সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ একটি দেশ। বিশ্বে প্রচলিত প্রায় সব বিষয়েই পড়ার সুযোগ রয়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এশিয়ার এই দেশটিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পড়াশোনার অনেক সুযোগ। আপনি যদি সিঙ্গাপুরে পড়তে যেতে চান, তবে আজকের লেখাটি আপনার জন্য।
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন?
সিঙ্গাপুরের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। নিম্নে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দেওয়া হলো।
১. ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর
২. নান ইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি
৩. সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি
৪. সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট
৫. ইনসেড
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান জানতে এই ওয়েবসাইটটি দেখুন।
source: WPLG
সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থা কীরকম?
সিঙ্গাপুরে ব্যাচেলর ডিগ্রি, মাস্টার ডিগ্রি, ডক্টরেট ডিগ্রি ছাড়াও বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য আপনি আবেদন করতে পারেন। দেশটির বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বছরে সাধারণত দু’টি সেমিস্টার অফার করে থাকে। প্রথম সেমিস্টার হলো আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় সেমিস্টার হলো জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত। ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছর ফুলটাইম পড়াশোনা করতে হয়। মাস্টার ডিগ্রির জন্য সাধারণত ১ থেকে ৩ বছর এবং ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য সাধারণত ২ থেকে ৫ বছরের ফুল টাইম পড়াশোনার প্রয়োজন হয়।
কী কী ভাষায় শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন?
সিঙ্গাপুরের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। তাই দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উচ্চশিক্ষা করতে চাইলে ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতে হবে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মালয়, ম্যান্ডারিন ও তামিল ভাষাতেও শিক্ষাদান করা হয়।
source: Hyatt
কী কী বিষয় নিয়ে পড়তে পারবেন?
ছয়শোর বেশি বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে সিঙ্গাপুরে। এসব বিষয়ে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি করা যাবে পিএইচডিও। সিঙ্গাপুরে যেসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারবেন সেগুলো হলো- ইলেক্ট্রনিকস এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিজিটাল মিডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, এস্ট্রোনমি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োটেকনোলজি, এপ্লায়েড ম্যাথমেটিকস, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিস, রোবোটিকস, একাউন্টিং এন্ড ফিন্যান্স, ফ্যাশন এন্ড টেক্সটাইলস ডিজাইন, ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ইত্যাদি।
কী কী যোগ্যতা থাকতে হয়?
১. আইইএলটিএসে (IELTS) ৫.৫-৬.৫ স্কোর
২. ন্যূনতম ১২ বছরের শিক্ষাগত যোগ্যতা। অর্থাৎ আপনাকে ন্যূনতম এইচএসসি পাস হতে হবে। (ব্যাচেলর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে)
৩. ন্যূনতম ১৫ বছরের শিক্ষাগত যোগ্যতা। অর্থাৎ আপনার অনার্স ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। (মাস্টার্সের জন্য)
৪. আপনার মাস্টার্স ডিগ্রি থাকলে অর্জন করতে হবে। (পিএইচডি ডিগ্রির জন্য)
source: fox23
কত খরচ হবে?
সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য বার্ষিক টিউশন ফি ১৬ হাজার ২৫৪ থেকে শুরু করে ১৯ হাজার ৫০৫ ডলার। মাস্টার ডিগ্রির জন্য প্রতি শিক্ষাবর্ষে এই ফি ৩ হাজার ৯০১ থেকে ১৩ হাজার ৩ ডলার। এমবিএ করতে চাইলে এক বছরের জন্য আপনাকে গড়ে ৩৩ হাজার ১৫৮ ডলার গুনতে হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোর্সভেদে খরচ আরও কম হতে পারে। টিউশন ফি’র সঙ্গে প্রতি মাসের খাবার খরচ ১৯৫-২৯৩ ডলার যোগ করতে হবে। এ ছাড়া থাকার খরচ বাবদ মাসে ১৩০-৯৭৫ ডলার, যাতায়াতের জন্য ৩৩-৯৮ ডলার, বইপত্র বাবদ মাসে ২০-৬৫ ডলার প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক আরও কিছু খরচ তো রয়েছেই।
কোনো শিক্ষাবৃত্তি কি দেওয়া হয়?
সিঙ্গাপুরে প্রতিবছর বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। এসব শিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নীচের ওয়েবসাইটগুলোতে চোখ রাখুন।
১. http://furrybrowndog.wordpress.com/2011/07/07/singapore-education-scholarships-for-foreign-students-only/
২. http://www.moe.gov.sg/education/scholarships/
৩. http://www.singaporeedu.gov.sg/htm/mis/faq02.htm
৪. http://graduateschool.topuniversities.com/articles/singapore/graduate-studies-singapore
source: local10
কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন?
যে বিভাগে ভর্তি হতে চান, বিস্তারিত জানতে সেই বিভাগের এডমিশন অফিস বরাবর সরাসরি লিখতে পারেন। সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটেও আবেদন ফরম পাওয়া যায়। দেশটির কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমেও আবেদনপত্র পূরণ করার সুবিধা দিয়ে থাকে। এরপর ভিসা ও অন্য কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন হবে, সে তথ্য আবেদনকারীকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
আবেদন করতে যেসব ডকুমেন্টস লাগবে
১. পাসপোর্টের স্ক্যান কপি
২. সকল একাডেমিক সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি
৩. মটিভেশন লেটার
৪. আইইএলটিএস (IELTS) সার্টিফিকেট
৫. রিকোমেন্ডেশন লেটার (যদি চায়)
ভিসা আবেদনের জন্য কী করতে হবে?
সিঙ্গাপুরের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য খুব বেশি কাঠ-খড় পোড়াতে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফিস রিসিভ করলে অথবা টিউশন ফিস এর সফট কপি ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া মাত্র আপনি ভিসা আবেদনের জন্য প্রস্তুত। এখন আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনি ২ ভাবে আবেদন করতে পারবেন। একটি অনলাইন ও অন্যটি ঢাকার গুলশানের সিঙ্গাপুরের দূতাবাসে গিয়ে।
অনলাইনে আবেদন করতে ভিজিট করুন এখানে।
ভিসা আবেদনের জন্য যেসব ডকুমেন্টস লাগবে
১. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া অফার লেটারের সফট কপি
২. ভিসা ফিস
৩. টিউশন ফিসের পেমেন্ট কপি
৪. স্টাডি পার্মিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম (ফ্যামিলি ডিটেলস সহ)
৫. পাসপোর্ট
৬. আপনার সব ধরনের একাডেমিক কাগজপত্র
৭. চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
source: Wikihow
বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের দূতাবাস
ঠিকানা: ভেনচুরা এভিনিউ (৫ম তলা), গুলশান এভিনিউ, ঢাকা ১২১২
খোলা: রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা। (শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ)
ফোন: ০২-৯৮৮০৪০
ওয়েবসাইট: https://www.mfa.gov.sg/content/mfa/overseasmission/dhaka.html
পড়াশোনার পাশাপাশি কী কী কাজ করতে পারবেন?
সিঙ্গাপুরে অনেক খন্ডকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ১৬ ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পায়। খন্ডকালীন কাজের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। তবে ছুটির সময় পূর্ণকালীন কাজ করা যায়। সিঙ্গাপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রেস্টুরেন্ট, লাইব্রেরি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকান, হোটেল, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব ও ল্যাবরেটরিতে খন্ডকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে।
এই হলো সিঙ্গাপুরে পড়তে যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য। তবে আর দেরি কেন? বসে না থেকে শুরু করুন আপনার পছন্দের দেশের পদযাত্রার সূচনা।
Feature Image Source: News Broadcast Network