বীমা প্রতিনিধি হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে

বীমা হচ্ছে একজনের ঝুঁকিকে অনেকের কাঁধে বিস্তৃত করার একটি বৈধ ব্যবস্থা। এটা এমন এক ধরনের চুক্তি যেখানে কোনো বীমা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম গ্রহণের বিনিময়ে কয়েকটি অদৃষ্টপূর্ব কারণে বীমাকৃত দ্রব্যের ক্ষতি হলে তা বীমাকারী ব্যক্তিকে পূরণ করে দিতে সম্মত থাকে। বীমা ব্যবসায়ের ইতিহাস ১০০ বছরের পুরনো। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আমাদের দেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। বাংলাদেশে বীমা গ্রাহক বৃদ্ধির সাথে সাথে বীমা কোম্পানির সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে ৪৩টি সাধারণ বীমা কোম্পানি ও ১৭টি জীবন বীমা কোম্পানি ব্যবসা করছে। এসব বীমা প্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ শিক্ষিত তরুণ তরুণী কাজ করছেন।

Image Source: carlstan.com

একজন বীমা প্রতিনিধি প্রথমে এজেন্ট এবং পরবর্তীতে এমও ম্যানেজার, সহকারী কন্ট্রোলার, ডেপুটি কন্ট্রোলার, জেএভিপি, এভিপি, ভিপি ইভিপি এবং সর্বশেষ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন পদবী ব্যবহার করে থাকে। এ পেশায় মূলত ফুলটাইম এবং পার্টটাইম দুই ধরনের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বীমা শিল্পে ক্যারিয়ার গঠনের অনেক সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। আগে মনে করা হতো, এ পেশায় শুধু ছেলেরা আসতে পারবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও এ পেশায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কাজের ধরণ

বীমা কোম্পানিগুলোর প্রধান কাজ হচ্ছে পলিসি গ্রাহক তৈরি করা। আর এ কাজ করে থাকেন বীমা প্রতিনিধিরা। একজন বীমা প্রতিনিধির  কাজটা কোনভাবেই ডেস্ক জব নয়, পুরোপুরি ফিল্ড জব। ক্লায়েন্ট কোম্পানির কাছে আসবে না, যদি বীমা প্রতিনিধিরা তাদেরকে খুঁজে বের করে ‘নক’ না করেন। এজন্য মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। এ পেশায় কাজের ধরণ অনেকটা সেলস জবের মতো।

কোম্পানির পক্ষ থেকে বীমা প্রতিনিধিকে প্রত্যেক মাসে সুনির্দিষ্ট ইনস্যুরেন্স পলিসি করানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে এই লক্ষ্য অবশ্যই প্রার্থীর যোগ্যতা এবং সক্ষমতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। মূলত প্রত্যেক মাসে নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী ইনস্যুরেন্স পলিসি করানো এবং ক্লায়েন্ট তৈরি করা একজন বীমা প্রতিনিধির প্রধান কাজ।

এক্ষেত্রে বীমা প্রতিনিধি তার গ্রাহকের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে তাদের কোম্পানি প্রদত্ত বিভিন্ন পলিসি উপস্থাপন করে থাকে। এছড়াও ইনস্যুরেন্স পলিসি করানোর আগে ক্লায়েন্টকে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলী সম্পর্কে ধারণা দেওয়া (যেমন: ইনস্যুরেন্স পলিসি ধরন, ইনস্যুরেন্স পলিসিগুলোর সুযোগ সুবিধা, শর্তাবলি, প্রিমিয়াম প্রদানের নিয়ম ইত্যাদি), ইনস্যুরেন্স পলিসি করার জন্য যাবতীয় ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করা, প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা পর্যন্ত সকল কাজ একজন বীমা প্রতিনিধিকে করতে হয়। বীমার পলিসি গ্রহণ করানোর সাথে সাথে একজন বীমা প্রতিনিধির টার্গেটের হিসাব শুরু হয়ে থাকে।

Image Source: purvesinsurance.com

একজন বীমা প্রতিনিধিকে প্রতিষ্ঠানের সময়ানুযায়ী প্রতিদিন অফিসে দুই বার অবশ্যই হাজিরা দিতে হয়। একবার সকালে কাজ শুরু করার আগে এবং আরেকবার বিকালে কাজ শেষ করার পড়ে। প্রতিদিন কাজ শুরু করার আগে এক ঘণ্টার মিটিং বা ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নিতে হয়। এ মিটিংয়ে কোন কাজ কীভাবে করতে হবে, কোন কোন ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করতে হবে, কোনো কাজে ব্যর্থ হলে কীভাবে তাতে সাফল্য আনা যাবে এসব বিষয়ে সুপারভাইজারের পক্ষ থেকে আলোচনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সকালের মিটিং শেষ হলে বীমা প্রতিনিধিরা ফিল্ড ওয়ার্কে বেরিয়ে পড়েন। যে সকল ক্লায়েন্টদের সাথে দেখা করতে হবে, তাদের সাথে আগেই যোগাযোগ করে সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ক্লায়েন্টদের সাথে সাক্ষাতের তালিকা এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে একজন বীমা প্রতিনিধি আনুমানিক আট থেকে দশ জন ক্লায়েন্টের সাথে একদিনে দেখা করতে পারেন। সারাদিন ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগের পরে বিকালে আবার দ্বিতীয় বার হাজিরা দিতে হয়। এ সময় বীমা প্রতিনিধিকে সারাদিনের কাজের হিসাব, সাফল্য-ব্যর্থতার রিপোর্ট জমা দিতে হয় সুপারভাইজারের নিকট।

প্রশিক্ষণ

বীমা শিল্পে একজন প্রার্থীকে যোগ্য বীমা প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিগুলো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। প্রথমেই একজন বীমা প্রতিনিধিকে কোম্পানি কর্তৃক তিন থেকে সাত দিনের বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হয়। কোম্পানির বিভিন্ন নিয়ন কানুন, কাজের ধরণ এবং পলিসি সম্পর্কে  বিস্তারিত শেখানো হয়ে থাকে এ সকল প্রশিক্ষণে। ফলে বীমা প্রতিনিধি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে যেকোনো ব্যক্তিই সক্ষম হয়ে থাকে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

বীমা প্রতিনিধি হিসেবে কেউ ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে তাকে অবশ্যই যেকোনো বিষয়ে স্নাতক পাস হতে হবে। তবে বর্তমানে চাকরির বাজারে এই পদে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।

দক্ষতা

একজন সফল বীমা প্রতিনিধি হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমী ও  ধৈর্যশীল হতে হবে। তবেই সফলতার মুখ দেখতে পারবেন। এছাড়াও স্মার্ট, আত্মবিশ্বাসী, যোগাযোগ করার দক্ষতা, সৎ, কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যেকোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে অতি দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারার ক্ষমতা, মানুষকে বুঝানোর বা যুক্তি দাঁড় করানোর ক্ষমতা, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, দ্রুত শিখে নেওয়ার মানসিকতা, উদ্যমী, দূরদর্শিতা এবং ফিল্ড ওয়ার্ক করার মন মানসিকতা থাকতে হবে।

আয় রোজগার

ফ্রেশ গ্রাজুয়েটরা নিয়োগ পেলে প্রতিষ্ঠান ভেদে শুরুতেই ১৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারলে দ্রুতই প্রমোশন হয়। প্রমোশন হলে বেতন ৩০-৩৫ হাজার টাকা  পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো বীমা প্রতিনিধিদের বিভিন্ন বোনাস, ভাতা, ইনসেনটিভ ও ইনক্রিমেন্টের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রতি মাসে পলিসি গ্রাহক তৈরির জন্য প্রতিনিধিদের নানাভাবে উৎসাহ উদ্দীপনা দেয়া হয়। অনেক সময় কাজের সুবিধার্থে কোম্পানি থেকে মোটরসাইকেলও প্রদান করা হয়।

Featured Image: abraminterstate.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *