কীভাবে বুককিপিং, একাউন্টিং ও অডিটিং ক্লার্ক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন

হিসাবসংক্রান্ত বিষয়কে ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে বুককিপিং, একাউন্টিং ও অডিটিং ক্লার্ক নামক চাকরি পদ। বিভিন্ন নামে এ চাকরির পদকে নামকরণ করা হলেও, এগুলোতে ক্যারিয়ার গড়ার যোগ্যতা ও কাজের ধরনের মধ্যে, তেমন কোনো মৌলিক পার্থক্য নাই। আপনি যদি বুককিপিং, একাউন্টিং ও অডিটিং ক্লার্ককে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান, তাহলে এ আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ কীভাবে এ পদগুলোতে কর্মজীবন শুরু করা সম্ভব, সে সম্পর্কে এ আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

কাজের বিবরণ

বুককিপিং, একাউন্টিং ও অডিটিং ক্লার্ক হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায়, সাধারণত যেসব কর্ম সম্পাদন করতে হয় চলুন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

বুককিপিং ক্লার্ক

এ পেশায় কর্মরত কর্মচারীরা বুককিপার নামেও পরিচিত। তারা প্রতিষ্ঠানের খতিয়ানের হিসাব রাখার দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়াও লেনদেনের, আয় ও ব্যয়ের হিসাব, রশিদ যাচাই-বাছাই ও ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট প্রেরণের কাজগুলো করে থাকে। আবার তারা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার রিপোর্ট তৈরি করে, তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপককে অবহিত করেন এবং ক্যাশিয়ারের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, ব্যাংকের ডিপোজিট তৈরি করেন।

Source: careerbuilder.com

বাড়তি কাজ হিসেবে তাদেরকে বেতনভুক্ত কর্মচারীদের তালিকা তৈরি, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা করা, চালান তৈরি এবং অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ ও দেখাশোনার মতো কাজগুলোও করতে হয়।

একাউন্টিং ক্লার্ক

একাউন্টিং ক্লার্করা সাধারণত বড় বড় কোম্পানিতে হিসাবসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কিছু কার্য সম্পাদন করে থাকে। একাউন্টিং ক্লার্কদের বিভিন্ন পদবীতে নামকরণ করা হয়। অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তাদের কাজের ধরনের মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে কাজে যোগদানকারী ক্লার্করা সাধারণত লেনদেনের তথ্য যেমন: ডাটা, টাইপ, একাউন্টের মোট ও আয়ের বর্ধিত অংশের হিসাব-নিকাশ করেন।

Source: careerbuilder.com

এছাড়াও তারা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেখাশোনা করেন এবং সব লোনের টাকা ঠিক সময় পরিশোধ করা হচ্ছে কি না, তার খোঁজ-খবর রাখেন। কাজের অভিজ্ঞতা বাড়লে তারা বিলের টাকা-পয়সার রশিদসংক্রান্ত বিষয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। আবার অ্যাকাউন্টের তথ্যাদি সঠিক ও সম্পূর্ণ আছে এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী ডকুমেন্ট সংরক্ষণের কাজ চলছে, এমন বিষয়গুলো তারা নিশ্চিত করেন।

অডিটিং ক্লার্ক

অডিটিং ক্লার্করা প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশ সংক্রান্ত বিষয়, যেমন: অর্থের লেনদেন, আয়-ব্যয়ের হিসাব, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন প্রদানের তথ্য, চিঠিপত্র পোস্টিং ইত্যাদি বিষয়গুলো গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিকভাবে ঠিক আছে কি না, তা দেখাশোনা করার দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড সংগ্রহে ও হিসাবে কোনো গরমিল পেলে, সেগুলো সংশোধন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মীদের নিকট পাঠিয়ে দেয়।

বুককিপিং, একাউন্টিং ও অডিটিং ক্লার্কদের সাধারণ কার্যাবলি

এ পদগুলো কর্মরতদের প্রত্যেকেই সাধারণত নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হয়:-

১. হিসাব রক্ষণের সফটওয়্যার, কম্পিউটারের স্প্রেডশিট ও ডাটাবেজের ব্যবহার করা।
২. কম্পিউটার সফটওয়্যারে সঠিকভাবে আর্থিক লেনদেন করা।

Source: yellowpages.com

৩. ক্যাশ, চেক, রশিদ ইত্যাদি গ্রহণ, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং লিপিবদ্ধ করা।
৪. প্রত্যেক নির্দিষ্ট একাউন্টের ডেবিট ও ক্রেডিটের তথ্য লিপিবদ্ধ করা।
৫. বিভিন্ন বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করা।
৬. প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য ও কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করা এবং কোনো গরমিল পেলে রিপোর্ট তৈরি করা।

কীভাবে চাকরি পাবেন

এসব পদে চাকরি পেতে হলে, আপনাকে অবশ্যই বেশকিছুু বিষয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। ক্লার্ক হওয়ার মতো যোগ্যতা ছাড়া, আপনাকে কোনো প্রতিষ্ঠানই ক্লার্ক হিসেবে নিয়োগ দেবে না। চলুন তাহলে জেনে নেই, ক্লার্ক হতে হলে কী ধরনের যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

যোগ্যতা

এসব পদে চাকরি পেতে হলে কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কিংবা ক্ষেত্রে বিশেষে আরো উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষাগত ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এছাড়াও হিসাব-নিকাশ বিষয়ের ওপরে কোর্স করা থাকলে, ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যারিয়ার গড়া সহজ হয়ে থাকে। কেউ কেউ মাধ্যমিক কিংবা ডিপ্লোমা পাস করেই, এসব পদে চাকরি করার সুযোগ পেয়ে যায়।

Source: roberthalf.com

এইসব পদে চাকরি প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও, আরো কিছু বিষয়ে পারদর্শিতা থাকার প্রয়োজন হয় যেমন:

কম্পিউটার দক্ষতা

ক্লার্ক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে, অবশ্যই কম্পিউটারের স্প্রেডশিট এবং বুককিপিং সফটওয়্যারে বেশ দক্ষ হতে হবে। এছাড়াও কম্পিউটারের মাধ্যমে রেকর্ড তৈরি ও ডাটা সংরক্ষণ করা জানতে হবে।

সততা

ক্লার্কদের প্রতিষ্ঠানের কিছু গোপনীয় আর্থিক ডকুমেন্ট নিয়েও তারা কাজ করতে হয়। তাই এই পদে চাকরি করতে হলে সততার গুণাবলী থাকা জরুরী।

গাণিতিক দক্ষতা

যেহেতু হিসাব-নিকাশ ও তথ্য সংরক্ষণ বিষয়াদি নিয়ে ক্লার্কদের কাজ করতে হয়। তাই এসব কাজ ভালোভাবে সম্পাদনের জন্য অবশ্যই গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হয়।

প্রশিক্ষণ

অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ক্লার্ক হিসেবে জনবল নিয়োগ দেওয়ার পর, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। সাধারণত সুপারভাইজার কিংবা অন্য কোনো অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের দ্বারা নতুন কর্মচারীকে কাজ শিখানো হয়। তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরণ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত করানো হয় এবং কম্পিউটার ও কাজের ওপরে প্রায় ছয় মাস কিংবা কমবেশি সময় ব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

লাইসেন্স, সার্টিফিকেশান ও রেজিস্ট্রেশন

কিছু বুককিপিং, একাউন্টিং এবং অডিটিং ক্লার্কদের তাদের কাজের দক্ষতার সত্যায়ন পত্র জমা দিতে হয়। বিশেষ করে, যাদের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে না, তাদের জন্য সত্যায়িতকরণ সনদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Source: shopmuskoka.com

বুককিপিং, একাউন্টিং এবং অডিটিং বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কোর্স রয়েছে, এ কোর্সগুলো করে সহজেই সত্যায়ন পত্র সংগ্রহ করা যায়। আবার আপনি যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং ক্লার্ক হওয়ার জন্য উপযুক্ত, তার লাইসেন্সও পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি যদি লাইসেন্স, সার্টিফিকেশান ও রিজিস্টার পত্র সংগ্রহ করতে পারেন, তবে খুব সহজেই ক্লার্ক হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবেন।

কাজের সময়সীমা

খণ্ডকালীন কিংবা পূর্ণকালীন যে কোনোভাবে, আপনি ক্লার্ক হিসেবে কাজ করতে পারেন। কারণ কিছু প্রতিষ্ঠানগুলো পার্টটাইম হিসেবেও ক্লার্ক নিয়োগ দিয়ে থাকে। সাধারণত অনভিজ্ঞদের জন্য খন্ডকালীন হিসেবে কাজ শুরু করাই উত্তম। অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে সহজেই পূর্ণকালীন হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যাবেন। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই কিন্তু পূর্ণকালীন হিসেবে ক্লার্ক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এমনকি অতিরিক্ত কর্মঘন্টাও মাঝেমাঝে করার প্রয়োজন হয়।

Source: study.com

আপনার এসব যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে, আপনিও ক্লার্ক হিসেবে যোগদান করে, নিজের ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বলভাবে গড়ে তুলতে পারেন। ক্লার্ক হিসেবে কাজ শুরু করে অভিজ্ঞতা অর্জন হলে, তখন আপনি উচ্চপদে কাজ করার জন্য সহজেই সুযোগ পেয়ে যাবেন। যদিও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে, গত কয়েক বছরে এ পেশায় চাকরির নিয়োগ কিছুটা কমে গেছে। নতুন নতুন সফটওয়্যার তৈরি, যেমন: ক্লাউড কম্পিউটিং নিজে থেকেই বুককিপিং, একাউন্টিং এবং অডিটিং ক্লার্কের বেশ কিছু কাজ সম্পাদন করে দিতে পারে। ফলে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে খুব কম সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। তারপরও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বলা যায় যে, এই পেশায় যোগদানের জন্য সফল ক্যারিয়ার গড়ার পর্যাপ্ত সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে।

Featured Image:Chorn.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *