৫টি টেক নিরাপত্তা গ্রহণের মাধ্যমে বাড়িকে করুন নিরাপদ হোম অফিস

যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইন্টারনেট যুক্ত হওয়ার পর যোগাযোগ ব্যবস্থা এক উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যোগাযোগ থেকে অফিসের ফাইল আদান প্রদান, সবই হচ্ছে ইন্টারনেটের সাহায্যে। ফলে দৈনন্দিন জীবন হয়ে উঠছে আরও সহজ। প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ হচ্ছে ততোই বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগ।

Source: Deelat.com

আজকাল ঘরে বসেই প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনীয় কাজ ফ্রিল্যান্সার দিয়ে করিয়ে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ বাড়িতে সম্পন্ন করার অনুমতি দিয়ে থাকে।

Source: eveningexpress.co.uk

এতে করে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ ও সময় এবং অফিসের স্পেস সবই সাশ্রয় হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে বেকারদের কাজের সুযোগ। যোগাযোগ ব্যবস্থার নমনীয়তা ও অবাধ স্বাধীনতার কারণেই তৈরি হচ্ছে কিছু প্রশ্ন। যে প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যেমন: আমরা যেসব মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করছি সেগুলো কি নিরাপদ?

এ বিষয়ে স্মানস কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ব্রাইন স্টার্ক বলেন ‘একজন দূরবর্তী কর্মচারী হিসেবে প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী’। তিনি আরও বলেন ‘যখন প্রতিষ্ঠান দূরবর্তী কর্মচারীকে কাজ দেবে তখন প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। তাহলেই কেবল ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব’।

Source: dawgen.blogspot.com

তাই অফিসের কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি ডিভাইসে (কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেট) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হিসেবে প্রতিটি তথ্যের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আবার এই সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিষ্ঠানেরও রয়েছে কিছু করনীয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য কিছু মৌলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। আজ এই সকল মৌলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করবো।

দূরবর্তী কর্মকর্তা-কর্মচারীর করনীয়

একটি প্রতিষ্ঠানের ভালো কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। এক্ষেত্রে গ্রহণ করতে হবে কিছু মৌলিক প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আজকে এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই।

এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন

নিরাপত্তা ব্যবস্থার মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এন্টিভাইরাসের ব্যবহার। আপনি যে ডিভাইসে অফিসের কাজ করেন, সেই ডিভাইসে অবশ্যই এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। ফলে প্রতিটি ফাইলের কিছুটা হলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

Source: lifewire.com

এন্টিভাইরাস ব্যবহার প্রসঙ্গে মাই বিজনেস জেনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ভ্যান গোটি বলেন ‘এখন অনেক ফ্রি এন্টিভাইরাস প্রোভাইডার রয়েছে। আমরা আমাদের দূরবর্তী কর্মচারীদের ঐসকল এন্টিভাইরাস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এতে করে কিছুটা হলেও আমাদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে থাকে’

কাজের ডিভাইস পরিবারের জন্য নয়

যারা ঘরে বসে অফিসের কাজ করেন, তাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। আপনি যে ডিভাইস কাজের জন্য ব্যবহার করেন এগুলো অন্যদের ব্যবহার করতে দিবেন না। হতে পারে সে পরিবারের সদস্য। মনে রাখবেন, এই ডিভাইস শুধুই অফিসের কাজের জন্য। পরিবারের সবার জন্য নয়।

Source: medium.com

ধরুন, আপনি যে ডিভাইসে প্রতিষ্ঠানের কাজ করেন সেই ডিভাইসে আপনার সন্তান গেমস খেলে। এতে করে ডিভাইসটি ক্রাশ করতে পারে। ফলে সকল ফাইল নষ্ট হতে পারে। এজন্য অন্যদের ডিভাইসটি ব্যবহার করতে দিবেন না। তাহলে পরিশ্রমের কাজ কারও একটা ক্লিকে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আবার কোনো তথ্য চুরির সম্ভাবনাও থাকবে না।

