ফিনল্যান্ডে ব্যাচেলর প্রোগ্রামে কোন ধরনের টিউশন ফি না থাকার প্রতিবছর আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী পড়তে আসে। তবে, ব্যাচেলর ছাড়াও মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আসার সুযোগ এখানে আছে। আপনি যদি ফিনল্যান্ডে পড়াশোনার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে আজকের লেখাটি আপনার জন্য।
কী কী বিষয় নিয়ে পড়তে পারবেন?
উচ্চশিক্ষার জন্য ফিনল্যান্ডে দু’ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউনিভার্সিটি আর অন্যটি ইউনিভার্সিটি অব এপ্লাইড সায়েন্স যা ইউএএস নামেই বেশি পরিচিত। এদেশে ২৭ টি ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস এবং ১৬টি জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রোগ্রাম হচ্ছে হিউম্যান এ্যাজিং এন্ড এল্ডার্লি সার্ভিস (Human Ageing & Elderly Service), ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস (International Business), প্লাস্টিক টেকনোলজি (Plastic Technology), ইনফরমেশন টেকনোলজি (Information Technology), এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Environmental Engineering), নার্সিং (Nursing), সোস্যাল সার্ভিস (Social Services), টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (Tourism & Hospitality Management), বিজনেস ইনফরমেশন টেকনোলজি (Business Information Technology) এবং ইলেকট্রোনিক্স (Electronics)।
source: Edunation
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন?
ফিনল্যান্ডে ২৭ টি অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির মধ্যে ২৪ টিতে একাডেমিক লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো।
২. টামপেরি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
৩. ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ণ ফিনল্যান্ড
৫. ইউনিভার্সিটি অব ল্যাপল্যান্ড
এছাড়া, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে দেখুন এই ওয়েবসাইটে।
কী ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়?
ফিনল্যান্ডের অফিসিয়াল ভাষা ফিনিশ এবং সুইডিশ আর অধিকাংশ মানুষের মুখের ভাষা হচ্ছে ফিনিশ ভাষা। কিন্তু দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইংরেজি কোর্স বাধ্যতামূলক হওয়ায় ফিনল্যান্ডের সবাই ইংরেজি ভাষার সাথে পরিচিত। ফিনল্যান্ডের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয় এমন কোর্স রয়েছে। ফলে ফিনিশ ভাষা না জেনেও বাইরের শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। ফিনিশ ভাষা একেবারে না শিখেও সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু ফিনল্যান্ডের মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে এবং পড়াশোনা শেষে সেখানে চাকরির চেষ্টা করতে পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে ফিনিশ ভাষা শিখে ফেলা ভালো। এছাড়া, সেখানকার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনিশ এবং সুইডিশ ভাষা শেখার জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার আছে।
source: Nursing byu
কখন করবেন আবেদন?
দুটি সেমিস্টারে ফিনল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। এগুলো হচ্ছে-
১. অটাম সেমিস্টার: আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
২. স্প্রিং সেমিস্টার: জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত।
ভর্তির জন্য কী কী যোগ্যতা থাকতে হয়?
১. বাইরে থেকে কোন শিক্ষার্থী ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হতে চাইলে শিক্ষার্থী তার নিজ দেশেও উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির যোগ্যতা রাখেন এমন পড়াশোনা বা কোর্স সম্পন্ন করার সনদ প্রয়োজন হবে
২. আইইএলটিএসে (IELTS) ন্যূনতম ৬ স্কোর থাকতে হবে
৩. এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। (ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য)
৪. তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা (মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য)
৫. উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রি (ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য)
৬. ব্যাচেলর ডিগ্রি (মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য)
৭. মাস্টার্স ডিগ্রি (পিএইচডি ডিগ্রির জন্য)
source: Sundarban News
কীভাবে করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন?
১. সরাসরি যে কোন বিশ্বিবিদ্যালয়ের এডমিশন অফিসে মেইলের মাধ্যমে
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেও আবেদনপত্র সংগ্রহ করে
৩. কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অন-লাইনে আবেদন করে
উপরের ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সাধারণত ১ বৎসর সময় হাতে রেখে শুরু করতে হয়। সাধারণত আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার ৬-৮ মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
আবেদন করতে যেসব ডকুমেন্ট লাগে
১. সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (ইংরেজিতে অনুবাদ)
২. সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র
৩. ভাষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র
৪. রিকমেন্ডেশন লেটার
৫. মোটিভেশন লেটার
৬. পাসপোর্টের ফটোকপি
source: Aurak Ac
ভিসা আবেদনের জন্য কী করতে হবে?
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেলেই আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে, আপনার কোর্স যদি ৯০ দিনের বেশি সময়ের হয় তাহলে আপনাকে রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশে ফিনিশ এমব্যাসি না থাকায় আপনাকে পাশের দেশ ভারত যেতে হবে আবেদনের জন্য। এমব্যাসিতে যাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই এপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এপোয়েন্টমেন্ট এর জন্য ইমেইল করুন এই ঠিকানায়। আপনি যদি কোনো কারণে আপনার এপোয়েন্টমেন্টটি বাতিল করতে চান তাহলে এপোয়েন্টমেন্ট তারিখের কমপক্ষে ৩ দিন আগে এমব্যাসিকে জানাতে হবে। ভিসা অ্যাপ্লিকেশান এর তথ্য জন্য এই লিংকে। এখান থেকে ডকুমেন্টস চেক লিস্ট দেখে নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। এছাড়া, ওখানে থাকা – খাওয়া বাবদ কমপক্ষে ৬৭২০ ইউরো (প্রতি মাসে ৫৬০ ইউরো করে) ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স দেখাতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে দেখুন এখানে।
ফিনিশ এমব্যাসি নয়া দিল্লী এর ওয়েবসাই: http://www.finland.org.in/public/default.aspx?contentid=77955
ভিসা আবেদনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগবে
১. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া অফার লেটারের সফট কপি
২. ভিসা ফিস
৩. টিউশন ফিসের পেমেন্ট কপি
৪. স্টাডি পার্মিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম (ফ্যামিলি ডিটেলস সহ)
৫. পাসপোর্ট
৬. আপনার সব ধরনের একাডেমিক কাগজপত্র
৭. চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৮. ব্যাংক ব্যালেন্সের কপি
৯. আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত নেই, তার প্রমাণপত্র
১০. আপনি পুরোপুরি সুস্থ তার প্রমাণ হিসেবে মেডিকেল রিপোর্ট
source: UArktic
কাজের কি কোন সুযোগ আছে?
ফিনল্যান্ডে ইউরোপের বাইরের ছাত্র-ছাত্রীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে সামারে (জুন-আগস্ট) পূর্ণকালীন কাজ করতে পারবেন। তবে, আপনি যদি ফিনিশ, নরওয়েজিয়ান, রাশিয়ান অথবা সুইডিশ ভাষা না জানেন, তাহলে ফিনল্যান্ডে কাজ যোগাড় করা প্রকৃতপক্ষেই কঠিন।
এছাড়া, পড়াশোনা শেষে আপনাকে ১ বছরের ভিসা দেওয়া হবে জব খোঁজার জন্য।
এই হলো ফিনল্যান্ডে পড়তে যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য। তবে আর দেরি কেন? বসে না থেকে শুরু করুন আপনার পছন্দের দেশের পদযাত্রার সূচনা।
Feature Image Source: UP Matters