কীভাবে হবেন ভালো আঁকিয়ে

বাংলাদেশে যে পরিমাণ সম্ভাবনাময় ভালো ভালো আঁকিয়ে এই মুহূর্তে আছে বা তৈরি হচ্ছে, সে পরিমান চাকরি নেই। তবে, চাকরির বাইরে যদি কাজের কথা বলা হয়, তবে এই পেশায় অফুরন্ত কাজের সম্ভাবনা আছে। চাকরির বাইরে অফুরন্ত কাজের সম্ভাবনাময় এই পেশায় আপনি যদি আত্মনিয়োগ করতে চান; তবে কীভাবে কী করলে নিজেকে এগিয়ে যেতে পারবেন তা নিয়ে আজকের এই লেখাটি।

 

মিকি মাউস; source: wikiHow

১. শিখুন, আঁকুন ও দেখান

প্রথমত আঁকা শিখতে হবে। আজকে যেই আঁকাটি মাস্টারপিস বলে মনে হবে, এক বছর পরে সেটি কাউকে দেখাতে যদি লজ্জা না লাগে, তবে বুঝতে হবে আপনি আটকে গেছেন এবং নিজেই নিজের কাজে মুগ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাই, প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখতে হবে। এখন হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, শিখবো কোথায়?

আপনি চাইলেই পৃথিবীবিখ্যাত আর্ট স্কুলগুলোর অনলাইন কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এছাড়াও ইউটউবে টিউটোরিয়াল দেখে, বই পড়ে শিখতে পারেন।

শেখা ও আঁকার পাশাপাশি নিজের আঁকাকে প্রকাশ করুন। আশেপাশের মানুষদের নিজের আঁকা দেখান। তবে, এক্ষেত্রে নিজের প্রচারণার জন্য কাওকে বলবেন না। চেষ্টা করবেন ভালো কিছু আঁকতে। এক্ষেত্রে আপনার আশেপাশের মানুষজন নিজেরাই আপনার প্রচারণা করবেন, পাশাপাশি, আপনার আঁকার স্ট্যান্ডার্ড দিন দিন বাড়তে থাকবে।

প্রাণীদের কার্টুন; source: youtube

২. ভিজিটিং কার্ড ও ওয়েবসাইট বানান

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন মিটিং বা সেমিনারে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে, জোর করে কারো সাথে কথা বলবেন না। চেষ্টা করবেন সমমনাদের সাথে কথা বলতে। কথা শেষে নিজের ভিজিটিং কার্ডটা বাড়িয়ে দিবেন। যেহেতু আঁকেন, সেহেতু নিজের একটা গ্রাফিক্স কিংবা ড্রয়িং সেখানে থাকলে ভাল হয়। তবে, ভিজিটিং কার্ডে নিজের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত করে কিছু না লিখে সাধারণ একটা পেশা লিখুন। যেমন: যদি কার্টুন  আঁকেন তবে লিখুন ‘কার্টুনিস্ট’। যদি এনিমেশন করেন তবে লিখুন ‘এনিমেটর’। আপনার পেশার পাশাপাশি করা অতিরিক্ত কাজকর্মকে কখনোই এখানে লিখবেন না। ভিজিটিং কার্ড দেওয়ার পাশাপাশি পারলে তার কার্ডটিও নিন। সংগ্রহ করুন।

এর কারণ হলো নেটওয়ার্ক বানানো। এরকম ১০০ মানুষের সাথে আপনার যোগাযোগ থাকলে দেখবেন কিছু মানুষ কাজের সময় আপনার কথা ভাববে। মানুষের সাথে মিশুন আন্তরিক ভাবে। শুধু কাজ দিবে ভেবে মেশার চেষ্টা করবেন না কখনো। যাদের ভালো লাগে তাদের সাথে মিশুন, কথা বলুন। কাজ পান বা না পান এই সম্পর্কগুলো জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভিজিটিং কার্ডের পাশাপাশি একটা ওয়েবসাইট থাকা খুবই জরুরি। এমনকি ফেসবুকের পেইজ থাকলেও। কারণ ফেইসবুক পেইজ খুবই ইনফর্মাল একটা জিনিস। সিরিয়াস ক্লায়েন্ট আপনার ফেইসবুক পেইজ দেখতে স্বস্তি বোধ করবেন না। আর দেশের বাইরে যে কেউ আপনি আসলে কতটুকু প্রফেশনাল সেটা জানতে আগে খুঁজবে আপনার ওয়েবসাইট। সুতরাং বেশ ভালো দেখতে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করুন, এবং  এর এড্রেস রাখুন ভিজিটিং কার্ডে।

যেভাবে আকবেন কার্টুন; source: lamag.co

৩. পোর্টফোলিও রাখুন সাথে

যেকোনো ক্লায়েন্ট মিটিংএ নিজের কাজ রাখুন। কারণ, ক্লায়েন্ট প্রথমেই আপনি কাজটা পারবেন কিনা সেটা দেখতে চাইবে আপনার স্যাম্পল কাজ দেখে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে স্মার্ট উপায় হলো একটা ট্যাব রাখা। মোবাইলে কিছু দেখালে খুব সস্তা দেখায়, মনে হয় বন্ধুকে কিছু একটা দেখাচ্ছেন। তার চেয়ে একটা ইঞ্চি দশেক ট্যাবে আপনার সাম্প্রতিক কাজ রাখুন, চাইলে একটা পিডিএফ করে রাখুন। কথার সময় প্রাসঙ্গিক হলে আপনার কাজ দেখান। একগাদা পেপার কাটিং নিয়ে যাওয়ার চেয়ে ট্যাব নিয়ে যাওয়া ভালো, কেননা ট্যাবে আপনি যতোটা গুছিয়ে আপনার কাজগুলো দেখাতে পারবেন, পেপার কাটিংয়ে তা কখনোই পারবেন না। আর পেপার কাটিং খুঁটিয়ে দেখতে ক্লায়েন্টেরও অস্বস্তি হবে। তারপরও যদি ট্যাব আনতে অস্বস্তি হয় একটা স্কেচবুক সাথে রাখুন, যেখানে অন্তত কিছু আঁকা ভেবেচিন্তে করা, মানে ক্লায়েন্ট দেখবে এটা ভেবেই করা।

শিক্ষনীয় অঙ্কন; source: Twitter

৪. বড় কোনো আর্টিস্টকে গুরু ধরুন

শিল্পকলা মূলত গুরুমুখী বিদ্যা। এমন কোনো আর্টিস্টের সাথে সাথে থাকুন যিনি অন্তত আপনার চেয়ে ভালো আঁকেন এবং মানুষ হিসেবে ভালো। এই জিনিসটা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় নিজের চেয়ে ভালো আঁকিয়েদের সংস্পর্শে থাকলে ভিতরে আরো ভালো করার তাড়না কাজ করবে।

৫. সমাজে থাকুন

আমি বিরাট আর্টিস্ট তাই একা একা থাকি- এটা বোকাদের কথা। একা একা মানুষ থাকলে সে বোকা বোকা হয়ে যায়। ভাবে সে-ই পৃথিবীর কেন্দ্রে। সবচেয়ে ভালো হয় সমমনা দারুণ কাজ করে যারা তাদের নিয়ে থাকা। সবসময় আঁকতেই হবে এমন না। আড্ডা দেওয়াও একটা জরুরি কাজ। এভাবেই বেশ কিছু আপনার কাজের সাথে মেলে বা আপনি করতে চান এমন কাজেরও সন্ধান পেয়ে যাবেন।

জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট চার্লস এম শালজ; source: Ranker

এই লেখা পড়ে মনে করার কোনো কারণ নেই যে, মাত্র ৫ টা পয়েন্ট অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললেই আপনি কার্টুনিস্ট হয়ে যাবেন। আসলে প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা, তার সমস্যা ও সমাধানও আলাদা হবে। তবে চোখ কান খোলা রেখে কমন সেন্স ব্যবহার করলে অনেক জটিল সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায়। আর কোন কিছু নিয়েই এই দুইটি জিনিস না হওয়া ভাল

 

১।  অতি সিরিয়াস (আমাকে পৃথিবীর সেরা হতেই হবে)।

২। অতিরিক্ত সন্তুষ্টি।

 

দ্বিতীয়টা আসলে বেশি ভয়ানক। অনেক আঁকিয়ের নিজের কাজ নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে দিন দিন কাজ আরো বাজে হয়ে যাচ্ছে।  যেটা খুবই খারাপ একটি ব্যাপার। নিজে এঁকে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলে আপনার ক্যারিয়ার সেখানেই শেষ। দিনশেষে নিজের কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক হতে হবে আপনার নিজেকেই। তাই, নিজের কাজের প্রতি অতিরিক্ত সন্তুষ্ট না থেকে নিত্যদিন চেষ্টা করুন আগের থেকে আরেকটু বেশি ভালো করতে, দেখবেন আপনার উন্নতি হবে আপনার কল্পনাতীত।

Feature Image Source: Tulsa World

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *