সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবসার ধরন যেমন পাল্টে গেছে, তেমনি পাল্টে গেছে পণ্য বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সাধারণ ভোক্তার যোগাযোগের ধরন। উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই সময়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাস্টমার সাপোর্ট এখন অত্যাবশ্যকীয় অংশ। এমনকি বর্তমানে পণ্য এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সুনাম অনেকাংশে কাস্টমার সাপোর্টের উপর নির্ভর করে।
তাই সর্বোত্তম কাস্টমার সাপোর্ট নিশ্চিত করতে আপনাকে যেমন জানতে হবে ভোক্তাকে কী বলা উচিৎ, তেমনি জানতে হবে ভোক্তাকে যেকোনো কিছু বলার সর্বোত্তম উপায়। যদিও এর জন্য আপনাকে বিজ্ঞ এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তার অধিকারী হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবুও প্রানবন্ত যোগাযোগ এতোটা সহজ নয়। কেননা কাস্টমার সাপোর্ট নিতে আসা ব্যক্তির চিন্তা, সম্মানবোধ, কথা বলার ধরন, স্বভাব, আচার-আচরণ সবই আপনার অজানা! আপনি শুধু জানেন তিনি একটি সমস্যায় পড়েছেন এবং আপনাকে সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সুতরাং স্বল্প সময়ের কথোপকথনে সবার মেজাজ বুঝতে পারা যেমন কঠিন, তেমনি একই ধরনের কথা বলে সবাইকে খুশি করাও কঠিন।
তবে গ্রাহকের ধরণ যাই হোক না কেন, সবাই চায় আপনি তার সমস্যাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন এবং তাকে ৫৫৯৩ অথবা ২২১৮ কোড হিসেবে বিবেচনা না করে একজন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করুন। কিন্তু এই কথাটি কোনো গ্রাহক মুখে বলে না, আপনার আচরণ এবং কথোপকথন দেখে বুঝে নিবে। সুতরাং আপনাকে সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক কথা বলার সর্বোত্তম উপায় রপ্ত করতে হবে।
চলুন কাস্টমার সাপোর্ট আরো প্রাণবন্ত এবং উন্নত করতে মিথস্ক্রিয়তা কেমন হবে তা নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করি।
সাহায্য করতে পারলে খুশি হব
আপনার গ্রাহক সেবায় কোন ভোক্তা অখুশি হলে তিনি সরাসরি আপনাকে তা বলবেন না, বরং নীরবে আপনার পণ্য বা সেবা গ্রহণ করা বন্ধ করে দেবেন। তাই গ্রাহকের মনে অবিশ্বাস দূর করতে প্রতিটি কাস্টমার সাপোর্ট কথোপকথন শেষ করুন। কাস্টমার সাপোর্টের ভাষায় কথোপকথন শেষ করার অর্থ হলো নিশ্চিত করা যে, গ্রাহক সন্তুষ্ট হয়েছেন। কাস্টমার সাপোর্টের কোন মেসেজ যথাযথভাবে শেষ না করলে গ্রাহক আপনার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আপনি যদি তাকে পরবর্তী সমস্যা নির্দ্বিধায় জানানোর ব্যাপারে উৎসাহিত না করেন, তবে গ্রাহক ভাবতে পারে আপনি তার সমস্যায় আন্তরিক না।
আপনি ভাবতে পারেন কিছু গ্রাহক সব সময় বাড়াবাড়ি রকম দাবি করে এবং তাদের খুশি করা সত্যিই কঠিন। আমি আগেই বলেছি সব গ্রাহকের ধরণ বোঝা আপনার পক্ষে কঠিন। তাই গ্রাহক যেমনই হোক না কেন, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে আপনি সব সময় তার সমস্যা শুনতে আগ্রহী।
তাই সব কাস্টমার সাপোর্টের কথোপকথন গ্রাহককে নির্দ্বিধায় সমস্যা বলার ব্যাপারে উৎসাহিত করে শেষ করুন। বলুন, আমি আপনার জন্য কিছু করতে পারলে অনেক খুশি হব।
আসলে এই কথা বলার পর গ্রাহকের মনে সৃষ্টি হওয়া সংশয় এবং কিছু বোকা প্রশ্ন আপনা থেকেই হারিয়ে যায়।
যতটা পারি আপনাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চাই
সব গ্রাহকের প্রশ্ন এবং সমস্যা সমাধানযোগ্য হবে এমন কোন কথা নেই। কখনো কখনো গ্রাহক কেমন অদ্ভুত সমস্যা বা দাবি নিয়ে আসে যা কোনভাবেই আপনার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে স্পষ্ট উত্তর হবে ‘না’। কিন্তু ভেবে দেখুন গ্রাহক তার নিজের প্রশ্নের ব্যাপারে কখনোই অনুতপ্ত হবে না, বরং আপনার স্পষ্ট না বলার কারনে আপনার প্রতি অখুশি হবে। এমনকি আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা গ্রহণ করা বন্ধ করে দেবে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে গ্রাহককে খুশি রেখে কাস্টমার সাপোর্ট দিতে হবে? এমন পরিস্থিতিতে শুধু কথা দিয়ে আপনার গ্রাহককে ইতিবাচকভাবে খুশি করতে হবে।
সমাধানের অযোগ্য পরিষেবা অনুরোধ শুধু ‘না’ বলে শেষ করবেন না, বরং তার সাথে ভবিষ্যতে তার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিন। এবং অবশ্যই বলুন, যতটা সম্ভব আমি আপনাকে সহযোগিতা করতে পারলে খুশি হব।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, আমি আপনার জন্য এর সমাধান খুঁজে বের করছি
কাস্টমার সাপোর্ট দিতে গিয়ে কোনো গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে খুবই বিব্রতকর এবং কঠিন পরিস্থিতির জন্ম দেয়। বিশেষ করে পনি যদি নতুন হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ কর্মী যে ভুলটা করে তা হলো, ‘ক্ষমা করবেন, আমি নতুন, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না’। অথবা ‘আমি ইতিপূর্বে এ ধরনের কোনো প্রশ্ন শুনিনি’।
গ্রাহককে এমন কিছু বললে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যায়। কেননা গ্রাহক আপনার কাছেই সমস্যার সমাধান চাইবে। আর আপনি যদি সমাধান দিতে অপারগ হন, তাহলে গ্রাহকের জন্য সমাধান দেওয়ার আর কেউ নেই। তাই এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহককে না সূচক কিছু বলার পরিবর্তে, কীভাবে সমস্যাটির সমাধান করা যায় সেদিকে মনোযোগ দিন। এবং গ্রাহককে বলুন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, আমাকে একটু চেক করে আপনার সমস্যার সমাধান খোঁজার সময় দিন’।
তারপর দ্রুত সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে অন্য কোনো সহকর্মীর সহযোগিতা নিন। অথবা গ্রাহকের সাথে কথোপকথন আরো প্রাণবন্ত করতে তার এই সমস্যা উপস্থাপনের পর আপনাদের পক্ষ থেকে কী কী করা হতে পারে, সে সম্পর্কে বলার চেষ্টা করুন। তাতে গ্রাহক আপনার অবস্থান বুঝতে পারবে, এবং আপনি তার সমস্যায় মনোযোগী সেটা অনুধাবন করতে পেরে খুশি হবে।
কাস্টমার সাপোর্ট পুরোটাই নির্ভর করে কর্মীর দক্ষতার উপর। আপনার শব্দ ভান্ডার কত সমৃদ্ধ এবং গ্রাহকের প্রশ্ন বুঝতে আপনি কতটা সক্ষম তার উপর। সুতরাং কাস্টমার সাপোর্ট বা গ্রাহক পরিষেবা আরো প্রাণবন্ত এবং আন্তরিক করতে নিজের শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ করুন, নিজের প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে আরও বিস্তারিতভাবে জানুন, সেই সাথে গ্রাহকের উত্তপ্ত প্রশ্ন শুনেও নিজেকে শান্ত রাখা এবং তাকে খুশি করার কৌশল রপ্ত করুন।
Feature photo: elimco aerospace