বিশ্বে যে কয়টি শান্তিপূর্ণ দেশ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে নরওয়ে অন্যতম। উন্নতমানের শিক্ষাব্যবস্থা, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ, শিক্ষাজীবন শেষে সহজেই পছন্দনীয় পেশায় যোগদান ও নাগরিক সুবিধার কারণে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়ার জন্য নরওয়েতে যেতে চায়। আপনিও যদি তাদের মতো পড়ার জন্য নরওয়েতে যেতে চান, তবে আজকের লেখাটি আপনার জন্য।
source: USAC Blog
নরওয়েতে পড়ার জন্য কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে?
নরওয়েতে ব্যাচেলর ডিগ্রি তিন বছরের, মাস্টার্স ডিগ্রী দুই বছরের ও পিএইচডি ডিগ্রি তিন-চার বছর মেয়াদি হয়ে থাকে।
নরওয়েতে ব্যাচেলর প্রোগ্রামে পড়তে চাইলে আপনাকে ১২ বছর ও মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়তে চাইলে ১৫ বছরের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে হবে। উভয় প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেই আইইএলটিএসে( IELTS) ৫·৫-৬·০ পয়েন্ট অথবা টফেলের (TOEFL) সিবিটিতে (CBT) ২১৩ বা আইবিটিতে (IBT) ৭৯-৮০ স্কোর থাকতে হবে।
নরওয়েতে নরওয়েজিয়ান ও ইংরেজি- উভয় ভাষাতেই পড়াশোনার সুযোগ আছে। তবে, নরওয়েজিয়ান ভাষায় পড়তে গেলে ওই ভাষার ওপর ভালো দক্ষতা থাকতে হবে এবং আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
source: Study Abroad
পড়তে কত খরচ হবে?
সাধারণত নরওয়ের সরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য কোনো টিউশন ফি নেওয়া হয় না, যা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে, কিছু প্রোগ্রাম বা কোর্সের ক্ষেত্রে এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টিউশন ফি নেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রতি সেমিস্টারে ৫১-১০১ মার্কিন ডলার ফি খরচ হয়।
প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রায় কত খরচ হয়?
নরওয়েতে একজন শিক্ষার্থীর থাকা, খাওয়া, কাপড়, বই, যোগাযোগ ইত্যাদির জন্য প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার ৩৩৯ মার্কিন ডলার খরচ হয়। তবে, এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীর ওপর নির্ভর করে।
কী কী কাজের সুযোগ আছে?
নরওয়েতে একজন শিক্ষার্থী সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারে। এছাড়া, ছুটির দিনে ফুল টাইম কাজ করার সুযোগ আছে।
এখানে, ক্যাফে, বার, সামার জব, সিজোনাল জব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর, হেলথ সেক্টর, ফিশিং সেক্টর, সোপ, ক্লিনার, ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটিং, এনজিও, সেলস, কল সেন্টার, ট্রাভেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে কাজ করে ঘণ্টায় ৭-২২ মার্কিন ডলার আয় করা যায়।
source: UT College Of Liberal Arts
কখন করবেন আবেদন?
নরওয়ের অ্যাপ্লিকেশন সেশন বছরে একবার। সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এই সেশন। তাই, একবার এই সেশন মিস করলে আপনার নরওয়ে যাত্রা একবছর পিছিয়ে যাবে।
কীভাবে করবেন আবেদন?
অ্যাডমিশন অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং এর জন্য নরওয়ের নিজস্ব ডেটাবেইজ আছে। এই ওয়েবসাইট থেকে নরওয়ের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, স্কুলগুলোর তালিকা পাওয়া যাবে। অ্যাপ্লিকেশন করার জন্য এই ওয়েবসাইটে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা একাউন্ট ওপেন করতে হবে। তারপর, সেই একাউন্টের মাধ্যমে ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে। পছন্দের কোর্স বাছাই করে পড়তে যাওয়ার জন্য আগ্রহী শিক্ষার্থীদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
আবেদনের জন্য কী কী লাগবে?
- টাকা পাঠানোর প্রুফ কপি
- বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন পত্র
- ব্যাচেলর ডিগ্রির সনদপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট ও এসএসসির সনদপত্রের নোটারাইজড বা সত্যায়িত কপি
- মোটিভেশন লেটার
- দুই বা তিনটি রিকমেন্ডেশন লেটার
- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যয়নকপি (যদি থাকে)
- আইইএলটিএসের নোটারাইজড বা সত্যায়িত কপি
source: UT College Of Liberal Arts
ভিসার জন্য আবেদন করতে কী কী লাগবে?
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার হাতে পাবার পর আপনাকে নরওয়ের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান এম্বেসি নেই। তবে, কন্স্যুলেট আছে। সুবিধা হচ্ছে, ঢাকায় ডেনমার্ক এম্বেসি নরওয়ের ভিসা প্রসেস করে। তাই, আপনি ডেনমার্কের এম্বাসি দ্বারা আপনার ভিসার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
আবেদন করতে যা যা লাগবে
১. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া অফার লেটারের সফট কপি।
২. ব্যাঙ্ক সচ্ছলতা।
৩. ভিসা ফিস
৪. টিউশন ফিসের পেমেন্ট কপি।
৫. স্টাডি পার্মিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম(ফ্যামিলি ডিটেলস সহ
৬. পাসপোর্ট।
৭. আপনার সব ধরনের একাডেমিক কাগজপত্র।
৮. চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
নোট: নরওয়েতে ভিসা এপ্লিকেশনের জন্য ইন্সুরেন্স লাগে যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই দেয়, সুতরাং আলাদা ভাবে ইন্সুরেন্স করার প্রয়োজন হয় না।
উপরের সব কাগজগুলোকে একসাথে করে আপনাকে “ভিএফএস গ্লোবালে” জমা দিতে হবে। ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আপনাকে নিয়মিত ই-মেইলে জানানো হবে। কাগজগুলো জমা দেওয়া হলে আপনার কাগজপত্র গুলোকে ডেনিশ এম্বেসির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করবে ইউডিআই (UDI)। নরওয়েজিয়ান ইমিগ্রেশন অথরিটির সংক্ষেপ হলো ইউডিআই।
ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত আরো তথ্য পেতে ঘুরে আসুন এই ওয়েবসাইটে।
source: UT College Of Liberal Arts
ব্যাঙ্ক সচ্ছলতা:
ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে আরো একটি জটিল ধাপ পেরোতে হবে। আর তা হলো ব্যাংক স্বচ্ছলতা। সব দেশের মতোই নরওয়ের ক্ষেত্রেও থাকা-খাওয়ার খরচ বাবদ বেশ কিছু টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। প্রত্যেক একাডেমিক ইয়ারের জন্য সে পরিমাণটা হলো নরওয়েজিয়ান কারেন্সিতে ১,১১৬৫৭। নরওয়ের নিয়ম হলো, এই টাকাটা শিক্ষার্থী অথবা তার স্পন্সর তাদের নিজ দেশের ব্যাংক একাউন্টে রাখতে পারবেন না, টাকাটা পাঠিয়ে দিতে হবে নরওয়েতে স্টুডেন্ট যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে। এই টাকা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে আপনার টাকা নিরাপদেই থাকবে। কোন কারণে আপনার ভিসা না হলে, এম্বেসি থেকে রিজেকশনের কপি কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেইল করলেই আপনার টাকা ফেরত চলে আসবে। তবে, ব্যাংক ট্রান্সফার আর কারেন্সি কনভার্সন কিছু টাকা কমে যাবে।
এছাড়া, ভিসা হয়ে যাওয়ার পর নরওয়েতে চলে আসলে স্টুডেন্ট এই টাকাটা তুলতে পারবেন। তবে, পুরো টাকা আপনার নরওয়েজিয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। নরওয়েতে প্রতিবছর রেসিডেন্স পারমিট রিনিউ করতে হয় তাই, এক বছর পরপর ভিসা রিনিউ করার সময় আপনাকে এই পরিমাণ টাকা আবার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হবে।
এই হলো বাংলাদেশ থেকে নরওয়েতে পড়তে যাওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া। তবে, আর দেরি কেন? বসে না থেকে আজই শুরু করুন আপনার পছন্দের দেশের পদযাত্রার সূচনা।
Feature Image Source: Study Abroad.