তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের উন্নত অনেক দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সমমানের স্বীকৃত। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশের তুলনায়ও তুরস্কের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উন্নত। তাই, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা তুরস্কে পড়তে যেতে চায়। আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, তবে আজকের লেখাটি আপনার জন্য।
কেন পড়তে যাবেন তুরস্কে?
তুরস্ক এশিয়া-ইউরোপের সংযোগস্থল হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, লোকপ্রশাসন কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। তা ছাড়া ইতিহাসে প্রাচীন সেন্ট্রাল-আনাতোলিয়া কিংবা কনস্টোন্টিনোপেল হিসেবে খ্যাত এই দেশটিতে সাধারণ ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্ব বিষয়গুলোর বাস্তবিক ও সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোতে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা খুবই মানসম্মত। এছাড়া তুরস্কের সব বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ইরাসমাস মুন্ডুসের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পায়।
source: Wowk
কী কী বিষয় নিয়ে পড়তে পারবেন?
ছয়শোর বেশি বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে তুরস্কে। এসব বিষয়ে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি করা যাবে পিএইচডিও। তুরস্কে যেসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারবেন সেগুলো হলো- ইলেক্ট্রনিকস এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিজিটাল মিডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, এস্ট্রোনমি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োটেকনোলজি, এপ্লায়েড ম্যাথমেটিকস, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিস, রোবোটিকস, একাউন্টিং এন্ড ফিন্যান্স, ফ্যাশন এন্ড টেক্সটাইলস ডিজাইন, ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ইত্যাদি।
source: Kxmb
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন?
তুরস্কের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই মানসম্মত। তবে এর মধ্যে কয়েকটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে,
১. মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা
২. বোয়াজিসি ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল
৩. ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল
৪. আঙ্কারা ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা
৫. গাজি ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা
৬. মারমারা ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল
৭. ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি
৮. আনাদোলু ইউনিভার্সিটি, এস্কিশেহের
৯. হাজিতেপে ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা
১০. এগে ইউনিভার্সিটি, ইজমির
১১. ডোকুজ এইলুল ইউনিভার্সিটি, ইজমির
কত খরচ হবে?
তুরস্কে পড়তে আসতে মোটা অংকের টাকা খরচ হয় না। তবে, এখানে কোনো পার্টটাইম জব করার সুযোগ নেই।
তুরস্কে প্রথমবার আসার সময় বিমান ভাড়াসহ সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনলাখ টাকা খরচ হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি অনুসারে বছরে দুই সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৫০০-১০০০ ডলার খরচ হয়। আর মাসিক খরচ হয় ২০০-২৫০ ডলার। তবে, এটি নির্ভর করে শিক্ষার্থীর জীবন যাত্রার মানের উপর।
source: Boston news
কোনো শিক্ষাবৃত্তি কি দেওয়া হয়?
তুরস্ক সরকার প্রতিবছর পাঁচ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক সংস্থা বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তিসহ তুরস্কে পড়ার সুযোগ করে দেয়। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণ বা আংশিক বৃত্তি দিয়ে থাকে। তবে, এক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করলে আপনাকে তুর্কি ভাষায় পড়তে হবে।
শিক্ষাবৃত্তির জন্য চোখ রাখুন এই ওয়েবসাইটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে?
১. অনার্স আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ২১ বছর, মাস্টার্সের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর, পিএইচডির জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।
২. ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে চাইলে (IELTS) এ ৫.৫-৬.৫ স্কোর (শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে তুর্কি ভাষায় পড়তে হবে। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। সাধারণত তুরস্কের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতেই তুর্কি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়)
৩. একাডেমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০% মার্কস।
৪. উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রি (ব্যাচেলর ডিগ্রিতে আবেদন করার জন্য)
৫. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ডিগ্রি (মাস্টার্স ডিগ্রিতে আবেদন করার জন্য)
৬. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি (পিএইচডি ডিগ্রিতে আবেদন করার জন্য)
source: Mydnow
আবেদন করতে কী কী ডকুমেন্ট লাগবে?
১. পাসপোর্ট/জাতীয় আইডি কার্ড/জন্মনিবন্ধন সনদের (ইংরেজিতে অনুবাদ করা) স্ক্যান কপি
২. সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৩. সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট
৪. সব একাডেমিক মার্কশিট
৫. দুটি রেফারেন্স লেটার। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক হলে ভালো হয় (মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রির ক্ষেত্রে)
৬. এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের সব সার্টিফিকেট
৭. মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য পাবলিকেশন (যদি থাকে)
ওপরের সব ডকুমেন্ট তুর্কি ভাষায় ট্রান্সলেট করে স্ক্যান কপি রেডি রাখতে হবে
ভিসা আবেদনের জন্য কী করতে হবে?
বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফিস রিসিভ করলে অথবা টিউশন ফিস এর সফট কপি ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া মাত্র আপনি ভিসা আবেদনের জন্য প্রস্তুত। এখন আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনি ২ ভাবে আবেদন করতে পারবেন। একটি অনলাইন ও অন্যটি ঢাকার গুলশানের তুরস্কের দূতাবাসে গিয়ে।
অনলাইনে আবেদন করতে ভিজিট করুন এখানে।
source: Reddit
ভিসার জন্য যেসব ডকুমেন্টস লাগবে
১. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া অফার লেটারের সফট কপি।
২. ভিসা ফিস।
৩. টিউশন ফিসের পেমেন্ট কপি।
৪. স্টাডি পার্মিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম (ফ্যামিলি ডিটেলস সহ)।
৫. পাসপোর্ট।
৬. আপনার সব ধরনের একাডেমিক কাগজপত্র।
৭. চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৮. তুরস্কে থাকাকালীন আপনার থাকা, খাওয়া ও পড়ার খরচ বহন করার মতো পর্যাপ্ত আর্থিক যোগান রয়েছে, তার প্রমাণপত্র।
৯. আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত নেই, তার প্রমাণপত্র।
১০. আপনি পুরোপুরি সুস্থ তার প্রমাণ হিসেবে মেডিকেল রিপোর্ট।
১১. তুরস্কে থাকাকালীন আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হবেন না, তার অঙ্গীকারনামা।
বাংলাদেশের তুরস্ক দূতাবাসের ঠিকানা
বাড়ি নং-৭, রোড নং-২, বারিধারা, ঢাকা-১২১২
ফোন: ৮৮২২১৯৮, ৮৮১৩২৯৭, ৮৮২৩৫৩৬
ফ্যাক্স: ৮৮২৩৮৭৩
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: www.dakka.be.mfa.gov.tr
এই হলো তুরস্কে পড়তে যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য। তবে আর দেরি কেন? বসে না থেকে শুরু করুন আপনার পছন্দের দেশের পদযাত্রার সূচনা।
Feature Image Source: WBRE