নিরাপদ রাখুন কাজের স্থান

স্টার্ক বলেন “ভার্চুয়াল নিরাপত্তা গ্রহণ করা ঠিক যেমন জরুরী, তেমনি কাজের স্থানের নিরাপত্তা গ্রহণ করাও খুব জরুরী”।

Source: microsoft.com

নিশ্চয়ই আপনি বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অফিসের কাজ করেন। সেখানে দামি ডিভাইসের পাশে থাকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। তাই বাড়ীর এই কাজের জায়গাটি নিরাপদ রাখা খুব জরুরী। যদিও সর্বক্ষণ পূর্ণ নিরাপত্তা গ্রহণ সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবুও যতটা সম্ভব নিরাপত্তা গ্রহণ করা উচিৎ।

প্রতিষ্ঠানের নীতি অনুসরণ করুন

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মতো আপনার প্রতিষ্ঠানেরও কিছু নীতি রয়েছে। মনে রাখবেন, যেখানে অফিসের কাজ সম্পন্ন হবে সেখানেই এই নীতিগুলো প্রযোজ্য হওয়া উচিৎ।

Source: thebetterindia.com

তাই সব জায়গায় প্রতিষ্ঠানের নীতির বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন। হোক প্রতিষ্ঠানের ভিতরে অথবা বাহিরে। যেখানে অফিসের কাজ হবে সেখানেই নীতির বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের করণীয়

যদি আপনিও দূরবর্তী কর্মকর্তা কর্মচারীর মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাহায্যে কাজ করে থাকেন। হোক পার্ট টাইম অথবা ফুল টাইম। ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অবশ্যই কিছু মৌলিক টেকনিক্যাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

০১. আপনার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংরক্ষণ যোগ্য এমন পাসওয়ার্ড সরবরাহ করবেন না কখনই। যখন ভিপিএন ব্যবহারের অনুমতি দিবেন তখন অবশ্যই নন-স্টোরেজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে দেবেন।

০২. যদি দূরবর্তী কর্মচারীর মাধ্যমে সেনসিটিভ কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাহলে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিন। কাজ শেষে নিশ্চিত করুন আবার যেন লগ ইন করতে না পারে।

০৩. শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামে প্রবেশ করার অনুমতি দিন। অর্থাৎ, কাজের জন্য যে সকল ফাইল বা প্রোগ্রামে প্রবেশ করা প্রয়োজন, এগুলো ছাড়া আর কোথাও এক্সেস দেবেন না।

০৪. প্রত্যেক চাকুরীজীবীকে টার্মিনেট করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করুন। যেকোনো সময় চাকুরীজীবীর পদবী তথা কাজের পরিধি পরিবর্তন করার ক্ষমতাও সংরক্ষণ করুন।

৫. প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্টোরেজে ফাইল সংরক্ষণ করার অনুমতি দিন। এতে করে তারা পরবর্তীতে ডকুমেন্টগুলো নিজস্ব কাজে ব্যবহার করতে পারবে না।

যেহেতু প্রত্যেক দূরবর্তী কর্মকর্তা কর্মচারী আপনার প্রতিষ্ঠানের খুব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ব্যবহার করবে, তাই প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট কর্মপন্থা ও গাইড লাইন তৈরি করুন। যা অনুসরণ করে পরিচালিত হবে প্রতিটি কাজ। আবার প্রতিনিয়ত টেকনোলজি আপডেট হচ্ছে। সেই সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমগুলোও সহজ হচ্ছে।

techadvisor.co.uk

এজন্য আপনার দূরবর্তী কর্মকর্তা কর্মচারীদের সবচেয়ে ভালো মানের টেকনোলজি সরবরাহ করুন। এগুলো যেন খুব দ্রুত বদলাতে না হয়। এভাবে উপরোক্ত নিয়ম বাস্তবায়ন মাধ্যমে প্রতিটি ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তৈরি করা সম্ভব এক নিরাপদ কর্মশৃঙ্খল। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কাজ হয়ে উঠতে পারে আরও সহজ ও সাবলীল।

Feature Image Source: terrysfabrics.co.uk

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *