চেক প্রজাতন্ত্র মধ্য ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম প্রাগ। ঐতিহাসিক বোহেমিয়া অঞ্চল, মোরাভিয়া অঞ্চল ও সাইলেসিয়া অঞ্চলের অংশবিশেষ নিয়ে দেশটি গঠিত। ইউরোপের অনেক দেশই শরণার্থী সংকটে বিপর্যস্ত। তবে কয়েকটি দেশ এ সংকট থেকে নিজেদের বাইরে রেখেছে। তেমনই এক দেশ চেক প্রজাতন্ত্র। চেক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। গথিক, রেনেসাঁস, বারোক ও আধুনিক ধাঁচের স্থাপত্যকলা, নৈসর্গিক দৃশ্যাবলিসমৃদ্ধ গ্রামাঞ্চল, প্রাচীন প্রাসাদ, স্বাস্থ্যসম্মত খনিজ ঝরনা বা স্পা, ফ্রান্ৎস কাফকার লেখা আর আন্তোনিন দ্ভোরাকের সংগীতের জন্য দেশটি বিখ্যাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশটি সোভিয়েত প্রভাবাধীন ছিল।
Image Source: exodus.co.uk
১৯৯০ এর দশকে দেশটির অর্থনীতি বেসরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্র ইউরোপের সবচেয়ে শিল্পায়িত দেশগুলোর একটি। তবে এর ফলে দেশটি পরিবেশ দূষণেরও শিকার। ঐতিহ্যবাহী চেক দ্রব্যের মধ্যে আছে সূক্ষ্ম স্ফটিক ও বিয়ার। পর্যটনও দেশটির আয়ের অন্যতম উৎস। দেশটির অতিথিরা প্রাগের স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। শহরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমা হামলার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হয়। চেক প্রজাতন্ত্র একটি উন্নত দেশ, উচ্চ জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে তাদের আছে উচ্চ আয়ের অর্থনীতি। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, ওইসিডি, ওএসসিই এবং কাউন্সিল অফ ইউরোপের একজন সদস্য।
চেক প্রজাতন্ত্রে জীবন যাত্রার খরচ ও টিউশন ফি ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছু কম। বর্তমানে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রায় ৪৪,০০০ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এখানকার বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে চেক এবং ইংলিশ দুই মিডিয়ামে ব্যাচেলর, মাস্টার এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু আছে।
চেক প্রজাতন্ত্রের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়,
• চার্লস ইউনিভার্সিটি (Charles University)
• চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি (Czech Technical University)
• মাসারেক ইউনিভার্সিটি (Masaryk University)
• ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক্স (University Of Economics)
• বিয়ারেনো ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (Brno University of Technology)
যেসব বিষয় পড়ানো হয়
অ্যাভিয়েশন, বিজনেস স্টাডিজ, ডিজাইন স্টাডিজ, জার্নালিজম, ম্যানেজমেন্ট কোর্স, ল্যাংগুয়েজ কোর্স, মার্কেটিং, সোশ্যাল সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইকোনমিক্স, ফ্যাশন, আর্ট, ল, ফুড এন্ড বেভারেজ স্টাডিজ, এনার্জি সায়েন্স, ফিল্ম মেকিং, ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালটি, গ্রাফিক্স কোর্স, অনলাইন মার্কেটিং কোর্স, ইত্যাদিসহ আরো নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
১. উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা
চেক প্রজাতন্ত্রে ২৭ টি সরকারি ও ৪০ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দ্যা চার্লস ইউনিভার্সিটি ইন প্রেগ। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৩৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি প্রথম চেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। এদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় একই রকম এবং আন্তর্জাতিকভাবে সকল চেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বীকৃত প্রাপ্ত।
Image Source:csb.uncw.edu
সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ চেক মিনিস্ট্রি অব এডুকেশন এবং ইয়থ এন্ড স্পোর্টস নিয়ন্ত্রণ করে। চেক প্রজাতন্ত্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বর্যাঙ্কিং শীর্ষ সারিতে রয়েছে। কিউএস ইইচিএ ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০১৮ অনুযায়ী, বিশ্বের সেরা ৩০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় চেক প্রজাতন্ত্রের।
২. কাজের সুযোগ
ইউরোপিয়ান দেশগুলোর নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পাবেন। চেক প্রজাতন্ত্রে বিভিন্ন রেস্তোরা বা মিনি মার্কেটে কাজ পাবেন। কিন্তু আপনি চাইলে চেক প্রজাতন্ত্রে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার অধিক কাজ করতে পারবেন।
Image Source: forbesindia.com
এতে আপনার ভিসা বা অন্য কোনকিছুর জন্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। কারণ শিক্ষার্থীরা কত ঘণ্টা কাজ করছে তার কোনো হিসাব রাখা হয় না এবং চেক সরকার শিক্ষার্থীদের আয়ের উপর ট্যাক্স ফ্রি করেছে। তবে মনে রাখবেন, ক্লাস কিন্তু নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে। ক্লাস নিয়মিত করে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার অধিক কাজ করলেও সমস্যা নেই।
৩. নিরাপদ দেশ
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০১৮ জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের নিরাপদ দেশের তালিকায় চেক প্রজাতন্ত্রের স্থান ৭ম।এছাড়াও প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক ‘ইন্টারন্যাশনস’ নামক প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে গবেষণা জরিপ করে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র। ১৮৮ অঞ্চলে কর্মরত ১৩ হাজার প্রবাসীর জীবনযাপন ও তাদের কাজের পরিবেশের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
৪. ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রে বসবাস
চেকপ্রজাতন্ত্রে বসবাস করা মানে ইউরোপের কেন্দ্রে বসবাস করা, কারণ চেক প্রজাতন্ত্রকে চারটি দেশ ঘিরে রেখেছে। দেশটির উত্তরে পোল্যান্ড, পূর্বে স্লোভাকিয়া, দক্ষিণে অস্ট্রিয়া এবং পশ্চিমে জার্মানি। মাত্র দুই তিন ঘণ্টার প্লেন অথবা বাসে ভ্রমণ করে পৌঁছে যেতে পারবেন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।
৫. অসাধারণ সুন্দর একটি দেশ
ছবির মতো সুন্দর ও সেরা স্থাপত্য শিল্পে পরিপূর্ণ শহরগুলো এই দেশকে ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর স্থানগুলোর একটিতে পরিণত করেছে। এদেশে ঘুরতে বের হলে মধ্যযুগের চমৎকার এবং বিস্ময়কর অস্তিত্ব উপভোগ করতে পারবেন। যেমন: প্রাচীন দুর্গ, প্রাসাদ, গির্জা, স্কয়ার এবং অনেকগুলো ব্রিজ। এখানকার ভবন এবং ব্রিজগুলো দেখতে খুব সুন্দর। চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ শহরের বিভিন্ন জায়গা দেখলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন, মনে হবে যেন আপনি কোনো কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেছেন।
Featured Image: thejakartapost.com