একজন ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়

বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে খাদ্য  গ্রহণের ফলে আমাদের দেহে স্থূলতা, মেদ বৃদ্ধিসহ নানা ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই নিজের শরীর ও ফিগার ঠিক রাখতে অনেকেই  ছুটছেন জিমে। আবার অনেকেই হলিউড ও বলিউডের নায়ক নায়িকাদের শারীরিক গঠনে মুগ্ধ হয়ে, সে রকম শারীরিক গঠনের আশায় জিমে ভর্তি হচ্ছেন। তাছাড়া বর্তমানে সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। তাই সুস্থ থাকার জন্য এখন অনেকেই নিয়মিত জিম করেন।

Image Source: alternativebalance.net

এক সময় জিম করাকে আভিজাত্য, আধুনিকতা এবং বিলাসিতা হিসেবে মনে করা হলেও এই শরীর চর্চা এখন যাপিত জীবনের অন্যতম চাহিদা। আগের দিনগুলোতে বর্তমান সময়ের মতো এতো জিম ছিলো না। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন সব জায়গাতেই জিম রয়েছে। এছাড়াও মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নিত্য নতুন জিম গড়ে উঠছে। সেই সাথে বাড়ছে ফিটনেস প্রশিক্ষকের চাহিদা। যারা সব সময় ফিট থাকতে চান, তাদের জন্য এ পেশাটি হতে পারে পছন্দের এবং স্বপ্নের এক আদর্শ ক্যারিয়ার।

একজন ফিটনেস প্রশিক্ষকের চাহিদা যে শুধু জিমে নয় রয়েছে তা কিন্তু নয়, আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রেও কাজের সুযোগ রয়েছে। আগে মনে করা হতো, এটি শুধুমাত্র ছেলেদের পেশা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের ধ্যান ধারণা পাল্টেছে। এখন ছেলেদের পাশাপাশি নারীরাও জিমে যাচ্ছেন। সে কারণে জিমগুলোতে নারী প্রশিক্ষকের চাহিদাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কাজের ধরণ

একজন ফিটনেস প্রশিক্ষক তার ক্লায়েন্টকে ব্যায়াম এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। কীভাবে ব্যায়াম করতে হবে, ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি দেখিয়ে দেওয়া, ক্লায়েন্টদের উন্নতি পর্যবেক্ষণ করা, ডায়েট প্ল্যান ঠিক করে দেওয়া, ব্যায়াম করার যন্ত্রপাতি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা দেখিয়ে দেওয়া, দৈনিক কতো সময় ওয়ার্ক আউট করতে হবে তার রুটিন তৈরি করে দেওয়া, ক্লায়েন্ট কে উৎসাহ প্রদান করা ইত্যাদি একজন ফিটনেস প্রশিক্ষকের কাজ। এক কথায়, প্রতিটি ক্লায়েন্টের নিজস্ব প্রয়োজন বুঝে সঠিক ফিটনেসের পথ দেখানোই এই পেশার প্রধান কাজ।

ফিটনেস ট্রেনারের ধরণ

১. গ্রুপ ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর 

ধরণের ট্রেনাররা  কোনো গ্রুপ বা দলকে ক্লাবে, জিমে বা বাসায় ফিটনেস ট্রেনিং দিয়ে থাকেন।

২. স্পেশালিষ্ট ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর  

এ ধরণের ফিটনেস ট্রেনাররা একটি নির্দিষ্ট ব্যায়াম পদ্ধতিতে স্পেশালিষ্ট হয়ে থাকেন। যেমন: প্লেটস, যোগব্যায়াম বা কার্ডিও ইত্যাদি যেকোনো একটি নির্দিষ্ট ব্যায়াম পদ্ধতিতে তারা অভিজ্ঞ থাকেন।

৩. পার্সোনাল ট্রেনার

এই ধরনের ট্রেনাররা কোনো প্রতিষ্ঠানে ফিটনেস ট্রেনিংয়ের জন্য আসা প্রতিটি ক্লায়েন্টকে আলাদা করে ট্রেনিং দিয়ে থাকেন।

