আপনি হয়তো বারবার চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছেন কিংবা আপনার রিজ্যুমির সাথে মিল রেখে সঠিক চাকরি খুঁজছেন অথবা উপযুক্ত রিজ্যুমি লিখতে গিয়েও থমকে যাচ্ছেন। এই সমস্যাগুলো সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, রিক্রুটাররা গড়ে ৩.১৪ মিনিট ব্যয় করেন শুধুমাত্র রিজ্যুমি পড়ে দেখতে। এমনকি প্রত্যেক ৫ জন ক্যান্ডিডেটের মধ্যে একজন ইন্টারভিউ থেকে রিজেক্ট হয় শুধুমাত্র রিজ্যুমির কারণে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, চাকরি খোঁজার শুরু থেকে ধরেই সঠিক আর উপযুক্ত রিজ্যুমি তৈরি করাটা খুবই প্রয়োজনীয় ধাপ। চলুন তাহলে জেনে নিই, রিজ্যুমি লেখার এমন কিছু টিপস সম্পর্কে। দুই পর্বের এই আর্টিকেলের আজকে হচ্ছে দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্ব এখান থেকে পড়তে পারেন।
Source: 99designs.com
মার্জিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক
অনেকেই হয়তো ভেবে থাকেন যে, রিজ্যুমি লেখার ক্ষেত্রে মার্জিনের ব্যবহার ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু মনে রাখবেন যে, মার্জিন আপনার লেখাকে আরো স্পষ্ট ও রিজ্যুমির ডিজাইনকে আরো সুন্দর করে তোলে। চেষ্টা করবেন, উপর ও নিচের দিকের মার্জিন কমপক্ষে ০.৫ থেকে ১ ইঞ্চি এবং বাম ও ডান দিকের মার্জিন কমপক্ষে ০.৭৫ থেকে ১.২৫ ইঞ্চি পর্যন্ত দেওয়ার জন্য।
Source: creativemarket.com
উপযুক্ত ফাইলের নাম ব্যবহার করুন
মেইলের মাধ্যমে রিজ্যুমি পাঠাতে গেলে অনেকেই ফাইলের নাম যা ইচ্ছে দিয়ে দেয়। এতে করে ফাইলটি ডাউনলোড করার পর রিক্রুটারের জন্য আপনার ফাইলটির নাম মনে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সঠিক আর উপযুক্ত নাম ব্যবহার করুন। যেমন: আপনার রিজ্যুমি ফাইলটির নাম Resume না দিয়ে Your_Name_Resume হিসেবে দিলে সহজেই মনে রাখা সম্ভব হবে।
Source: chjp.com
প্যারাগ্রাফ আকারে না লিখে বুলেটিন আকারে লিখুন
আপনার অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অবস্থান ইত্যাদি তথ্য প্যারাগ্রাফ আকারে না লিখে বুলেটিন হিসেবে লিখুন। এতে করে রিজ্যুমির ডিজাইনও সুন্দর হবে এবং রিক্রুটার সহজেই আপনার সেকশনগুলোকে আলাদা করে পড়তে পারবেন।
Source: canva.com
বিশেষ ক্ষেত্রে ছোটো আকারের বর্ণনা যুক্ত করুন
ধরুন, আপনি সর্বশেষ চাকরি করেছেন তিন অথবা পাঁচ বছর পুর্বে এবং বর্তমনে নতুন চাকরি খুঁজছেন। এই ক্ষেত্রে আপনার কাজের মাঝে যে পাঁচ বছর খালি রয়ে গিয়েছে এবং এই পাঁচ বছর আপনি কী করেছেন সে সম্পর্কে ছোট আকারে (সর্বোচ্চ ১৬০-২৫০ শব্দে) বর্ণনা লিখে দিবেন। এতে করে রিক্রুটার আপনার লাইফস্টাইল ও কাজের ধারা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
Source: lifeunchained.org
একটি রিজ্যুমির সফট কপি ও হার্ড কপি দুটোই তৈরি করুন
অনেক চাকরির বিজ্ঞাপণে হয়তো আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে ও সেখানেই আপনার রিজ্যুমির সফট কপি প্রেরণ করতে হয়। এই কাজ করতে গিয়ে অনেকেই রিজ্যুমির হার্ড কপি সাথে রাখেন না। কিন্তু ইন্টারভিউয়ে যাওয়ার সময় অবশ্যই রিজ্যুমির হার্ড কপিও সাথে রাখা উচিত। কারণ রিজ্যুমির হার্ড কপি সাথে থাকলে রিক্রুটার আপনার সেনসিটিভিটি ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
Source: michaelpage.com
সব ধরণের অর্জন ও সার্টিফিকেট রিজ্যুমিতে যুক্ত করুন
অনেকেই জায়গার অভাবে বা বিভিন্ন কারণেই রিজ্যুমিতে নিজের অর্জনগুলো বা সার্টিফিকেটগুলো যুক্ত করেন না। কিন্তু মনে রাখবেন যে, সার্টিফিকেট ও নিজের অর্জনগুলো রিজ্যুমিতে যুক্ত করা খুবই জরুরী। এতে করে রিক্রুটার আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সত্যতার প্রমাণ পেয়ে যাবেন।
Source: kymusichalloffame.com
রিজ্যুমি আপনার জন্য তৈরি করবেন না, তৈরি করুন রিক্রুটারদের জন্য
রিজুইমির ডিজাইন, ফন্ট, ফন্টের আকার, রিজ্যুমির টাইপ, লেআউট ইত্যাদি নিজের পছন্দমতো না দিয়ে রিক্রুটারের যেভাবে পছন্দ হবে সেভাবে দেয়ার চেষ্টা করুন। রিক্রুটারের পছন্দ হবে কোন ডিজাইনে, রিক্রুটার চাকরির বিজ্ঞাপনে কী চেয়েছেন, রিক্রুটার চাকরির তথ্য হিসেবে কী দিয়েছেন, রিক্রুটার আপনার কাছ থেকে আশা করেন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর থাকা উচিত আপনার রিজ্যুমিতে।
Source: fiverr.com
প্রুফ রিডিং করুন
রিজ্যুমি লেখার পরে অনেকে দ্বিতীয়বার আর রিজ্যুমি খুলেই দেখেন না। সেক্ষেত্রে রিজ্যুমিতে অনেক ভুল থেকে যায়। প্রায় ৬১ শতাংশ রিক্রুটারই রিজ্যুমিতে টাইপিং মিসটেক কিংবা স্পেলিং মিসটেক দেখলে রিজ্যুমি বাতিল করে দেন। আর তাই আপনার উচিত বারবার ভালো করে রিজ্যুমি খতিয়ে দেখা। রিজ্যুমি লেখার সময় গ্রামারলির মতো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করলে প্রুফরিডিং করার কষ্ট অনেকখানিই কমে যায়।
Source: zety.com
ধন্যবাদ পত্র বা ধন্যবাদ মেইল প্রেরণ করুন
রিজ্যুমি যদি ততটা ভালো না হয় তাহলে এই টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন। যদিও এটা সবসময়েই ব্যবহার করা উচিত। ইন্টারভিউ দিয়ে আসার পরে যে কোম্পানির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছেন সেই কোম্পানির ইমেইলে ধন্যবাদ মেইল বা ধন্যবাদ পত্র পাঠাতে পারেন। এতে করে রিক্রুটাররা কাজের প্রতি আপনার সিরিয়াসনেস নিয়ে নিশ্চয়তা পাবেন।
Source: fiverr.com
আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল পরিষ্কার করুন
মনে রাখবেন, আপনি যদি রিজ্যুমিতে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের লিংকগুলো দিয়ে থাকেন তাহলে অনেক রিক্রুটাররাই আপনার ফেসবুক প্রোফাইল কিংবা লিংকডিন প্রোফাইল ঘুরে আসতে পারেন। তারা যাতে আপনার প্রোফাইল দেখে কোনো ধরণের নেগেটিভ রিয়েকশন না দিতে পারে, সেজন্য আপনাকে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলগুলো যথেষ্ট পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
Source: fiverr.com
রিজ্যুমিতে ‘শখ’ সেকশন ব্যবহার করুন
অনেকেই রিজ্যুমি লেখার সময় ‘শখ’ সেকশন ব্যবহার করেন না। কিন্তু আপনার পার্সোনালিটি ও প্রফেশনালিজম বোঝানোর জন্য ‘শখ’ ও ‘ইন্টারেস্ট’ সেকশন যুক্ত করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র পার্সোনালিটির কারণেই আপনার চাকরির সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।
Source: fiverr.com
রিজ্যুমিতে ভুল তথ্য যুক্ত করবেন না
অনেকেই হয়তো নিজের অভিজ্ঞতা কিংবা কাজের অবস্থান পরিবর্তন বা পরিমার্জন করে কিংবা ভুল তথ্য দিয়ে রিজ্যুমি পূর্ণ করে রাখেন। কিন্তু এই ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত যে, ভুল তথ্য দেয়ার কারণে আপনার রিজ্যুমি বাতিল হয়ে যেতে পারে ও চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হতে পারেন এমনকি বিশেষ ক্ষেত্রে আপনাকে কোর্ট-কাচারিতে দৌড়তে হতে পারে।
Source: zety.com
দুই পৃষ্ঠার বেশি রিজ্যুমি লিখবেন না
চেষ্টা করবেন এক পৃষ্ঠায় আপনার রিজ্যুমি সম্পন্ন করতে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে দুই পৃষ্ঠার মধ্যেই আপনার সব তথ্য যুক্ত করুন। অতিরিক্ত পৃষ্ঠা থাকলে রিক্রুটার আপনার রিজ্যুমি পড়তে গিয়ে বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন।
Featured Image: blog.kudoswall.com