আমরা অনেকেই নিজের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতাকে ভালোভাবে উপলব্ধি না করেই, কোনো পেশাকে কর্মজীবন গড়ার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে থাকি। ফলে আমরা অনেকই আমাদের ক্যারিয়ারকে সফলভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হই। পেশা এবং যোগ্যতা ও দক্ষতার মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। তাতে কর্মজীবনে সহজে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। ধরুন, আপনি রাতে জেগে থাকতে ও কাজ করতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনাকে এমন চাকরিকে পেশা হিসেবে নিতে হবে, যা আপনি আপনার পছন্দের সময় তথা রাতের বেলায় করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি এমন পেশা গ্রহণ করেন, যা করার উপযোগী সময় হলো সকালবেলা; সেক্ষেত্রে আপনি আপনার কাজ কখনোই সঠিকভাবে করতে পারবেন না। ফলে সাফল্যের দেখাও পাবেন না।
এমন ধরনের ভুল সিদ্ধান্তগুলোই আমাদের ক্যারিয়ারে সফলতা আসার পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। আমি এ আর্টিকেলটিতে এমন ৫ টি পেশা নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো করার উপযুক্ত সময় হলো সকালবেলা। আপনি যদি সকালবেলা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন; তবে এ ৫ টি পেশা সম্পর্কে জেনে রাখুন, যাতে আপনার জন্য উপযোগী পেশা সহজেই নির্বাচন করতে পারেন।
১. রুটিওয়ালা
একজন রুটিওয়ালা কেক, বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি বেকারী জাতীয় পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকেন। এসব বেকারী পণ্য সাধারণত সকালবেলায়ই বেশি পরিমাণে বিক্রি হয়ে থাকে। এ পদে চাকরি করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ না, তবে ফুড ও বেকারী পণ্য তৈরির উপরে ডিপ্লোমা কোর্স করা থাকলে কিংবা এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা থাকলে, ভালো বেকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া বেশ সহজ হয়।
তবে আপনি এ পেশায় ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে রুটি, কেক ইত্যাদি তৈরি করার নূন্যতম কৌশল ও দক্ষতা অবশ্যই আপনার থাকতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় এ পেশায় কাজ করে বছরে প্রায় ১৫ হাজার পাউন্ড বা ১৬ লাখ টাকা বেতন পাওয়া যাবে। আর অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেলে প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড বা ২১ লাখ টাকা বছরে আয় করা সম্ভব হবে।
২. বারিস্তা
একজন বারিস্তা বিভিন্ন ক্যাফে, কফিশপ ও রেস্টুরেন্টে চা ও কফি তৈরি এবং পরিবেশনার কাজ করে থাকেন। বারিস্তারা ক্যাফে, কফিশপ ও রেস্টুরেন্টে গ্রাহকদের অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি চা ও কফির অর্ডার নেওয়া, চা ও কফি পরিবেশন করাসহ গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ, অভিযোগ গ্রহণ ও সুবিধা-অসুবিধার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখেন। এ কাজ করার অন্যতম উপযোগী সময় হলো সকালবেলা, কারণ অধিকাংশ মানুষই ঘুম থেকে উঠে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পূর্বে চা ও কফি জাতীয় পানীয় গ্রহণ করতে অভ্যস্ত। ফলে দিনের শুরুতে গ্রাহকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। বারিস্তা হওয়ার জন্য শিক্ষাগত ডিগ্রি মূখ্য বিষয় না, তবে কফি বারিস্তা ও হোটেল ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট জাতীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা থাকলে, ভালো ও উন্নত ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টেগুলোতে চাকরি পাওয়া বেশ সহজ হয়। এছাড়া একাধিক ভাষায় দক্ষতা থাকলে বিদেশেও ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
আর অবশ্যই একজন বারিস্তার উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা ও ভালো যোগাযোগের দক্ষতা থাকা জরুরি। বারিস্তার বার্ষিক আয় মূলত যোগ্যতা, দক্ষতা ও কর্ম পরিবেশের উপরে নির্ভর করে। সাধারণত একজন বারিস্তার বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১২ হাজার পাউন্ড থেকে ১৮ হাজার পাউন্ড; যা বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে প্রায় ১৩ লাখ টাকা থেকে ১৯ লাখ টাকা।
৩. বাস চালক
বাস চালকেরা সকাল থেকে শুরু করে অনেকরাত ব্যাপী যাত্রীদের বিভিন্ন স্থানে আনা নেওয়া করে; আবার মালামালও পরিবহন করে থাকে। সাধারণত বাসগুলোতে সকাল বেলা যাত্রীদের অতিরিক্ত ভীড় লক্ষ্য করা যায়। বাস চালক হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না; তবে বাস চালনোর ভালো দক্ষতা ও রুট সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। আর একজন বাস চালকের অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। দেশের লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি লাইসেন্স সংগ্রহ করতে না পারলে, আপনি কখনোই রাস্তায় বাস চালানোর যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন না। আপনি বাস চালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে চাইলে, আপনাকে প্রথমে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদানকারী কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
তারপর আপনার ড্রাইভিং বিষয়ে দক্ষতার পরীক্ষা দিয়ে, সরকারী ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়ে গেলে, আপনি সহজেই বাস, মাইক্রো, ট্রাক ইত্যাদি চালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে পারবেন। সাধারণত একজন বাস চালকের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ২৪ হাজার পাউন্ড বা ২৫ লাখ টাকা।
৪. ডাক পিয়ন
একজন ডাক পিয়নকে ডাকঘরে প্রাপ্ত মেইল, চিঠি ও কাগজপত্রগুলো বিলি করার জন্য সকালবেলা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। তারপর সেসব চিঠি ও মেইলগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে ও প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিতে হয়। ডাক পিয়ন হতে হলে উচ্চতর শিক্ষার প্রয়োজন না হলেও; লেখা, পড়া ও হিসাব নিকাশে দক্ষ হতে হয়। আবার ভালো যোগাযোগের দক্ষতা থাকা জরুরি।
প্রাথামিক অবস্থায় একজন ডাক পিয়নের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১৩ হাজার পাউন্ড বা ১৪ লাখ টাকা। অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে বছরে প্রায় ১৫ হাজার পাউন্ড বা ২৬ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া সম্ভব।
৫. খামার কর্মী
খামার কর্মীদের কাজকর্ম সাধারণত ঋতুভেদে কিছুটা পরিবর্তন হয়ে থাকে। তবে একজন খামার কর্মীকে প্রধানত উদ্ভিদ রোপণ, বীজ বপন, ফসল কাটা, মৎস্য চাষ,পশুদের রক্ষণাবেক্ষণ করার ন্যায় কাজগুলো করতে হয়। এছাড়াও খামারের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ভবনগুলো দেখাশোনা করতে হয়। খামার কর্মী হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। তবে খামার ব্যবস্থাপনা এবং কৃষির উপরে প্রশিক্ষণ বা কোনো কোর্স করা থাকলে, খামার কর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া বেশ সহজ হয়। আর খামার কর্মীকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে হলে, খামার, গৃহস্থালি ও কৃষির কাজকর্মে পারদর্শী হওয়া উচিৎ।
একজন খামার কর্মীর বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১২ হাজার পাউন্ড থেকে ১৮ হাজার পাউন্ড। যা বাংলাদেশর হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৩ লাখ টাকা থেকে ১৯ লাখ টাকা।
আপনি সকালবেলা কাজ করতে পছন্দ করলে, আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী এ ৫ টি পেশা থেকে কোনো একটিকে ক্যারিয়ার গড়ার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
Featured Image: Goodnet.org