যোগ্যতা ও দক্ষতা

একজন ফিটনেস ট্রেনারকে নূন্যতম এইচএসসি পাস হতে হবে। ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টরের চাকরি পেতে গেলে কিন্তু প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। ফিটনেস প্রশিক্ষণের কাজ করতে গেলে মানুষের শরীর নিয়ে কিছু নির্দিষ্ট পড়াশোনাও করতে হয়। মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, শরীরস্থান বা অ্যানাটমি নিয়ে আইডিয়া না থাকলে কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। একজন সফল ফিটনেস এক্সপার্ট হতে হলে, কোনো একটি ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে প্র্যাকটিকাল এবং থিওরিটিক্যাল দুই ধরনের শিক্ষাতেই নিজেকে শিক্ষিত করতে হবে। ফিটনেসের মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক দিক সম্বন্ধে ভালো করে জানতে হবে।

Image Souce: negosentro.com

এছাড়াও একজন ফিটনেস এক্সপার্টের দায়িত্ব হলো, একজন ক্লায়েন্টের জন্য উপযুক্ত ফিটনেস প্রোগ্রাম বানিয়ে দেওয়া এবং সেই ফিটনেস প্রোগ্রামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে  উপযুক্ত ব্যায়াম ও ডায়েটে চার্টও তৈরি করে দেওয়া। সেই ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাওয়া দাওয়া করলে এবং সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করলে, জিম করার পুরোপুরি ফল পাওয়া যায়। তাই ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টরকে নিউট্রিশন বা পুষ্টিবিজ্ঞান এবং ডায়েটিক্স সম্পর্কেও প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। ক্লায়েন্টকে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সুরক্ষিত লাইফ স্টাইলের পথ দেখাতে গেলে ইনস্ট্রাক্টরকে একসাথে বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করেই সামনে এগোতে হবে।

কাজের সুযোগ


এ পেশায় একজন ৩০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের শরীরের বাড়তি চর্বি ঝরানোর উপায় যেমন বলে দিতে হয়, তেমনই একজন ২৩-২৪ বছর বয়সের ছেলে কীভাবে সিক্স প্যাক তৈরি করবে, তাও শেখাতে হয় ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টরদের। তাই এদের কাজের জায়গা অনেকটাই বিস্তৃত। এছাড়াও সব স্কুলেই শরীর চর্চার শিক্ষক কম বেশি নেওয়া হয়। বিভিন্ন খেলোয়াড়দের দলেও ফিটনেস প্রশিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয়। তাই চাইলে এসব স্কুল বা খেলোয়াড়দের দলে ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করতে পারেন।

Image Source: frocksonbikes.org

আপনি যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী সেসব প্রতিষ্ঠানে সিভি এবং আবেদনপত্র পাঠিয়ে চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে সব স্থানেই প্রচুর জিম গড়ে উঠেছে। এসব জিমে শরীর গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। আবার ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর হতে চাইলেও এসব জিমেই পাওয়া যাবে চাকরি। তার জন্য এসব জিমে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়েই সেখানকার কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন। ভালো একজন ইনস্ট্রাক্টর হয়ে উঠতে পারলে জিমগুলোই আপনাকে চাকরির জন্য ডাক দিবে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর হতে পারলে কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে সব জায়গায়।

আয় রোজগার

তবে একজন  ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর হবার আগে মনে রাখতে হবে যে, এই পেশায় প্রথম দিকে কিন্তু তেমন ভালো উপার্জন হয় না। তবে সময়ের সাথে সাথে আয় বৃদ্ধি পায়। প্রথম দিকে একজন ফিটনেস প্রশিক্ষকের বেতন ৮,০০০-১০,০০০ টাকা থেকে শুরু হতে পারে। অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে আপনার বেতনের পরিমাণও বাড়তে থাকবে। তাছাড়া বিভিন্ন নামীদামী জিমগুলোতে চাকরির প্রথম দিকে বেতনের পরিমাণ আরো বেশি হয়ে থাকে।

Featured Image: littonlarnertrainning.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *