর্মীরা সাধারণত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে থাকেন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত দরিদ্রদের দারিদ্রতা দূরীকরণ, গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থাকরণ, মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্ভিক্ষ ও দুর্যোগ কবলিতদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ন্যায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও কার্যাবলি পরিচালনা করে থাকে।
আপনি ইচ্ছা করলেই, কোনো উন্নয়ন ও সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে, এসব উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন। স্নাতক বা যে কোনো পেশাগত ডিগ্রি অর্জন করে, সহজেই উন্নয়ন কর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন। তবে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা মূখ্য বিষয় না, বরং আপনার মানব সেবা করার মানসিকতা থাকাটাই বেশি জরুরি। আবার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
৪. সার্ভেয়ার
সাধারণত জমি ক্রয়-বিক্রয়, কোনো স্থাপনা নির্মাণের জন্য জমি পরিমাপ এবং জমি যাচাই-বাছাইয়ের ন্যায় কাজগুলো একজন সার্ভেয়ার করে থাকেন। নির্মাণ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পরিমাপসূচক কাজ করার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান সার্ভেয়ার নিয়োগ দিয়ে থাকে। সার্ভেয়ার হিসেবে কাজ করতে হলে সাধারণত প্রকৌশল বিষয়ক ডিপ্লোমা ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। আবার যাদের প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি আছে, এমন ব্যক্তিদেরও সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে সার্ভেয়ার হওয়ার জন্য কিছু সনদ আছে, যা বিভিন্ন সার্ভে ইন্সটিটিউট প্রদান করে থাকে। চাকরিতে আবেদন করার আগে, আপনার এ ধরনের কোনো সনদ থাকা ভালো, তবে না থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে না। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করবেন, তারাই আপনার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তৈরি করে দেবে।
৫. পরিবহন পরিকল্পক
পরিবহন পরিকল্পনাকারীরা যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থা পদ্ধতিকে নিরাপদ, সাশ্রয়ী, দ্রুত, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ, সহজ, সুষ্ঠু ও পরিবেশগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার জন্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন করেন এবং ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করেন।
আপনার যদি পরিবহন খাতের এ ধরনের কাজ করার আগ্রহ থাকে, তবে পরিবহন পরিকল্পক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এ পদে কাজ করতে হলে, আপনাকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি ট্রান্সপোর্ট প্লানিংয়ের উপরে একটি ডিপ্লোমা বা ভোকেশনাল ডিগ্রি অর্জন করার প্রয়োজন হতে পারে।
৬. ভ্রমণ এজেন্ট
অধিকাংশ মানুষই বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে ভালোবাসে। ব্যস্তময় নাগরিক জীবন থেকে একটু স্বস্তির আশায় মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে থাকে। কেউ পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মী নিয়ে কিংবা একাই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে। এসব ভ্রমণপিপাসুদের সেবা প্রদানকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ এজেন্টদের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভ্রমণ এজেন্টদের কাজ হলো ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শ প্রদান, ট্রাভেল প্যাকেজ তৈরি করা, কোথায় কোন সময় বেড়ানো যায়, কেমন খরচ হবে এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখা এবং থাকা, খাওয়া ও প্রয়োজন হলে ভিসারও ব্যবস্থা করা।
আপনার যদি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে ও ভ্রমণে আসক্ত হয়ে থাকেন; তাহলে কোনো পর্যটন প্রতিষ্ঠানে ভ্রমণ এজেন্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করুন। ভ্রমণ এজেন্ট হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা মূখ্য বিষয় না। আপনার যদি ভ্রমণ বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকে, তবে খুব সহজেই সফলতা লাভ করতে পারবেন।
প্রত্যেক জিওগ্রাফি প্রেমীর কাছেই এ ৬ টি চাকরি বেশ পছন্দনীয়। কারণ এসব চাকরি করে সহজেই জিওগ্রাফির সাথে যুক্ত থাকা সম্ভব হয়। তাই আপনিও যদি একজন ভূবিদ্যা প্রেমী মানুষ হয়ে থাকেন, তবে আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা বিবেচনা করে, এ ৬ টি থেকে কোনো একটি কে আপনার ক্যারিয়ার গড়ার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
Featured Image:Hudsongeography.org