বর্তমানে হিসাবরক্ষকের পদ প্রতিটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানেই অপরিহার্য বিষয়। একজন হিসাবরক্ষক প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় থেকে শুরু করে, যাবতীয় লেনদেনের তথ্য নথিবদ্ধ করেন। তবে এই পেশাটির শুরুটা কীভাবে হয়েছিল? পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ হিসাবের নথি পাওয়া যায় ৭০০০ বছর পূর্বে মেসোপটেমীয়ার এক ধ্বংসস্তূপে। তখন মানুষ ফসল উৎপাদনের হিসাব রাখতে সকল তথ্য লিখে রাখতো। বর্তমান যুগেও এই পদ্ধতি বিদ্যমান আছে।
Source: erpfm.com
পরবর্তীতে রোমান সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করার পর, হিসাবরক্ষকের কাজ ও প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়ে যায়। শস্য উৎপাদনের হিসাব রাখা ছাড়াও জমি-জমা বন্টন, কাজ বন্টন, নতুন ভবন তৈরি, সৈন্যদের জন্য ব্যয় এবং বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্রিক ব্যয়ের হিসাব করার জন্য হিসাবরক্ষকের প্রয়োজন পড়ে।
বর্তমান যুগে হিসাবরক্ষকের কাজ ও দায়িত্ব
সময়ের পরিক্রমায় হিসাবরক্ষকদের কাজ ও দায়িত্বেও এসেছে পরিবর্তন। বর্তমান সময়ে হিসাবরক্ষকদের সাধারণত যেসব কাজগুলো করে, সেগুলো হলো-
১. একজন হিসাবরক্ষক প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব তৈরি করেন। যে হিসাবের তথ্য ব্যবহার করে, প্রতিষ্ঠান বাজেট ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকে।
২. একজন হিসাবরক্ষকের তৈরিকৃত নথির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভেতর প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানা যায়। তাই পরবর্তীতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, সেটি সহজেই নির্ধারণ করা যায়।
Source: nytimes.com
৩. ব্যাংক কিংবা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত বড় ধরনের লেনদেন করে থাকে। তাছাড়া তাদের গ্রাহক সংখ্যাও অগণিত। এ রকম বড় পরিসরে লেনদেনের হিসাব, কেবল একজন পেশাদার হিসাবরক্ষকই রাখতে পারে।
৪. প্রতিষ্ঠানে সব গ্রাহকের চাহিদা একই রকম থাকে না। তাই তাদের প্রয়োজন মতো পৃথক পৃথক হিসাব তৈরি করতে হয় একজন হিসাবরক্ষককে। আর এতে সব গ্রাহকই কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে পারে।
এএটি(AAT) কী?
এএটিয়ের পূর্ণরূপ হলো এসোসিয়েশন অব একাউন্টিং টেকনিশিয়ানস, যা যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পেশাদার হিসাবরক্ষক কর্মীদের নিয়ে গঠিত। সারা বিশ্বের ৯০টি দেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার সদস্য নিয়ে তাদের সংগঠন।
Source: reed.co.uk
এই সংগঠনটিকে স্পন্সর করে থাকে সিআইপিএফএ (CIPFA), আইসিএইডব্লিউ (ICAEW), সিআইএমএ (CIMA), আইসিএএসয়ের (ICAS) মতো যুক্তরাজ্যের প্রথম সারির পেশাদার হিসাবরক্ষকদের সংগঠনগুলো।
এএটিয়ের বিভিন্ন ধাপ
এএটি তাদের সদস্য পদ প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণমূলক কোর্সের আয়োজন করে থাকে। এই প্রশিক্ষণ কোর্সটির ৪টি ভিন্ন ধাপ রয়েছে। এগুলো পার করতে পারলেই, আপনি একজন হিসাবরক্ষক হওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করবেন। চলুন, ধাপসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
এএটি প্রবেশিকা (ধাপ-১)
এটি হিসাবরক্ষণ ও অর্থনীতি নিয়ে দক্ষতা অর্জনের প্রথম ধাপ। এই ধাপ পার করার মধ্য দিয়ে আপনি সংগঠনটির সদস্য হতে পারেন। প্রাথমিক ধাপটি পার হওয়ার জন্য আপনার বয়স কমপক্ষে ১৬ হতে হবে।
ধাপ-২
এই ধাপটিই মূলত এএটি কোর্সের ভিত্তি। তবে এই ধাপটিতে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রথম ধাপটি পার হওয়া প্রয়োজনীয় নয়। এখানে আপনি হিসাবরক্ষণের অপরিহার্য দক্ষতাগুলো শিখতে পারবেন। এগুলোর ভেতর ডাবল এন্ট্রি সিস্টেম, ট্রায়াল ব্যালেন্স ও ক্রেডিট কন্ট্রোলের মতো দরকারি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।
Source: scalefactor.com
ধাপ-৩
এই ধাপে আগের বিষয়গুলো থেকে আরো বেশি সুনির্দিষ্টভাবে শিখতে পারবেন। এবার ব্যবহারিক হিসাবরক্ষণের কাজও আপনাকে করতে দেওয়া হবে। এই ধাপটি শেষ করার মধ্য দিয়ে আপনি এএটি কোর্সের ডিপ্লোমা পর্যায়টি শেষ করতে পারবেন।
ধাপ-৪
এটি এএটি কোর্সের সবচেয়ে বিশেষায়িত ধাপ। এই কোর্সে আপনি বাজেট তৈরি, ফিন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স মনিটর করা, ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট ড্রাফট করার মতো জরুরী দক্ষতাগুলো শিখে নিতে পারবেন। এই ধাপটি পার হওয়ার মাধ্যমেই আপনি হতে পারবেন সংগঠনটির একজন পূর্ণাঙ্গ সদস্য।
এএটি কেনো প্রয়োজন?
এই কোর্সটি আর্থিক শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এই শিল্পে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা শেখানো হয়। এছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশে এই কোর্সটিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানই চাকরির দক্ষতায় এএটি কোর্সটি বাধ্যতামূলক করে দিয়ে থাকে।
Source: torontosom.ca
তাই অর্থনৈতিক খাতে কেউ যদি নিজেকে এগিয়ে নিতে চায়, তার জন্য কোর্সটি করা গুরুত্বপূর্ণ। বলাবাহুল্য, হিসাবরক্ষক হিসেবে সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, এই কোর্সটি করা খুবই প্রয়োজন।
কোর্সটি করে কেমন আয় করা যায়?
কোর্সটি করে আপনি কেমন আয় করবেন সেটা নির্ভর করে আপনার চাকরির স্থান, চাকরির ধরন ও দক্ষতার উপরে। তবে প্রথম দুইটি ধাপ পার করেই আপনি চাকরির শুরুতে প্রায় বিশ হাজার ইউরো বা ২০ লাখ টাকা সহজেই বছরে আয় করতে পারবেন, যদি আপনি আরো দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
Source: amicable.io
তাহলে একজন অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার হিসেবে বার্ষিক বেতন প্রায় ত্রিশ হাজার ইউরো বা ৩০ লাখ থেকে পঞ্চাশ হাজার ইউরো বা ৫০ লাখ টাকা কোম্পানির কাছে দাবি করতে পারবেন। এছাড়াও পরবর্তীতে কাজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আপনার আয়ের পরিমাণ আরো বাড়তে থাকবে।
এএটির শেখানোর কৌশল
আপনি যেখানেই থাকুন না কেনো, এই কোর্সটি সহজেই শিখতে পারবেন। কারণ তারা খন্ডকালীন এবং পূর্ণকালীন শেখার সুযোগ দিয়ে থাকে। তাছাড়া ক্লাসরুমে অংশগ্রহণ, যদি আপনার জন্য কঠিন হয়ে যায়। তবে আপনার জন্য অনলাইনে শেখার সুযোগ রয়েছে। তাই কোর্সটি করার জন্য আপনার কেবল আগ্রহই যথেষ্ট।
কোর্সটি করতে কতো সময় লাগে?
প্রতিটি ধাপ শেষ করতে সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লেগে থাকে। আর কোর্সটি শেষ করতে কতদিন লাগবে, সেটা অনেকটাই নির্ভর করে আপনার শেখার দক্ষতার উপর।
Source: sokanu.com
অনলাইনভিত্তিক শেখার কাজে ভিডিওগুলো বিশেষায়িতভাবে সাজানো হয়ে থাকে, যাতে আপনার বুঝতে সমস্যা না হয়। আপনার সুযোগ অনুযায়ী যেকোনো সময়ই অনলাইনে শিখে নিতে পারবেন।
কোর্সটি করার সুবিধা
আপনি এএটি কোর্সটি সম্পন্ন করতে পারলে, নানাবিধ সুযোগ ও সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। যেমন-
১. দেশে-বিদেশে স্বীকৃত একটি কোর্স।
২. এটি ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে অব্যর্থ একটি রাস্তা।
Source: washingtonpost.com
৩. অনেক কোম্পানি কোর্সটিকে অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
৪. নিজের যোগ্যতা এবং সামর্থ্যের উপর আপনার আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
এই কোর্সটির পাশাপাশি কাপলান ফিন্যান্সিয়াল কেনো শিখবেন?
আপনি যদি অর্থনৈতিক খাতে নিজের ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে চান, তবে এএটির পাশাপাশি কাপলানের বিভিন্ন কোর্স, আপনাকে দেবে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ। বিভিন্ন ফ্ল্যাটফর্মে শেখার সুযোগ কোর্সটিকে দিয়েছে আরো গ্রহণযোগ্যতা। এছাড়া আরো যেভাবে লাভবান হতে পারেন,
১. প্রতিটি ধাপে আলাদা স্কোরের ব্যবস্থা।
২. বিনা সুদে পারিশ্রমিক পরিশোধের সুবিধা।
Source: gohealthuc.com
৩. পারিশ্রমিক নেওয়ার সময় পরীক্ষা এবং শিখন উপাদানগুলো সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
৪. অর্থনৈতিক খাতে প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানোর উপর জোর দেওয়া হয়।
এএটি কোর্সটি আপনাকে একজন পেশাদার হিসাবরক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে কয়েক ধাপ উপরে নিয়ে যাবে। আপনার পছন্দের চাকরিটি নিজের করে নিতে এবং কর্মজীবনে সফল হতে এএটি কোর্সের বিকল্প কল্পনা করা যায় না।
Featured Image:Impttraining.com