একটি কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ যারা থাকেন তাদের বিসনেস নিয়ে সবসময় ভাবনার মধ্যেই থাকতে হয়। যেমন- বেশ কিছু দিন আগের ফেসবুকের মার্কেট ধস সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই অবগত। মার্ক জুকারবার্গকে কংগ্রেস এ গিয়েও স্টেটমেন্ট দিতে হয়েছে সাথে কোম্পানীর শেয়ারও পরে গিয়েছিলো।
আবার, গুগলের মতো কোম্পানীর গুগল প্লাসকে তারা সম্পূর্ণ সার্ভিস অফ করে দিয়েছে , কারণ হলো মার্কেটের হালচাল। গুগল প্লাস কোনো ভাবেই পেড়ে উঠতে পারছিলো না আবার ফেসবুকের মতো ডাটা স্ক্যান্ডাল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যারা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকেন , তারা আসলে কোম্পানীর খারাপ সময়ে অথবা মার্কেটে খুব সীমিত রিসোর্স নিয়ে কিভাবে প্রতিযোগী কোম্পানী গুলোকে ডিঙ্গিয়ে মার্কেট নিজেদের দখলে রাখা যায় এমন ডিসিশন নেন। কিন্তু, বড়ো বড়ো কোম্পানীগুলো ডিসিশন নিয়ে থাকে খুব ভেবে চিন্তে ডাটার মাধ্যমে। অনেকেই টার্মটিকে বিসনেস ইন্টেলিজেন্স বলতে পছন্দ করেন। হ্যা, ঠিক তাই ! আপনার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এগিয়ে এসেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
আজকের আর্টিকলে আমরা দেখবো, কিভাবে ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং বেসড বিসনেস এপ্লিকেশন বিসনেস প্রশ্ন গুলোর ডিসিশন দেয়।
১) কাস্টমার সার্ভিস : “কিভাবে আমার কাস্টমারদের খুশি রাখবো ?”
NLP মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাব ফিল্ডস, যার মাধ্যমে কম্পিউটার মানুষের ভাষার কাছাকাছি বুঝতে সমর্থ হয়। যদিও কম্পিউটার এখন পর্যন্ত মানুষের ভাষার কাছাকাছি কখনই বুঝতে পারে নি। আমরা অনেকেই গুগল এসিট্যান্ট অথবা শিরি ব্যবহার করেছি , আসলে NLP এর বাস্তব প্রয়োগ এটি। আবার খুব কাজের কিছু এপ্লিকেশনও আছে , যেমন- একটি ডকুমেন্ট থেকে মূল পয়েন্ট গুলো বের করে আনা , গুগল ট্রান্সলেট এর মতো এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ , স্প্যাম মেইল গুলো ধরে ফেলা কিংবা প্রোগ্রামারদের ভাষায় “Automate the boring staff ” অনেক কাজই কিছু লাইনের কোড করে দিচ্ছে !
কাস্টমার সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে NLP এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ধরুন, নতুন একটি প্রোডাক্ট মার্কেটে এসেছে অথবা কোনো প্রোডাক্ট এর বিক্রি হটাৎ কমে যেতে থাকলো ! কিন্তু কেন এর উত্তর খুঁজে দিবে NLP . অনেক কোম্পানীই ইউজার এর কল রেকর্ড করে থাকে , এবং সে অনুযায়ী বিসনেস ডিসিশন নিয়ে থাকে। এখনতো চ্যাটবট অটোম্যাটেড অনলাইন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করছে। NLP এর বিস্তর প্রয়োগ হলো দুইটি ফিল্ডে –
১) স্পিচ রিকগনিশন: আমি যে লেখাটি লিখছি অনেক সময় গুগলের টেক্সট টু স্পিচ এবং গুগল ইনপুট/ সফটওয়্যার ব্যবহার করছি। গুগল নাউ , সিরি , স্কাইপ ট্রান্সলেটর আজকে অভাবনীয় পারফরম্যান্স দিচ্ছে।
২) প্রশ্নের উত্তর: Google I/O 2018 এর সুন্দর পিচাই এর স্পিচ যারা দেখেছেন তারা খুব সহজেই বুজতে পারবেন যে কিভাবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্যালুনে চুল কাটার জন্য টাইম ফিক্সড করে। IBM ওয়াটসন অবশ্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে ব্যবহার বেশি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে।
(I/O highlights: https://www.youtube.com/watch?v=d40jgFZ5hXk)
২) রেপুটেশন মনিটরিং: “মানুষ কি বলতেছে আমার সম্পর্কে?”
৮০ দশকের দিকে কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ডাটার উপর সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্যাটার্ন এনালাইসিস করে সে অনুযায়ী ডিসিশন গ্রহণ করতো। বর্তমানে পুরো বিসনেস সিস্টেমটাকে অপ্টিমাইজ করার পদ্ধতিকে বিসনেস ইন্টেলিজেন্স বলা হয়ে থাকে। আমরা যদি রেপুটেশন মনিটরিং এর কথা চিন্তা করি তাহলে সম্প্রতি ইন্ডিয়ায় ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা আমরা হাইলাইট করতে পারি ! সার্ফ এক্সেল এর একটি সুন্দর বিজ্ঞাপন দেখে কিছু মানুষ ভুল ভাবে মাইক্রোসফট এক্সেল সফটওয়্যারকে প্লে স্টোরে গিয়ে খারাপ রেটিং দেয়। আচ্ছা ধরুন, আপনি খুব পিজ্জা লাভার , পিজ্জা খেতে চান। রিভিউ না দেখে বের হবেন ? অবশ্যই দেখবেন সাশ্রয়ী দামে ভালো পিজ্জা কোথায় পাওয়া যাচ্ছে অথবা অফার চলছে। সে রকম একটি উদাহরণ হলো ধানমন্ডিতে ডোমিনোস পিজ্জা , যেখানে মানুষ ১৫০ টাকায় পিজ্জা খেয়েছে। এখানে কিন্তু ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজ করেছে।
সেন্টিমেন্ট এনালাইসিস এর মাধ্যমে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিসনেস ডিসিশন খুব সহজেই নিতে পারছে। ঢাকায় PUMA এর শপ ওপেন হচ্ছে এটা নিয়ে অনেকেই খুব খুশি , যাক এত দিন পর ভালো একটি ব্র্যান্ড আসলো। পুমার ঢাকার বিসনেস নিয়ে কথা বলার আগে পিজ্জায় আবার ফিরে আসি , কিভাবে ডাটাগুলো ইনসাইটফুল হতে পারে –
{‘উক্তি’: “ডোমিনোস পিজ্জা ভালোই ছিল , কিন্তু ২ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম’,
“রেটিংস”: ৭/১০,
“অনুভূতি”: ‘খুশি’},
{‘উক্তি’: “গ্লোরিয়া জিন্স এ কফি কোয়ালিটি ভালো , কিন্তু টেস্ট ভালো ছিল না”,
“রেটিংস”: ৬.৫/১০,
“অনুভূতি”: ‘বিরক্ত’},
কার্লি ব্রাকেট এর মধ্যে দুইটি কমেন্ট দিয়েছি , কি এমনতো হরহামেশায় আমরা বিভিন্ন জায়গাতে যায়। দেখুন আপনার একটি কমেন্ট অথবা রিভিউ দিয়ে JSON ফাইল আকারে কিভাবে এনালিটিক্স এর মাধ্যমে ডিসিশনে আসা যাচ্ছে।
৩) এড প্লেসমেন্ট: কোন ধরণের মানুষ আমার প্রোডাক্ট পছন্দ করছে ?
