গ্রাহক যখন আপনার পণ্য নিয়মিত কিনছে, অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে, সবাই বেশ আনন্দেই আছে ঠিক সে সময় অর্থ উপার্জন করাটা আপনার জন্য সহজ। কিন্তু যদি হুট করেই পরিস্থিতি বদলে যায়? ধরুন আপনি একটা ব্যবসায় বেশ কিছু টাকা ইনভেস্ট করেছেন কিন্তু সেটি বেশিদিন টিকলো না। তখন পুরো টাকাটাই নষ্ট হলো না? আর মানসিকভাবেও বেশ ভেঙে পড়লেন আপনি। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? বড় বড় যে সমস্ত উদ্যোক্তা আছেন তারা তাদের ব্যবসাকে এমনভাবে টিকিয়ে রাখেন যেন যে কোনো ঝড়ে তা ভেঙে না পড়ে। তারা কীভাবে সেটি করে আর আপনারই বা কী করণীয় সে বিষয়ে চলুন জেনে নিই কিছু পরামর্শ।
১. ব্যবসাকে সব সময় কেন্দ্রমুখী রাখুন
কখনো যদি অর্থনীতি কিছুটা চাপের মুখে পড়ে যায় মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন হয়ে যায়। আর এই উদ্বিগ্নতার মুখে পড়ে ছেড়ে দেয় ব্যবসা। ব্যবসা আসলে সেই সময়ে টিকে থাকে যখন কঠিন পরিস্থিতির চাপে পড়েও আশেপাশের মানুষকে নিয়েই ব্যবসা চালানো হয়।
ব্যবসা যেন সব সময় চলমান থাকে; image source: startupnation.com
প্রথমেই নজর রাখুন ঠিক আপনার সামনের ঘরে কী ঘটছে। অর্থাৎ খেয়াল রাখুন গ্রাহকদের চাহিদা সম্পর্কে। গ্রাহকদের চাহিদা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি আপনার পণ্য বিক্রির ভয় পেয়ে চুপচাপ বসে থাকবেন! আপনি যদি নিয়মিত তাদের চাহিদা বুঝে পণ্যের যোগান দিতে পারেন তবে তারা আপনার কাছে অবশ্যই আসবে পণ্য কিনতে, যদি তার আর্থিক সমস্যা থাকে তবুও। স্বাভাবিকতা আর স্থায়িত্ব বজায় রেখে পণ্য বেচাকেনা করুন। মানুষ যখন আর্থিক অবস্থা নিয়ে কঠিন সময় পার করে তখন এই বিষয়টি ভাবনায় রাখা আরও জরুরি। মনে রাখবেন, আপনার কোম্পানি কেন টিকে আছে, সেই বিষয়ের উপর জোর দিলে ব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
২. চেষ্টাকে বাস্তবে পরিণত করুন
কোম্পানি তখনই টিকে যায় যখন তারা পরিবর্তনকে মেনে নিতে শিখে যায়। যত বেশি কাস্টমারদের চাহিদা সম্পর্কে জানা যাবে কোম্পানি তত উন্নতি লাভ করবে।
ব্যবসায় চেষ্টা থামানো যাবে না কখনোই; image source: Warp it
যদি এমন হয় যে, পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি সেভাবে চলতে পারছেন না তবে সেই শুরুটা করুন আজ থেকেই। কারণ যদি অবস্থা বেশি কঠিন হয়ে যায়, ব্যবসাও ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। ব্যবসার প্রতিটি বিষয় নিয়ে আবার পর্যালোচনা করুন। ব্যবসার যে অংশটি আপনার সেটি নিয়ে কয়েকবার আলোচনা, পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নিন, ঠিক কোন কোন জায়গায় আপনার পরিবর্তন দরকার।
ওয়্যারহাউজ সলিউশন, বিক্রির মাধ্যম, বোনাস দেয়ার পদ্ধতি, পণ্য-সেবা যে কোনো কিছুরই পরিবর্তন করানো প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে।
৩. প্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রাহক নিজের করে নেয়া
সহজ ভাষায় বললে প্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রাহক চুরি করে ফেলুন! অবাক হচ্ছেন? কথাটা তবে ভেঙে বলা যাক।
মানুষ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আর তাই প্রতিনিয়ত বদলায় তাদের চাহিদাও। ধরুন একজন পাঁচ বছর একই ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এর মাঝেই নতুন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন অনুযায়ী চুল শক্ত, মজবুত আর বড় হওয়ার উপায় দেখে তিনি সেই নতুন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুই ব্যবহার শুরু করলেন।
অন্যের গ্রাহককে নিজের করে নেয়ার চেষ্টা; image source:DesignersX
এইজন্য গ্রাহকদের চাহিদা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। আর নইলে তারা অন্য কারও চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে চলে যাবে। আর এটি নিশ্চয়ই আপনার ব্যবসার জন্য খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না। শক্ত অবস্থানে থাকা কোম্পানিগুলো সব সময় গ্রাহকদের চাহিদা নিয়ে কাজ করে। তাই এই ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান তৈরি করা প্রয়োজন আপনারও। বলতে গেলে আপনার গ্রাহক যেন অন্য কারও দুয়ারে না যায়, তাদেরকে অন্যের কাছ থেকে আপনিই চুরি করে আনুন!
৪. বুদ্ধির সাথে মার্কেট চালানো
যখনই অর্থনীতি চাপের মুখে পড়ে যায়, তখনই পণ্যের মার্কেটিং শুরু করুন! ঠিক এমন কাজটিই করে অনেক প্রতিষ্ঠান। অথচ এটি ঠিক না হবার পেছনে রয়েছে দুটি বড় কারণ।
সফল উদ্যোক্তারা জানেন ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি মার্কেটিং এ অর্থ খরচ করা। মার্কেটিং না করলে গ্রাহকদের চাহিদাও যেমন জানা যাবে না তেমনি তাদের সাথে যুক্তও থাকা যাবে না।
কোনো অবস্থাতেই যেন মার্কেটিং বন্ধ না হয়; image source: Karvy
অর্থনীতি চাপের মুখে পড়ে গেলে বিজ্ঞাপনও রাতারাতি কমে যায়। এমন কিছু হলে, ঠিক সেই সময়ে পণ্যের মার্কেটিং করলে ভালো।
যখন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা মার্কেটিং করতে ভয় পাবে, আপনি আপনার মার্কেটিং বাড়িয়ে দিন। গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিন আপনার মেসেজ। এমন কাজ আপনাকে প্রতিযোগিতায় যেমন এগিয়ে রাখবে তেমনি মার্কেট লিড করতেও ব্যাপক সহায়তা করবে।
৫. সরিয়ে নিন অর্থ
অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়লে অবশ্যই কোম্পানির অর্থ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সরিয়ে ফেলতে হবে কিছু অর্থ। কিন্তু তার মানে এই নয় যে লোকবল ছাঁটাই করতে হবে। কমিয়ে ফেলুন সেই সকল জিনিস যেগুলো কোম্পানিতে খুব একটা কাজে আসে না।
বুঝেশুনে করতে হবে খরচ; image source: Banktrack
হতে পারে আপনার প্রতিষ্ঠানের দেশের বাইরে অনেক পণ্য বিক্রি হয়। হতে পারে আপনি যেই পণ্য আর সেবা দিচ্ছেন তাতে অর্থ আয় হচ্ছে। কিন্তু যদি আপনি নিম্নমানের পণ্য দেন তখন কী হবে? ভালো পারফর্ম করা পণ্যের বিপরীতে নিম্নমানের পণ্য কি আপনাকে ভালো কোনো সুফল এনে দেবে? এমন করলে কতদিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন আপনি?
তাই সমস্যা যেমনই হোক, যতটুকুই হোক, বিচক্ষণতার সাথে সেগুলো বিবেচনা করুন। মনে রাখবেন কঠিন অবস্থা সব সময় থাকে না। ভালো সময় আসবেই। আর সেই ভালো সময়ের জন্য কাজ করে যেতে হয় সততার সাথে।
৬. বিক্রি সম্পর্কে দৃঢ় অবস্থান নিন
ব্যবসায় যাই হোক, বিক্রি করাই মূল উদ্দেশ্য। যত বেশি বিক্রি, তত বেশি অর্থ। তাই বিক্রির অবস্থান বাড়াতে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়ে। যেমন, কীভাবে চাহিদা শুরু করছে মানুষ? কীভাবেই বা এর শেষ হচ্ছে? কোথায় গিয়ে থামছে? আপনার বিক্রি খাতের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করুন। এরপর ফিরে আসুন গ্রাহকের কাছে।
আপনি যদি আপনার কাছে থাকা অর্থের পরিমাণ বাড়াতে চান তাহলে অবশ্যই গ্রাহক বাড়াতে হবে। আর এটি হুট করেই ঘটে যাবে না। প্রতিনিয়ত গ্রাহকের চলমান অভ্যাস আর পরিবর্তনশীল অভ্যাসের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৭. বিশ্বাস বজায় রাখুন
একটি উঠতি ব্যবসায় সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে আপনি যা ভালোবাসেন তাই করা, নিজের পণ্যের উপর ভরসা রাখা। আপনার নিজেরই যদি নিজের পণ্যের উপর সন্দেহ থাকে তাহলে গ্রাহক কীভাবে নেবে?
হয় বিশ্বাস করুন নিজের কোম্পানির উপর অথবা বন্ধ করে দিন কাজ। আশেপাশে অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা আপনার জায়গা নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে আছে, আর তারা এও জানে গ্রাহককে কোন অফার দিলে তারা সহজে নিজেদের আপন হয়ে যাবে।
আপনি যখন ব্যবসা শুরু করেই ফেলেছেন তখন এটি যেন বন্ধ না হয় সেজন্য গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে সেভাবে কাজও করে যেতে হবে। নইলে যে কোনো কঠিন সময় আপনার ব্যবসাকে বন্ধ করে দিতে পারে।
উপরে আলোচিত প্রতিটি বিষয়ই সব সময় একজন ব্যবসায়ীর মাথায় রাখা উচিত। নইলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
Feature image: usatoday.com