এখানে আমি রিয়েল লাইফ দুইটি বিসনেস কোম্পানি নিয়ে কথা বলবো – ১) ফেসবুকের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট জাতি, ধর্মের, বয়সের, লিঙ্গের মানুষের কাছে কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে। এখন কোন মানুষ কিভাবে প্রোডাক্ট টাকে কিভাবে নিচ্ছে আপনি রিয়েল টাইম এনালিটিক্স দ্বারা বুঝতে পারছেন। ২)পাঠাও: বেশ কিছুদিন আগে ডাটা স্ক্যান্ডাল বের হয় ! ধরুন এই ডাটা স্ক্যান্ডালের মাধ্যমে আপনি শুধু নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। অপরদিকে, পাঠাও কিন্তু জানে আপনি কোন লেভেল এর ইউজার , কোন কোন জায়গায় আপনি বিকাশ/রকেট অথবা অন্য সার্ভিস এ কেমন ট্রানসাকশান করেন , অনলাইন থেকে কি প্রোডাক্ট কিনতেছেন , আবার রকমারি থেকে বই কিনতেছেন কিনা ? সব কিছু জানে পাঠাও। তারা আপনার লেভেল গুলো বুঝবেই আপনাকে অফার করে থাকে বিভিন্ন সার্ভিস। হ্যা , চাইলে এই ডাটা বিক্রি করে দিতে পারে অন্য কোম্পানীগুলোর কাছে। আমি শুধু বিসনেস ইনসাইট নিয়ে বলছি , বিজ্ঞাপন গুলো কত নিখুঁত ভাবে আপনার মনের মতো করে পরিবেশনা করা হচ্ছে।
৪) মার্কেট ইন্টেলিজেন্স : মার্কেটে আপনার প্রতিযোগীদের অবস্থান কেমন ?
কিভাবে সম্ভব এটা জানা , তাই ভাবা স্বাভাবিক ! চলুন একটি উদাহরণ থেকে জানা যাক – ” Dr. Banani Roy joins us this spring as an Assistant Professor at the University of Saskatchewan”
আবার আমরা একটি JSON ফরম্যাট ডাটাতে ফিরে যায় –
{কোম্পানি: “University of Saskatchewan”,
“পদ”: “এসিসট্যান্ট প্রফেসর”,
“ব্যাক্তি”: “Dr. Banani Roy”
“ঘটনা”: “জয়েন করেছেন”}
উদাহরণটি দিলাম কারণ, বাংলাদেশী কোনো ভাইয়া/আপু কোথাও ভালো কিছু করলে নিজের এবং দেশের জন্য অনেক গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যা হোক , ধরেন আপনি নিজেও একজন পোস্ট ডক করেছেন , যোগ্য প্রাথী “tenure professor” পদের জন্য। আপনার জন্য একটি প্রোগ্রাম অনেক সহজ করে দিতে পারে আপনার চার পাশের ঘটনাগুলো।
৫) রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স: আমার প্রোডাক্টটি কতটুকু দায়বদ্ধ কাস্টমার এর কাছে?
বর্তমান একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি , এক নামে ড্রাগ ডিসকভারি বলা যেতে পারে। ধরুন, আপনি একটি মেডিসিন নিলেন এই মেডিসিন কিভাবে আপনার শরীরে গিয়ে ইন্টারেক্ট করতেছে ? অথবা ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া গুলো কি তাদের কালার কোড চেঞ্জ করে ফেলছে মেডিসিনের কালার কোডের সাথে ! কিংবা , এক প্যারাসিটামল দিয়ে অনেক অসুখের কাজ কিভাবে হচ্ছে ? এইধরণের চিন্তা ভাবনা থেকে আপনি একটি সল্যুশন বাজারে নিয়ে আসলেন যে এক ট্যাবলেটে ১০টি অসুখের সমাধান ! কিন্তু পার্শপ্রতিকৃয়া বলেও কিছু থাকে। এইধরণের ইনসাইট পেতে NLP খুবই কাজের। যেমন –
{“ফেক্সজো খাইলে ঘুম পাই”, কিন্তু “ডাস্ট এলারজি” থেকে সাথে সাথেই ভালো ফীল করায় }
ডাটার প্রজ্ঞার মাধ্যমে আজকে জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। NLP নিয়ে খুব সহজ ভাবে আলোচনার চেষ্টা করছি , পসিটিভ কমেন্ট অবশ্যই কাম্য।I
Source: MIT – Massachusetts Institute of Technology:
MIT Sloan & MIT CSAIL Artificial Intelligence
Written By
Razu Ahmed Rony
Independent Researcher
Fb: https://www.facebook.com/razuswe
LinkedIn: https://www.linkedin.com/razuse